৬ষ্ঠ দফা
৬ষ্ঠ দফায় ভাসানচরের পথে ২৪৯৫ রোহিঙ্গা
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ৬ষ্ঠ দফায় ৫ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার ৬ষ্ঠ দফায় প্রথম দিনে নারী-শিশুসহ ২ হাজার ৪৯৫ জন রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে স্বেচ্ছায় ভাসানচর যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্টে এনে খাবার, পানি, ওষধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেন। এরপর দুপুর ১২টায় ৮৮৪ জন, দুপুর ২টায় ৮৯০ জন ও বিকাল ৪টায় ৭১৯ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু বাস যোগে রওনা দেন। মোট ৪৭টি বাস যোগে ২ হাজার ৪৯৫ জন রোহিঙ্গা উখিয়া কলেজ মাঠ থেকে রওনা দিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত।
রোহিঙ্গা মাঝিরা জানান, উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে গিয়ে সেখানকার পরিবেশ, থাকা, খাওয়ার সুবিধা জানালে স্বেচ্ছায় রাজি হয়ে নিবন্ধনের মাধ্যমে এসব রোহিঙ্গারা যাচ্ছে। ভাসানচরে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের কাছে ফোনে যোগাযোগ করে সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত হয়ে আরও অনেক রোহিঙ্গা ভাসানচরে যেতে নিবন্ধন করেছে। বুধবার আরও প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গা যেতে পারে।
কক্সবাজার অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহী ২ হাজার ৪৯৫ জন রোহিঙ্গা ৬ষ্ঠ দফায় ভাসানচরের উদ্দেশে চট্রগ্রামে রওনা দেন। এসব রোহিঙ্গাদের বুধবার চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পতেঙ্গা থেকে জাহাজে করে নোয়াখালীর ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ জানান, উখিয়ার ৭টি ক্যাম্প থেকে স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহীদের মঙ্গলবার ভোর থেকে মিনি বাসে করে উখিয়া কলেজ মাঠ ট্রানজিট পয়েন্টে নিয়ে আসা হয়। এরপর ৩ ধাপে ২ হাজার ৪৯৫ জন রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন। তাদের বুধাবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে করে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে পঞ্চম দফায় কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ১৪ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২ জন, ২৯ ডিসেম্বর ১ হাজার ৮০৪ জন, চলতি বছরের ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় দফায় ৩ হাজার ২৪২ জন, চতুর্থ দফায় ৩ হাজার ১৫ জন ও ৫ম দফায় ৪ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাসহ ১৪ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়াও অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে ২০২০ সালের মে মাসে ভাসানচরে নিয়ে যায় সরকার।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এছাড়া নতুন-পুরনো মিলে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছে। রোহিঙ্গাদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
৩ বছর আগে