জাতীয় পরিচয়পত্র রি-ইস্যু করবেন কিভাবে
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে কি করবেন?
দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন কর্ম সম্পাদনে পরিচয় সংক্রান্ত প্রমাণাদির সাপেক্ষে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় নথি জাতীয় পরিচয়পত্র। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই ওয়ালেটের আইটেমগুলোর মধ্যে একটি নিত্য সংযোজন এই ছোট আইডি কার্ড। এ অবস্থায় ভুল বশত অনেকের মধ্যেই জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেলার প্রবণতা দেখা যায়। পকেটমার কিংবা ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রেও মানিব্যাগটির সাথে হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে দরকারি এই বস্তুটি। এই ভুল জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ছোটখাট হয়রানি থেকে একদম আইনি ঝামেলারও অবতারণা হতে পারে জাতীয় পরিচয়পত্র হারানো ফলে। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক, জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে করণীয়সমূহ।
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে করণীয়
থানায় জিডি (জেনারেল ডায়েরি) করা
জাতীয় পরিচয়পত্র হারানোর সাথে সাথেই সর্বপ্রথম যে কাজটি করণীয় তা হচ্ছে নিকটস্থ থানায় তা লিখিতভাবে জানানো বা একটি সাধারণ ডায়েরি করা। থানা কর্তৃক জিডি গৃহীত হওয়ার পর জিডি গ্রহণকারী পুলিশ কর্মকর্তার নাম ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে হবে। কেননা জিডির কপিটির সাথে এই তথ্যগুলোও পরবর্তীতে প্রয়োজন হবে।
পড়ুন: যেভাবে পাসপোর্টের ভুল তথ্য সংশোধন করবেন
অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র রি-ইস্যুর জন্য আবেদন
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত জাতীয় পরিচয়পত্র সেবার ওয়েবসাইট বা এনআইডি উইংয়ে গিয়ে অনলাইন নিবন্ধন করতে হবে। ইতোমধ্যে নিবন্ধিত হয়ে থাকলে এনআইডি নাম্বার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করা যাবে। আর পাসওয়ার্ড ভুলে গেলেও সমস্যা নেই। পাসওয়ার্ড রিসেট করে নতুন পাসওয়ার্ড সেট করে পুনরায় অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা যাবে।
যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করে নিবন্ধনের সম্পন্ন করার পর ফেইস ভেরিফিকেশন হবে। এই প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হলেই পুনরায় লগ ইন করতে অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা যাবে।
অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করলেই পাওয়া যাবে রিইস্যু অপশনটি। এতে ক্লিক করার পর পাওয়া যাবে জাতীয় পরিচয়পত্র রিইস্যু করার আবেদন ফর্ম। ফর্মটি যথাযথভাবে পূরণ করে সাবমিটের পর আসবে ফি প্রদানের সেকশন। এখানে জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পাওয়ার জন্য বিতরণের ধরন (রেগুলার অথবা আর্জেন্ট) নির্বাচন করতে হবে। অতঃপর ফি প্রদান করার পর পরের স্ক্রিণে আসবে জিডির সেকশন।
পড়ুন: শিক্ষা সনদপত্র হারিয়ে গেলে করণীয়
এখানে থানা থেকে নিয়ে আসা জিডির কপিটি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। মোবাইল দিয়ে ছবি তুলে আপলোডের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন জিডির লেখাগুলো স্পষ্ট বোঝা যায়। জিডির যাবতীয় তথ্যাবলি প্রদান করা হলে চুড়ান্তভাবে আবেদনটি সম্পন্ন হয়ে যাবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পাওয়া
সাধারণত অনলাইনে আবেদন জমা দেয়ার সাত থেকে পনের দিনের মধ্যে আবেদনটির অনুমোদন হয়ে যায়। জাতীয় পরিচয়পত্র রি-ইস্যুর আবেদন অনুমোদিত হলে আবেদনের সময় সরবরাহকৃত মোবাইল নাম্বারে একটি বার্তা দেয়া হবে। বার্তাটি পাওয়ার সাথে সাথেই এনআইডি উইংয়ে পুনরায় লগ ইন করে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড করে নিতে হবে। নতুবা নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলে আর ডাউনলোড করা যায় না।
জাতীয় পরিচয়পত্রের এই অনলাইন কপি পরবর্তীতে প্রিন্ট ও লেমিনেটিং করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
পড়ুন: বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করার নিয়ম
২০১৯-এর পর যাদের অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র হয়েছে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে, এই এনআইডি উইংয়ে লগ ইন করে বিনামূল্যেই জাতীয় পরিচয়পত্রটি ডাউনলোড করে নেয়া যাবে।
২০১৯-এর আগের ভোটারদের ক্ষেত্রে অথবা যারা ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন, তারা এই পোর্টাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড করতে একটি নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে।
উল্লেখ্য যে, স্মার্ট কার্ড হাতে পাওয়ার জন্য সরাসরি নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে জিডির কপিটি নিয়ে সরাসরি চলে যেতে হবে থানা বা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে। অতঃপর আবেদন করতে হবে পরিচালক বরাবর।
পড়ুন: পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয়
জাতীয় পরিচয়পত্র রি-ইস্যু ফি
হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র উত্তোলন করতে বা রি-ইস্যুর জন্য আবেদন ফি সাধারণের ক্ষেত্রে ভ্যাট সহ ৩৪৫ টাকা। আর জরুরি ক্ষেত্রে ভ্যাট সহ দিতে হবে ৫৭৫ টাকা। ২০১৯ এর আগের ভোটারদের এনআইডি উইং থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড করতে ২৩০ টাকা দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র রি-ইস্যুর আবেদন করতে হবে।
এই টাকা দেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলো যেমন রকেট, বিকাশ ব্যবহার করে অনায়াসেই পরিশোধ করা যেতে পারে।
পরিশিষ্ট
এভাবে অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র ফিরে পাওয়া যায়। তবে এই ঝামেলা পোহাতে না চাইলে প্রথম থেকেই সতর্ক হওয়া উচিত। এখন ব্যাংকের লেনদেন, পাসপোর্ট, বিভিন্ন লাইসেন্স প্রতি ক্ষেত্রেই যুক্ত হয়ে পড়ছে জাতীয় পরিচয়পত্র। তাই নিদেনপক্ষে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বারটি আলাদা করে মোবাইল লিখে রাখা যেতে পারে। একাধিক জায়গায় বিশেষ করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে (গুগল ড্রাইভ, ড্রপ বক্স, ওয়ান ড্রাইভ) সংরক্ষণ করা থাকলে বিভিন্ন কাজের সময় নাম্বারটা ব্যবহার করা যেতে পারে।
পড়ুন: স্মার্ট আইডি কার্ড: জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে যেভাবে সংশোধন করবেন