অর্থমন্ত্রী
বাজেট ২০২৩-২৪: ভ্রমণ কর বাড়বে
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনসাধারণের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ কমাতে, মিতব্যয়ীতার অভ্যাস গড়ে তুলতে এবং অর্থনীতিতে নতুন রাজস্ব ধারা তৈরি করতে ভ্রমণ কর হার বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন।
বৃহস্পতিবার সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করার সময় তিনি বলেন, ‘এই নীতি একদিকে আমাদের আরও রাজস্ব দেবে এবং অন্যদিকে অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ কমিয়ে ডলার সাশ্রয় করবে।’
বিমান পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও আধুনিকীকরণ এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশে সহায়তা করার প্রয়াসে সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৬ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৯৬৯ কোটি টাকা বেশি, যা ছিল ৫ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা।
বাণিজ্যের সুবিধার্থে এবং বিমান চলাচলের খরচ কমানোর জন্য নিবন্ধিত এয়ারলাইন্স দ্বারা আমদানি করা এয়ারক্রাফ্ট ইঞ্জিন, টার্বো জেট এবং বিমানের যন্ত্রাংশ আমদানিতে অগ্রিম কর অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
এক দশক ধরে চলমান রেয়াতি হারে হোটেল সামগ্রী আমদানির বিদ্যমান প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারেরও প্রস্তাব করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু অনেক বড় মাপের এবং উচ্চ মানের হোটেল ইতোমধ্যে এই সুবিধার অধীনে নির্মিত হয়েছে, তাই শুল্ক কর অব্যাহতি অব্যাহত রাখা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছে। তাই রাজস্ব সুরক্ষার স্বার্থে আমি বিদ্যমান বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছি।’
আরও পড়ুন: সংসদে দেশের সবচেয়ে বড় বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী
বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
বাজেটে বিদেশ থেকে আনা স্বর্ণের জন্য বিদ্যমান শুল্ক দ্বিগুণ করার প্রস্তাব
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশ থেকে আসা প্রতি ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম সোনার জন্য শুল্ক কর দ্বিগুণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল শুল্ক কর বর্তমান ২ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব ঘোষণা করেন।
প্যাসেঞ্জার (ননট্যুরিস্ট) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা, ২০১৬-এর বিধি ৩-এর উপ-বিধি (১০) অনুসারে, একজন যাত্রী বিদেশ থেকে আগমনের সময় ২৩৪ গ্রাম ওজনের সোনার বার বা সোনার টুকরা আমদানি করতে পারেন সমস্ত শুল্ক ও কর পরিশোধ সাপেক্ষে।
দেশে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে অর্থমন্ত্রী এই সুবিধা কমিয়ে সোনার পরিমাণ ২৩৪ গ্রামের পরিবর্তে ১১৭ গ্রাম করার প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, ‘এছাড়াও, আমি ঘোষণার অতিরিক্ত বা যাত্রী দ্বারা লুকিয়ে আনা যে কোনও পরিমাণ সোনা বাজেয়াপ্ত করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করে বিদ্যমান ব্যাগেজ নিয়ম সংশোধন করার প্রস্তাব করছি।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, লাগেজ নিয়মের অধীনে একজন যাত্রীকে বিদেশ থেকে আসার সময় প্রতি ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম সোনার বার বা সোনার টুকরোগুলোর জন্য মোট দুই হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে। আমি প্রতি ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম সোনার বার বা সোনার টুকরার জন্য মোট শুল্ক-কর বাড়িয়ে টাকা ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।
আরও পড়ুন: সংসদে দেশের সবচেয়ে বড় বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী
বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
বাজেট ২০২৩-২৪: ভ্রমণ কর বাড়বে
বাজেট ২০২৩-২৪: সাংস্কৃতিক খাতে ৬৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার তার বাজেট বক্তৃতায় দেশের সাংস্কৃতিক খাতে ৬৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন।
এর মধ্যে ৪৩৭ কোটি টাকা পরিচালন ব্যয়ে এবং ২৬২ কোটি টাকা উন্নয়নে প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে আগের অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে ৬২ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৬৩৭ কোটি টাকা, যা পরে সংশোধন করে ৬৬২ কোটি টাকা করা হয়।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার বাঙালি সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য রক্ষায় নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে এবং ভাষা, সাহিত্য, চারুকলা, সঙ্গীত ও নাটকসহ আরও অনেক কিছুর উন্নয়নে উদ্যোগ নিচ্ছে।
সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা দেশের সাতটি জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও চর্চার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি এবং ঐক্যবদ্ধ সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করছি। গবেষক, চিন্তাবিদ ও সৃজনশীল মননের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নিয়মিত পুরস্কার/ফেলোশিপ দেওয়া হচ্ছে।’
