রোবট
রোবট এখন আর বিলাসী নয়, প্রয়োজনীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে: প্রতিমন্ত্রী পলক
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, সময়ের প্রয়োজনে রোবট এখন আর বিলাসী পণ্য নয়। এটা এখন স্মার্টফোনের মতোই প্রয়োজনীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে ‘ষষ্ঠ বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড-২০২৩ এর জাতীয় পর্ব’- উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশের তরুণরা যেন আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে পারে, সেই লক্ষ্যে আগামী রোবট অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতার আগেই জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে স্থাপিত ৩০০টি স্কুল অব ফিউচারে একটি করে ড্রোন, থ্রিডি প্রিন্টার, এআর, ভিআর ও আধুনিক ল্যাবস্থাপন করা হবে।
আমাদের তরুণদের মেধার ঘাটতি নেই উল্লেখ করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজন একটু সুযোগ করে দেওয়ার। তাদের যথাযথ সুযোগ ও সহযোগিতা করা হলে তারা শুধু বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান করবে না, ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট দেশ হবে: পলক
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালে ফিলিপাইনে প্রথমবার আন্তর্জাতিক রোবটিক অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করেই স্বর্ণপদক অর্জন করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মানবসম্পদকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারলে আগামী দিনে যেসব দেশে সোনা, রুপাসহ খনিজ সম্পদ রয়েছে, তাদের চেয়েও বাংলাদেশ বেশি সমৃদ্ধশালী হবে।
পলক বলেন, আমাদের সবকিছু স্মার্ট ডিভাইস নির্ভর হয়ে গেছে। সেই বাস্তবতা থেকেই এখন যোগাযোগ, কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রেই রোবটের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জাপান যদি রোবটকে কাপড় কাটা শিখিয়ে ফেলে, তবে ঝুঁকিতে পড়বে দেশের তৈরি পোশাক খাত। তাই রোবট বানানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টকর কাজে সেই রোবট আমরা ব্যবহার করব। বিদেশেও রপ্তানি করব।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য আখতারুজ্জামান রোবট অলিম্পিয়াড-২০২৩ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে আখতারুজ্জামান বলেন, প্রযুক্তিজ্ঞাননির্ভর এই সমাজ হবে অন্তর্ভূক্তিমূলক।
তিনি বলেন, আজকের শিক্ষার্থীরা তাদের বুদ্ধি দিয়েই স্মার্ট বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে।
আইসিটি বিভাগের মহাপরিচালক মো. মোস্তাফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়াপার্সন অধ্যাপক সেঁজুতি রহমান, বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: উদ্যোক্তা গড়ে তোলার মাধ্যমে বিপুল কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার: পলক
বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে জি-ক্লাউড এ যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ: পলক
১ বছর আগে
অ্যামেকা: বিশ্বের সর্বাধুনিক মানবিক রোবট
মহাকাশ থেকে শুরু করে বাড়ির আঙ্গিনা, সবখানেই এক অনুগত সহকারী হিসেবে আবির্ভাব ঘটছে স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক কাঠামো বা রোবটের। এর সঙ্গে মানুষের মতো অবয়ব ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আসফালনে মানুষের পাশাপাশি দ্বিতীয় স্বতন্ত্র সভ্যতার প্রবেশদ্বারে পৌঁছেছে রোবট। সম্প্রতি বিশ্বের সর্বাধুনিক হিউম্যানয়েড রোবট অ্যামেকা যেন ঠিক তারই প্রতিধ্বনি বয়ে বেড়াচ্ছে। ২০৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে শতকরা ৩০ ভাগ কাজ রোবটের দখলে চলে যাওয়ার এ যেন প্রথম পদক্ষেপ। চলুন, প্রযুক্তি জগতের এই অভাবনীয় সাফল্যের ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।
