মিয়ানমারের মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো নিয়ে দেশটির শাসকদের অভিযুক্ত করে দায়ের করা মামলা অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে শুক্রবার নেপিডোর প্রাথমিক আপত্তি খারিজ করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে)।
রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতাকে অধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের সমতুল্য বলা হয়েছে। মার্চে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংস দমন-পীড়ন গণহত্যার সমান।
বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন ইউকে-এর সভাপতি তুন খিন এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘ছয় লাখ রোহিঙ্গা এখনও গণহত্যার সম্মুখীন। বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে, তারা ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষা করছে।’
রোহিঙ্গাদের বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষোভের মধ্যে মিয়ানমার গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করছে বলে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া। গাম্বিয়া ও মিয়ানমার উভয়ই কনভেনশনের পক্ষ এবং সব স্বাক্ষরকারীর এটি কার্যকর নিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে বলে যুক্তি দেখায় দেশটি।
মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীরা ফেব্রুয়ারিতে যুক্তি দেন, বিশ্ব আদালত কেবল রাষ্ট্রের মধ্যে মামলার শুনানি করে এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার পক্ষ থেকে গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের অভিযোগ আনায় মামলাটি বাতিল করা উচিত।
তারা আরও দাবি করে, গাম্বিয়া মামলাটি আদালতে আনতে পারে না কারণ এটি মিয়ানমারের ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত না এবং মামলা দায়েরের আগে দুই দেশের মধ্যে আইনি বিরোধ ছিল না।
গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী দাউদা জালো ফেব্রুয়ারিতে বলেন, মামলাটি অগ্রসর হওয়া উচিত এবং এটি ওআইসি নয়, তার দেশই এনেছে।
জ্যালো আদালতকে বলেন, ‘আমরা কারও প্রক্সি নই।’
এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডস ও কানাডা গাম্বিয়াকে সমর্থন করছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হামলার পর ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে একটি ক্লিয়ারেন্স অভিযান শুরু করে। এতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে এবং মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, হত্যা ও হাজার হাজার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে।
তবে গত বছর মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে আইসিজের মামলাটি জটিল হয়ে পড়ে। ফেব্রুয়ারির শুনানিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির সামরিক বাহিনীর গঠিত সরকারকে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।
পড়ুন: রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার এখতিয়ার নিয়ে রায় দেবেন জাতিসংঘের আদালত