ফরিদপুর
সালথায় পাউবোর খাল পুনঃখনন কাজে অনিয়মের অভিযোগ
ফরিদপুরের সালথায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় দুটি খাল পুনঃখননের কাজ শুরু হলেও কাজের মান নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
খনন যন্ত্র নিয়ে (এসকেবেটর) খাল খনন করে মাটি ফেলানো হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের ফসলি জমিতে। এতে সোনলি আশ নামে খ্যাত জমিতে থাকা পাটের ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পাট চাষিরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, খরা মৌসুমে খালে পানি সংরক্ষণ ও কৃষি জমিতে পানি সেচের জন্য ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানি ব্যবস্থা প্রকল্প’র অধীনে গত ২৯ এপ্রিল থেকে পাউবোর উদ্যোগে এ দুটি খালের পুনঃখনন কাজ শুরু হয়।
উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের সিংহপ্রতাপ এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িদিয়া নদী থেকে বাইনাখালি পর্যন্ত ১ হাজার ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রাজাবাড়ি খাল এবং মোড়হাট এলাকা দিয়ে বয়ে যওয়া কুমার নদী থেকে দীঘের বিল পর্যন্ত ১ হাজার ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্য কেষ্টখালি খালের খননকাজ চলছে। এ খনন কাজ বাস্তবায়ন করছেন কুমিল্লার ঝাউতলা এলাকায় অবস্থিত মেসার্স সারা এন্টারপ্রাইজ।
খাল দুটি পুনঃখনন কাজের জন্য ৬৩ লাখ ৬২ হাজার ৪০২ টাকায় বাস্তবায়ন করার কথা তাকরেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ৪১ ভাগ ছাড়ে কাজটি নিয়েছেন ৩৭ লাখ ৫৩ হাজার ৮১৮ টাকায়। এ খনন কাজ আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা। তবে গতকাল ৩০ মে পর্যন্ত ওই কাজের ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন এ কাজের তদারকিতে নিয়োজিত পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী।
গট্টি ইউপির চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাভলু এবং সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য দ্বয় মোশাররফ হোসেন ও শাহজাহান মাতুব্বর অভিযোগ করে বলেন, রাজাখালি ও কেষ্টখালি খাল খনন কাজ করা হচ্ছে দুটি খনন যন্ত্র দিয়ে। কাজের সাইডে প্রকল্পের ঠিকাদার বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো তদারকি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেখা যায় না। কেষ্টখালি ও রাজাবাড়ি খাল খননে উপরে প্রস্থ ৪৪ থেকে ৪৫ ফিট করে কাটার কথা থাকলেও বাস্তবে কোথাও কোথাও ২৫ থেকে ৩৫ ফিট করে কাটা হচ্ছে। খালের তলায় প্রস্থ ১৩ থেকে ১৬ ফিট করে কাটার কথা থাকলেও এটিও ১০ থেকে ১২ ফিট করে কাটা হচ্ছে। খাল দুটির গভীরতা সাড়ে ৩ ফিট থেকে ৮ফিট করে খনন কথা থাকলেও বাস্তবে গভীর করা হচ্ছে ২ থেকে ৪ ফিট।
উভয় খালের দুই পাড়ে বসবাসরত বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়সারা গোছের কাজ করে খালের মাটি ফসলি জমিতে ফেলানোয় পাট, বেগুন-মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। খালের পাড় অত্যন্ত খাড়া করে কাটা হয়েছে। খননের শুরুতেই খালের পাড়ে এলোমেলো করে মাটি রাখা হয়েছে। তাতে সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি ধসে আবার খাল ভরে যাবে।
অভিযোগ রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) লোকজন সঠিক সময়ে তা পরিদর্শন করছেন না।
গট্টি ইউনিয়নের কাউলিকান্দা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক এসকেন মাতুব্বর (৩৯) কেষ্টখালী খালের পাড়ে কৃষকদের ২০ বিঘা জমি রয়েছে। এর মধ্যে ১০ বিঘা জমির পাট খালের কাটা মাটির কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে।
মেম্বার গট্টি গ্রামের বাসিন্দা মো. ওহেদুজ্জামান (৩১) জানান, তার দুই বিঘা জমির ফসল কেষ্টখালী খাল কাটার মাটির নিচে চাপা পড়েছে।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, কেষ্টখালী খালের মাটি রাখার জন্য ওই এলাকার অন্তত ১০ বঘিা জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে।
একই অভিযোগ এসেছে রাজাবাড়ী খাল খনন এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে।
