সেন্ট মার্টিন
সেন্ট মার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া কিছুই নয়: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাদের দল সেন্টমার্টিন বিক্রির অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর ‘মিথ্যা’ মন্তব্য রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের কৌশল ছাড়া কিছুই নয়।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিএনপিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘বানোয়াট’ বক্তব্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় পড়ে কি না।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কৌশল… ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনিও (হাসিনা) এমন মন্তব্য করেছিলেন। এটি একটি বানোয়াট গল্প যা সে কিছু সুবিধা পেতে তৈরি করেছে। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন না যে এটি বিপরীতমুখী হতে পারে।’
সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে যে দেশের ক্ষতি করতে দ্বিধা করছে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘তারা জানে অন্য দেশ সম্পর্কে তারা কী মন্তব্য করছে তা ভূ-রাজনীতিতে আমাদের প্রভাবিত করতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে প্রভাবিত হয়েছি। আমরা কল্পনাও করতে পারি না কোনো দায়িত্বশীল নেতা, বিশেষ করে যিনি সরকার পরিচালনা করেন, এমন মন্তব্য করতে পারেন।’
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চায় বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী
‘তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই মন্তব্য করেছেন। তাই, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই যে ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা যেতে পারে কি না। বিএনপির বিরুদ্ধে তার মিথ্যা অভিযোগ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় পড়ে কিনা? তার মিথ্যা ও বানোয়াট মন্তব্যের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার সময় এসেছে?
তিনি বলেন, এর আগে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘বিএনপি ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে। এখন তারা দেশ বিক্রি করতে চায়। নাকি তারা সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চায়?
তিনি আরও বলেন, যদি তিনি(প্রধানমন্ত্রী) সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা দেশটি ইজারা দেন তাহলেও তার ক্ষমতায় থাকতে কোনো সমস্যা হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এবং দাবি করেন, বিএনপি এমন একটি দল যারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা আত্মত্যাগ করে আসছে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি দেশ বিক্রি করেছে নাকি দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে এমন প্রশ্ন কেউ তুলতে পারেনি। তবে তাদের (আ.লীগ) বিরুদ্ধে এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজেও বলেছিলেন যে তারা তাদের (ভারত) সবকিছু দিয়েছে… আপনি (প্রধানমন্ত্রী) কেন মানুষকে এত বোকা মনে করেন? তার বোঝা উচিত যে তিনি এই ধরনের মন্তব্য করা থেকে রেহাই পাবেন না।’
তিনি আরও বলেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য বিপজ্জনক। ‘আপনি কি ভাবতে পারেন যে সেই দেশের (মার্কিন) সঙ্গে সম্পর্ক কোথায় দাঁড়াবে?
প্রধানমন্ত্রীর 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' মন্তব্যের মাধ্যমে দেশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য ভিত্তি তৈরির অভিযোগও তোলেন ফখরুল।
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন যে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না বলে নিশ্চিত হয়ে গেছেন বলে তিনি মন্তব্য করছেন কিনা।
বিএনপি নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই একটি নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের কথা শুনতে চায় না কারণ দলটি বুঝতে পারে যে দেশের মানুষ আর মেনে নেবে না।
আরও পড়ুন: বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে আগামী নির্বাচনেও দেশের মানুষ ভোট দিতে পারবে না: ফখরুল
তিনি বলেন, ‘আমি তাকে (হাসিনা) অনুরোধ করতে চাই আপনি দয়া করে মানুষের ভাষা এবং তাদের দাবি, আশা এবং আকাঙ্ক্ষা বোঝার চেষ্টা করুন। মানুষ চায় আপনি এখনই পদত্যাগ করুন। কিছু সুবিধাভোগী এবং যারা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছে তারা ছাড়া কেউই হাসিনাকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’
বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিদেশিদের সাহায্য চাইছে এমন প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে ক্ষমতায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সাহায্য চেয়েছেন।
তিনি বলেন, তাদের দল দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে এবং তারা বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমিও কোনো দেশকে নিতে দেওয়ার পক্ষে নয়। ‘আমরা আমাদের শেষ রক্ত বিন্দু বিসর্জন দিয়েও এই ধরনের যেকোনো পদক্ষেপকে রক্ষা করব। কিন্তু তারা (আ.লীগ) এ ধরনের কর্মকাণ্ড অনেক করেছে।
ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিএনপির কোনো চুক্তি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিরোধী দল কোনো দেশের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে পারে না। ‘চুক্তিগুলো দেশ এবং সরকার থেকে সরকারের মধ্যে সই হয়।
আরও পড়ুন: বিদেশিরা আমাদের আলোচনার জন্য ডাকে, আমরা নিজেরা যাই না: ফখরুল
১ বছর আগে
শীতকালে বাংলাদেশে ভ্রমণের জনপ্রিয় ১০ স্থান
শীতকাল মানেই ভ্রমণের মৌসুম। যে সময়ে নেই ভয়াবহ গরমে ক্লান্ত হবার ভয়, নেই বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত সড়কের ঝামেলা। ক্রমাগত উষ্ণ হতে থাকা বাংলাদেশ, শীতকালে তার চিরাচরিত নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ফিরে পায়। সেই সৌন্দর্যের মোহে আবিষ্ট হয়ে দীর্ঘ শিশির ভেজাপথ হেটে গেলেও ভর করবে না কোনো ক্লান্তি। তাই নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির সময়টিতে দেশ জুড়ে পড়ে যায় বনভোজনের ধুম। চলুন, শীতকালে নিরাপদে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি জনপ্রিয় স্থান সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
এই শীতে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের ১০টি জনপ্রিয় স্থান
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
কথা যখন পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ নিয়ে, তখন সেখানে কোনো সময়ের বাধাই মানা যায় না। তাই বছরের পুরোটা সময়ই দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ থাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অখণ্ড সৈকতে শুধু উত্তাল ঢেউয়ের দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দেয়া যায় সারাটা দিন।
ঢাকা থেকে স্থলপথে বাসযোগে ও আকাশপথে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়। ট্রেনে যেতে হলে আগে চট্রগ্রাম পর্যন্ত যেয়ে সেখান থেকে বাসে করে কক্সবাজার যেতে হবে। চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ অথবা দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে কক্সবাজার যাওয়ার বাস পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন: সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, কক্সবাজার
বাংলাদেশের এই একমাত্র প্রবাল দ্বীপকে স্থানীয়া নারিকেল জিঞ্জিরা বলে ডাকে। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সর্ব দক্ষিণের মাত্র ১৭ বর্গ কিলোমিটারের এই ক্ষুদ্র দ্বীপটির অবস্থান কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে। একদিকে নিঃসীম নীল দিগন্তের কোণে ফেনিল সমুদ্রের মিশে যাওয়া, অন্যদিকে সারি সারি নারিকেল গাছ ঘেরা সাধারণ জীবন ভ্রমণ পিয়াসী মানুষকে অমোঘ আকর্ষণে কাছে টানে।
সেন্টমার্টিন যেতে হলে ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টেকনাফ পৌঁছে সেখান থেকে জাহাজে চড়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক। জাহাজগুলো সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন চলাচল করে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে জাহাজগুলো। আর ফেরত আসে বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে।
কুয়াকাটা, পটুয়াখালী
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দর্শনীয় স্থান কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতের অবস্থান পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার অন্তর্গত লতাচাপলি ইউনিয়নে। কক্সবাজারের মত অভিজাত না হলেও, এখানকার নিরিবিলি বেলাভূমি এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল কুয়াকাটাকে করেছে অনন্য।