অত্যাধুনিক হিউম্যানয়েড রোবট অ্যামেকা কি কি করতে পারে
অ্যামেকার কার্যকলাপের মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে তা হল তার মুখের অভিব্যক্তি। মুচকি হাসির সময় সে চমৎকার ভাবে চারপাশ তাকাতে পারে। তার অবাক হয়ে তাকানো, নাক আঁচড়ানো, এমনকি দর্শকের সঙ্গে মজা করার বিষয়টি অভূতপূর্ব। অবশ্য একদম মানুষের মতো মুখভঙ্গি দেখে অনেকের পিলে চমকে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: টেসলার রোবট ‘অপটিমাস’ দেখালেন ইলন মাস্ক
অ্যামেকার প্রতিটি চোখে একটি করে ক্যামেরা আছে। এগুলো দিয়ে সে সামনের মানুষদের শনাক্ত করতে ও তাদের মুখ স্পষ্টভাবে ট্র্যাক করতে পারে। আচরণগত অভিব্যক্তি প্রকাশের সময় সে তার কাঁধ নাড়িয়ে মাথার পাশ পর্যন্ত নিজের হাত ওঠাতে পারে। যে কোনো বস্তু শনাক্ত করার সময় অ্যামেকার গতিবিধি অন্য যেকোনো রোবটের চেয়ে বেশ প্রাণবন্ত।
যুক্তরাজ্যের গবেষকদের একটি দল সম্প্রতি অ্যামেকার সিস্টেমে চ্যাটবট আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেছে। ফলে অ্যামেকা মানুষের কাছ থেকে কোনো ইনপুট ছাড়াই স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে। তবে এখন পর্যন্ত অ্যামেকার নীচের অর্ধাংশ অকার্যকর থাকায় সে হাঁটতে পারছে না।
আধুনিক হিউম্যানয়েড রোবট অ্যামেকার নির্মাতা
অ্যামেকার নেপথ্যে আছে ইঞ্জিনিয়ার্ড আর্টস নামের যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় একটি ডিজাইনার এবং মানবাকৃতির বিনোদন রোবট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান৷ রোবটের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ অভিজ্ঞতা প্রদানের লক্ষ্যে ব্রিটিশ কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করেছিলো ২০০৫ সালে। তারপর থেকে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা মানবাকৃতির রোবটের বিকাশ নিয়ে সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ক্যান্সার খুঁজতে দেহের ভিতর সাঁতার কাটবে রোবট
২০১৬ সালে উদ্ভাবিত বিখ্যাত সোফিয়া রোবটে ব্যবহৃত প্রযুক্তির অনেকটাই ব্যবহার করা হয়েছে এই অ্যামেকাতে। ইঞ্জিনিয়ার্ড আর্টস অ্যামেকাকে ভবিষ্যত মানবাকৃতির রোবটের জন্য একটি অগ্রগামী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রদর্শন করছে, যার ওপর ভিত্তি করে অজস্র বিকাশ ঘটানো যাবে রোবটিক্সে।
তাদের প্রস্তুতকৃত অন্যান্য রোবটগুলোর মধ্যে আছে মেস্মার, রোবোথেস্পিয়ান ও কুইন। এছাড়া গ্রাহকদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে কাস্টমাইজ রোবট তৈরির লক্ষ্যেও তারা কাজ করছে।
২ বছর আগে
টেসলার রোবট ‘অপটিমাস’ দেখালেন ইলন মাস্ক
শিশু যখন হাঁটতে শেখে তখন তার প্রতিটি কদমে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা যায়। এই বুঝি পড়ে গেলাম! সেজন্যই হয়তো ছোট ছোট কদমে ধীরে ধীরে পা ফেলতে শুরু করে। ঠিক শিশুর মতোই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার কার্যালয়ে শুক্রবার দেখা মেলে মানব রোবটের হেঁটে আসার দৃশ্য।
মঞ্চের এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। ধীর কদমে হেঁটে এসে রোবটটি দর্শকদের উদ্দেশে হাত নাড়িয়ে অভিবাদন জানায়। রোবটটির নাম রাখা হয়েছে অপটিমাস।
প্রতিষ্ঠানটির কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দিবসে (এআই ডে) টেসলা যে রোবটটি দেখিয়েছে তা আপাতত একটি প্রোটোটাইপ। যা ভারী বস্তু উঠানোসহ নানা কাজ করতে পারে।
হেঁটে আসা রোবটটি একটি প্রোটোটাইপ হলেও মঞ্চে পরবর্তীতে তিনজন মানুষজে তার ও অন্যান্য সংযুক্ত যন্ত্রাংশসহ রোবট আনতে দেখা যায়। যা দেখতে মোটেই মাস্কের ভাস্য অনুযায়ী রোবটের মতো নয়।
