পানি
সিরাজগঞ্জে যমুনায় ভেসে গেছে স্পার বাঁধের ৪০ মিটার
যমুনা নদীর পানি বাড়তে থাকায় ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়ে ধসে গেছে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর ১নং সলিড স্পারের অন্তত ৪০ মিটার এলাকা।
শুক্রবার (৭ জুলাই) ভোরে কাজীপুর যমুনা নদীর মেঘাই-এর ১ নম্বর সলিড স্পার এলাকায় এ ধস দেখা দেয়।
এতে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে যমুনা তীর ভাঙনে ৫০টি স্থাপনা ভেসে গেছে
এছাড়া এ বাঁধটি পুরোপুরি ধসে গেলে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গত কয়েকদিন ধরে যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে প্রবল স্রোতে ও ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে শুক্রবার (৭ জুলাই) ভোরে মেঘাই ১ নম্বর সলিড স্পারের কিছু অংশ ধস দেখা দেয়।
তিনি আরও বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় সলিড স্পারের প্রায় ৪০ মিটার ধ্বসে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ধস ঠেকানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সেইসঙ্গে বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
মাহবুবুর রহমান বলেন, যমুনার ভয়াবহ ভাঙন থেকে কাজীপুর উপজেলাকে রক্ষার জন্য তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের প্রচেষ্টায় ১৯৯৭ সালে মেঘাই খেয়াঘাট এলাকায় ৩০০ মিটার এই স্পার বাঁধটি নির্মাণ করা হয়।
পরবর্তীতে ২০১২ ও ২০১৩ সালে স্পারটির মূল অংশের ১৫০ মিটার ধসে যাওয়ার পর মাটির অংশটুকু রক্ষায় সিসি ব্লক ফেলে ঠেকানো সেই অংশের ৪০ মিটার ধসে শুক্রবার ভোরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, স্পার বাঁধটি পুরোপুরি ধসে গেলে কাজীপুর থানা, উপজেলা খাদ্য গুদাম, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, কাজীপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়বে।
তবে স্পার বাঁধটি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে কাজীপুর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী অনিক ইসলাম জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: আবারও ভাঙন ঝুঁকিতে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ
তিস্তার পানি কমলেও দেখা দিয়েছে ভাঙন
তিস্তার পানি বাড়লে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে: এফএফডব্লিউসি
তিস্তা নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)।
বুধবার সংস্থাটি তার নিয়মিত বুলেটিনে জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে। যা ৪৮ ঘণ্টার বেশি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন: পানি বাড়ায় তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়া হয়েছে
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ সকাল ৯টা থেকে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময়ের জন্য কমলগঞ্জ পয়েন্টে ধলাই নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে, খোয়াই ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি কমে যাচ্ছে এবং সোমেশ্বরী ও ধলাই নদীতে যা ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলতে পারে।
সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার চলমান বন্যা পরিস্থিতি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙন, অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলিন
তিস্তার পানি কমলেও দেখা দিয়েছে ভাঙন
সুনামগঞ্জে কমছে নদীর পানি, স্বস্তিতে হাওরবাসী
সুনামগঞ্জের আকাশে রোদের দেখা মিলেছে। তবে মাঝে মাঝে আকাশ মেঘলা হয়ে নামে বৃষ্টি। সপ্তাহখানেক টানা বর্ষণে নদ-নদীর পানি বাড়লেও রোদের দেখা মেলায় পানি কমতে শুরু করেছে। মানুষের মনে ফিরছে স্বস্তি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, আজ বুধবার (৫ জুলাই) দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বন্যায় ১০ গ্রাম প্লাবিত, বৃষ্টি অব্যাহত
গতকাল একই সময়ে এখানে পানি ছিল বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ১০৬ মিলিমিটার। নদ-নদীর পানি কমলেও জেলার কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি থাকায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। টানা ভারী বর্ষণে মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকের মধ্যে গত বছরের মতো ভয়াবহ বন্যা হবে কি না, এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। বন্যার আতঙ্কে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মানুষজন।
