মিয়ানমার
মিয়ানমারে রাজনৈতিক বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড়
জান্তা সরকার চারজন রাজনৈতিক বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় মঙ্গলবার মিয়ানমারে তীব্র প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারও এর নিন্দা জানাচ্ছে। সেইসঙ্গে আশংকা করা হচ্ছে, সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিকে যে সহিংসতা ও অস্থিরতা ঘিরে রেখেছে তা অবসানের প্রাথমিক প্রচেষ্টা বিফলে যাবে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত নেত্রী অং সাং সুচির কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর থেকে মিয়ানমারের সামরিক সরকারে বিরুদ্ধে হাজার হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। কিন্ত সোমবারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বিগত এক দশকে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় ফরমানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত নোয়েলিন হেজারের সঙ্গে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফু্দ্দিন আব্দুল্লাহ কুয়ালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটি মানবতা বিরোধী অপরাধ।’
তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহে কম্বোডিয়ায় শুরু হতে যাওয়া অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এই মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের ওপর আলোকপাত করা হবে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে ৪ গণতন্ত্রপন্থীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
মিয়ানমার প্রভাবশালী গ্রুপ আশিয়ানের সদস্য। যে গ্রুপ গত বছর সকল পক্ষের সঙ্গে সংলাপে মিয়ানমারের ব্যাপারে পাঁচটি বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছে। এগুলো হলো- মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা করা, দ্রুত সহিংসতা বন্ধ এবং একজন বিশেষ দূতকে সকল পক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো।
এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা উল্লেখ করে সাইফু্দ্দিন আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দেখছি, এই পাঁচটি বিষয়কে সামনে রেখে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জান্তা সরকার সেগুলোর সঙ্গে তামাশা করছে।’
হেজার বলেন, ‘জাতিসংঘ এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে একজন ব্যক্তির বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাকে ক্ষুন্ন করেছে।’
ব্যাংককে মিয়ানমারের দূতাবাসের সামনে প্রবল বর্ষণের মধ্যে শত শত গণতন্ত্রপন্থী পতাকা উড়িয়ে শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমার বিষয়ক আসিয়ানের বিশেষ দূতকে সু চির সঙ্গে দেখা করার আহ্বান
জনাকীর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে এক তরুণ একটি নীল মাইকে চিৎকার করে বলছে, জান্তা তার নৃশংস ক্ষমতা ব্যবহার করছে, বিক্ষোভকারীদের অনেকে অং সান সুচি ও মৃত্যুদণ্ড দেয়া চারজনের ছবি প্রদর্শন করছেন।’
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ফিয়ো জেয়া থো(৪১) সুচির দলের সাবেক একজন আইন প্রণেতা, কিয়ে মিন ইউ(৫৩)প্রবীণ গণতন্ত্রীপন্থী কর্মী যিনি কো জিমি নামে বেশ পরিচিত। তাদেরকে অভিযুক্ত করতে ও মৃত্যুদণ্ড দিতে সামরিক আদালত সব চেষ্টাই করেছে, এমনকি আপিলের কোনো সুযোগও রাখেনি।
মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে রায় কার্যকর করা হয়েছে, যা তাদের পরিবারের সদস্যদেরকেও বিস্মিত করেছে।
ফিয়ো জেয়া থো-এর মা কিন উইন মে সংবাদ সংস্থা এপিকে বলেন, তিনি শুক্রবার তার সন্তানের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন এবং তিনি পড়ার জন্য চশমা, বই ও খরচের জন্য কিছু টাকা দিতে বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি খুবই মর্মাহত হই যখন দণ্ড কার্যকরের খবর শুনতে পেয়েছিলাম, আমি মনে করেছিলাম আরও কিছু সময় পাবো।’
কিন উইন বলেন, তিনি আশা করছেন তার সন্তান ও অন্যদের মৃত্যুকে বীরত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের জন্য গর্বিত, তারা দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।’
এই চার রাজনৈতিক নেতার দণ্ড কার্যকর তাৎক্ষণিকভাবে সারাবিশ্বে ভবিষ্যৎ মৃত্যুদণ্ড বন্ধের দাবি ওঠে এবং রাজনৈতিকভাবে বড় পরিসরে এর নিন্দা জানানো হয়।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো প্রয়োজন: জাতিসংঘ
রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা: আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ
মিয়ানমারের মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো নিয়ে দেশটির শাসকদের অভিযুক্ত করে দায়ের করা মামলা অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে শুক্রবার নেপিডোর প্রাথমিক আপত্তি খারিজ করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে)।
রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতাকে অধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের সমতুল্য বলা হয়েছে। মার্চে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংস দমন-পীড়ন গণহত্যার সমান।
বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন ইউকে-এর সভাপতি তুন খিন এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘ছয় লাখ রোহিঙ্গা এখনও গণহত্যার সম্মুখীন। বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে, তারা ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষা করছে।’