আরও পড়ুন: সময় ও খরচ বাঁচাতে গবেষকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ওষুধ উদ্ভাবনে কাজ করছে
কার্যালয়ে উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশে মাস্ক বলেন যে শুক্রবার তারা যে রোবটটি দেখতে পেয়েছে প্রকৃতপক্ষে এটি আরও বেশি কাজ করতে পারে।
মাস্ক অন্যান্য রোবট ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করে বলেন, জাঁকজমক ও আয়োজন করে যে রোবটগুলো দেখানো হয় সেগুলোর আসলে ‘ব্রেন’ থাকে না। নিজে থাকে চলার মতো কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা না থাকার কথাও বলেন তিনি। তবে অপটিমাসের মাধ্যমে তিনি কিছু এআইয়ের নমুনা দেখান।
তবে নতুন এই রোবট নিয়ে সমালোচনাও করতে দেখা গেছে। মঞ্চে দেখানো নমুনায় এআই গবেষক ফিলিপ পিকনিউস্কি সন্তুষ্ট হননি। তিনি টুইটারে লিখেছেন, এটি বেশ তামাশার এবং সম্পূর্ণভাবে ‘স্ক্যাম’।
আরও পড়ুন: ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কিনে নিচ্ছেন ইলন মাস্ক
মাস্ক জানান, এই প্রথম রোবটটি কোনো সাহায্য ছাড়াই হেঁটেছে। টেসলার লক্ষ্য কি তা জানিয়েছেন মাস্ক। তিনি জানান, এমন রোবট তৈরি করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি যা কাজের ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সক্ষম হবে। আর রোবটটি তৈরি ও বাজারজাত করা হবে অধিক হারে। যা লক্ষাধিকও হতে পারে। এর মূল্য হবে একটি গাড়ির দামের চেয়েও কম। দামের ধারণা দিয়ে মাস্ক জানান, ২০ হাজার মার্কিন ডলারের কম হতে পারে।
আরও পড়ুন: ইলন মাস্ক সম্পর্কে কিছু বিস্ময়কর তথ্য
২ বছর আগে
ক্যান্সার খুঁজতে দেহের ভিতর সাঁতার কাটবে রোবট
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মনে হলেও বাস্তবেই ক্যান্সার খুঁজতে দেহের ভিতর সাঁতার কাটবে ক্ষুদ্র রোবট। বর্তমানে ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্পূর্ণরূপে সার্জারি, রেডিয়েশন এবং কেমোথেরাপির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু একটি টিউমার ধ্বংস করার সময় কেমোথেরাপিগুলো অনিবার্যভাবে ভালো কোষগুলোতেও আঘাত করে। ফলে নিশ্চিতভাবেই রোগীকে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর শিকার হওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হয়।
কিন্তু ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর এই রোবট প্রযুক্তি হতে যাচ্ছে এই সব জটিলতার অবধারিত প্রশ্নের একমাত্র উত্তর। সেদিক থেকে এই ধারণাটি দেহের ভেতর অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি না করে সঠিক জায়গায় ওষুধ পৌঁছাতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। চলুন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই অসাধারণ বিকাশ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
কিভাবে কাজ করবে এই ক্ষুদ্র রোবট
হামাগুড়ি, ডিগবাজি এবং ভেসে থাকা বা সাঁতার কাটতে পারা এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র রোবটের আসল উদ্দেশ্য দেহের সংকীর্ণ স্থানগুলোর স্বাভাবিক কাজগুলো তদন্ত করে সেখানে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা। বিভিন্ন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন আকৃতি দিয়েছেন এই রোবটগুলোকে। কোনটি মাছ, কোনটি কাঁকড়া, প্রজাপতি; আবার কোন কোন বিজ্ঞানী দল ক্রমাগত আকার বদলাতে পারা রোবট তৈরি করেছেন।
পড়ুন: তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
গবেষণায় এগুলো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে ক্যান্সার কোষে পৌঁছার জন্য সফলভাবে রক্তনালীর মধ্য দিয়ে চলতে পেরেছে। সাধারণত যে কোন টিউমারের জন্য অম্লীয় পরিবেশ দায়ী, আর এই অম্লত্ব বোঝার পরিমাপক হচ্ছে পিএইচ (পটেনশিয়াল অফ হাইড্রোজেন)। মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীর শরীরের ভেতরটা বিভিন্ন দ্রবণের পরিপূর্ণ।