সিংহ প্রতাপ গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম (৪৩) বলেন, রাজাবাড়ী খালের মাটির কারণে তার ১৪ কাটা জমির বেগুন গাছ চাপা পড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ওই খালের মাটি রাখার জন্য ওই এলাকার অন্তত আট বিঘা জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে।
খাল দুটির খনন কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার জাকির হোসেন বলেন, খালের গভীরতা শিডিউল অনুযায়ী শতভাগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে খালের পাশের কিছু জায়গায় ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়ায় শিডিউল অনুযায়ী চওড়া করা যায়নি। কোন কোন জায়গায় কিছু কম করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ কাজ তদারকি করে ওয়াটার বোর্ড টাক্স ফোর্স। আমি একশ ভাগ কাজ করলেও তারা ৯৫ ভাগের বেশি বিল দেয় না।’
কম টাকায় কাজ নেয়ার বিষয়ে ঠিকাদার জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি ব্যবসার দিকে তাকিয়ে কাজ নেইনি, জেদ করে এবং অন্যকে নিতে দেব না এই মনোভাব নিয়ে কাজ নিয়েছি। খালের মাটি রাখায় ফসলের ক্ষতি হওয়ার ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। কেননা এ খাতে কোন টাকা বরাদ্দ নেই।’
এই প্রসঙ্গে ফরিদপুর পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অতনু প্রামাণিক বলেন, ‘পাউবো কাজের তদারকি করছে না এ অভিযোগ সঠিক নয়।
তিনি নিজে, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ পাউবোর কর্মকর্তারা কাজের তদারকি করছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, আপাত দৃষ্টিতে খালের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা সঠিকভাবে করা হচ্ছে বলে তাদের মনে হয়েছে। তবে বিল দেয়ার আগে শিডিউল অনুযায়ী কাজ বুঝে নেয়া হবে। কাজ সিডিউল অনুযায়ী না হলে বিল দেয়া হবে না।
অতনু প্রামাণিক বলেন, খালের মাটি পাশের জমিতেই রাখাতে হবে। তবে মাটির পরিমাণ কম বলে আমরা ইউএনকে দিয়ে জমি ইজারা নেয়ার উদ্যোগ নেইনি।’
ফরিদপুরে দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় প্রায় ১৯ হাজার মানুষ
ফরিদপুর, ২৮ মে (ইউএনবি)- ফরিদপুরের নয় উপজেলায় ১৮ হাজার ৭শ ৩০ ব্যক্তি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের টিকার অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। তবে জেলা প্রশাসক ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে অনিশ্চয়তার কোনও কারণ নেই, দ্রুতই দেওয়া হবে কোভিড-১৯ এর টিকা।
আরও পড়ুন: ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ টিকার সুযোগ আছে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাকের) সভাপতি অ্যাড. শিপ্রা গোস্বামী এ বিষয়ে বলেন, সরকার টিকা আমদানির চেষ্টা ত্রুটি করছে না, তবে প্রথম ডোজ দেওয়ার সময় পরিকল্পনা করার দরকার ছিলো দ্বিতীয় ডোক কত জনকে দেওয়া সম্ভব হবে। তাহলে মানুষের মাঝে অনিশ্চয়তায় সৃষ্টি হতো না।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. ছীদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রাপ্ত কোভিড-১৯ প্রতিরোধক টিকার প্রথম ডোজ দেয়া সম্পন্ন হয়েছে ৬৩ হাজার ৬৬৩ জন ব্যক্তিকে। এর বিপরীতে দ্বিতীয় ডোজ টিকা এখন পর্যন্ত দেওয়া শেষ হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৩৪ ব্যক্তিকে। এরমধ্যে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে ফরিদপুর সদর উপজেলাতে। সদরে দেওয়া হয়েছে প্রথম ডোজ ২০,৮৫৬ ব্যক্তিকে। এখন জেলায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া বাকি রয়েছে ১৮ হাজার ৭৩০ জন।
আরও পড়ুন: দেশে ফাইজারের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন
তিনি বলেন, আমাদের সিরামের টিকা স্টক শেষ হয়েছে তিন দনি আগে। পরে গত দুইদিন পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে ৬০ ভাইরাল সংগ্রহ করে ৬শ ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে। এখন (আজ) আমাদের কাছে কোনো টিকা নেই।