এদিকে ধীরে ধীরে পানি কমায় আতংক অনেকটাই কেটে গেছে।
জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ জানান, বন্যা পরিস্থিতির আশংকা থাকায় আমরা দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
বিভিন্ন গ্রামে রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। এখন আকাশে রোদের দেখা মেলায় পানি কমতে শুরু করেছে। এলাকার মানুষজনের মধ্যে ভীতি আর নেই।
বলা যায় এক রকম স্বস্তিতেই আছেন। তারপরেও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে উপজেলা প্রশাসন দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, বৃষ্টি না হলে পানি আরও কমবে। তবে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে।
তিনি আরও বলেন, হাওর-নদী এখন পানিতে পরিপূর্ণ। তাই ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢল নামলে পানি আবারও বাড়তে পারে। তবে বড় বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়লেও সুনামগঞ্জের কোথাও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।
যদি এ রকম পরিস্থিতি হয়, সেটি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া আছে।
আরও পড়ুন: ভারি বর্ষণে সিলেট ও সুনামগঞ্জে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা
সুনামগঞ্জে হাওরে ডুবে ৩ ভাইবোনের মৃত্যু
বীরগঞ্জে পুকুরের পানিতে পড়ে ৭ বছরের শিশুর মৃত্যু
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে নানার বাড়িতে ঈদের দাওয়াত খেতে এসে পুকুরের পানিতে পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত রিফাত (৭) জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের অর্জুনাহার এলাকার নোহাইল গ্রামের শহিদুল ইসলামের বড় ছেলে।
আরও পড়ুন: রাজধানীর হাজারীবাগে মাদরাসার ছাদ থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
জানা গেছে, বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের আব্দুল হাকিম মিস্ত্রির বাড়িতে গতকাল শনিবার তার মেয়েসহ নাতিরা ঈদের দাওয়াত খেতে আসে। রবিবার বিকাল থেকে তার নাতি রিফাত নিখোঁজ ছিল। পরে রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে বাড়ির পিছনের পুকুরে রিফাতের ভাসমান লাশ দেখতে পায় স্বজনেরা।
নিজপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস জানান, খেলতে গিয়ে শিশুটি পুকুরের পানিতে পড়ে যায়।
আরও পড়ুন: পাবনায় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
দিনাজপুরে বালতির পানিতে পড়ে ১৫ মাস বয়সী শিশুর মৃত্যু
সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
টানা চার দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় পাহাড়ি ঢল নেমেছে। এছাড়া উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে হাওড় এলাকার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল, ব্যাহত হচ্ছে গ্রামীণ যোগাযোগ।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে অসময়ে যমুনায় পানি বৃদ্ধি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মামুল হাওলাদার বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে কোনও কোনও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, তবে বৃষ্টিপাত কমে গেলে পানি দ্রুত নেমে যাবে।
এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় ৩৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে জেলা পাউবো। এসময়ে যাদুকাটা, চলতি খাসিয়ামারা, চেলা, মনাই, সোমেশ্বরীসহ সব পাহাড়ি নদীর পানি বেড়েছে। ফলে প্লাবিত হচ্ছে জেলার নিম্নাঞ্চল।
এদিকে সুনামগঞ্জ শহরেরে সাহেববাড়ি ঘাট, কাজির পয়েন্ট, নবীনগর, হাছননগর, নতুনপাড়ায় পানি ঢুকে পড়েছে। সাধারণ জনগণের চলাচলের সড়ক ডুবে হু-হু করে ঢলের পানি ডুকছে হাওর ও নদ-নদীতে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মাকসুদ চৌধুরী বলেন, সুনামগঞ্জে বন্যা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিতে হবে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল
কুড়িগ্রামের নদীর পানিতে ডুবে বর্গাচাষির মৃত্যু
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে সাঁতরিয়ে শাখা নদীর নালা পার হওয়ার সময় পানিতে ডুবে নুর ইসলাম (৫৫) নামে এক বর্গাচাষির মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার (২৮ জুন) ঈদের বাজার করতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নালা পার হয়ে খেয়াঘাটে যেতে তিনি পানিতে ডুবে নিখোঁজ হন।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাবার ইটের আঘাতে ছেলের মৃত্যু!