এছাড়া দরিদ্র সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, জাতীয় সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশ, গবেষণা, প্রদর্শন, মুক্তিযুদ্ধ ও সমসাময়িক শিল্প ও সাহিত্যের প্রকাশনা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শনাক্তকরণ, খনন, পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, ভাষা শহীদদের স্মৃতিসহ সৃজনশীল সৃষ্টির কপিরাইট সংরক্ষণ, দিবস ও বাংলা নববর্ষকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২৩-২৪: ভ্রমণ কর বাড়বে
'স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১২,৫০০ ডলার, দারিদ্র্যসীমার ৩ শতাংশের কম হবে'
বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
বাজেটে দাম বাড়ানো ও কমানো হয়েছে যেসব পণ্যের
প্রতি বছরের মতো এবারও বেশ কিছু পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বা শুল্ক পরিবর্তনের সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি সরাসরি এসব পণ্যের দামকে প্রভাবিত করে।
সাধারণত বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই এই পরিবর্তন কার্যকর হবে।
কর অব্যাহতি প্রত্যাহার এবং কিছু ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ কর এবং আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট আরোপের কারণে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
পণ্যগুলো হলো- বলপয়েন্ট কলম, প্লাস্টিক পণ্য, খেজুর, গগলস ও সানগ্লাস, সব ধরনের টিস্যু, মোবাইল ফোন সেট, গ্যাস সিলিন্ডার, সিমেন্ট, ইট, সিগারেট, তরল নিকোটিন, বাসমতি চাল, কাজুবাদাম, আঠা, বিদেশি সফটওয়্যার, বিদেশি লিফট এবং এসকেলেটর, সাইকেল এবং বিদেশি স্যান্ডউইচ প্যানেল, জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মিষ্টি ও মিষ্টি সংক্রান্ত পণ্যের দাম কমতে পারে।
এছাড়াও, হাতে তৈরি বিস্কুট, কেক, শিশুর ডায়াপার ও প্যাড, দেশি এলইডি বাল্ব, সুইচ, মাংস এবং মাংস সংক্রান্ত পণ্য, ই-কমার্সের ডেলিভারি চার্জ এবং অভিজাত বিদেশি কাপড়ের দামও কমতে পারে।
আরও পড়ুন: বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
'স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১২,৫০০ ডলার, দারিদ্র্যসীমার ৩ শতাংশের কম হবে'
প্রস্তাবিত বাজেটে রাষ্ট্রপতির সম্মতি
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট এবং ২০২২-২৩-এর সংশোধিত বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করার সম্মতি দিয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পাঁচ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দেশের ৫২ তম এবং ২৪তম বাজেট পেশ করেছেন।
এই বাজেটটি বর্তমান অর্থমন্ত্রীর টানা পঞ্চম বাজেট।
রাষ্ট্রপতি আজ দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে তার কার্যালয় জাতীয় সংসদ ভবনে (সংসদ কমপ্লেক্স) আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেটের অনুমোদন দিয়েছেন।
এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভবনে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. শামসুল হক টুকু, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ সময় তিনি জাতীয় সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
আরও পড়ুন: 'স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১২,৫০০ ডলার, দারিদ্র্যসীমার ৩ শতাংশের কম হবে'
বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
বাজেটে বিদেশ থেকে আনা স্বর্ণের জন্য বিদ্যমান শুল্ক দ্বিগুণ করার প্রস্তাব
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট: শিক্ষাখাতে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ছিল ৮১ হাজার ৪৪৯ টাকা।
এটি গত বাজেটের তুলনায় ৮ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৩-২৪ সালের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল; যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা খাতের বিপরীতে ছিল ৪১ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের বিপরীতে ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা।
জাতীয় বাজেট উন্মোচনের সময় মন্ত্রী বলেন, “আমরা শিক্ষা পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাকে বিকেন্দ্রীকরণ করছি এবং প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়াতে একটি 'স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান (এসএলআইপি)' বাস্তবায়ন করছি।”
এই পরিকল্পনার আওতায় মাঠ পর্যায়ে আর্থিক ক্ষমতার প্রতিনিধি দল পুনর্গঠন করা হয়েছে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুসহ সমাজের সকল শিশুর জন্য মূলধারার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক স্তরে প্রায় ২৬ হাজার ৩৬৬টি শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। নতুন সৃষ্ট পদসহ মোট ৩২ হাজার ৫৭৭টি পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ ছাড়াও শিক্ষার মান বাড়াতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৫টি কোর ও ৩টি নন-কোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাজেটে বিদেশ থেকে আনা স্বর্ণের জন্য বিদ্যমান শুল্ক দ্বিগুণ করার প্রস্তাব