রোহিঙ্গাদের বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষোভের মধ্যে মিয়ানমার গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করছে বলে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া। গাম্বিয়া ও মিয়ানমার উভয়ই কনভেনশনের পক্ষ এবং সব স্বাক্ষরকারীর এটি কার্যকর নিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে বলে যুক্তি দেখায় দেশটি।
মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীরা ফেব্রুয়ারিতে যুক্তি দেন, বিশ্ব আদালত কেবল রাষ্ট্রের মধ্যে মামলার শুনানি করে এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার পক্ষ থেকে গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের অভিযোগ আনায় মামলাটি বাতিল করা উচিত।
তারা আরও দাবি করে, গাম্বিয়া মামলাটি আদালতে আনতে পারে না কারণ এটি মিয়ানমারের ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত না এবং মামলা দায়েরের আগে দুই দেশের মধ্যে আইনি বিরোধ ছিল না।
গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী দাউদা জালো ফেব্রুয়ারিতে বলেন, মামলাটি অগ্রসর হওয়া উচিত এবং এটি ওআইসি নয়, তার দেশই এনেছে।
জ্যালো আদালতকে বলেন, ‘আমরা কারও প্রক্সি নই।’
এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডস ও কানাডা গাম্বিয়াকে সমর্থন করছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হামলার পর ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে একটি ক্লিয়ারেন্স অভিযান শুরু করে। এতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে এবং মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, হত্যা ও হাজার হাজার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে।
তবে গত বছর মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে আইসিজের মামলাটি জটিল হয়ে পড়ে। ফেব্রুয়ারির শুনানিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির সামরিক বাহিনীর গঠিত সরকারকে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।
পড়ুন: রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার এখতিয়ার নিয়ে রায় দেবেন জাতিসংঘের আদালত
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে থাই রাষ্ট্রদূত
মিয়ানমারে ফেরার দাবিতে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ
নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার দাবিতে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পের ২৫টি ক্যাম্পে গো হোম ক্যাম্পেইন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা।
রবিবার উখিয়ার ২৩টি ও টেকনাফের দুটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নির্ধারিত স্থানে সকাল ৮টা থেকে মানববন্ধন ও মিছিল শেষে সমাবেশ শুরু হয়। এতে ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকের রোহিঙ্গারা অংশ নেন। মিছিল ও সমাবেশের মাধ্যমে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে অনুরোধ জানান রোহিঙ্গারা। ‘ব্যাক টু হোম’ স্লোগানে এই বিক্ষোভ সমাবেশে নানা বয়সের রোহিঙ্গারা অংশগ্রহণ করেন।
২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দুর্বৃত্তের গুলি নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ একই দাবিতে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশের নেতৃত্বে ছিলেন।
তবে, এবারের সমাবেশের একক কোনো আয়োজক কিংবা নেতৃত্ব পর্যায়ের কেউ সামনে না এলেও প্রচারপত্রে আয়োজক হিসেবে নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী লেখা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলেই ডাকা, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে আরাকানের গ্রামে গ্রামে প্রত্যাবাসন, প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত প্রত্যেক চুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশ, এনজিও, সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা, বার্মার ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল, সম্পত্তি ফেরত, স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকারসহ ইত্যাদি দাবি উত্থাপন করা হয় এই বিক্ষোভে।
আরও পড়ুন: ১৯ দফা দাবিতে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ
উখিয়ার ৪নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমরা নিরাপদ প্রত্যাবাসন চাই এবং আমাদের আশা এবারের সমাবেশটির মাধ্যমে উত্থাপিত রোহিঙ্গাদের যৌক্তিক দাবিগুলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গুরুত্ব পাবে।
রোহিঙ্গা ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কিন মং বলেন, সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে আমাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই আমরা, সমাবেশে আমরা এই মূল দাবিটাই জানাচ্ছি বিশ্ববাসীর কাছে। বাংলাদেশ সরকার আমাদের আশ্বাস দিয়ে মানবিক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে, আমরা কৃতজ্ঞ।
অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, রোহিঙ্গারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দাঁড়িয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হয়নি।
