আল্পনা
মেডিকেলে চান্স পাওয়া আল্পনার পড়ালেখার দায়িত্ব নিলেন চেয়ারম্যান
ভ্যানচালক বাবার মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাওয়া মেয়ে আল্পনা আক্তারের পড়ালেখার দায়িত্ব নিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আসলাম জুয়েল।
সোমবার রাতে উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ধারিয়া বেলসাড়া গ্রামে সেই ভ্যানচালকের বাসায় গিয়ে আর্থিক সহযোগিতা প্রদানকালে তিনি পরবর্তী সময়ের আল্পনার পড়ালেখার দায়িত্বভার নেয়ার ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার দুপুরে মুঠোফোনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসলাম জুয়েল জানান, মেডিকেলে চান্স পাওয়া আল্পনা আক্তারের বাবা আফতাবর রহমান সামান্য একজন ভ্যানচালক। নিজস্ব জমি জমা না থাকলেও একমাত্র রিকশা ভ্যান চালিয়ে তিনি তিন সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্নে এগিয়ে চলেছেন। তার একমাত্র ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পড়ানোর পাশাপাশি এবার তার এক মেয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এটি আমার এলাকার একটি গর্বের বিষয়। এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে মেয়েটির মেডিকেল কলেজে তার পড়ালেখার যাবতীয় খরচ বহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আল্পনা আক্তারের বাবা আফতাবর রহমান জানান, ভিটেমাটি আর ভ্যান গাড়ি ছাড়া আমার আর কোন সহায় সম্পদ নেই। চার সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে মুন্না আলী বাংলা বিষয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন কয়েক বছর যাবত। সে এখন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। এদিকে মেয়ে আল্পনা আক্তারের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ হয়েছে। এছাড়া বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে পাত্রস্থ করেছেন আর ছোট মেয়ে পড়ছে উচ্চ মাধ্যমিকে।
একমাত্র ছেলেকে এতদিন পড়ালেখার খরচ নিয়মিত নিয়ে আসছেন রিক্সা ভ্যান চালিয়ে। ছেলে মুন্না আলীর ঢাবিতে ভর্তির সময় ২৫ শতক আবাদি জমির মধ্যে ৫ শতক জমি বিক্রি করে ভর্তির খরচ বহন করি। পরবর্তীতে তার পড়ালেখা খরচ যোগাতে গিয়ে অবশিষ্ট ২০ শতক জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। এছাড়াও প্রতিমাসে ৩-৪ হাজার টাকা ঢাকায় ছেলেকে পাঠানো, অন্য দুই মেয়ের পড়ালেখা খরচ এবং সাংসারিক ব্যয় বহনের একমাত্র মাধ্যম আমার ভ্যানটি।
একদিন ভ্যান নিয়ে বের না হলে সংসারে চুলায় তার হাড়ি উঠেনা। এবার মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগের খবরে আনন্দের পাশাপাশি খরচের চিন্তায় পড়েছিলেন তিনি। এখন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসলাম জুয়েল মেয়ের মেডিকেলে ভর্তির টাকাসহ তার পড়ালেখার দায়িত্বভার নেওয়ার আশ্বাস দেয়ায় তিনি এখন অনেকটা দুশ্চিন্তামুক্ত।
আরও পড়ুন: মেডিকেলে চান্স পাওয়া মেয়ের ভর্তির খরচের চিন্তায় ভ্যানচালক বাবা
তিনি বলেন, আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমার মেয়ে আল্পনার মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ হয়েছে। ডাক্তারি পড়ালেখার অনেক খরচ। এই নিয়ে অনেক চিন্তিত ছিলাম। এই নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর মেয়ের ভর্তির যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছেন অনেকে।
সদ্য ময়মনসিংহ মেডিকেলে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী আলপনা আক্তার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কুশডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
আল্পনা আক্তার বলেন, এই সফলতায় আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। যার অনুপ্রেরণায় আমার এ সফলতা তিনি হলেন আমার বাবা। যিনি সারাদিন ভ্যান চালিয়ে রোজগার করেন। আর আমাকে স্বপ্ন দেখান ডাক্তার হওয়ার। আমার মা এবং আমার শিক্ষকরা আমাকে অনেকভাবে সহযোগিতা করেছেন। চিকিৎসক হয়ে বাবা-মাসহ অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। বাবার স্বপ্ন পূরণে সকলের কাছে দোয়া চান তিনি।
আরও পড়ুন: মেডিকেলে চান্স পাওয়া জেলে পল্লীর মেয়ে মারুফার পাশে র্যাব-৬
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা মীম ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলেন!
২ বছর আগে