অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো ট্রিবিউটো আ মোদিগ্লিয়ানি
পৃথিবীর সবচেয়ে দামী পানির বোতল অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো ট্রিবিউটো আ মোদিগ্লিয়ানি
পানি জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর মধ্যে একটি। পানি পান শ্বাস-প্রশ্বাসের মতই খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। পার্থক্য শুধু পানি কিনে খেতে হয় এবং কখনো কখনো তা একটু বেশি দাম দিতে হয়। বেঁচে থাকার জন্য সবাই এই অমূল্য সম্পদটি যথাযথ মূল্য দিয়ে কিনে নেয়। কিন্তু এক বোতল পানির মূল্য সর্বোচ্চ কত হওয়া উচিত বা কত হতে পারে! হাজারো যুক্তি-তর্কের পর প্রশ্নটিকে একদম ম্লান করে দেবে অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো ট্রিবিউটো আ মদিগ্লিয়ানি। এর পিলে চমকানো দাম শুনে যে কারো নাভিঃশ্বাস উঠে যাবে। এবার আশ্চর্য এই পানির বোতল সম্পর্কে কিছু জেনে নিন
পানির বোতলের আকাশচুম্বী দামের কারণ
২০১০ এর ৪ মার্চ মেক্সিকো সিটির হাসিয়েন্দা ডি লস মোরালেস রেস্টুরেন্টে প্ল্যানেট ফাউন্ডেশন এসি দ্বারা আয়োজিত একটি নিলামে সবচেয়ে ব্যয়বহুল পানির বোতলটি ৬০,০০০
মার্কিন ডলার বাংলাদেশি টাকায় ৫ লাখেরও বেশি দামে বিক্রি হয়। এখন পর্যন্ত এটি বিশ্ব রেকর্ডের গিনেস বুকে সবচেয়ে দামী পানির বোতলের রেকর্ডটি দখল করে আছে।
আরও পড়ুন: বুক ব্যথার নানা ধরন: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা
হস্তনির্মিত ৭৫০ মিলি-লিটার কাঁচের বোতলটি ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ ও প্লাটিনাম দ্বারা আবৃত। এটি প্রয়াত ইতালিয় শিল্পী অ্যামেদিও ক্লেমেন্ত মোদিগ্লিয়ানির শিল্পকর্মের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে। শিল্পকর্মটি মূলত শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ বানানো হয়েছিল।
বোতলের নকশা করেছেন বিশ্বনন্দিত বোতল ডিজাইনার ফার্নান্দো আলতামিরানো, যিনি এখন পর্যন্ত তৈরি ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের শ্যাম্পেইনের বোতলটি ডিজাইন করেছিলেন যেখানে হেনরি-৪ ডুডোগনন হেরিটেজ কগনাকের নাম খোদাই করা ছিল।
নিলাম থেকে উত্থাপিত তহবিল বিশ্ব উষ্ণায়ন-বিরুদ্ধ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ফাউন্ডেশনে দান করা হয়েছিল।
অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো ট্রিবিউটো আ মোদিগ্লিয়ানির আরেকটি এডিশন প্লাটিনাম ও ৬০০০টি উচ্চ মানের হীরা দিয়ে তৈরি। এই বোতলটির আনুমানিক মূল্য ৪ মিলিয়ন ইউরো আর্থৎ বাংলাদেশি টাকায় ৩ কোটি ৯৫ লাখেরও বেশি। এখন পর্যন্ত এই সীমিত সংস্করণটির মাত্র একটি বোতল আছে। প্ল্যানেট, আলতামিরানো ফাউন্ডেশন সামাজিক কর্মকাণ্ডে ৫ লাখ ইউরো দান করবে।
আরও পড়ুন: লবঙ্গের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও ঝুঁকি
সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই পানির উৎস
অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো-এর প্রতিটি বোতলের পানি মুলত পৃথিবীর তিনটি ভিন্ন স্থান থেকে আগত। এই পানি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপদেশ ফিজি এবং ফ্রান্সের প্রাকৃতিক ঝরনার পানির মিশ্রণ। এছাড়া এই পানির আরেক অংশ আইসল্যান্ডের হিমবাহ থেকে উৎসারিত হয়।
ক্ষারযুক্ত এই পানির প্রতি বোতলে মেশানো থাকে ২৩ ক্যারেট স্বর্ণের ৫ মিলি গ্রাম স্বর্ণের ভস্ম। এ কারণে অনেকেই এই পানি শরীরের জন্য উপকারি বলে মনে করেন। সবচেয়ে দামী এই পানির সাধারণ বাজারবিশ্ব জুড়ে যারা অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো-এর মত পানির বোতলের জন্য অর্থ ব্যয় করেন তাদের গ্রুপটা সুনির্দিষ্ট ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত। এদের মধ্যে আছেন বিশ্বের প্রথম সারির ধনকুবেরের মধ্যে অন্যতম ভারতের মুকেশ আম্বানীর স্ত্রী নিতা আম্বানী।
অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো ট্রিবিউটো আ মোদিগ্লিয়ানি-এর সাশ্রয়ী বোতলও রয়েছে। এর বরফ নীল বোতলগুলো বিক্রি হয় ২৮৫ ডলারে (বাংলাদেশি টাকায় ২৪০০০+)। সলিড গোল্ড ছাড়াও অন্যান্য ডিজাইনের মধ্যে রয়েছে গোল্ড ম্যাট, সিলভার, সিলভার ম্যাট এবং ক্রিস্টাল। এই সবগুলো পানির বোতল স্বর্ণের বোতলের চেয়ে সস্তা, এবং সেগুলোতেও ফ্রান্স, ফিজি ও আইসল্যান্ডের পানির মিশ্রণ রয়েছে।
আরও পড়ুন: এসি রক্ষণাবেক্ষণ: দীর্ঘদিন ব্যবহারের উপযোগী রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ টিপস
এই পানির প্রতিটি বোতল কেনার সময় একটি সুন্দর চামড়ার কেসে প্যাকেজ করে দেয়া হয়। তাই অনেকে এটি বাড়িতে সাজিয়ে রাখা বা নিজের সংগ্রহে রাখার উদ্দেশ্যেও কিনে থাকেন।
পানি একটি জনসাধারণের মৌলিক বস্তু হলেও অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো একটি বিলাসবহুল পণ্য। স্বভাবতই নিছক তৃষ্ণা মেটানোটাই এই পণ্যের একমাত্র ও সর্বশেষ উদ্দেশ্য নয়।
উপাদানগত মূল্যের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক মাত্রার সংযোজন এই পণ্যকে দিয়েছে রাজকীয় আভরণ। তাছাড়া বৈশ্বিক কল্যাণে বিক্রি পরবর্তী তহবিলের ব্যবহারটাও অন্যান্য আর পাঁচটা পানীয় জল থেকে একে আলাদা করেছে।
৩ বছর আগে