আরো পড়ুন: পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার উপায় হচ্ছে নদী ও সড়ক পথ। পূর্বে সবাই ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে পটুয়াখালী বা বরিশাল হয়ে বাকি পথ বাসে কুয়াকাটা যেতো। তখন লঞ্চ ও বাস যোগে পুরো অর্ধেক দিন লেগে যেতো। তবে এখন পদ্মা সেতুর কারণে মাত্র ৫ ঘন্টায় বাসে করে সরাসরি পৌছনো যায় কুয়াকাটায়।
সুন্দরবন, খুলনা
বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী এবং ভারতের কিছু অংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বন। বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ইউনেস্কো স্বীকৃত এই বনাঞ্চলটি বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণের আধার। এখানে জন্মান সুন্দরী বৃক্ষের কারণে সুন্দরবন নামেই বিশ্বখ্যাতি পেয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের এই প্রধান বিচরণক্ষেত্রটি।
এখানে ঘুরতে যেতে হলে অবশ্যই বন অধিদপ্তরে নির্ধারিত ফি দিয়ে অনুমতি ও সাথে নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে নিতে হয়। এর সবগুলো দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার একমাত্র মাধ্যম লঞ্চ ও ছোট জাহাজ।
আরো পড়ুন: নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
সুন্দরবন সাধারণত সবাই খুলনা বা মোংলা হয়ে যেতো। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে এখন সড়কপথেই সুন্দরবন ভ্রমণে যেতে পারছে দেশের হাজারো মানুষ।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মৌলভীবাজার
এক হাজার ২৫০ হেক্টর আয়তনের এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলটির অবস্থান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও আংশিক শ্রীমঙ্গল নিয়ে। দেশের ট্রপিকাল রেইন ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত এই জাতীয় উদ্যানটি জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর নান্দনিক সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন। ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ২৪০ প্রজাতির পাখির আশ্রয়স্থল এই লাউয়াছড়া। বিশেষ করে বিলুপ্ত প্রায় উল্লুকের সবচেয়ে বড় বিচরণ এলাকা হিসেবে এর সুখ্যাতি রয়েছে।
বনের ভেতরে আছে তিনটি ট্রেইল; যেগুলো ট্রেকিং করার সময় খুব কাছ থেকে দেখা যায় বনের সৌন্দর্যকে।
আরো পড়ুন: কাতার ভ্রমণ: বিভিন্ন শহরের শীর্ষস্থানীয় ১০ দর্শনীয় স্থান
ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে করে শ্রীমঙ্গল পৌছে লাউয়াছড়া ভ্রমণ করা যায়।
কুতুবদিয়া দ্বীপ, কক্সবাজার
বাংলাদেশে বাতিঘর দেখতে হলে চলে যেতে হবে কক্সবাজার জেলার ছোট উপজেলা কুতুবদিয়ার এই দ্বীপটিতে। এখানকার প্রাচীন বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষটি এখনো যেন ভাটার সময় পুরানো ইতিহাসের গল্প বলে। ২১৬ বর্গ কিলোমিটারের ছোট এই দ্বীপে আছে নির্জন সমুদ্র সৈকত এবং কুতুব আউলিয়ার মাজার।
বাংলাদেশের একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও প্রাকৃতিক ভাবে লবণ চাষের জন্য এ জায়গাটি বেশ প্রসিদ্ধ। এই দ্বীপ ভ্রমণের জন্য কক্সবাজার থেকে প্রথমে চকরিয়া বাস স্ট্যান্ড আসতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি করে মগনামা ঘাট পৌছে ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে নেমে পড়তে হবে কুতুবদিয়া চ্যানেলে। আর এই কুতুবদিয়া চ্যানেলই পৌছে দিবে কুতুবদিয়া দ্বীপে।
আরো পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
মনপুরা দ্বীপ, ভোলা
ভোলা জেলার এই বিচ্ছিন্ন ভূমিটি সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত এবং হরিণ দেখার জন্য পর্যটকদের প্রিয় স্থান। মেঘনা নদীর ভেতরে ৫০০ মিটার পর্যন্ত স্থাপন করা মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশনে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদের ভীড় থাকে। দ্বীপ ভ্রমণে এসে দর্শনার্থীরা চৌধুরী প্রজেক্টের মাছের ঘের আর সারি সারি নারিকেল গাছের বিস্তৃত এলাকাতেও ঘুরতে আসেন। নদীর ধারে সাইক্লিং কিংবা সবুজের মাঝে ক্যাম্পিং-এর জন্য সেরা জায়গা মনপুরা দ্বীপ।
মনপুরা দ্বীপে যাওয়ার জন্য ঢাকার সদরঘাট থেকে বিকেল ৫টায় লঞ্চে উঠে পড়তে হবে। এছাড়া ঢাকা থেকে থেকে সড়ক পথে ভোলা হয়ে তজুমদ্দিন ঘাটে এসে সি-ট্রাকে করেও মনপুরা দ্বীপে আসা যায়। সি-ট্রাক ছাড়ার সময় বিকাল ৩টা।
