অর্থমন্ত্রী
বাজেট ২০২২-২৩: মূল্যস্ফীতিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানো সহ ছয়টি বড় চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে তিনি সম্পূর্ণ বাজেট উপস্থাপন করেছেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্পসমূহ নির্ধারিত সময়ে সমাপ্তি নিশ্চিত করা, স্থানীয় মূল্য সংযোজন করের সংগ্রহ বৃদ্ধি, করদাতা ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি, টাকার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে ঝুঁকিমুক্ত পর্যায়ে রাখাও প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে।
কামাল আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আগামী অর্থবছরে রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বের কারণে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতি কার্যকরভাবে মোকাবিলা করে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে ফিরতে পারবে।
আরও পড়ুুন: বাজেট ২০২২-২৩: ১৫ টাকা কেজি দরে চাল পাবে ৫০ লাখ পরিবার
বৃহস্পতিবার ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করার সময় তিনি সংসদে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে কোভিড-১৯ মহামারি কাটিয়ে তারা দেশের অর্থনীতিকে মূলধারায় ফিরিয়ে এনেছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এবছরের বাজেটের অগ্রাধিকার হল-সব স্তরের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি করা, নিরবচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলার সাথে সাথে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা।
কামাল বলেন, এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আমাদের খুব বাস্তববাদী হতে হবে। কারণ সঠিকভাবে এগুলোর মোকাবিলায় ব্যর্থতা, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে অস্থিতিশীল করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রধান কৌশল হবে চাহিদা হ্রাস করে সরবরাহ বাড়ানো। তাই আমদানি নির্ভর এবং কম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যয় বন্ধ বা হ্রাস করা হবে।
কামাল বলেন, উচ্চ ও মাঝারি অগ্রাধিকারের প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাড়াতে কম অগ্রাধিকারের প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কমানো হবে।
তিনি বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও রাসায়নিক সারের বিক্রয়মূল্য পর্যায়ক্রমে এবং স্বল্প পরিসরে সমন্বয় করা হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রাজস্ব সংগ্রহ কার্যক্রম এবং ভ্যাট ও আয়কর কভারেজ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর সংগ্রহ সংক্রান্ত অটোমেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হবে। বিলাসবহুল এবং কম প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার প্রতিযোগিতামূলক রাখা হবে।
আরও পড়ুুন: বাজেট ২০২২-২৩: রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা
জাতীয় বাজেট উত্থাপন শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী
পদ্মা সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটাবে: কামাল
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেছেন, স্বপ্নের প্রকল্প পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটাবে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করার সময় তিনি সংসদে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়েছে।
আগামী ২৫ জুন সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে শিল্প ও বাণিজ্য সহায়ক পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার মধ্যে একটি পদ্মা সেতু।
আরও পড়ুন: জাতীয় বাজেট উত্থাপন শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী
আরেকটি মেগা প্রকল্প হলো কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। এটির নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে টানেলটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে বলে জানান কামাল।
এরই মধ্যে প্রথম অংশের (বিমানবন্দর-বনানী) প্রায় ৭৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
পুরো প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৪৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। অন্যদিকে, গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেন নির্মাণের ৬৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
এ ছাড়া বিমানবন্দর থেকে মহাখালী পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
কামাল বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া হয়ে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, এ ছাড়া ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কে মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, বরিশাল-ভোলা সড়কে কলাবাদর ও তেঁতুলিয়া সেতু নির্মাণ, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার মিঠামইন সেনানিবাস থেকে মরিচখালী পর্যন্ত দ্বিতল সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, যমুনা নদীর তলদেশে একটি টানেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে এবং চলমান সেতু, ফ্লাইওভার এবং টানেলকে একীভূত করে আরও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং বড় সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আজ বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে: আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী
জাতীয় বাজেট উত্থাপন শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী
কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উত্থাপন শুরু করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী প্রায় ছয় লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন শুরু করেন।
চতুর্থবারের মতো জাতীয় বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।
এটি দেশের ৫১তম এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম বাজেট।
ইউএনবি জানতে পেরেছে, এবারের বাজেটে কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং ক্ষুদ্র খাতের উন্নয়নে কর ছাড়ের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তাজউদ্দীন আহমদ স্বাধীনতা-উত্তর বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রথম অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বাজেট পেশ করেন ১৯৭২ সালে।
