ক্রিসমাস
কোভিড ১৯: বিশ্বজুড়ে আরও একটি নিরানন্দ বড়দিন
করোনাভাইরাস বৃদ্ধির ফলে বেথলেহেম ও ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে লন্ডন ও বোস্টন পর্যন্ত দ্বিতীয় বছরের মতো ক্রিসমাসের অনুষ্ঠান পালন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গির্জাগুলোকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাতিল করতে বলা হচ্ছে এবং নাগরিকদের ভ্রমণ ও পারিবারিক জমায়েত সীমিত করতে বলা হচ্ছে।
যিশু খ্রিষ্টের কথিত জন্মস্থান ইসরায়েলে ওমিক্রন সংক্রমণ কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক পর্যটকদের ইসরায়েলে ভ্রমণে বিভিন্ন বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে।
জার্মানিতে ক্রিসমাসের দিনে সকাল থেকে কোলনের বিশাল ক্যাথেড্রালের চারপাশে একটি বড় লাইন দেখা যায়। এ লাইন ক্যাথেড্রালের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য নয়, করোনার টিকা দেয়ার জন্য।
ক্যাথেড্রালের প্রভোস্ট গুইডো আসমান ডিপিএ নিউজ এজেন্সিকে বলেন, ক্রিসমাস উপলক্ষে এই টিকাদান কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে প্রায় দুই বছর ধরে চলা লকডাউন এবং অন্যান্য বিধিনিষেধে আটকে থেকে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সবাই এখন নিরাপদে ছুটির অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য উন্মুখ।
আরও পড়ুন: দ. আফ্রিকায় ওমিক্রন ঢেউ শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে
রোজালিয়া লোপেস নামের পর্তুগিজ এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ক্যাসকেসের উপকূলীয় শহরে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করছিলেন। তিনি বলেন, তিনি ও তার পরিবার মহামারির কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এখন ভ্যাকসিন, বুস্টার ডোজ, দ্রুত হোম টেস্ট ও জনসম্মুখে মাস্ক পরাসহ সব নিয়ম মেনে হলেও তারা ক্রিসমাসের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে চায়।
নিউইয়র্ক শহর, যেখানে ওমিক্রন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে; সেখানকার অধিবাসীরা করোনা পরীক্ষা করার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার আগে বাড়তি সতর্কতা হিসাবে অনেকেই এসময় করোনা পরীক্ষা করছেন।
অনেকে ছুটির দিনে ভ্রমণ করতে বাধার মুখে পড়েছে কারণ বিভিন্ন দেশের প্রধান এয়ারলাইনগুলো ওমিক্রনের কারণে শত শত ফ্লাইট বাতিল করেছে।
শুক্রবার সাদিয়া রেইন নামের এক নারী তার ৭৫ বছর বয়সী মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ভার্জিনিয়ার আলেকজান্দ্রিয়া থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে পৌঁছেছেন। রেইনস বলেন, গত দু’বছর তারা দু’জন ক্রিসমাসে আলাদা থেকেছেন। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ায় ভ্রমণে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও, তিনি এবছর মায়ের থেকে আলাদা থাকতে পারেননি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসংখ্য চার্চ ব্যক্তিগত বিভিন্ন পরিষেবা বাতিল করেছে। এরমধ্যে রাজধানী ওয়াশিংটন ন্যাশনাল ক্যাথেড্রাল ও বোস্টনের ঐতিহাসিক ওল্ড সাউথ চার্চও রয়েছে।
রোমে শুধুমাত্র পোপ ফ্রান্সিস সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাস্ক ছাড়া আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। অন্যান্য বছর সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে কমপক্ষে দুই হাজার মানুষ একত্রিত হতো। এবছর সেখানে প্রবেশ দর্শকদের প্রবেশ সীমিত ছিল এবং উপাসকদেরও মাস্ক পরতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে করোনা শনাক্তের ৭৩ শতাংশ এখন ওমিক্রন
জার্মানিতেও গির্জাগামীদের বিভিন্ন বিধিনিষেধ মানতে হয়েছে। অনেক জায়গায় টিকা বা করোনা পরীক্ষার প্রমাণপত্র দেখাতে হয়েছে।
ইউরোপের সবচেয়ে কঠোর লকডাউনের মধ্যে থাকা নেদারল্যান্ডের লোকেরা কঠিন বিধিনিষেধের মধ্যে ক্রিসমাস পালন করছে। দেশটিতে বার এবং রেস্তোরাঁসহ সমস্ত অপ্রয়োজনীয় দোকান বন্ধ ছিল এবং ক্রিসমাসে চারজনের বেশি মানুষ একত্রে কোথাও ভ্রমণে যাওয়া নিষেধ ছিল।
ফ্রান্সে ক্রিসমাসের দিনে কেউ কেউ হাসপাতালে প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করেছেন। কারণ দেশটিতে সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। তবে সরকার ক্রিসমাসের ছুটি উপলক্ষে কারফিউ তুলে নিয়েছে।
বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্পে ক্রিসমাস ট্রিগুলিকে সাংস্কৃতিক স্থানগুলো বন্ধ রাখার প্রতিবাদে জানালা থেকে উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখেছে অধিবাসীরা।
বেথলেহেমে মহামারির আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার খ্রিস্টান তীর্থযাত্রী ভ্রমণ করতেন। কিন্তু গতবছরের মতো এবছরও দর্শনার্থীর অভাবে শহরটির হোটেল, রেস্তোরাঁ ও উপহার সামগ্রীর দোকানগুলো মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
আরও পড়ুন: ৩ দিনে দ্বিগুণ হচ্ছে ওমিক্রন সংক্রমণ, ৮৯ দেশে শনাক্ত: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
২ বছর আগে