আফরিনা
৪০ নোবেল বিজয়ীর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পেলেন চৌদ্দগ্রামের মেয়ে আফরিনা
বিশ্বে এ যাবতকালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ৪০ জন বিজ্ঞানীর সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা গ্র্যাজুয়েট খন্দকার আফরিনা হক।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মেয়ে আফরিনা চৌদ্দগ্রামের মিয়ার বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও কুমিল্লা মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে।
লিন্ড্যাও নোবেল লরিয়েটের ৭১ তম মিলনমেলায় যোগ দিতে জার্মানিতে যাবেন তিনি। যেখানে ৪০ জন নোবেল বিজয়ীর সাথে সাক্ষাতের পাশাপাশি তিনি রসায়নে বিশ্বের সেরা ৬০০ বিজ্ঞানীর সাথে নিজের গবেষণা অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পাবেন।
তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় ব্যাচ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে এম ফিল করছেন।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী নারীরা: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের পৃষ্ঠপোষকতায় নানা যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশ থেকে মনোনীত কয়েকজনের মধ্যে মাত্র দুইজনকে এবার আমন্ত্রণ জানিয়েছে লিন্ড্যাও নোবেল লরিয়েট কমিটি। তাদেরই একজন খন্দকার আফরিনা হক।
এই আমন্ত্রণ পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে খন্দকার আফরিনা হক বলেন, ‘এতো বড় কোনো সুযোগ পাবো সেটা ভাবিনি। এটা স্বপ্নের মতো।যারা রসায়নে নোবেল পেয়েছেন তারা তো পুরো পৃথিবীর সেরাদের সেরা। তাদের সামনে থেকে দেখাই তো ভাগ্যের ব্যাপার। তার মধ্যে আমি আবার তাদের সাথে নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পাচ্ছি এটা অকল্পনীয়।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে এ যাবতকালে সর্বোচ্চ ফলাফলধারী আফরিনা হক শুরু থেকেই ছিলেন গবেষণামুখী। স্নাতকে ৩.৮৯ এবং স্নাতকোত্তরে ৩.৯২ পেয়ে অসাধারণ ফলাফল করা আফরিনা পূর্বের গবেষণা প্রকাশনা এবং রসায়নে আরও গবেষণার আগ্রহের কারণে এই আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
আফরিনা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির শুরু থেকেই পড়াশোনা এবং গবেষণার প্রতি আগ্রহ ছিল। কুবি থেকেই আমার গবেষণার হাতেখড়ি। এখন বুয়েটে আল নকীব চৌধুরী স্যারের অধীনে গবেষণা করছি। তিনিই আমাকে এই ইভেন্টে আবেদন করতে বলেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘স্যার যে আমাকে এটার জন্য যোগ্য ভেবেছেন তাতেই আমি আনন্দিত ছিলাম। শেষ পর্যন্ত লিন্ড্যাও নোবেল লরিয়েট কমিটি থেকে যখন আমন্ত্রণও পেয়ে গেলাম তখন সেটা আমার কাছে কতো বড় ব্যাপার তা শব্দ দিয়ে বোঝানো সম্ভব না।’
লিন্ড্যাও নোবেল লরিয়েট মিটিংয়ের এবারের মিলনমেলায় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আফরিনার মতো এমন তরুণ ও যোগ্য এক হাজার রসায়ন গবেষক যোগদানের সুযোগ পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: প্রবাসীদের আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
এই সুযোগ পেতে কী কী মাপকাঠি পূর্ণ করতে হয়েছে জানতে চাইলে আফরিনা বলেন, ‘তারা মূলত দেখেছে একাডেমিক ফলাফল কেমন, গবেষণার দক্ষতা এবং আগ্রহ। আমি এগুলো দিয়েই আবেদন করেছিলাম।’
আফরিনা বলেন, ‘আমি আমার শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারাই আমাকে গড়েছেন আর আমি আমার পরিশ্রম করেছি, পড়াশোনা করেছি। তারই ফলাফল পেলাম।’
আফরিনার এমন সাফল্যে খুশি তার শিক্ষকেরাও। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. সৈয়দুর রহমান বলেন, ‘আফরিনা শুরু থেকেই মেধাবী ও পরিশ্রমী ছিল। গবেষণার প্রতি ঝোঁক ছিল। লিন্ড্যাও নোবেল লরিয়েটে উদীয়মান রসায়নবিদ হিসেবে তার এই আমন্ত্রণ পাওয়ার সংবাদ বিভাগের জন্য খুবই গর্বের। এমন শিক্ষার্থীরাই বিভাগের সম্পদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তারকা। আমরা তার আরও সাফল্য প্রত্যাশা করি।’
উল্লেখ্য, লিন্ড্যাও নোবেল লরিয়েট মিটিংগুলো শরীরবিদ্যা, চিকিৎসা, পদার্থবিদ্যা এবং রসায়ন এই তিনটি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কারের বিষয়ে ফোকাস করে হয়ে থাকে৷ প্রতিটি লিন্ড্যাও মিটিং বিভিন্ন সেশন, বক্তৃতা, আলোচনা, মাস্টার ক্লাস, প্যানেল ডিসকাশন এবং নোবেল বিজয়ীদের সাথে তরুণ বিজ্ঞানীদের জ্ঞান, ধারণা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়কে কেন্দ্র করে সাজানো হয়।
আরও পড়ুন: বিশ্বকে জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
৩ বছর আগে