আসন্ন বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়।
জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: মন্ত্রিসভায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন
আজ বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী
আজ বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ৮০ ট্রিলিয়নের (৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা) জাতীয় বাজেট উত্থাপন করবেন।
বাজেটের আকার হবে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১৫ শতাংশ।
এটি দেশের ৫১তম এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পাঁচ মেয়াদে ২৩তম বাজেট।
ইউএনবির সূত্র মতে, বাজেটে কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং ক্ষুদ্র খাতের উন্নয়নে কর ছাড়ের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার হার স্থিতিশীল করার ব্যবস্থা রাখার ওপর জোর দিয়েছেন।
আসন্ন বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে।
আরও পড়ুন: বাজেট সাপোর্টে ১৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহের চেষ্টা চলছে: প্রধানমন্ত্রী
আবারও বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে: আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ণে তিনি অর্থনীতিতে বহির্বিশ্বের সৃষ্ট সংকটের চাপের সম্মুখীন হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র যুদ্ধের (রাশিয়া-ইউক্রেন) কারণে অনিশ্চয়তা এবং বাহ্যিক দুর্বলতার কারণে এই চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।’
বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপি) ফলাফল সম্পর্কে ব্রিফ করার সময় তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট আগামী ৯ জুন সংসদে পেশ হওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, যখন দেশের অর্থনীতি কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করছিল, ঠিক তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। যার ফলে বিশ্বব্যাপী এক বিশাল নাজুকতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের প্রতিটি দেশকে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে এবং (এটা করতে গিয়ে) তারা (সব দেশ) চাপের মধ্যে রয়েছে।’
আরও পড়ুন: পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সাধারণ ক্ষমার কথা ভাবছে সরকার: অর্থমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, তবে এই অনিশ্চয়তা ও দুর্বলতাগুলোও সুযোগ তৈরি করবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা চাই অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ হোক।’
কামাল বলেন, বাজেটে তার মূল লক্ষ্য হবে অর্থনীতিকে অনিশ্চয়তা ও দুর্বলতা থেকে পুনরুদ্ধার করা।
তিনি বলেন, ‘আমরা অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনার চেষ্টা করব।’
দেশের আর্থিক খাত দুর্বল নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে বলে সিপিডির পর্যবেক্ষণের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা দেশ।
তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবে একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে অর্থনীতি পরিচালনা করেছি, আমরা যে প্রশাসনিক দক্ষতা দেখিয়েছি, তা বিশ্বে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনন্য।’
তবে তিনি জাতীয় বাজেটের মূল বিষয়গুলো প্রকাশ করতে রাজি হননি মন্ত্রী।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু অপেক্ষা করুন... দেখবেন সময়মতো সংসদে বাজেট পেশ হবে।’
আসন্ন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।
আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কঠিন সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত অর্থমন্ত্রীর
ভর্তুকি বা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার: অর্থমন্ত্রী
আবারও বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ
বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদ কোনো সরকারি সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই যথাক্রমে ১০ বা ১৫ শতাংশ কর প্রদান করে বৈধ করা যাবে।
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে দেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার লক্ষ্যে সরকার এ ধরনের বিশেষ সুযোগ চালু করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
অর্থনীতিবিদরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে বলছেন, এটি সৎ বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করবে, যারা কিনা রাষ্ট্রকে কর প্রদান করে।
অর্থ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবার ইউএনবিকে বলেছেন, ‘দেশে যে পরিমাণ অর্থ আনা হবে তা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স (বিএফআইইউ) দ্বারা আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন ছাড়াই মাত্র ১০ শতাংশ আয়কর দিয়ে বৈধ করা যাবে।
আরও পড়ুন: ২০ দশমিক ৫০ ট্রিলিয়ন টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব বিইএ’র
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের যা বলেছিলেন তা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে অর্থমন্ত্রী বাজেট কর্মকর্তাদের আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এ ধরনের সুযোগ অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
৯ জুন বাজেট প্রস্তাব সংসদে পেশ করা হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ইউএনবিকে বলেন, এই উদ্যোগ সম্পূর্ণ অনৈতিক, বেআইনি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দর্শনের পরিপন্থী।
তিনি বলেন, জাতীয় বাজেটে এ ধরনের বিধান আনার আগে সরকারের উচিত দুদক, এনবিআর ও বিএফআইইউসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বন্ধ করে দেয়া।
দেবপ্রিয় এটিকে ‘বাজেট ক্যাপচার’ হিসাবে অভিহিত করে বলেন, যেসব প্রভাবশালী অবৈধভাবে দেশে অর্থ সংগ্রহ করছে এবং অবৈধভাবে তা দেশের বাইরে পাচার করেছে তাদের এখন নামমাত্র ট্যাক্স দিয়ে সেই অবৈধ অর্জিত সম্পদকে বৈধ করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে।
সিদ্ধান্তটি দেশের হাজার হাজার সৎ করদাতা এবং পরিশ্রমী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বিকৃত তামাশা বলে মন্তব্য করেছেন এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, এই ধরনের অসৎ সিদ্ধান্ত ট্যাক্স সংহতি বা উৎপাদনশীল বিনিয়োগ তৈরিতে অবদান রাখবে না।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা ও পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ প্রধান চ্যালেঞ্জ হতে পারে
সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান ডক্টর মুহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, যারা বৈধ আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ কর দিচ্ছেন এই উদ্যোগ তাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
তিনি বলেন, সৎ করদাতাদের নৈতিক বিষয়টি বিবেচনা করে অবৈধ আয়ের ওপর করের হার দেশে নিয়মিত করের হারের নিচে নেয়া উচিত নয়।
সিদ্ধান্তটি অনুসারে চোরাচালান বা পাচারকৃত কালো টাকা নির্ধারিত হারে কর প্রদানের মাধ্যমে বৈধ করা যেতে পারে।
সূত্র জানিয়েছে, কারো কাছে নগদ টাকা ছাড়াও বিদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি থাকলে তিনি তার আয়কর রিটার্নে সেই সম্পত্তি দেখাতে পারেন। এর জন্য ১৫ শতাংশ কর দেয়া হলে কোনও আইনি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে না।
আরও পড়ুন: জাতীয় বাজেট উপস্থাপন ৯ জুন: মুস্তফা কামাল
চলতি বছরের জুলাই থেকে ৩০ জুন, ২০২৩ পর্যন্ত এই সুযোগ দেয়া হবে।
বর্তমানে নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত, শেয়ারবাজার এবং সঞ্চয়পত্রে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ কর এবং ২৫ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া আসন্ন বাজেটে অর্থ পাচারকে বৈধ করার সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সাধারণ ক্ষমার কথা ভাবছে সরকার: অর্থমন্ত্রী
পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনতে সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য আমরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার কথা ভাবছি।’
বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিইএ) এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরপর দুই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সংসদে জাতীয় বাজেট পেশের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে আরও ঘোষণা দেবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের অর্থ পাচারকারীদের তালিকায় তারেক শীর্ষে: ওবায়দুল কাদের
সাধারণ ক্ষমার বিষয়টি জাতীয় বাজেটে প্রতিফলিত হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘এ উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংক নেবে এবং সার্কুলারের মাধ্যমে ঘোষণা করবে। তবে জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করার আগে আমরা এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দিতে চাই না।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ঘোষণা করেছে কোনো ব্যক্তিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিদেশ থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত মার্কিন ডলার আনতে দেয়া হবে এবং অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করা হবে না; এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
কামাল বলেন, মূলত দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
তবে কী পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে কোন ধারণা দিতে পারছি না কত টাকা পাচার হয়েছে। তবে আমরা গণমাধ্যম এবং অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি উত্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করি।’
আরও পড়ুন: কারা অর্থ পাচার করে জানি না, একটি তালিকা আমাকে দেন: অর্থমন্ত্রী
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ কর অব্যাহতির মতো সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করছে। ‘আমরাও তাই ভাবছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যারা অর্থ পাচার করেছে তারা সরকারের সাধারণ ক্ষমার সুবিধা নেবে। কেননা এটি তাদের জন্য একটি ভালো সুযোগ।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডলারের সংকট রয়েছে। ‘কিন্তু এটি এমন পর্যায়ে নয় যা আমাদের আমদানিকে বাধাগ্রস্ত করবে। আমদানি ব্যবসা চালানোর জন্য আমাদের রিজার্ভে পর্যাপ্ত ডলার আছে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কঠিন সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত অর্থমন্ত্রীর
ঢাকা, ১১ মে (ইউএনবি)-রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক ঝুঁকি শেষ না হলে সরকার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, ‘কঠিন সময়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’
বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন,‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি আগের মতো নেই। বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
আরও পড়ুন: ভর্তুকি বা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার: অর্থমন্ত্রী
কঠিন সিদ্ধান্তের বিষয়ে তার মন্তব্য স্পষ্ট করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে অর্থনীতির চাকা বা আমাদের উন্নয়ন থেমে যাবে।’
তিনি বলেন, সরকার সাময়িকভাবে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ‘তবে আমরা সেই জিনিসপত্র দুই মাস বা ছয় মাস পরে কিনতে পারি।’
অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়া যেতে পারে, তবে বাতিল করা যাবে না বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই ধরনের প্রকল্প পুনর্গঠন করছি যাতে আমরা কার্যকরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারি। আমাদের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি আরও গতি পাবে।’
আরও পড়ুন: বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হবে: অর্থমন্ত্রী
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কবে শেষ হবে তা কেউ বলতে পারবে না।
তিনি বলেন, কোভিড পরিস্থিতি শেষ হয়ে গেছে এবং এখন কোনো দেশে এর নেতিবাচক প্রভাব নেই। এখন সারা বিশ্বে শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিরাজ করছে। সবাই কষ্ট ভাগাভাগি করছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের ঘন ঘন বিদেশ সফর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, যদি এগুলো কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষ বা অপরিহার্য না হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই এ ধরনের সফরের বিরুদ্ধে নির্দেশনা জারি করেছেন।