এ ছাড়া ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে শিক্ষার্থীদের প্রস্তূত করতে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের জন্য ৫০ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগসহ মোট ৫৯ হাজার ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও সাউন্ড সিস্টেম দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৮০০ কর্মকর্তাকে আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ১ লাখেরও বেশি শিক্ষককে ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরির জন্য হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
এই শিক্ষকরা ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন। ফলে শ্রেণীকক্ষের পড়াশোনা আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে এবং শিশুরা ক্লাসে আরও মনোযোগী হচ্ছে বলে জানান কামাল।
এদিকে জরুরি পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য বিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। 'দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং' শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৩৫টি জেলার ১০৪টি উপজেলার ১৫ হাজার ৪৭০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আধুনিক ও মডেল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৩৫১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৩৭১টি বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে। সরকারি স্কুল ছাড়া উপজেলা সদরে অবস্থিত ৩১৫টির মতো বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে মডেল স্কুলে রূপান্তরিত করা হয়েছে।’
জেলা সদরে অবস্থিত সরকারি স্নাতকোত্তর কলেজের জন্য ১৮০টি ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বেসরকারি কলেজ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত ১ হাজার ৬১০টি কলেজের মধ্যে ১ হাজার ৪৭৩টি কলেজে আইসিটি বান্ধব ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
এসইএসডিপি (মাধ্যমিক শিক্ষাখাত উন্নয়ন পরিকল্পনা) এর আওতায় সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় ৬২টি নতুন স্কুলের সঙ্গে ৩৩টি মডেল মাদরাসা স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারি কলেজে বিজ্ঞান শিক্ষা সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ৩৩টি ছাত্রাবাসসহ বিজ্ঞান শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য ১৭৬টি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
তথ্য প্রযুক্তিতে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়াতে এবং পাঠদান পদ্ধতি আধুনিকীকরণের জন্য ২০০৯ সাল থেকে নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ৩৩ হাজার ২৮৫টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং ১১ হাজার ৩০৭টি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও, ভবিষ্যতে ৬৪ হাজার ৯২৫টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং ১২ হাজার ল্যাব স্থাপন করা হবে।
প্রাথমিক স্তরের ২১টি পাঠ্যপুস্তকের ডিজিটাল বিষয়বস্তু এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণির ১৬টি পাঠ্যপুস্তকের ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিজিটাল পাঠ্য সম্পূর্ণ এবং ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। ৭ম ও ৮ম শ্রেণীর ৬টি পাঠ্যপুস্তকের ই-লার্নিং মডিউল এবং ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর জন্য ৬টি পাঠ্যপুস্তকের ই-লার্নিং উপাদান তৈরি ও আপলোড করা হয়েছে। নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ৭১০টি আইসিটি শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীর সমস্ত বিষয়ের শ্রেণীকক্ষের কার্যক্রমের ওপর শিক্ষকদের জন্য অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রশিক্ষণ সামগ্রী তৈরি করা হয়েছে এবং উন্মুক্ত পাঠের মাধ্যমে সমস্ত শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২৩-২৪: স্বাস্থ্য খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ
বাজেট ২০২৩-২৪: সাংস্কৃতিক খাতে ৬৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, চলতি হিসাবের ভারসাম্য বাড়ানো এবং বৈদেশিক মুদ্রার হার স্থিতিশীল করা প্রধান চ্যালেঞ্জ: অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, চলতি হিসাবের ভারসাম্য উন্নয়ন এবং বৈদেশিক মুদ্রার হার স্থিতিশীল করা দেশের অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উন্মোচনকালে তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে, আমাদের বর্তমান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, চলতি হিসাবের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নতি করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার হার স্থিতিশীল করা।’
তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে টেকসই উত্তরণ এবং উত্তরণ-পরবর্তী বাস্তবতা মোকাবিলার কৌশলগুলো এখনই নির্ধারণ করা দরকার। বিশেষ করে শুল্ক যৌক্তিককরণ, রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ, ভর্তুকি/নগদ সহায়তা প্রত্যাহার বা বিকল্প অন্বেষণ ইত্যাদি এখন বিবেচনা করা উচিত।
তিনি উল্লেখ করেন, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয় মেটাতে এবং প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবস্থা করার জন্য জিডিপির শতাংশ হিসাবে রাজস্বের পর্যাপ্ত প্রবৃদ্ধি, সরকারি ব্যয়ের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় অর্থায়ন সহজতর করা এবং দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত।
আরও পড়ুন: শিগগিরই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উন্নতি হবে: বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর আশাবাদ
তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা সম্পর্কে আপনাদেরকে ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য আমরা একটি কৌশল প্রণয়ন করছি।
বাজেট বক্তৃতার সঙ্গে থাকে মধ্যমেয়াদী নীতি কৌশল সম্বলিত ‘মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (এমটিএমপিএস)’।
তিনি বলেন, এই নীতি বিবৃতি আমাদের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জগুলোকে বিবেচনা করে মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যগুলোকে ব্যাখা করে।
আরও পড়ুন: বাজেটে দাম বাড়ানো ও কমানো হয়েছে যেসব পণ্যের
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য তরুণ ও নারীদের প্রস্তুত করতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ
সমস্ত নগদ-ভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ইএফটি’র আওতায় আসবে: অর্থমন্ত্রী
সরকার আগামী অর্থবছর থেকে সমস্ত নগদ-ভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ প্রদানকে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার(ইএফটি) ব্যবস্থার আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে।
বৃহস্পতিবার সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং ভাতা পরিবর্তনের পাশাপাশি আমরা সরকার-ব্যক্তি (জি-টু-পি) পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে আরও লক্ষ্যবস্তু, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক পদ্ধতির প্রবর্তন করেছি।’
আরও পড়ুন: ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এই পদ্ধতির অধীনে ইতোমধ্যেই ২৫টি নগদ-ভিত্তিক প্রোগ্রামের মধ্যে ২২টিতে প্রতিটি সুবিধাভোগী একটি নির্দিষ্ট তারিখে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) এর মাধ্যমে সরাসরি তাদের পছন্দের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল অ্যাকাউন্টে মাসিক ভাতা পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে অবশিষ্ট নগদ-ভিত্তিক প্রোগ্রামগুলোকে জি-টু-পি-এর আওতায় আনা হবে।’ এখন (জি টু পি)-এর মাধ্যমে ৮০ শতাংশের বেশি নগদ-ভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ
১ কোটি ৪৯ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি ১৭৬টি দেশে কাজ করে
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তৃতায় জানান, বিশ্বের ১৭৬টি দেশে ১ কোটি ৪৯ লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন।
তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বিগত ১২ বছরে মোট ৮১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪২ জন কর্মীকে পেশাদার, দক্ষ, আধা-দক্ষ এবং স্বল্প-দক্ষ ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ৭৩টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিকেন্দ্রীকরণ বা সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
একই সময়ে প্রায় ১০ লাখ নারী শ্রমিক বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।
কামাল বলেন, ‘আমরা নতুন শ্রম বাজারের জন্য আমাদের অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছি। এরই মধ্যে মূল গন্তব্যের বাইরে পোল্যান্ড, সেশেলস, আলবেনিয়া, রোমানিয়া, স্লোভেনিয়া, উজবেকিস্তান, বসনিয়া হার্জেগোভিনা ও কম্বোডিয়ার মতো দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হয়েছে’।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২৩-২৪: সাংস্কৃতিক খাতে ৬৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য তরুণ ও নারীদের প্রস্তুত করতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য মোট ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যেখানে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন বাজেট উন্মোচনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বরাদ্দের প্রস্তাব করেন।
বিদায়ী অর্থবছর ২০২২-২৩ সালে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।
বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ মানুষ ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখী করার লক্ষ্যে কয়লা, এলএনজি, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, পটুয়াখালী জেলার পায়রা, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী ও মাতারবাড়ি এলাকায় নির্মিত পাওয়ার হাবগুলোতে মেগা-প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
কয়লাভিত্তিক রামপাল ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল প্রকল্প (১ম ইউনিট) এবং পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে।
মাতারবাড়ি (২x৬০০ মেগাওয়াট) আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য চুক্তির কথা চলছে।
এছাড়া সরকার মোট ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে।
বিদ্যুৎ সংগ্রহে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সংযোগ সম্পর্কে মোস্তফা কামাল বলেন, দেশের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সরকার আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমেও বিদ্যুৎ সংগ্রহ করছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার ০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে আন্তঃদেশীয় গ্রিড সংযোগের মাধ্যমে ভারত থেকে মোট ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।’
এছাড়াও, ভারতের ঝাড়খন্ডে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের ১ম ইউনিট থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করা একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এছাড়াও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই।
আরও পড়ুন: স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য তরুণ ও নারীদের প্রস্তুত করতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ
তিনি আরও বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব।’
বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে সরকার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ ক্লিন এনার্জি থেকে উৎপাদন করতে চায় বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
সারাদেশে মোট আটটি লার পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেল চালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প বসানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে, যার সম্মিলিত ক্ষমতা ৪৯ দশমিক ১৬ মেগাওয়াট।
বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মোট ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
সবচেয়ে বড় কথা, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪টি সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে।
এভাবে সঞ্চালন লাইন এখন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও, বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ রাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎ সিস্টেম লস ১৪ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ট্রান্সমিশন লাইন ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করা।
এছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সঠিক তথ্য সংরক্ষণ এবং বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ (পাঁচ) বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাজেটে দাম বাড়ানো ও কমানো হয়েছে যেসব পণ্যের
জ্বালানি নিরাপত্তা
২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের স্টোরেজ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার টন থেকে ২০২১-২২ সালে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টনে বেড়েছে।
এছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যায়ক্রমে জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা হবে।
ভারতের শিলিগুঁড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত একটি পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে।
এই পাইপলাইনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহ করা সম্ভব বলে জানান মন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন থেকে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাঙ্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন, সম্প্রতি ভোলা জেলার গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট হয়েছে।
তেল ও গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। দেশের একমাত্র তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স ক্ষমতা বৃদ্ধির পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি করেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে।
আশা করা হচ্ছে, সব কূপ খননের পর প্রতিদিন ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। উপকূলীয় এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানও চলছে।
যেহেতু এই কাজের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন, তাই আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।
তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে স্পট বাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি ও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।