ফজিলাতুন নেছা
বাংলাদেশ একটি আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার বলেছেন, তার সরকার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলছে।
খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপনকারী পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় কঁচা নদীর ওপর এক হাজার ৪৯৩ মিটার দীর্ঘ ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ‘আমরা আধুনিক এক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলছি।’
প্রধানমন্ত্রী রাজধানীতে তার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেতুটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
তিনি বলেন, তার সরকার দেশের মোট মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ২২ হাজার কিলোমিটার এবং ৭১৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার বা তার অধিক লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এদিকে ৬০০ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের মহাসড়ককে চার বা তার অধিক লেনে উন্নীত করার কাজ চলমান আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার এখন ঢাকায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার র্যাপিড বাস ট্রানজিট প্রকল্প, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং ১০ লেনের টঙ্গী সেতু নির্মাণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা বিশ্বব্যাংকের
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে আমাদের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।’
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৮৯৪ দশমিক আট কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছে।
চীন সরকার সেতু প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৬৫৪ দশমিক ৮০ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকার বাকি ২৩৯ দশমিক ৮০ কোটি টাকা দিয়েছে।
সেতুটির কারণে পিরোজপুর ও ঢাকার মধ্যে সড়ক সংযোগ হয়েছে। এটি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, মোংলা সমুদ্র বন্দর এবং দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের মধ্যে সরাসরি সড়ক সংযোগ স্থাপনে ভূমিকা রেখেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা তার সরকারের দায়িত্ব। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন যাত্রায় অনেক দূর এগিয়েছি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমি মনে করি আমরা আরও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হব।’
তিনি বলেন, রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত ছিল। এ অঞ্চলের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেশ কয়েকটি খরস্রোতা নদী পাড়ি দিয়ে জীবিকার জন্য ঢাকায় আসত।
শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু এখন তার সরকার পদ্মা বহুমুখী সেতু, শিকারপুর-দোয়ারিকা সেতু ও গাবখান সেতুসহ অনেক সেতু নির্মাণ করায় ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ সহজতর হয়েছে।
আরও পড়ুন: কঁচা নদীর ওপর বঙ্গমাতা সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
এ অঞ্চলে আরও অনেক সেতু নির্মাণ হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আর অবহেলিত হবে না।
নতুন উদ্বোধন করা সেতু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি পিরোজপুরের মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে সহায়ক হবে। পিরোজপুর ও ঢাকার মধ্যে যোগাযোগ এখন অনেক সহজ হয়ে যাবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সঙ্কটের মধ্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী সবার প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি এক ইঞ্চি পরিমাণ জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী আবারও এই কঠিন সময়ে বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংও বক্তব্য দেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী সেতুর দুই পাশের সেতুর সুবিধাভোগীদের সাথে মতবিনিময় করেন।
সেতুর পশ্চিম পাড়ে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য এস এম রেজাউল করিম। পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পূর্ব পাড়ে অন্য এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী নবনির্মিত সেতুর একটি ডিজিটাল উপস্থাপনা পেশ করেন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দরের সুবিধা নিতে পারে নেপাল: প্রধানমন্ত্রী
২ বছর আগে