ক্ষুদ্র রোবটগুলো নিজেদের আকার পরিবর্তন করার মাধ্যমে যে কোন দ্রবণের পিএইচ কমাতে পারে। কোন দ্রবণে বিচরণের সময় সেখানকার পিএইচ কমানোর সাথে সাথে এগুলো সঙ্গে করে বয়ে চলা ক্যান্সার প্রতিরোধী ওষুধ ছেড়ে দেয়। ফলে কাছাকাছি থাকা ক্যান্সার কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
ক্যান্সার নিরাময়ে ক্ষুদ্র রোবটের সাম্প্রতিক অগ্রগতি
আকৃতি পরিবর্তনকারি ক্ষুদ্র রোবটগুলো নিয়ে কাজ করেছিলেন জিয়াওয়েন লি, লি ঝাং, ডং উ ও তাদের সহকর্মী সহ চাইনীজ এক বিজ্ঞানী। তাদের আকৃতি বদল করতে পারা ক্ষুদ্র রোবটগুলো টার্গেটকৃত স্থানে ওষুধ সরবরাহ করতে চৌম্বক শক্তি ব্যবহার করে। আর এ শক্তি যোগান দেয়ার জন্য সেগুলোকে রাখা হয় আয়রন অক্সাইড দ্রবণে। পূর্বে এই রোবটগুলো বেশিরভাগ সময়ই ওষুধ ছেড়ে দেওয়া বা দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করার সময় আকৃতি বদলাতে পারতো না। কিন্তু এখন এই সব জটিলতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে। তাত্ত্বিকভাবে, এগুলো মানুষের রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করানো যেতে পারে এবং চুম্বকের মাধ্যমে টিউমারের দিকে আক্রমণ করা যেতে পারে।
পড়ুন: জাপানে ছোট দোকানগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে বুদ্ধিমান রোবট
একই রকম আকৃতি বদলাতে পারা রোবটে সফল হয়েছিলেন আমেরিকার স্ট্যানফোর্ডের বিজ্ঞানীরাও। এদের রোবটগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে-এগুলো লক্ষ্যে না পৌছানো পর্যন্ত ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রাখে। টার্গেটের কাছাকাছি পৌঁছে এরা উচ্চ-ঘনত্বের ওষুধ ছেড়ে দেয়। অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতি এগুলোকে এই উদ্দেশ্য হাসিলে আলাদা সুবিধা দেয়।
রোবটগুলোর আরো একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এদের কেন্দ্রে রয়েছে একটি দীর্ঘ গর্ত এবং পার্শ্বগুলো কোণাকৃতির। এতে করে এরা সম্মুখ দিক থেকে তরল পদার্থের ধাক্কা উপেক্ষা করে দ্রুত গতি সাঁতরে চলতে পারে।
পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
আমেরিকার বায়োনট ল্যাবসের বিজ্ঞানীরাও তৈরি করেছেন ক্ষুদ্র রোবট যেটি রক্তের প্রবাহের মধ্য দিয়ে সাঁতার কেটে মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে এবং মস্তিষ্কের টিউমারগুলোতে ওষুধ সরবরাহ করতে পারে। সম্প্রতি বায়োনট ল্যাবস ক্যান্ডেল থেরাপিউটিকসের সাথে যৌথ উদ্যোগে ব্রেন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অভিনব ওষুধ সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছে।
তাদের পরিকল্পনা হল ক্যান্ডেলের ওষুধ এবং বায়োনাটের দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত ক্ষুদ্র রোবটকে একত্রিত করা, যাতে কার্যকরভাবে মস্তিষ্কের টিউমারগুলোকে লক্ষ্য করা যায়। রোবটগুলো বায়োনটস নামে পরিচিত এবং এগুলো চুম্বক শক্তির মাধ্যমে সরাসরি মস্তিষ্কের টিউমার লক্ষ্যে যাত্রা করতে পারে।
স্পেনের বার্সেলোনার ক্যাটালোনিয়ার ইনস্টিটিউট ফর বায়োইঞ্জিনিয়ারিং-এর রসায়নবিদ স্যামুয়েল সানচেজ মূত্রাশয় ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য তৈরি করছেন অতি ক্ষুদ্রকায় রোবট। এগুলোতে থাকা ন্যানোমোটরগুলো মৌচাকের ন্যায় ছিদ্রযুক্ত সিলিকা ন্যানো পার্টিকেল, ক্ষুদ্র সোনার কণা এবং ইউরিস এনজাইম দ্বারা গঠিত। ৩০০ থেকে ৪০০ ন্যানোমিটার এই রোবটগুলো মূত্রাশয়ের রাসায়নিক ভাঙ্গনের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অ্যামোনিয়াতে পরিণত হয়।