ক্যাম্পে আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত ৮ এপিবিএন এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) কামরান হোসাইন জানান, ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে। ক্যাম্প এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ৮ এপিবিএনের তৎপরতা সবসময় অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জঘন্য নৃশংসতায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকেরা নির্যাতিত হয়ে জোরপূর্বক বাংলাদেশে বিতাড়িত হয়েছিল, যা ইতিহাসে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে ভয়াবহ দেশত্যাগ হিসেবে বিবেচিত। নির্যাতিত রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাতদফা দাবি উত্থাপন করেছেন।
আরও পড়ুন: অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘আমরা রোহিঙ্গা’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সাক্ষাৎ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ১২ দেশের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা। বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তারা।
সাক্ষাৎ করা অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা হলেন-নাইজেরিয়ার হাইকমিশনার আহমেদ সুলে, এস্তোনিয়ার রাষ্ট্রদূত ক্যাট্রিন কিভি, আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ব্রেন্ডন ওয়ার্ড, রুয়ান্ডার রাষ্ট্রদূত মুকাঙ্গিরা জ্যাকলিন, রোমানিয়ার রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েলা মারিয়ানা সেজোনভ, ডোমিনিকান রিপাবলিকের রাষ্ট্রদূত ডেভিড ইমানুয়েল পুইগ বুচেল, মাল্টার হাইকমিশনার রুবেন গাউসি, কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত আসউইন ইসায়েভ, ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রিতভা কাউকু-রোন্ডে, সিয়েরা লিওনের রাষ্ট্রদূত রশিদ সেসে, হাঙ্গেরির রাষ্ট্রদূত আন্দ্রাস লাসজলো কিরালি ও কলম্বিয়ার রাষ্ট্রদূত মারিয়ানা পাচেকো মন্টেস।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় তাদের উদ্দেশে বলেন, আমরা সবসময় শান্তির পক্ষে রয়েছি এবং বিশ্বজুড়ে শান্তির সংস্কৃতি প্রচলনের জন্য অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছি। শান্তি ও মানবিকতার জন্য আমরা মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের আশ্রয় দিয়ে আমাদের মহানুভবতা দেখিয়েছি।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র কার্যকরে সব দলের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া প্রয়োজন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মিয়ানমারের নাগরিকরা যেন তাদের নিজ দেশ নিরাপদে ফেরত যেতে পারে সে জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে এবং তাদের স্ব স্ব দেশের অবস্থান দৃঢ় করতে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নবনিযুক্ত দূতগণ তাদের দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আব্দুল মোমেন।
রোহিঙ্গাদের আবারও ‘বাঙালি সম্প্রদায়’ বলল মিয়ানমার
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো দমন-পীড়নকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে ঘোষণা দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে রোহিঙ্গাদের জাতিগত হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে তাদের আবারও ‘বাঙালি সম্প্রদায়’ হিসাবে বর্ণনা করেছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি সম্প্রদায়’ বর্ণনা করে জানিয়েছে, মিয়ানমার কখনোই গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়নি এবং কোনো জাতি, ধর্মীয় গোষ্ঠী বা অন্য কোনো গোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করে দেয়ার কোনো গণহত্যার সাথে যুক্ত নেই।
এতে বলা হয়, জাতিসংঘের সনদসহ গণহত্যার অপরাধ প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) সংবিধির একটি পক্ষ হিসেবে মিয়ানমার বিদ্যমান সব বাধ্যবাধকতাকে সম্মান করতে সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করা বিবৃতিতে জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে যা তুলে ধরেছেন সেগুলো বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। তার বক্তব্যে দেয়া রেফারেন্সগুলো অবিশ্বস্ত এবং অপ্রত্যাশিত উত্স থেকে পাওয়া।
মিয়ানমার স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে জানিয়ে বলেছে, এর বিষয়বস্তু এবং বর্ণনাগুলো রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল।
পড়ুন: রোহিঙ্গা নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ ঘোষণা: যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাবাসনে সহায়তা করবে প্রত্যাশা ঢাকার
এদিকে, ফোরটিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথিউ স্মিথ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ঘোষণাকে রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমারের সকল মানুষের জন্য এবং গণহত্যা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যাপক প্রচেষ্টার জন্য ‘ঐতিহাসিক’ অর্জন বলে অভিহিত করেছেন।
ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, ‘গণহত্যা প্রতিরোধ করার জন্য বিশ্বনেতাদের অবশ্যই তা স্বীকার করতে হবে। মার্কিন সরকার আজকে ঠিক তাই করেছে।’
সোমবার ফোরটিফাই রাইটস বলেছে, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উচিত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করা এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) উত্থাপন করে তার নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা।
এর আগে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো দমন-পীড়নকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার ওয়াশিংটনের ইউএস হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে এক অনুষ্ঠানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি এবং সম্ভাব্য আইনি পদক্ষেপের ভিত্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
ব্লিঙ্কেন বলেন, জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ও নিয়মতান্ত্রিক প্রচারণায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতার নিশ্চিত বিবরণের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই ঘোষণা মিয়ানমারের বর্তমান সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে পারে। কারণ ইতোমধ্যে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ‘গণহত্যা’র অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছে জান্তা সরকার।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পর ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
পড়ুন: মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
নৌকাসহ ১৮ বাংলাদেশি জেলেকে আটক করেছে মিয়ানমার
বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার শেষে ফেরার পথে মঙ্গলবার টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের অদূরে ১৮ জেলেসহ বাংলাদেশি চারটি নৌকা ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)।
এ ঘটনার পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপিকে চিঠি দিয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার জানান, জেলেদের ছাড়িয়ে আনতে বিজিপিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।
আটক জেলেরা হলেন টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ জালিয়া পাড়ার মো. জসীম (২৫) একই এলাকার সাইফুল ইসলাম (২৩), মো. ফায়সেল (২৩), আবু তাহের (২২), মো. ইসমাইল (২০), মো. ইসহাক (২৪),আব্দুর রহমান (২৪),নুর কালাম (২৬), মো. হোসেন (২২), হাসমত (২৫), মো. আকবর (২৩), নজীম উল্লাহ (১৯), রফিক (২০), সাব্বির (২৫),মো. হেলাল (২৫), রেজাউল করিম (১৮), রমজান (১৬), জামাল (২১)।
পড়ুন: পদ্মায় জেলেদের জালে ধরা পড়ল ৩৫ কেজির বাগাড় মাছ
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম জানান, সাগরে মাছ শিকারের শেষে ফেরার পথে কাঠবোঝাই ডুবে যাওয়া ট্রলারে উদ্ধারকাজে অংশ নেয় এসব জেলেরা। এতে তারা কিছু কাঠও উদ্ধার করে। পরে জেলেরা ফেরার পথে চারটি নৌকাসহ ১৮ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার বিজিপি। বিষয়টি জানার পর উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবিকে অবহিত করা হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী জানান, নৌকাসহ ১৮ জন বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। তবে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ অবহিত করেনি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।’
পড়ুন: রামপালে জেলেদের জালে কুমির, সুন্দরবনে অবমুক্ত
ঢাকার বাতাস এখনও ‘অস্বাস্থ্যকর’
সবচেয়ে খারাপ বায়ু মানের সর্বশেষ তালিকায় বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে বাংলাদেশের রাজধানী।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫৭ মিনিটে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ১৯৬ রেকর্ড করা হয়েছে।
মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন ও পাকিস্তানের লাহোর যথাক্রমে ২১০ ও ১৭৯ এর স্কোর নিয়ে প্রথম এবং তৃতীয় স্থান দখল করেছে।
বিশেষ করে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য একিউআই ১০১-২০০-এর মধ্যে স্কোর 'অস্বাস্থ্যকর' বলে মনে করা হয়।
আরও পড়ুন: দূষিত শহরের তালিকায় আবারও শীর্ষে ঢাকা
একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে 'খারাপ' বলা হয়, যেখানে ৩০১ থেকে ৪০০ এর স্কোর 'ঝুঁকিরপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের জন্য কোন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে তা জানায়।
বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে- বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ এবং ওজোন (ও৩)।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণে ভুগছে। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকার বায়ু দূষণের তিনটি প্রধান উৎস হল, ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন এবং বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে।
মিয়ানমার বিষয়ক আসিয়ানের বিশেষ দূতকে সু চির সঙ্গে দেখা করার আহ্বান
এশীয় পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর) এর চেয়ার চার্লস সান্তিয়াগো বলেছেন, মিয়ানমার বিষয়ক আসিয়ানের বিশেষ দূত প্রাক সোখনকে নিশ্চিয়তা দিতে হবে যে তিনি অং সান সু চি, ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নেমেন্ট (এনইউজি), সুশীল সমাজ ও দেশটির সকল অংশীজনদের সাথে দেখা করবেন।
মিয়ানমার সম্পর্কে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সাম্প্রতিক মন্তব্যের বিষয়ে শুক্রবার সান্তিয়াগো বলেছেন, ‘আমরা পাঁচ দফায় ঐক্যমতের জন্য জান্তাকে দায়বদ্ধ রাখার বিষয়ে আসিয়ানের অবস্থানকে সম্মান করার জন্য কম্বোডিয়ার অবস্থানকে স্বাগত জানাই।’