জেলার এই শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, টিকা আনার চেষ্টা চলছে। আশা করা হচ্ছে চলে আসবে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তার কোনও কারণ নেই উল্লেখ করে বলেন, এ ব্যাপারে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।
ফরিদপুরে এক মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে শতাধিক ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড
ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ৫টি গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। হাজার হাজার গাছপালা ভেঙে উপড়ে পড়েছে। বিনষ্ট হয়েছে জমিতে রোপন করা পাটসহ নানা ফসল। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও গাছপালা উপড়ে পড়ার খবর পেয়ে দুই উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
আরও পড়ুন: ভারত উপকূলে আঘাত আনলো ঘূর্ণিঝড় ইয়াস
প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে ধেয়ে আসা এক মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বাসুয়ারকান্দি, রাহুতপাড়া, মেহেরদিয়া ও নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের গহেরপুর, বিবিরকান্দী গ্রামের দেড় শত ঘড়বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে পড়ে। তবে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুন: ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের সম্ভব্য ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রামে প্রস্তুতি সম্পন্ন
খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হাসিব সরকার, নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেতী প্রু।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
মো. ওয়াদুদ মাতুব্বার জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে ধেয়ে আসা এক মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার ৫টি গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। তবে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি। ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
পদ্মার গোলডাঙ্গিতে ১০০ মিটার ভাঙন, হুমকির মুখে ব্রিজসহ কয়েকটি গ্রাম
হঠাৎ করে পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় ফরিদপুর পদ্মা নদীর কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে শহরতলীর গোলডাঙ্গি ও ডিগ্রির চর এলাকায় পদ্মার ১০০ মিটার অংশ ভেঙে পড়েছে। ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ব্রিজসহ কয়েকটি গ্রাম।
আরও পড়ুন: যাদুকাটা নদীর ভাঙনে বিলীনের পথে সুনামগঞ্জের ২ গ্রাম
ভাঙন আতঙ্কে সদর উপজেলার দুই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ। ভাঙ্গনের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়েছেন জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তারা।
এই ভাঙনের বিষয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলছেন, বালু খেকোদের অপরিকল্পিত ভাবে বালু তোলায় এমনটি হয়েছে।
আরও পড়ুন: বালু উত্তোলন: মাগুরায় মধুমতির ভাঙনে দিশেহারা এলাকাবাসী
ফরিদপুরের সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তকুজ্জামান জানান, গত দুই দিনে হঠাৎ করে পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ছোট আলী বিশ্বাসের ডাঙ্গি, বাসির মোল্লার ডাঙ্গি, কাইমুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গি, শুকুর আলী বিশ্বাসের ডাঙ্গিতে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও নর্থ চ্যানেল ও ডিগ্রির চর ইউনিয়নের সীমান্ত গোলডাঙ্গা ব্রীজ এলাকায় ১০০ মিটার নর্দীগর্ভে চলে গেছে।
আরও পড়ুন: মাগুরায় মধুমতির ভাঙনে বসতভিটা, ফসলি জমি বিলীন
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। এই ভাঙন রোধ করতে না পারলে কয়েক হাজার মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, দ্রুতই পদ্মার এ অংশের ভাঙন রোধে কাজ শুরু করার জন্য চেষ্টা করা হবে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
কার্তিক সিকদার হত্যা মামলা: ৩ আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