পরে স্থানীয়রা খোঁজাখুঁজি করে চার ঘণ্টা পর তার লাশ উদ্ধার করে।
নিহত ব্যক্তি চিলমারী ইউনিয়নের চর শাখাহাতী গ্রামের মৃত. মোহর মিস্ত্রীর ছেলে।
নিহতের স্বজনরা বলছেন, নিজ বাড়ি থেকে রমনা ইউনিয়নের জোড়গাছ বাজারে ঈদের বাজার করতে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নালা পার হয়ে চর শাখাহাতী খেয়া ঘাটে যেতে গভীর নালার পানিতে ডুবে নিখোঁজ হন তিনি।
নিখোঁজ ব্যক্তির সঙ্গে বাবলু মিয়া নামে অপর এক ব্যক্তিও নালার প্রান্তে দাঁড়িয়ে তার ডুবে যাওয়া দেখে চিৎকার করলে স্থানীয়রা এগিয়ে এলেও দীর্ঘ চার ঘণ্টা ধরে খোঁজাখুঁজির পর নুর ইসলামের লাশ উদ্ধার করতে সমর্থ হন।
চিলমারী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুরো ঘটনাটি জানতে পারি।
এ ব্যাপারে চিলমারী ফারার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) খবিরুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি আমাদেরকে কেউ জানাননি। এইমাত্র সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারলাম।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে আম পাড়তে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
কুড়িগ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির মৃত্যু
কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে পানি বাড়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
উজানের পাহাড়ি ঢল, টানা বৃষ্টি ও বর্ষার পানিতে কিশোরগঞ্জ হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন নদীতে বাড়ছে পানি। ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন সড়কের অংশ ও ফেরিঘাট। ফলে কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) বন্ধ করে দিয়েছে ফেরি চলাচল। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীরা।
কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষ বছরে ছয়মাস সড়কপথে যাতায়ত করে জেলা শহরে। এবার হাওরে কিছুটা বিলম্বে পানি আসায় বুধবার (২১ জুন) হাওরাঞ্চলের সকল (র্পাঁচটি) ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর।
ইটনা ও মিঠামইন উপজেলার সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠে পড়ায় ফেরি বন্ধ করা হয়েছে। ফলে, চলাচল করেনি গাড়ি, বিপত্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। বালিখলা হতে মিঠামইন পর্যন্ত ও চামড়াঘাট হতে ইটনা পর্যন্ত সড়কে ভেঙে ভেঙে নৌকা ও অটোরিকশা করে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে যাত্রীদের।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে নদীর পানি বৃদ্ধি, প্লাবিত নিম্নাঞ্চল
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় হাওরাঞ্চলে ব্যাপক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, এখনও নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, করিমগঞ্জ-মিঠামইন সড়কের বালিখলা ও কামালপুর ফেরিঘাট, করিমগঞ্জ-ইটনা সড়কের চামড়া ঘাট, বড়িবাড়ি ও বলদা ফেরিঘাট এবং সংশ্লিষ্ট ডুবো সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠে পড়ায় ফেরি বন্ধ করা হয়েছে। এতে, যাত্রীরা ছোট ছোট নৌকা ও অটোরিকশা করে জেলা শহরে যাতায়াত করে।
অষ্টগ্রাম উপজেলার খয়েরপুর-আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের বায়েজিদ মিয়া বলেন, শুষ্ক মৌসুমী আমরা জেলা শহরে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারি। বুধবার মিঠামইন এসে দেখি ফেরি বন্ধ, বাধ্য হয়ে ভিন্নভাবে কিশোরগঞ্জ যেতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: তিস্তার পানি কমলেও দেখা দিয়েছে ভাঙন
মিঠামইন সদর ইউনিয়নের অটোরিকশা চালক মমিন উল্লাহ (২৩) বলেন, সড়ক ডুবে যাওয়ায় আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব। অটোচালিয়ে আমার সংসার চলে। এখন এই পথে মানুষ কম আসবে, রুজিরোজগার কম হবে, বলা যায় বেকার থাকব। কষ্টে চলতে হবে বর্ষার সময়।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বলেন, হাওরের সবগুলো ফেরিঘাট বর্ষার পানিতে তলিয়ে গেছে। হাওরের অনেক রাস্তাঘাটও তলিয়ে গেছে। হাওরাঞ্চলের পরিবেশে ফেরি চালু করার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই, সকল ফেরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে
কুড়িগ্রামে বেড়েই চলেছে নদ-নদীর পানি, বন্যার আশঙ্কা
কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
বুধবার সকাল ৯টায় দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার মাত্র ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বাড়ছে ধরলার পানি তবে কিছুটা কমেছে তিস্তা নদীর পানি।
পানি বাড়ায় নদী অববাহিকার চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বাড়ির চারপাশে পানি উঠে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, এসব এলাকায় মানুষ পানিতে তলিয়ে গেছে সবজি, আমনের চারাসহ পাট।
এদিকে মঙ্গলবার রাত থেকে এ জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত
পানি বাড়ায় তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়া হয়েছে
উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও কয়েকদিন থেকে টানা থেমে থেমে আসা বৃষ্টিতে বাড়তে শুরু করেছে তিস্তা নদীর পানি। আর তাই দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের সব জলকপাট খুলে দিতে বাধ্য হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৯৮ মিটার। সকাল ৯টায় ছিল ৫২ দশমিক ১০ মিটার। যা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার হওয়া স্বাভাবিক।
এর আগে শনিবার (১৮ জুলাই) বিকাল ৩টায় তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৮৪ মিটার।
ব্যারেজ ও নদী তীরবর্তী মানুষ জানান, গত কয়েক দিন থেমে থেমে ভারিবর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বেড়ে যায়। শনিবার ভোর থেকে আরও বাড়তে থাকে নদীর পানিপ্রবাহ। এই পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারেজের জলকপাটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকাল ৩টার দিকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ভারতের গজলডোবায় তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় উজানের ঢেউ বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: তিস্তা নিয়ে কূটনৈতিক যোগাযোগে ভারতের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পায়নি বাংলাদেশ
নদীপাড়ের লোকজন জানান, পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার চরাঞ্চলের ফসলের খেতগুলো ডুবে গেছে। নিম্নাঞ্চলের ফসলের খেতগুলোও ডুবে গেছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন এলাকার কৃষক আ. রহিম মিয়া বলেন, ‘কয়দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। কালকেও পানি বাড়ছিলো। আজকে আবারও বাড়তেছে। আমাদের বাদাম খেত ও পাটখেত ডুবে গেছে।’
পাউবো তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে আপাতত বিপদসীমা অতিক্রম করার কোনো শঙ্কা নেই।’
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে তিস্তার বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। মহিষখোচা এলাকায় ৪৯ কোটি টাকা ব্যায়ে বেরিবাধ করা হয়েছে। এছাড়াও ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
আরও পড়ুন: তিস্তার পানি প্রত্যাহারে ভারতের আরও দুটি খাল খনন পরিকল্পনায় বিএনপির উদ্বেগ প্রকাশ
তিস্তার ধু ধু বালুচরে এখন ফসলের সমারোহ
চাঁদপুরে পানিতে ডুবে দুই বোনের মৃত্যু
চাঁদপুরে পানিতে ডুবে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার কচুয়া উপজেলার গোহাট গ্রামের পুকুরে ডুবে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হলেন- বাবুল হোসেনের মেয়ে ইভা সুলতানা ও ওই গ্রামের আরিফুর রহমানের মেয়ে সায়রা রহমান আদিবা। মেয়ে দুইটি সম্পর্কে চাচাতো বোন।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু
এদের দুইজনের বয়স পাঁচ বছর এবং এরা লতিফিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থী।
স্থানীয়রা জানান, পরিবারের সদস্যদের অনুপস্থিতিতে খেলার সময় শিশুরা পুকুরে পড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের পানিতে ভাসতে দেখে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইব্রাহিম খলিল জানান, পরিবারের সদস্যদের অনুপস্থিতিতে শিশুরা খেলার সময় পুকুরে পড়ে যায়। নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
পাবনায় পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু