ক্ষেত
পানি সংকটে ক্ষেতেই শুকাচ্ছে পাট, বিপাকে চাষিরা
খুলনাঞ্চলে চাষিদের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ, হাসি নেই মুখে। পানি সংকটের কারণে পাটের জাঁক নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন তারা। উত্তপ্ত রোদে চাষিরা ক্ষেতেই শুকাচ্ছে কেটে রাখা সোনালী আঁশ পাট। এ অবস্থায় কৃত্রিমভাবে সেচের মাধ্যমে পুকুর জলাশয়, খাল-বিলে পানি ভর্তি করে পাট জাঁক দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
একাধিক চাষি বলছেন, পাটের কাঙ্ক্ষিত চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদন সন্তোষজনক হলেও মিলছেনা সুফল। খাল-বিল, হাওর-বাওর, পুকুর-ডোবা, জলাশয়, নর্দমাতে পরিপূর্ণ পানি না থাকায় চাষের জমিতেই শুকাচ্ছে আমাদের স্বপ্ন ও হাড়ভাঙা পরিশ্রম। যে কারণে লাভ দূরের কথা এখন আসল নিয়ে টানাটানি ওই সকল চাষিদের।
পাট চাষ করতে গিয়ে চাষিদের মুখে হাত, কারণ নেই বৃষ্টি। বিকল্প পথ হিসাবে পাটের জাঁক দেয়া জন্য কৃত্রিমভাবে সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুকুর, ডোবা, খাল-বিলে পানির ব্যবস্থা করেছেন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, সাধারণত ষড়ঋতুতে আষাঢ়-শ্রাবন মাসকে বর্ষা হিসাবে বলা হয়ে থাকে। তবে আবহাওয়া অফিসের ভাষায় জুন হতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। অন্য বছরের তুলনায় এবার বৃষ্টিপাত কম। কারণ খুলনা অঞ্চলে এবার মৌসুমী বায়ু বেশি সক্রিয় হয়নি। যদি মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হতো তবে বৃষ্টিপাত বেশি হতো। এছাড়া এ অঞ্চলে এবার নিম্নচাপ ও লঘুচাপের প্রভাব কম। নিম্নচাপ বা লঘুচাপ হলেও বৃষ্টিপাত বেশি হতো।
আরও পড়ুন: পাটের দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল সূত্রে জানা যায়, খুলনা অঞ্চল অধিভুক্ত রয়েছে চারটি জেলা নিয়ে। যার মধ্যে রয়েছে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলা। জেলাগুলোর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে উপজেলাও। চারটি জেলার সর্বমোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৫ লক্ষ ২০ হাজার ৬৩৩ হেক্টর। যার মধ্যে খুলনায় জেলার মেট্রোসহ বাকি উপজেলা সমূহে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯৮১ হেক্টর, বাগেরহাটের জেলার উপজেলা সমূহে ১ লাখ ২২ হাজার ২৩১ হেক্টর জমি, সাতক্ষীরা জেলার উপজেলা সমূহে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৭২ হেক্টর ও নড়াইল জেলার উপজেলা সমূহে ৭৮ হাজার ৫৪৯ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে।
চলতি অর্থ বছর (২০২২-২৩) খুলনাঞ্চলের ৪ জেলার মধ্যে খুলনায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা খুলনায় ১৬১৩ হেক্টর, বাগেরহাটে ১৮২৭ হেক্টর, সাতক্ষীরায় ১১৫৮৮ হেক্টর ও নড়াইলে ২২৩৩৫ হেক্টর, সর্বমোট জেলা সমূহে পাটে চাষ হয়েছে ৩৭৩৬৩ হেক্টর। বিপরীতে ওই জেলা সমূহে পাট আবাদের অগ্রগতি খুলনাতে ১৩১৬ হেক্টর, বাগেরহাটে ১৯৫২, সাতক্ষীরায় ১১৫৭৯ হেক্টর ও নড়াইলে ২৩৩৪০ হেক্টর জমির। ৪ জেলায় পাট আবাদের অগ্রগতি সর্বমোট ৩৮১৮৭ হেক্টর জমি, অর্জন ১০২ শতাংশ।
অপরদিকে, পাটের আবাদকৃত জমি খুলনায় ১৩১৬ হেক্টর, বাগেরহাটে ১৯৫২ হেক্টর, সাতক্ষীরায় ১১৫৭৯ হেক্টর ও নড়াইলে ২৩৩৪০ হেক্টর জমি। খুলনায় ৪ অঞ্চলের সর্বমোট পাট আবাদকৃত জমির ৩৮১৮৭ হেক্টর জমি। পক্ষান্তরে, ওই সকল জেলায় পাট কাটার (কর্তনের) অগ্রগতি খুলনা ৫২০ হেক্টর, বাগেরহাট ১০৯৩ হেক্টর, সাতক্ষীরা ৪৫৫৫ হেক্টর ও নড়াইলে ১৭০০০ হেক্টর। ৪ জেলায় সর্বমোট ২৩১৬৮ হেক্টর, কর্তনের অগ্রগতির অর্জন ৬১%।
খুলনার স্থানীয় অঞ্চলসহ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানি না থাকায় বেশির ভাগ জমিতে পাট কর্তন অবস্থান টানা উত্তপ্ত রোদে পড়ে আছে। নেই পানি, পানির জন্য চাষি হাহাকার করছে। বৃষ্টি না হওয়া চাষিদের ঘাম ঝরানো ফসল এখন অনিশ্চয়তার দিকে। পাটের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন বা ফলন সন্তোষজনক হলেও মিলছেনা সুফল। খাল-বিল, হাওয়-বাওর, পুকুর-ডোবা, জলাশয়, নর্দমাতে পরিপূর্ণ পানি থাকা না থাকায় চাষের জমিতেই শুকাচ্ছে পাট। এমন দৃশ্য উঠে এসেছে। তবে বড় ক্ষতি বা লোকসান হতে পরিত্রাণ পেতে চাষিরা কৃত্রিম উপায়ে পানি সরবরাহ করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চল খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুল হক জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় এবার পাট উৎপাদনকারী চাষিরা পাট জাঁক দেয়া নিয়ে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়েছেন, তবে কৃত্রিমভাবে সেচের মাধ্যমে পুকুর জলাশয়, খাল-বিলে পানি ভর্তি করে পাট জাক দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে অনেক কৃষকই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এখনো যথেষ্ট সময় রয়েছে বর্ষার, হতাশার কিছু নেই।
আরও পড়ুন: অল্প বৃষ্টিতে উদ্বিগ্ন ঠাকুরগাঁওয়ের পাট ও আমন চাষিরা
নারায়ণগঞ্জে পাটের গুদামে আগুন
২ বছর আগে