পড়ুন: অ্যান্ড্রয়েড-১৪ ফোনে সরাসরি স্যাটেলাইট সংযোগ: যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন অধ্যায়
ক্যান্সার নিরাময়ে দেহের ভিতর সাঁতরে চলা রোবট প্রযুক্তির অনুপ্রেরণা
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই পুরো ধারণাটি অনেকাংশে মিলে গেছে ১৯৬৬ সালের ফিল্ম ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজ-এর সাথে। এখানে একটি ক্ষুদ্র সাবমেরিন একদল গবেষককে নিয়ে একজন বিজ্ঞানীর মস্তিষ্কে রক্তের জমাট বাঁধা অপসারণের অভিযানে যায়। এখানে দেখানো হয়, সাবমেরিনের সাথে সাথে তার আরোহীরাও সঙ্কুচিত হয়ে একদম ক্ষুদ্রাকৃতি হয়ে গিয়েছিল।
অতঃপর তারা রক্তনালীর রক্তপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যাত্রা করে চূড়ান্ত ভাবে সেই বিজ্ঞানীর ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। কল্পকাহিনী একদম হুবহু অনুকরণ করা সম্ভব না হলেও রক্তশিরায় ক্ষুদ্র রোবটের সাঁতরে চলা বিরাট এক পদক্ষেপ। দূর থেকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য মাছের আকৃতির ওষুধ সরবরাহকারি রোবট আরোহীসহ সঙ্কুচিত সাবমেরিনের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়।
অন্যদিকে, স্ট্যানফোর্ড বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনের অনুপ্রেরণা ছিল জাপানের অরিগ্যামি শিল্প, যেখানে কাগজ ভাজ করে বিভিন্ন আকৃতির অবয়ব তৈরি করা হয়। কিন্তু এই প্রভাবটি শুধুমাত্র কাঠামোগত দিক থেকেই ছিল। কাজের দিক থেকে এই রোবটগুলো শরীরের অভ্যন্তরে যে কোন পরিবেশে নিজেদেরকে অপরিবর্তিত রেখে ভেসে যেতে পারে।
পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
চিকিৎসা বিজ্ঞানে অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন
স্ট্যানফোর্ডের রোবটগুলো শুধুমাত্র কার্যকরভাবে ওষুধ সরবরাহই করবে না, পাশাপাশি শরীরের ভেতরে ক্যামেরাও বহন করতে পারবে। এতে ডাক্তাররা রোগীদের রিয়েল-টাইম পরীক্ষা করতে পারবেন। দলটি আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিং ব্যবহার করে রোবটগুলোর বিচরণ ট্র্যাক করার জন্যও কাজ করছে। এটি সফলভাবে প্রয়োগ সম্ভব হলে অঙ্গ কাটার বিড়ম্বনা দূর হবে।
স্প্যানীশ রসায়নবিদ সানচেজের মূত্রাশয় ক্যান্সার বিধ্বংসী রোবটগুলোকে একদম শিরাপথে প্রবেশ করানোর পরিকল্পনা চলছে। এতে করে ক্যান্সারের কোষটির দিকে থেরাপিউটিক এজেন্টের কার্গোকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করা যাবে। এর কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহারের প্রচেষ্টা চলছে। সর্বসাকূল্যে বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে নেতৃত্ব দেয়া গেলে অ্যান্টিবডি টিউমার চিহ্নিত করে তা ধ্বংস করতে পারবে। এটি যদি সম্ভব হয়, তাহলে সম্ভাব্য সব রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানো যাবে।
পরিশিষ্ট
স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও অস্ত্রোপচারে রোবটের ব্যবহারিক প্রয়োগের গবেষণা চিকিৎসার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবনীয় অবদান রাখছে। অস্ত্রপোচারে ক্ষুদ্র জায়গায় যতটা সুক্ষভাবে কাজ করা যায় তা ততটাই সুফল দেয়। এই বিষয়টি নিশ্চিত করতেই ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হবে আধুনিক মাইক্রোবট (ক্ষুদ্র রোবট) প্রযুক্তি। তবে মূলধারার চিকিৎসায় এই প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে উপলব্ধ হতে এখনো দীর্ঘ পথ বাকি। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার এই ক্রমবর্ধমান জোয়ার ক্ষুদ্র রোবটের মাধ্যমে বিপুল পরিসরে কার্যকরী স্বাস্থ্যসেবার অগ্রদূত হয়ে থাকবে।
পড়ুন: টেক্সট নেক সিন্ড্রোম: অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলাফল
২ বছর আগে
জাহাজ পরিষ্কার করবে রোবট!