প্রায় ১৫ বছর আগে ফরিদপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক কিশোরীকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ের পর মেয়ের বাবা কার্তিক সিকদারকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তিন আসামিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
যাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে তারা হলেন- ইমারত মোল্লা, কালাম মোল্লা ও সিদ্দিক মোল্লা।
হাইকোর্টের জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ।
জানা যায়, ফরিদপুরের নগরকান্দার চর যশোরদী ইউনিয়নের যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজ মোল্লা মেঘারকান্দি গ্রামের কার্তিক সিকদারের এক নাবালিকা কন্যা চঞ্চলাকে অপহরণ ও জোর করে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করেন সিরাজ মোল্লা। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ১ জুন রাতে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদলের তখনকার ইউনিয়ন সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজ মোল্লা ও তার সহযোগীরা কার্তিক সিকদারকে ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে ফেলে রেখে যায়। আহত কার্তিককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতেও বাধা দেয়া হয়। পরদিন ২ জুন হাসপাতালে নেয়ার পথে কার্তিক সিকদার মারা যান। এরপর তার মরদেহ পোড়াতে না দিয়ে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়।
এ ঘটনায় ২০০৭ সালের ১৩ মার্চ নিহত কার্তিক সিকদারের স্ত্রী মিলনী সিকদার আদালতে সিরাজ মোল্লা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় নিম্ন আদালত ২০১৯ সালের ২২ জুলাই সিরাজ মোল্লাসহ ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেয়। রায়ের পর আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়। এ অবস্থায় ইমারত মোল্লা, কালাম মোল্লা ও সিদ্দিক মোল্লা হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে গত ১০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট তাদের জামনি দেন। এরপর তারা কারাগার থেকে মুক্তি পান। এ অবস্থায় তাদের জামিন স্থগিত ও গ্রেপ্তারের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
নগরকান্দায় বৃদ্ধা মাকে গোয়ালঘরে আটকে রাখার অভিযোগ
ফরিদপুরের নগরকান্দায় শতবর্ষী এক বৃদ্ধা মাকে পরিত্যক্ত গোয়াল ঘরে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে ওই বৃদ্ধার একমাত্র ছেলের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে অবশেষে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা যায়, নগরকান্দা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের করপাড়া এলাকার রমেন মন্ডল তার শতবর্ষী মা রাজেশ্বরী মন্ডলকে একটি পরিত্যক্ত ঘরে তালাবদ্ধ অবস্থায় আটকে রাখছেন দীর্ঘদিন যাবত। রমেন মন্ডল উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি শেষে সম্প্রতি অবসরে গেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একটি পরিত্যক্ত তালাবদ্ধ ঘরে জরাজীর্ণ অবস্থায় ওই বৃদ্ধাকে রাখা হয়েছে। তালা খুলে দেখা গেছে ওই শতবর্ষী বৃদ্ধা ময়লা আবর্জনার ভিতর তীব্র গরমে কাতরাচ্ছে। ঘরের মধ্যে কোন পাখা নেই, না পাচ্ছে ঠিকমতো খাবার, না পাচ্ছে একটু পানি। একমাত্র ছেলে ও ছেলের বউ আরাম আয়েসে আলিশান ঘরে থাকলেও সেই ঘরে জায়গা হয়নি বৃদ্ধা মায়ের।
দরজার তালা খোলা মাত্রই এই প্রতিবেদককে দেখে হাউমাও করে কেঁদে উঠেন ওই বৃদ্ধা। পরে তাকে উদ্ধার করে ছেলের ঘরে নিয়ে পাখার নিচে বসালে তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।
নগরকান্দা প্রেসক্লাবের সভাপতি বোরহান আনিস বলেন, ‘পৌরসভার করপাড়ায় এক বৃদ্ধাকে আটকে রাখা হয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে ওই বাড়িতে আমি সহ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই ওই বৃদ্ধাকে একটি পরিত্যাক্ত গোয়ালঘরে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা সেখান থেকে ওই বৃদ্ধাকে বের করে নিয়ে আসি।’
