গ্রামটি নৌকা গ্রাম নামে পরিচিত
নৌকা গ্রাম: শরীয়তপুরের ৩০ পরিবারের জীবিকা চলে নৌকা তৈরি করে
শহীদুল ইসলাম পাইলট
শরীয়তপুর জেলার সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের চন্দনকর এলাকার এখনও ৩০ পরিবার নিয়মিত নৌকা তৈরি করছেন। নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা। তাই এই গ্রামটি নৌকা গ্রাম নামে পরিচিত।
স্থানীয়রা জানায়, নিচু অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল এই শরীয়তপুর। বর্ষার দিনে বিলে শুধু পানি আর পানি থাকতো। বছরে ছয় মাস পানির নিচে থাকতো এই অঞ্চলে বিভিন্ন এলাকা। তখন মানুষের চলাচলের জন্য ব্যবহার হত নৌকা। এই জেলায় ব্যবহারকৃত নৌকা বেশির ভাগই রুদ্রকরের চন্দনকর এলাকার নৌকা গ্রাম থেকে নিতেন ক্রেতারা। এখানে শুধু নৌকা বানানো হতো বলে এলাকার নাম চন্দনকর বা নৌকা গ্রাম নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে ব্যতিক্রমধর্মী নৌকায় চড়াতে চান লক্ষ্মীপুরের ইউছুফ
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রুদ্রকর ইউনিয়নের চন্দন কর এলাকায় নৌকা তৈরি কাজ চলছে পুরোদমে। ঘরের পাশেই নৌকা বানানোর কাঠ আর বড় জায়গা রয়েছে। সেখানে কাজ করছে নৌকা বানানোর শ্রমিকরা। ছোট থেকে বড় সকল বয়সী মানুষই নৌকা বানানোর কাজ করে। কেউ কাঠ কাটছে, কেউ নৌকায় পেরেক মারছে। নৌকার ডাইসের মাধ্যমেই কাঠ কেটে নৌকার পাটাতন বানাচ্ছে। কেউ কাঠ কাটার পর তা আবার সমান করছেন ডাইসে বসানোর জন্য।
নৌকা বানানোর কারিগররা জানান, একটি ছোট নৌকা বানাতে দুই দিন সময় লাগে আর বড় হলে তিন দিনের প্রয়োজন হয়। আগে গাছের কাঠের দাম কম হওয়ায় নৌকা বানাতে তেমন খরচ পড়ত না। বিভিন্ন মালামাল কিনে ছোট নৌকা বানাতে এখন ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা গুনতে হয়। তাতে ক্রেতারা নিতে কিছু টা হিমসিম খাচ্ছেন। বড় নৌকা বানাতে যা খরচ, তার থেকে কিছুটা কম খরচ হয় মাঝারি সাইজের নৌকা বানাতে।
ক্রেতারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রামেই নৌকা বানানোর কাজ করে আসছে কিছু পরিবার। তাদের মধ্যমেই নৌকা তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতা বা নৌকা বিক্রেতারা। আগে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দিয়ে বড় একটি নৌকা পাওয়া যেত। এখন সেই নৌকা কিনার জন্য গুনতে হচ্ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাও খাজনা ও ভাড়া ছাড়া। এতে করে নৌকা কিনে ব্যবহার করা গেলেও কিনে বিক্রি করাটা অনেক সমস্যার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নৌকা মিস্ত্রী সঞ্জয় মন্ডল বলেন, ‘বাবার হাত ধরে কাঠের কাজ শিখেছি। আর অন্য কোনও কাজ করতে পারি না। এই নৌকা বানানোর বছরে তিন থেকে চার মাস চাহিদা থাকে। এটির চাহিদা শেষের পর গ্রামে গিয়ে গিয়ে কাঠের কাজ করি। কিন্তু করোনা আসার পর কাজ অনেকটা নাই বললেই চলে। কষ্ট করে নৌকা বানিয়ে তারপর সংসার চালাতে হয়।’
৩ বছর আগে