এখন থেকে জাহাজ ও ট্যাংকও পরিষ্কার করবে রোবট। বেইজিংয়ে চলমান বিশ্ব রোবট সম্মেলন (ডব্লিউআরসি) ২০২২-এ এমনই নতুন রোবট প্রদর্শন করা হয়েছে।
সম্মেলনে ১৩০টি প্রতিষ্ঠানের ৫০০’র বেশি রোবট প্রদর্শন করা হয়। যেগুলোর মধ্যে ৩০টিরও বেশি রোবট প্রথমবারের মতো দেখানো হয়। এবারের সম্মেলনে বিশ্বের নানা দেশ থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো অংশগ্রহণ করেছে।
বেইজিংয়ে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রোবট++ নামের প্রতিষ্ঠানটি শিপইয়ার্ড ও ট্যাংকয়ে কাজ করার জন্য রোবটিক সমাধান দিয়ে থাকে। এবছর তারা জাহাজ নির্মাণ কাজে সাহায্যকারী রোবট নিয়ে এসেছে। এই রোবট চুম্বকের সাহায্যে দেয়াল বেয়ে উঠতে পারে। এটি জাহাজ ও ট্যাংক পরিষ্কার করতে, দেয়ালের রঙ ও মরিচা তুলতে সক্ষম।
আরও পড়ুন: মহাকাশের প্রথম রঙিন ছবি প্রকাশ করেছে নাসা
সাংহাই ফ্যাব-ইউনিয়ন টেকনোলজি কোম্পানি লিমিডেট (ফ্যাব-ইউনিয়ন) নামের প্রতিষ্ঠানটি প্রযুক্তিগত নকশা, গবেষণা, উন্নয়ন এবং ‘স্থাপত্যে ডিজিটাল নকশা এবং বুদ্ধিদীপ্ত নির্মাণ’ অনুশীলনে সিদ্ধহস্ত।
এবছর তারা তাদের বড় আকারের ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার বিশিষ্ট রোবট দেখাচ্ছে যা ব্লকচেইন প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বিত। রোবটিক এই ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারটি বড় আকারের স্থাপনাও প্রিন্ট করতে পারে।
সম্মেলনে রোবটসহ নানা প্রযুক্তি দেখতে শিশুদেরও ভিড় করতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: টুইটার বোর্ডে থাকছেন না ইলন মাস্ক
২ বছর আগে
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এবার রোবট মোতায়েন করছে চীন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শত শত মানুষের মৃত্যুর প্রেক্ষিতে রাস্তার টহল থেকে শুরু করে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করাসহ বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্য এবার রোবট মোতায়েন করছে চীন।
৪ বছর আগে
৪০ হাজার টাকায় রোবট বানালেন কুমিল্লার দুই শিক্ষার্থী
কুমিল্লা, ১৭ সেপ্টেম্বর (ইউএনবি)- কুমিল্লার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী মাত্র ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি রোবট তৈরি করেছেন। স্মার্টফোন দিয়ে পরিচালনা করতে সক্ষম রোবটটি ব্যবহারকারীর কথা শুনতে এবং প্রতিউত্তর করতে পারে।
৫ বছর আগে