তিনি বলেন, ‘ওই বৃদ্ধা খুব ক্ষুধার্ত ছিল, তাকে তাৎক্ষনিক আম খেতে দেয়া হয়। পরে তার ছেলেকে এ বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করলে তিনি তার ভুল স্বীকার করে মাকে আর কষ্ট দিবেন না বলে আমাদের আশ্বস্ত করেন।’
ওই বৃদ্ধার ছেলে রমেন মন্ডল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘দরজা খোলা থাকলে বিভিন্ন দিকে চলে যায় মা। তাই আমি তাকে আটকিয়ে রাখি। আমার ভুল হয়েছে। আমি না বুঝে অনেক বড় ভুল করেছি। এখন থেকে মায়ের যত্ম নেব।’
ফরিদপুরে মুজিব কিল্লার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী
সারাদেশে একযোগে উদ্বোধনের অংশ হিসেবে ফরিদপুর জেলায় ৫টি মুজিব কিল্লার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও ত্রাণ গুদামসহ দুর্যোগ তথ্য কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অনলাইনের মাধ্যমে এই উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়।
এ সময় ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার সংযুক্ত ছিলেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত
তিনি জানান, এই মুজিব কিল্লাগুলো তিনটি টাইপে নির্মিত হবে। একতলা, দুইতলা ও তিনতলা বিশিষ্ট ইমারত নির্মাণ হবে। একাধিক কক্ষ থাকবে, যা বন্যাকবলিত ও অসহায় গৃহহীন মানুষের ব্যবহার করবে। এছাড়া থাকবে নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থা সম্বলিত নলকূপ।
গণভবন থেকে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. আসলাম মোল্লা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায়, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আশিক আহমেদ, সহকারী কমিশনার (গোপনীয়) তারেক হাসান প্রমুখ।
আরও পড়ুন: ৯ বছরেও সংশোধন হয়নি মুজিবনগরে জাতীয় চার নেতার ভাস্কর্যের ভুল তথ্য
সারা দেশে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রসহ ২১৫টি স্থাপনার উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সকল স্থাপনার মধ্যে ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল মৌজায় মুজিব কিল্লা, সদরপুর উপজেলায় খাটারিয়া চর নাছিরপুর মুজিব কিল্লা, ভাঙ্গা উপজেলায় পাতরাইল দিঘির পূর্বপাশে মুজিব কিল্লা, নাছিরাবাদ মুজিব কিল্লা, চরভদ্রাসন উপজেলার চরঝাউকান্দা মুজিব কিল্লার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। একই সাথে জেলা ত্রাণ গুদামসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়।
আরও পড়ুন: মুজিবনগরকে আন্তর্জাতিক মানের স্মৃতিকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে: মন্ত্রী
ফরিদপুরের পেঁয়াজের বাজারে হঠাৎ দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি
ফরিদপু, ২২ মে (ইউএনবি)- ফরিদপুরে রমজান মাসে পেঁয়াজের বাজারদর ছিল বেশ স্থিতিশীল। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই স্থিতিশীর বাজার দর বাড়তে শুরু করেছে। ক্রেতা-ভোক্তরা বলছেন বাজার তদারকি কমে যাওয়া এবং লকডাউনের কারণেই এমনটি ঘটেছে।
ফরিদপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই আস্তে আস্তে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। বর্তমানে বাজারে খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫৫ টাকা দরে। তবে অধিকাংশ খুচরা দোকানদার ৫০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।
আরও পড়ুন: টিসিবির পণ্য: সাতক্ষীরায় পঁচা পেঁয়াজ না নিলে দেয়া হচ্ছে না তেল, চিনি
খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, পাইকারিতে দাম বাড়ায় খুচরায় দাম বেড়েছে। তবে পাইকারি বাজারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ফরিদপুরের পেঁয়াজের অন্যতম বাজার কানাইপুরে শুক্রবার কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা দরে।
ফরিদপুর চেম্বর অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মো: সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘পেঁয়াজের খুচরা বাজারে কেনো দাম বেড়েছে তা বুঝতে পারছি না। তবে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করা হবে। আমরা চাই না কোনও ক্রেতা পণ্য কিনে অসন্তুষ্ট হোক।’
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হয়রত আলী জানান, পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে দেশের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফরিদপুর। সরকারি হিসাব মতে, চলতি মৌসুমে এই জেলায় ৪০ হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৮৫ মে.টন। যা গত বছরের তুলনায় ৮৮ হাজার টন বেশি।
তিনি আরো জানান, ফরিদপুর জেলার নয় উপজেলার মধ্যে পেঁয়াজ চাষের জন্য খ্যাতি রয়েছে সালথা, নগরকান্দা, ভাঙ্গা, বোয়ালমারী, ফরিদপুর সদর, মধুখালী এবং সদরপুর উপজেলা।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ বীজ ফরিদপুরের চাষিদের কাছে ‘কালো সোনা ’
গত মৌসুমে জেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়ে ছিল, ৩৭ হাজার ৬৭৮ হেক্টর, এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ৫ লক্ষ ৫ হাজার মেট্রিকটন। চলতি মৌসুমে ৪০ হাজার ৯৭ হেক্টোর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৮৫ মে.টন।
কেনো হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে পেঁয়াজের যে দাম চলছে সেটি স্থিতিশীল থাকলে কৃষক লাভবান হবে, তবে এর চেয়ে বেড়ে গেলে ক্রেতারা সমস্যায় পড়বে। এই কারণেই বাজার তদারকির ওপর জোড় দিতে হবে।’
ফরিদপুরের কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মণ প্রতি পাইকারি পেঁয়াজের দর বেড়েছে গত কয়েক সপ্তাহে তুলনায় ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা। এতে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে খুচরা বাজারেও।
ফরিদপুর শহরের হাজী শরিয়াতুল্লা বাজারের ক্রেতারা জানালেন, রমজানে খুচরা পেঁয়াজ দাম ছিল ২৫ থেকে ২৮ টাকা কেজি, আর এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫টাকা দরে। এটা কেনো হচ্ছে বিষয়টি প্রশাসনের ক্ষতিয়ে দেখার দরকার।
হাজী শরীয়াতুল্লা বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পেঁয়াজ পাইকারি মণ প্রতি কিনতে হচ্ছে ১৫ থেকে সাড়ে ১৬শ টাকায়। যা রমজানে ছিলো ১১শ টাকা মণ।
আরও পড়ুন: মাগুরায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
এইদিকে শহরতলীর কানাইপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানালেন, রমজানে লকডাউন কঠোর থাকায় মানুষ বের হয়েছে, তাই পেঁয়াজের চাহিদা কম থাকায় দামও কম ছিল। কিন্তু এখন মানুষ ঘর থেকে রেব হওয়া শুরু করেছে পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। এই কারণে দাম বাড়ছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) অতুল সরকার জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা দ্রুতই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলবো, প্রয়োজনে বিভিন্ন বাজারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে বাজার দর নিয়ন্ত্রণের পাশা-পাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
সরকারি বনায়ন ধ্বংসের অপচেষ্টা, পদক্ষেপ নিচ্ছে না বনবিভাগ
ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের চরাঞ্চলে সরকারি খালে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। এর ফলে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে সরকারি বনায়নের গাছগুলো।
এদিকে সরকারি বনায়ন রক্ষায় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
জানা যায়, উপজেলা পদ্মা নদীর চর হরিরামপুর ইউনিয়নের চর শালেপুর চরাঞ্চলে ১০৮ একর জমির ওপর সরকারি বনায়ন করেছে বন বিভাগ। বনায়ন সংলগ্ন একটি খালের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে গত একমাস যাবৎ দিনরাত বালু উত্তোলন করছেন ওই চরের বাসিন্দা প্রভাবশালী ফেরদৌস খান (৪৮)।
বনায়ন সংলগ্ন এলাকায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর কড়াল স্রোতে উপজেলার বৃহৎ সরকারি বনায়নটি বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন যাবৎ ওই প্রভাবশালী সরকারি বনায়ন ঘেষে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে রমরমা বাণিজ্য করলেও স্থানীয়রা তার ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে পারছে না।