মুহিতের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল শনিবার
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় শনিবার রাজধানীর গুলশানের কেন্দ্রীয় (আজাদ) মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
পরিবারের সকল সদস্য, বন্ধুবান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীদের দোয়া মাহফিলে উপস্থিত থাকার জন্য তার পরিবার বিনীতভাবে অনুরোধ করছেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ, একজন মুক্তিযোদ্ধা, সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিতের জানাজা সম্পন্ন, মা-বাবার কবরের পাশে দাফন
২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল মধ্যরাতের পরপরই তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
সিলেটের রায়নগরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আবুল মাল আবদুল মুহিত তার স্ত্রী সাবিয়া মুহিত, মেয়ে সামিনা, ছেলে শাহেদ ও সামিরসহ পরিবারের বিপুল সংখ্যক সদস্য, বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
এএমএ মুহিতের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা সম্পন্ন
সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এএমএ মুহিতের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে শনিবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে তার প্রথম নামাজে জানাজা রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। সর্বস্তরের মানুষ যাতে শ্রদ্ধা জানাতে পারে সেজন্য দুপুর ১২টায় তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়। তার মরদেহ এখন সিলেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং রবিবার তাকে দাফন করা হবে।
শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে দীর্ঘ অসুস্থতাজনিত কারণে মুহিত মারা যান বলে ইউএনবিকে জানান তার ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
২০২১ সালের ২৫ জুলাই এমএ মুহিত করোনা আক্রান্ত হন এবং দীর্ঘদিন রোগাক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেন। সবশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসে বার্ধক্যজনিত কারণে তাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুন: এএমএ মুহিতের প্রথম নামাজে জানাজা সম্পন্ন
শোক
মুহিতের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৎকালীন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের সদস্য মুহিত ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান দূতাবাসে চাকরিরত অবস্থায় পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রথম সরকারে যোগদান করেন।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত সফল এ অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ তাঁর স্ব কাজের মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও তার ভাই সাবেক অর্থমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা এএমএ মুহিতের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
পৃথক আরেক বার্তায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও মুহিতের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
মুহিতের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনও।
এক শোকবার্তায় এফবিসিসিআইয়ের প্রধান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার অতুলনীয় অবদানের জন্য জাতি তাকে মনে রাখবে।
তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
কর্মজীবন
আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে টানা ১০ বছর সংসদে বাজেট পেশ করেন মুহিত।
তার আমলেই বাজেটের আকার প্রসারিত হয়।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি মুহিত বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেন।
মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটের ধোপাদিঘীতে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের নেতা এবং সিলেট জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আবদুল হাফিজের তৃতীয় সন্তান।
তার মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীও রাজনীতি ও সমাজসেবায় সক্রিয় ছিলেন।
আরও পড়ুন: প্রতিভাবান অর্থনীতিবিদ এএমএ মুহিত একজন প্রখ্যাত লেখকও ছিলেন
মুহিত দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, আইডিবি, এডিবি ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
তিনি ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রদেশে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
মুহিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ-তে প্রথম হন এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমএ পাস করেন।
চাকরিকালীন তিনি ১৯৫৭ থেকে ৫৮ সাল পর্যন্ত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন এবং ১৯৬৪ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তান, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার এবং তারপর বাংলাদেশ সরকারে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
মুহিত পাকিস্তানের ওয়াশিংটন দূতাবাসের প্রথম কূটনীতিক যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় জুনে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন।
তিনি ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে পরিকল্পনা সচিব এবং ১৯৭৭ সালের মে মাসে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিরাগত সম্পদ বিভাগের সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন।
মুহিত ১৯৮১ সালে চাকরি থেকে অবসরে যান এবং ফোর্ড ফাউন্ডেশন, ইফাদ, জাতিসংঘ,ইউএনডিপি, এডিবি এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক পরামর্শক হিসেবে কর্মজীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করেন।
তিনি ১৯৮২ সালের মার্চ থেকে ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন।
মুহিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের পথিকৃৎ এবং ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত বাপা’র প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ছিলেন।
তিনি ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ২০০৯ সালে সিলেটের নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান ও জনসেবার নিবেদিত রেকর্ডের জন্য মুহিত ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।
আরও পড়ুন: মুহিতের মৃত্যুতে অর্থমন্ত্রীর শোক