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো প্রয়োজন: জাতিসংঘ
এপিএইচআর চেয়ার বলেছেন, তারা মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহর মন্তব্যের দ্বারাও উৎসাহিত হয়েছেন। যিনি আসিয়ানের বিশেষ দূতকে এনইউজি এবং জাতীয় ঐক্য পরামর্শ পরিষদের (এনইউসিসি) প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এপিএইচআর চেয়ার বলেন, আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই সপ্তাহে মিয়ানমারের প্রতিনিধি ছাড়াই মিলিত হয়েছে। তবে আসিয়ানকে অবশ্যই মিয়ানমার সংকটের জন্য একটি অর্থবহ এবং সমন্বিত সমাধানের পথ খুঁজতে হবে, যা মিয়ানমারের জনগণকে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে জান্তা অভ্যুত্থানের বছরপূর্তিতে আটক অর্ধশতাধিক
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব যাচাই ত্বরান্বিত করতে সম্মত বাংলাদেশ-মিয়ানমার
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো প্রয়োজন: জাতিসংঘ
মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে জাতিসংঘের র্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুস মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি পদক্ষেপের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং জান্তার ওপর উল্লেখযোগ্যভাবে আর্থিক চাপ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের বিশেষ এই র্যাপোর্টিয়ার মিয়ানমারে জান্তা বিরোধী বিক্ষোভের একটি ভিডিও প্রকাশ করে এই আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের জনগণ জাতিসংঘের কাছে আরও বেশি প্রাপ্য। গত একবছর হয়ে গেলেও নিরাপত্তা পরিষদ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি।
টম অ্যান্ড্রুজ ‘খুব দেরি হওয়ার আগে’ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ আরও জোরালো করার অনুরোধ করেছেন।
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এখন বেশি বাগাড়ম্বর করার সময় নয়, এটি কার্যকর পদক্ষেপের সময়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই অস্ত্র, অর্থ ও বৈধতার ওপর জান্তার প্রভাব কমাতে কার্যকর ও অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে জান্তা অভ্যুত্থানের বছরপূর্তিতে আটক অর্ধশতাধিক
অ্যান্ড্রুজ বলেন, তিনি শিগগিরই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন যাতে জান্তার অস্ত্রাগারে যে পরিমাণ অস্ত্র লেন-দেন হচ্ছে এবং সেগুলো কোথা থেকে এসেছে তা চিহ্নিত করা যাবে।
অ্যান্ড্রুজ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং সারা দেশে সন্ত্রাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি গণহত্যা, হাসপাতাল এবং মানবিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা এবং গ্রামগুলোতে বোমাবর্ষণ ও জ্বালিয়ে দেয়ার আরও অনেক নতুন তথ্য পেয়েছি।
তিনি বলেন, বড় ধরনের ঝুঁকি ও অসীম কষ্টের মধ্যেও মিয়ানমারের জনগণ তাদের দেশ ও তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে সাহস, দৃঢ়তা এবং অটল প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে সেনা অভুত্থানের ১ বছর: সেনাবাহিনীর ওপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান জাতিসংঘের
গণহত্যা ও জ্বালাও-পোড়াও নীতিতে ফিরে যাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী
মিয়ানমারে জান্তা অভ্যুত্থানের বছরপূর্তিতে আটক অর্ধশতাধিক
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দেশব্যাপী বিক্ষোভ আয়োজনের পরিকল্পনা করে বিক্ষোভকারীরা। অন্যদিকে বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তাবাহিনী কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
সেনা শাসনবিরোধীরা বিক্ষোভের অংশ হিসাবে অসহযোগ কর্মসূচি পালন করে। এসময় তারা শহরগুলোর রাস্তাঘাট ফাঁকা রাখতে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করে এবং সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে তারা ‘নীরব ধর্মঘট’ পালন করে।
পরবর্তীতে গণতন্ত্রপন্থীদের সমর্থকরা হাড়ি-পাতিল বাজিয়ে ও হর্ন বাজিয়ে প্রতিবাদ করার পরিকল্পনা করে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে সেনা অভুত্থানের ১ বছর: সেনাবাহিনীর ওপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান জাতিসংঘের
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অং সাং সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। ২০২০ সালে নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় লাভের পর সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ বছর দেশশাসন করার ম্যান্ডেট পায়।
দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠা বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দেয়ার পর কমপক্ষে ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জান্তা অভুত্থানের এক বছর পূর্ণ হওয়ার বিষয়ে বলেন, মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক শাসন ফিরিয়ে আনতে ও অং সান সু চি ও অন্যান্য বন্দিদেরকে মুক্তি দিতে এবং সকল দলের অংশগ্রহণে কার্যকর সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সু চির আরও ৪ বছরের কারাদণ্ড
সু চির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মামলার রায় স্থগিত