নিঝুম দ্বীপ, নোয়াখালী
নোয়াখালীর হাতিয়া অঞ্চলে বঙ্গপসাগর ঘেরা ছোট্ট এই দ্বীপটির আয়তন প্রায় ১৪,০৫০ একর। শীতের মৌসুমে পুরা নিঝুম দ্বীপ ভরে যায় অতিথি পাখিতে। এখানকার সবচেয়ে সেরা আকর্ষণ হচ্ছে চিত্রা হরিণ। একসাথে এত চিত্রা হরিণের দেখা দেশের আর কোথাও পাওয়া যায় না। নিঝুম দ্বীপের নামা বাজার সৈকত থেকে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার ১৪ পাহাড়
সড়ক পথে যে যানবাহনই ব্যবহার করা হোক না কেন, নিঝুম দ্বীপ যেতে হলে প্রথমে পৌছতে হবে চেয়ারম্যান ঘাটে। এখানকার হাতিয়া যাওয়ার সি-ট্রাক বা ট্রলারগুলো নলচিরা ঘাটে নামিয়ে দেবে। এবার মোটর সাইকেল দিয়ে পৌছতে হবে হাতিয়ার অন্য প্রান্ত মোক্তারিয়া ঘাটে। সেখান থেকে ট্রলারে চড়ে নিঝুম দ্বীপ।
তবে সবচেয়ে সেরা উপায় হচ্ছে ঢাকার সদরঘাট থেকে হাতিয়ার লঞ্চে উঠে পড়া। হাতিয়ায় পৌছার পর তমুরদ্দী ঘাট থেকে পাওয়া যাবে সরাসরি নিঝুম দ্বীপের ট্রলার।
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য, হবিগঞ্জ
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গা অবস্থিত সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়। প্রায় এক হাজার ৭৯৫ হেক্টর আয়তনের এই বনভূমিকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় ১৯৮২ সালে। এটি প্রায় ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রায় ৬২ প্রজাতির প্রাণী এবং প্রায় ১৬৭ প্রজাতির পাখির আবাস।
আরো পড়ুন: ভারতের টুরিস্ট ভিসা কীভাবে পাবেন: আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, প্রসেসিং ফি
এই অভয়ারণ্যে আছে অপরূপ সুন্দর তিনটি ট্রেইল, গোটা বনকে এক নজরে দেখার জন্য আছে সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পৌছে টমটমে চড়ে যেতে হবে নতুন ব্রীজ। সেখান থেকে সিএনজিতে চুনারুঘাট মধ্যবাজার পৌছে আরেকটি সিএনজিতে করে কালেঙ্গা বাজার নামতে হবে। তারপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাটলেই অভয়ারণ্যের প্রধান ফটক।
মালনীছড়া চা-বাগান, সিলেট
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা-বাগান এই মালনীছড়া চা-বাগান। এক হাজার ৮৪৯ সালে লর্ড হার্ডসনের তত্ত্বাবধানে এক হাজার ৫০০ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় এই চা-বাগান। বর্তমানে বেসরকারী তত্ত্বাবধানে থাকলেও চা-বাগানপ্রিয় ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বেশ পছন্দের একটি জায়গা হয়ে উঠেছে। কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ানো যায় বাগানে।
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
বাস, ট্রেন অথবা বিমান; এই তিন রুটের যে কোনটি ব্যবহার করে ঢাকা থেকে প্রথমে আসতে হবে সিলেটে। অতঃপর শহরের যেকোন জায়গা থেকে রিক্সা কিংবা সিএনজি যোগে সহজেই পৌছা যাবে মালনীছড়া চা-বাগানে।
শেষাংশ
শীতকালে বাংলাদেশ ভ্রমণের জনপ্রিয় এই ১০টি স্থান হিম শীতল প্রকৃতিকে দারুণ ভাবে উপভোগ্য করে তোলে বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে। তবে এই আনন্দটা ফিকে হয়ে যেতে পারে যদি যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা না হয়। এ সময় যাত্রা শুরুর সময় অবশ্যই সাথে গরম কাপড় নিয়ে নেয়া আবশ্যক। নিয়মিত ওষুধপত্রের সাথে ডেটল, স্যাভলন, ব্যান্ডেজ, তুলার মত কিছু ফার্স্ট এইড সামগ্রি সঙ্গে রাখা উচিত। একটি সুপরিকল্পিত পূর্বপ্রস্তুতিই পারে একটি ভ্রমণকে নিরাপদ নির্ঝঞ্ঝাট করে তুলতে।
২ বছর আগে
টেকনাফ-সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু
দীর্ঘ সাতমাস বন্ধ থাকার পর কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় টেকনাফের দমদমিয়া থেকে ৩১০ জন পর্যটক নিয়ে পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন দ্বীপের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জাহাজটি সেন্ট মার্টিন জেটিতে পৌঁছে। জাহাজ থেকে নামতেই পর্যটকদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুর আহমদের নেতৃত্বে স্থানীয় বাসিন্দারা।
টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, মৌসুমের শুরুতে কেয়ারী ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন জাহাজ কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষামূলকভাবে পর্যটক নিয়ে সেন্ট মার্টিন্স- টেকনাফ নৌরুটে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ জাহাজে করে প্রথম দিন ৩১০ জন যাত্রী সেন্ট মার্টিন দ্বীপে রওনা দিয়েছেন এবং তারা বিকালে যথারীতি সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
