বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদ কোনো সরকারি সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই যথাক্রমে ১০ বা ১৫ শতাংশ কর প্রদান করে বৈধ করা যাবে।
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে দেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার লক্ষ্যে সরকার এ ধরনের বিশেষ সুযোগ চালু করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
অর্থনীতিবিদরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে বলছেন, এটি সৎ বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করবে, যারা কিনা রাষ্ট্রকে কর প্রদান করে।
অর্থ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবার ইউএনবিকে বলেছেন, ‘দেশে যে পরিমাণ অর্থ আনা হবে তা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স (বিএফআইইউ) দ্বারা আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন ছাড়াই মাত্র ১০ শতাংশ আয়কর দিয়ে বৈধ করা যাবে।
আরও পড়ুন: ২০ দশমিক ৫০ ট্রিলিয়ন টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব বিইএ’র
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের যা বলেছিলেন তা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে অর্থমন্ত্রী বাজেট কর্মকর্তাদের আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এ ধরনের সুযোগ অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
৯ জুন বাজেট প্রস্তাব সংসদে পেশ করা হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ইউএনবিকে বলেন, এই উদ্যোগ সম্পূর্ণ অনৈতিক, বেআইনি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দর্শনের পরিপন্থী।
তিনি বলেন, জাতীয় বাজেটে এ ধরনের বিধান আনার আগে সরকারের উচিত দুদক, এনবিআর ও বিএফআইইউসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বন্ধ করে দেয়া।
দেবপ্রিয় এটিকে ‘বাজেট ক্যাপচার’ হিসাবে অভিহিত করে বলেন, যেসব প্রভাবশালী অবৈধভাবে দেশে অর্থ সংগ্রহ করছে এবং অবৈধভাবে তা দেশের বাইরে পাচার করেছে তাদের এখন নামমাত্র ট্যাক্স দিয়ে সেই অবৈধ অর্জিত সম্পদকে বৈধ করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে।
সিদ্ধান্তটি দেশের হাজার হাজার সৎ করদাতা এবং পরিশ্রমী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বিকৃত তামাশা বলে মন্তব্য করেছেন এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, এই ধরনের অসৎ সিদ্ধান্ত ট্যাক্স সংহতি বা উৎপাদনশীল বিনিয়োগ তৈরিতে অবদান রাখবে না।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা ও পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ প্রধান চ্যালেঞ্জ হতে পারে
সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান ডক্টর মুহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, যারা বৈধ আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ কর দিচ্ছেন এই উদ্যোগ তাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
তিনি বলেন, সৎ করদাতাদের নৈতিক বিষয়টি বিবেচনা করে অবৈধ আয়ের ওপর করের হার দেশে নিয়মিত করের হারের নিচে নেয়া উচিত নয়।
সিদ্ধান্তটি অনুসারে চোরাচালান বা পাচারকৃত কালো টাকা নির্ধারিত হারে কর প্রদানের মাধ্যমে বৈধ করা যেতে পারে।
সূত্র জানিয়েছে, কারো কাছে নগদ টাকা ছাড়াও বিদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি থাকলে তিনি তার আয়কর রিটার্নে সেই সম্পত্তি দেখাতে পারেন। এর জন্য ১৫ শতাংশ কর দেয়া হলে কোনও আইনি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে না।
আরও পড়ুন: জাতীয় বাজেট উপস্থাপন ৯ জুন: মুস্তফা কামাল
চলতি বছরের জুলাই থেকে ৩০ জুন, ২০২৩ পর্যন্ত এই সুযোগ দেয়া হবে।
বর্তমানে নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত, শেয়ারবাজার এবং সঞ্চয়পত্রে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ কর এবং ২৫ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া আসন্ন বাজেটে অর্থ পাচারকে বৈধ করার সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার।