বিশ্বযুদ্ধ
সমস্যা কি শুধুই ইউক্রেনের?
ইউক্রেনের বর্তমান অবস্থা দৃশ্যতঃ রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে নিজের দেশকে রক্ষা করা, স্বাধীনভাবে চলার শক্তি অর্জন করা বোঝায়। ইউক্রেন সে চেষ্টাই করছে। সুখে দুঃখে আপনজনের মত আমেরিকা এগিয়ে এসেছে। ওরা বোঝাতে চাচ্ছে কূটনীতি, সামরিক হুমকি সব কিছু দিয়ে রাশিয়াকে ইউক্রেনের কাছে ঘেঁষতে দেবে না। আধুনিক অস্ত্র এবং সৈন্য ও ন্যাটো (উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট) মিত্ররা সাথে থাকবে। তারপরও ইউক্রেন কি রাশিয়াকে ঠেকাতে পারবে?
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া অস্ত্র ও সেনা মোতায়েন করেছে। চীন সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কমিউনিস্ট পন্থী। দেশের জনগণ ও বিভক্ত। শতকরা ৮০ ভাগ লোক ইউক্রেনিয়ান ভাষায় কথা বললেও রাশিয়ান ভাষা সবার জানা যা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কালচার ছিল। এখন যেকোনো মুহূর্তে বিমান হামলার মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে বলে মিডিয়া জানাচ্ছে । অপর দিকে বাইডেন ও পুতিন সংলাপের পথে এগোচ্ছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে বিজয়ী মিত্র শক্তি দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আমেরিকার নেতৃত্বে ইউরোপীয় পুঁজিবাদী দেশগুলো ন্যাটো নামীয় সামরিক জোট গঠন করে। উদ্দেশ্য জোটের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বে আধিপত্য বজায় রাখা তথা সমাজতান্ত্রিক আগ্রাসন থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা।
অপরদিকে সমাজতান্ত্রিক আদর্শে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোকে নিয়ে ওয়ারশ প্যাক্ট নামীয় সামরিক জোট আত্মপ্রকাশ করে। দুই সামরিক জোটের শক্তির টানাপোড়েনে বিশ্ব বার বার অস্থির হয়েছে, শান্তির বার্তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়েছে। বৃহৎ শক্তিগুলো নিজেকে নিরাপদ রেখে অন্যের দুর্গে হানা দেয়ায় ব্যস্ত। এদিক দিয়ে আমেরিকা তার সীমান্ত নিরাপদ করেছে। একদিকে মেক্সিকো অন্য দিকে কানাডা।
রুশ বলশেভিক বিপ্লবের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিবেশী দেশগুলোকে সোভিয়েতের অন্তর্ভুক্ত করে একটি নিরাপদ সীমান্ত বলয় সৃষ্টি করে। ভাষা, সংস্কৃতি বিভিন্ন বিষয়ে আধিপত্যবাদের সৃষ্টি হয়।
১৯৯১ এ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে এর রিপাবলিক দেশগুলো স্বাধীন হয়ে যায়। কমিউনিস্ট ঐক্যমত ধরে রাখার জন্য সিআইএস (কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেন্ডেন্টে স্টেট) নামীয় সংস্থার সৃষ্টি হয়। গুরুত্বপূর্ণ রিপাবলিক সমূহকে নিয়ন্ত্রণে রাখে রাশিয়ান ফেডারেশন। তার মধ্যে ইউক্রেন ছিল অন্যতম। সোভিয়েত ইউনিয়নের রিপাবলিক সমূহের মাঝে ইউক্রেন ছিল সমৃদ্ধশালী। পারমাণবিক সাইলো ও অন্যান্য স্থাপনাগুলো এখানেই অবস্থিত। সে জন্যে নিরাপদ সীমান্তের জন্য ইউক্রেনকে হাতে রাখা রাশিয়ার অতি প্রয়োজন।
অপরদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের ফল ভোগ করতে থাকে ইউরোপ ও ন্যাটো দেশগুলো। মার্কিন পণ্য বিশাল কমিউনিস্ট অঞ্চলে প্রবেশ করে। আমেরিকা বিশ্ব নেতৃত্বের একক কর্তৃত্ব লাভ করে।
ওয়ারশ জোট ভেঙে গেলে আমেরিকা এই জোট থেকে কিছু রাষ্ট্রকে ন্যাটো সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দেয়। অনেক দেশ নুতন জীবনের আশায় পশ্চিমা সুখ ও সমৃদ্ধির লোভে জোটে যোগ দেয়। নব্য যোগ দেয়া সশস্ত্র বাহিনীর বেশির ভাগই ন্যাটো স্ট্যান্ডার্ড রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। ফলে এসব দেশগুলোর যুদ্ধকালীন মোতায়েন কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে করা হয়। রাশিয়ান বলয় খর্ব করাই পূর্ব ইউরোপের সাবেক কমিউনিস্ট দেশগুলোকে আমেরিকা সাহায্য সহায়তা করে আসছে। ইউক্রেন সুকৌশলে ন্যাটো যোগদান এড়িয়ে যায়। এখন ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, নিরাপদ সীমান্ত, রাশিয়ান আধিপত্যবাদ থেকে মুক্তি ও বিবিধ কর্মকাণ্ডে আমেরিকা তার মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে আসছে।
রাশিয়ান ফেডারেশন নিজ সীমান্তে আমেরিকা ও তাদের মিত্রদের ঘেঁষতে দেবে না। রাশিয়ার ভূখণ্ডে লড়তে এসে অনেক দেশ পরাজিত হয়ে ফিরে গেছে।
দুটি বৃহৎ শক্তি পরস্পরের সাথে লড়বে না। তারা লড়াইটা অন্যের মাঠে লড়তে ভালো বাসেন। সম্পদ লুটের সম্ভাবনা থাকলে হয়তো আমেরিকা মিত্রদেরকে দিয়ে এ কাজটা করাবে। এর মাঝে বাইডেন পুতিনের সাথে সংলাপ বন্ধ দিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সাথে শলা পরামর্শ করছেন। রুশ বাহিনীও সীমান্তে দহরম মহরম দেখিয়ে পেছনে সরে গেছে।
দেখা যাক, সমস্যাটা কার? আমেরিকা, রাশিয়া নাকি ইউক্রেনের।
লেখক: কলামিস্ট কর্নেল (অব.) মো. শাহ জাহান মোল্লা
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-১
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি- ২
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-৩
২ বছর আগে