সাবেক ভৈরব নদী
সেতু এখন মানুষের গলার কাঁটা!
সেতু আছে রাস্তা নেই। অথচ যানবাহন ওঠা-নামা ও জনসাধারণ চলাচলে সংযোগ সড়ক থাকা বাধ্যতামূলক। রূপসার ঘাটভোগ ইউনিয়নের সাবেক ভৈরব নদীর ওপর নির্মিত ‘তালতলা সেতুটি’ এখন এ অঞ্চলের মানুষের গলার কাঁটা হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার সাবেক ভৈরব নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল ‘তালতলা সেতু’। যার মাধ্যমে উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়ন ও টিএসবি ইউনিয়নবাসীর অনেকদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণের দীর্ঘদিন অতিক্রম হওয়ার পর সেতুর এ্যাপ্রোচ রোড (দুই পাশের রাস্তা) না থাকায় সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন করার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বিল তুলেছেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী জিয়াউল হাসান টিটু বলেন, ‘সেতুর এ্যাপ্রোচ রোডের জমি নিয়ে জটিলতার কারণে আমরা কাজ করতে পারছি না। জমি অধিগ্রহণ নিয়েও কিছুটা জটিলতা রয়েছে। এছাড়া বর্ষার কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। খুব দ্রুত জমির সমাধান না হলে নকশা অনুযায়ী আমরা রাস্তার কাজ করব।’
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সেতু নির্মাণের ফলে দু’টি ইউনিয়নের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি এলাকাবাসীর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কিন্তু সেতু নির্মাণের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর দুই পাশের রাস্তা নির্মাণ করেনি। সেতুর ঘাটভোগ ইউনিয়নের নারখেলী চাঁদপুর অংশের রাস্তা নির্মাণে জটিলতার সৃষ্টির কারণে বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ জানান, নকশা অনুযায়ী রাস্তা করলে কোনো ভারি যানবাহন সেতু থেকে ওঠা-নামা করতে পারবে না। এমনকি ইজিবাইকও সেতুর ওপর উঠতে মারাত্মক কষ্ট হবে। সেতু থেকে নেমেই চাঁদপুর অংশে যে কার্ভ রয়েছে, সেটাই মূলত সব সমস্যার কারণ। এ জন্য সেতুর রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার পরও রাস্তার কাজ করা হচ্ছে না।
জানা যায়, ‘তালতলা-আলাইপুর- শেখপুরা এফআরবি (পালঘাট) সড়কে ১ হাজার মিটার চেইনেজ ৪০ মিটার দীর্ঘ পিএসসি গার্ডার সেতু’ (স্থানীয়ভাবে তালতলা সেতু নামে পরিচিত) নির্মাণের প্রকল্প ব্যয় ৩ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। এটির ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর নির্মাণের কাজ পেয়েছিলেন যৌথভাবে মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্স এ্যান্ড মেসার্স কামরুল এন্টারপ্রাইজ। সেতুটি নির্মাণ শেষ হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেন। অসম্পূর্ণ রয়েছে সেতুর দুই পাশের এ্যাপ্রোচ রোডের ২০০ মিটারের কাজ, যা চওড়া হওয়ার কথা ২৪ ফুট।
নারিকেলি চাঁদপুর এলাকার বাসিন্দা তুষার কুমার পাল বলেন, ‘সেতু নির্মাণ শেষ হয়েছে অনেক আগে। গেল রোজার ঈদ থেকে কাজ বন্ধ। সেতু হইছে, কিন্তু রাস্তা নির্মাণের কোনো খবর নেই। রাস্তাটি নির্মাণ হলে তালতলা ও নারখেলী চাঁদপুর গ্রামসহ দু’টি ইউনিয়নের মানুষ উপকৃত হবে।’
পড়ুন: কুয়েট শিক্ষার্থীরা তৈরি করলেন ‘কিলোফ্লাইট আলফা’ গাড়ি
ঘানিই যাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন
নারিকেলী চাঁদপুর এলাকার বাসিন্দা লিটন পাইক বলেন, ‘সংযোগ সড়ক হলে এই এলাকার মানুষ অল্পসময়ের মধ্যে কাজদিয়া উপজেলা সদরে যেতে পারবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেতুর কাজ শেষে হয়ে গেছে অনেক আগে কিন্তু সংযোগ সড়কের কোনো অগ্রগতি নেই। আর সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি এখন এলাকাবাসীর কাছে গলার কাঁটা হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে।’
একই এলাকার শোভা রানী পাল বলেন, সেতু আছে কিন্তু রাস্তা নেই, তাহলে এই ব্রীজের কি কোনো মূল্য আছে?
স্থানীয় ইউপি সদস্য বিনয় হালদার বলেন, সেতুর রাস্তা নির্মাণে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। কয়েক দফা রাস্তা এ্যাকোয়ারের জন্য জমি মাপামাপিও হয়েছে।
রূপসা উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ওয়াহিদুজ্জামান জানান, সেতুর নারখেলী চাঁদপুর অংশের রাস্তার কার্ভ সংশোধন ও সেতুর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ১২৫ শতক জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে। ফাইলটি বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের রয়েছে। এটার অনুমোদন হলে ১৭-১৮ লাখ টাকা ব্যয় বাড়তে পারে। আর যদি অনুমোদন না হয় তবে নকশা অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে বলা হবে।
আরও পড়ুন: প্রধান শিক্ষক এখন চায়ের দোকানদার
এক পায়ে দড়ি লাফে জোড়া বিশ্ব রেকর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের রাসেলের
৩ বছর আগে