উপজেলা বন বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে উপজেলার চরশালেপুর মৌজায় ১০৮ একর খাস জমির উপর বৃহৎ সামাজিক বনায়নটি গড়ে ওঠে। উক্ত বাগানে মোট ৯০ হাজার বনজ বৃক্ষ রোপন করা হয়। এসব বৃক্ষের মধ্যে আকাশ মনি, শিশু গাছ, রেন্ডি কড়াই ও বাবলা বৃক্ষ রয়েছে।
গত ১৫ বছরে চরাঞ্চলের উর্বর ভূমিতে বেশিরভাগ বনজ বৃক্ষগুলো ভারী হয়ে ওঠেছে। কিন্তু পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে বনায়নটি গড়ার ফলে প্রতি বছর স্থানীয় জেলেরা এবং গৃহস্থ্যরা উক্ত বনায়নের ডালপালা কেটে উজার করলেও কেউ তদারকি করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি ওই চরের প্রভাবশালী ফেরদৌস খান বনায়ন ঘেষে খালের মধ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বনায়নটি ধ্বংসের পাঁয়তারায় মেতে উঠেছেন বলে অভিযোগ করে এলাকাবাসী।
চরের বাসিন্দা আসলাম শেখ বলেন, 'চরাঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গা জমি ওই ড্রেজার মালিকের দখলে। ফেরদৌস খানের এসকল অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে আমরা আর এই চরে বসবাস করতে পারব না। তাই সকলেই মুখ বুঝে মেনে নিয়েছি।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরাঞ্চলের এক বাসিন্দা বলেন, ওই প্রভাবশালী চরের সরকারি জমি দখল করে রেখেছে। আমরা ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করি না। এর আগে এক ব্যাক্তি প্রতিবাদ করায় তাকে মারপিট করেছিল প্রভাবশালী ফেরদৌস খান। এ কারণে এখন আর কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলে না।
তিনি বলেন, যেভাবে সরকারি বনায়নের পাশে খালের মধ্যে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে বর্ষা মৌসুমে বনায়নের অনেকাংশই ভেঙ্গে বিলীন হয়ে যাবে। বন বিভাগের লোকজন এখানে না আসায় আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ফেরদৌস খান।
এ ব্যাপারে ড্রেজার মালিক ফেরদৌস খান বলেন, ‘সরকারি বনায়ন ঘেষে খালের মধ্যে আমাদের নিজস্ব জায়গায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু মাটির ব্যবসা করছি, তাতে কারো কোনো আপত্তি থাকার কথা না।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার সবচেয়ে বৃহৎ বনায়নটি পদ্মা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ ভূমিতে গড়ে উঠার কারণে উপজেলার সামাজিক বনায়ন বিভাগের কেউ সেটি তদারকি করতে যান না। ফলে ওই এলাকার প্রভাবশালীরা উন্মুক্ত সামাজিক বনায়নটি নিজেদের প্রয়োজনে উজার করে চলেছেন।
উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, সরকারি বনায়ন ঘেষে খালের মধ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে সেখানে আমি কি করব?
তিনি বলেন, 'ওই সরকারি বনায়নে আমি একবার গিয়েছিলাম। দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় আর যাওয়া হয়নি।'
ফরিদপুরে ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
ইসরাইল বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার দুপুরে মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটোকের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: আল-আকসায় সংঘর্ষে ২০০ ফিলিস্তিনি আহত
এ সময় বক্তরা পবিত্র আল আকসা মসজিদে দখলদার বাহিনীর হামলা বন্ধ ও ফিলিস্তিনিদের জানমাল রক্ষায় জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, আরবলীগ, ওআইসি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের পরাশক্তি গুলোকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: হামাসকে কঠোর হুশিয়ারি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর
ফিলিস্তিন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য মোহাম্মদ আবু জাজ্জার সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী ইব্রাহিম হোসেন সিয়াম, মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান, ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবু মোতালেব, মোহাম্মদ কাওয়াজী, আল হামিদ, ফাহদী, ক্যামেল আবু আমসা বক্তব্য দেন।