তিনি বলেন, পর্যটকদের উঠা-নামার সুবিধার্থে দ্বীপের জেটি সংস্কার করা হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে এ পথে চলাচলকারী অন্যান্য জাহাজও অনুমতি সাপেক্ষে চলাচল শুরু করতে পারে।
আরও পড়ুন: সমুদ্রতীরে ডলফিনের খেলা, বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে পর্যটকদের
এদিকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের খবরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা টেকনাফ ছুটে আসেন। কিন্তু প্রথম দিন একটি মাত্র জাহাজে ধারণ ক্ষমতার কারণে অনেক পর্যটক টিকিট না পেয়ে প্রবাল দ্বীপে যেতে পারেননি।
তবে প্রথম দিনে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার সুযোগ পাওয়া পর্যটকদের খুশির শেষ নেই। সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী তাবাসসুম জান্নাত বলেন, ‘কয়েক দিন আগে গণমাধ্যমে সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরুর খবর পেয়ে পরিবারের সবার সাথে চলে এসেছি। এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে। প্রবাল দ্বীপের সৌন্দর্য্য উপভোগ করবো সবাই।’
সেন্ট মার্টিনে পর্যটক আসার খবরে দ্বীপের হোটেল মোটেলগুলো আগে থেকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। পর্যটন শিল্পে যুক্ত ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের সেবা দিতে নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে যাদের জীবন জীবিকা পর্যটক নির্ভর তারা এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ড ডে ট্যুর: একদিনে ঘুরে আসুন চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মহামায়া লেক
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, মৌসুমের প্রথম দিনে দ্বীপে আগত পর্যটকদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করেছি। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের আগে থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। তাছাড়া কোথাও যেন পর্যটকরা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।
পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনের টেকনাফের ব্যবস্থাপক শাহ আলম বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র পাওয়ায় প্রথমদিনে ৩১০ জন পর্যটক নিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাত্রা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছে না এবং যাত্রীদের কাছ থেকে টিকেটের অতিরিক্ত মূল্য নেয়া হচ্ছে না। আমরা চাচ্ছি পর্যটকরা দ্বীপে আসুক, ভ্রমণ করার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে আরও বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিক। অন্য বছরের তুলনায় এ বছরে আরও বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণে আসবেন বলে আশা করছি।
আরও পড়ুন: বগালেক, দার্জিলিং পাড়া হয়ে কেওক্রাডং মানেই হারিয়ে যাওয়া রূপকথার রাজ্যে
৩ বছর আগে
বাংলা চ্যানেল সাঁতরে পাড়ি দিলেন ৪০ সাঁতারু
বঙ্গোপসাগরে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত বাংলা চ্যানেল হিসেবে পরিচিত ১৬.১ কিলোমিটার সাগরপথ সাঁতরে পাড়ি দিয়েছেন ৪০ জন জলমানব।
৪ বছর আগে
মৌলিক অধিকার বঞ্চিত সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ
সরকারের অবহেলার কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা মৌলিক অধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ দ্বীপটিতে বসবাসকারী বাসিন্দাদের।
৪ বছর আগে
দেশের কোভিডের ক্ষত কাটাতে সাহায্য করতে পারে সমুদ্র পর্যটন, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
বাংলাদেশে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, চট্টগ্রাম বন্দরের মতো পুরনো বন্দর, কক্সবাজার সৈকতের বালুকাবেলা, দৃষ্টিনন্দন টেকনাফ ও আকর্ষণীয় সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। দেশের এ ‘সমুদ্র পর্যটন’ খাত থেকে আসা কোটি কোটি ডলার কোভিডের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে। একে কাজে লাগানোর জন্য সামুদ্রিক টার্মিনালের মাধ্যমে জনপ্রিয় এ পর্যটন স্থানগুলোকে যুক্ত করতে একীভূত উদ্যোগের প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
৪ বছর আগে