ব্যাংক
ব্যাংক আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ দ্বিগুণ করতে জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন
আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে রবিবার সংসদে ব্যাংক আমানত বীমা বিল (সংশোধনী) ২০২৩ পেশ করা হয়েছিল।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি উত্থাপন করলে তা পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট স্ক্রুটিনি কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বর্তমান আইন অনুযায়ী, কোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসানে গেলে ৯০ দিনের মধ্যে একজন আমানতকারী সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পান।
সংশোধিত আইনে এই ক্ষতিপূরণ ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ১৯৮৪ সালে আমানত বীমা চালু করা হয়েছিল, যখন বীমা কভারেজের পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার টাকা যা পরবর্তীতে ১ লাখ টাকায় বাড়ানো হয়।
পূর্ববর্তী আইনে শুধুমাত্র ব্যাংকগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, যদিও প্রস্তাবিত আইনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীদের জন্য সীমা বাড়ানোর জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হয়রানির কোনো মামলা নয়: সংসদে আইনমন্ত্রী
জাতীয় সংসদে বিদায়ী অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস
সংসদে দেশের সবচেয়ে বড় বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী
ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১.৩১ লাখ কোটি টাকা: বাংলাদেশ ব্যাংক
জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ প্রায় ১০ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা বেড়ে ১ কোটি ৩১ হাজার ৬২১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, খেলাপি ঋণ তিন মাস আগের তুলনায় ৯ শতাংশ এবং এক বছর আগের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যা চ্যালেঞ্জিং এবং চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে।।
তিনি বলেনম ২০২২ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।
কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে, যখন দুর্বল ব্যবসার কারণে ব্যবসায়ীকেরা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা থেকে বিরত ছিল।
আরও পড়ুন: ৭৫ হাজার কোটি টাকার কম রাজস্বে বাড়বে বাজেট ঘাটতি: সিপিডি
মহামারি চলাকালীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের নিয়মিত পরিশোধের ওপর একটি স্থগিতাদেশ ঘোষণা করেছিল, যা বিপুল সংখ্যক ঋণগ্রহীতাকে খেলাপি হতে সাহায্য করেছিল।
স্থগিতের সুবিধা প্রত্যাহারের পর, খেলাপি ঋণের পরিমাণ গত বছরের ডিসেম্বরে ১ দশমিক ২০ লাখ কোটি টাকার বেশি বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, একদল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হয়ে যাচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।
তিনি বলেন, সুশাসনের অভাবে কিছু সংগঠিত গোষ্ঠী তাদের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি টাকা ঋণ হিসেবে নিয়েছে, যা খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ।
আরও পড়ুন: সম্পত্তি কর থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত কর আদায় করা যাবে: সিপিডি
আসন্ন বাজেটে ওয়াশ খাতের বরাদ্দে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান
ঈদের আগে নগদ টাকা উত্তোলনের চাপে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো
ব্যাংকিং খাতে নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে, কারণ ব্যবসা এবং ব্যক্তি পর্যায়ে অর্থ সরবরাহের জন্য টাকা উত্তোলন বেড়েছে। ফলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন নগদ টাকার বিপুল চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার মতো কল মানির চাহিদা ছিল।
কল মানি হল যেকোনো ধরনের স্বল্প-মেয়াদী, সুদ-আর্জিত আর্থিক ঋণ, যা ঋণদাতা যখনই দাবি করে তখনই ঋণগ্রহীতাকে ফেরত দিতে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত মঙ্গলবার কয়েকটি ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ৭ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। আগের দিন ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। এপ্রিলের শুরু থেকেই আন্তঃব্যাংক স্বল্পমেয়াদি ঋণের চাপ বেড়েছে। প্রথম আট কার্যদিবসে কল মানি মার্কেট থেকে ধার করা হয়েছে ৬ হাজার ২৭১৯ কোটি টাকা।
সেক্টর সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবছর ঈদের আগে নগদ টাকার চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ফলে এ সময়ে অনেক ব্যাংকে নগদ অর্থের সংকট রয়েছে।
এ অবস্থা মোকাবিলায় ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক ঋণ নেয় (কল মানি)।
আরও পড়ুন: মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি বাংলাদেশ ব্যাংকের
এই বছর, কিছু ব্যাংক অতিরিক্ত চাপের সম্মুখীন হচ্ছে কারণ তারা ইতোমধ্যে তারল্য সংকট মোকাবিলা করছে। নগদ অর্থের ঘাটতি মেটাতে এখন এসব ব্যাংককে কল মানি মার্কেটে বেশি সুদ দিতে হচ্ছে।
কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, অনিয়মের কারণে গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট হওয়ায় অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। ডলার কেনার কারণে কিছু ব্যাংকের নগদ অর্থের জরুরি প্রয়োজন।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আমানতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস এবং ঋণের চাহিদা বৃদ্ধি তারল্য সংকট সৃষ্টি করছে। ফলে আন্তঃব্যাংক বাজারে স্বল্পমেয়াদি ঋণের চাহিদা বেড়েছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, প্রতি বছরই ঈদের আগে নগদ টাকা তোলার চাপ থাকে। কারণ ঈদের আগে কোম্পানিগুলো তাদের কর্মচারীদের বেতন-বোনাস দেয়।
এছাড়া ঈদ-সংক্রান্ত খরচের জন্য মানুষ হাতে নগদ টাকা রাখে। তাই ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার চাহিদা বেশি। এই চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলো কল মানি মার্কেট থেকে ঋণ নেয়।
আরও পড়ুন: এনবিএফআই ৮ বছরের আগে গাড়ি পরিবর্তন করতে পারবে না: বাংলাদেশ ব্যাংক
৩৩০টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে এনবিআর
লক্ষ্য পূরণের জন্য চলছে কৃষি ঋণ বিতরণ
লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কৃষি ঋণ বিতরণ চলছে। চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ দশমিক ১৫ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ঋণের হালনাগাদ তথ্যে জানা যায়, ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় ২১ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা কৃষি খাতে বিতরণ করা হয়েছে।
হালনাগাদ তথ্যে জানা যায়, ১২টি ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার ১০০ শতাংশ অর্জন করেছে।
তবে পিছিয়ে রয়েছে ১৪টি ব্যাংক। ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশও বিতরণ করতে পারেনি এসব ব্যাংক।
যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ১০০ শতাংশের বেশি বিতরণ করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক আল-ফালাহ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলন, হাবিব ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এনএ, এইচএসবিসি ও উরি ব্যাংক।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে পতিত জমিতে সবজি চাষে সাফল্য
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৮ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা এবং বিদেশি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট কৃষি ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে, ফলে ঋণ আদায়ের হার প্রায় ৪১ শতাংশ।
খেলাপি হয়েছে ৩ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, যা ঋণের ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কৃষি উৎপাদনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকও সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং তা সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সার ও বীজের দাম বাড়বে না: কৃষিমন্ত্রী
বরগুনায় বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্কদের ১০ শতাংশের মাঝে দেশটির ব্যাংকগুলোতে উচ্চ আস্থা রয়েছে: এপি- এনওআরসি জরিপ
ওয়াশিংটনযুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ বলেছেন, দেশটির ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর তাদের উচ্চ আস্থা রয়েছে। যা ২০২০ সালের ২২ শতাংশের চেয়ে বেশ কম।
চলতি মাসে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পতনের পর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চের জরিপে দেখা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বলছেন যে সরকার এই ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট কাজ করছে না।
২০০৮-২০০৯ সালের আর্থিক সঙ্কটের বিরক্তিকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনার পর আমেরিকার ব্যাংক ও ব্যাংক প্রবিধানের এই অপ্রীতিকর মূল্যায়ন করা হয়।
দেশের ১৬ তম বৃহত্তম ব্যাংক সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ড মার্কেটে ঝুঁকিপূর্ণ বাজি ধরে গত ১০ মার্চ ব্যর্থ হয়। দুই দিন পরে দেশটির নিয়ন্ত্রকরা নিউইয়র্কভিত্তিক সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ করে দেয়। যা ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে জড়িত ছিল। আটলান্টিক মহাসাগর জুড়ে বিশ্বব্যাপী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে ‘শটগান ম্যারেজ’ নকশায় রবিবার প্রতিদ্বন্দ্বী ইউবিএস দীর্ঘদিনের ঝামেলাপূর্ণ ‘ক্রেডিট সুইস’ কিনে নেয়। শটগান ম্যারেজ হচ্ছে বিশেষ পরিস্থিতিতে সংকট মুহূর্তে তড়িঘড়ি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া বা কাজ করা।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোতে ৩০০ বিলিয়ন ডলার জরুরি তহবিল ধার দিল ফেডারেল রিজার্ভ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই অস্থিরতা নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ২০১৮ সালের আইন সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে। ফলে আর্থিক সংকটের পরে প্রণীত কঠোর বিধিগুলো প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
জরিপটি থেকে যেসব বিষয় জানা যায়: ৫৬ শতাংশ বলেছেন যে সরকার ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পর্যাপ্ত কাজ করছে না। অন্যদিকে ২৭ শতাংশ বলেছেন যে তারা সঠিক পরিমাণে কাজ করছে এবং ১৫ শতাংশ বলেছেন যে এটি খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করছে। আন্ডার-রেগুলেশন সম্পর্কে উদ্বেগ দ্বিপক্ষীয়: ডেমোক্র্যাটদের ৬৩ শতাংশ বলেছেন, বর্তমান ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ অপর্যাপ্ত এবং রিপাবলিকানদের ৫১ শতাংশ একই কথা বলেছেন।
জরিপে দেখা গেছে, ১০ শতাংশ আমেরিকান দেশের ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর তাদের উচ্চ আস্থা আছে বলে দাবি করলেও ৫৭ শতাংশের কিছুটা আস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এবং ৩১ শতাংশের ক্ষেত্রে তা খুব কম।
জরিপে আরও দেখা গেছে, সাম্প্রতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার অস্থিরতার এক মাস আগে থেকে মার্কিন অর্থনীতির মূল্যায়নে সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। মাত্র এক চতুর্থাংশ বলেছেন, জাতীয় অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। তিন-চতুর্থাংশ খারাপ অবস্থা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ৪৩ শতাংশ ডেমোক্র্যাট অর্থনীতিকে ভালো বলে অভিহিত করেছেন, অন্যদিকে রিপাবলিকানদের মধ্যে এই সংখ্যা মাত্র সাত শতাংশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্করা তাদের ব্যক্তিগত আর্থিক পরিস্থিতিকে ভালো হিসেবে বলেছেন। প্রতি ১০ জন ডেমোক্র্যাটের মধ্যে ৬ জন এবং রিপাবলিকানদের প্রায় অর্ধেক তাদের বর্তমান আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ইতিবাচক মূল্যায়ন দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র কিনবে অস্ট্রেলিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোতে ৩০০ বিলিয়ন ডলার জরুরি তহবিল ধার দিল ফেডারেল রিজার্ভ
যুক্তরাষ্ট্রের তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো গত সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভ থেকে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ধার নিয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ তথ্য জানায়।
ধারের প্রায় অর্ধেক অর্থ ১৪৩ বিলিয়ন ডলার গত সপ্তাহে ব্যর্থ হওয়া দুটি প্রধান ব্যাংক সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক এবং সিগনেচার ব্যাংকের হোল্ডিং কোম্পানির কাছে গিয়েছে, যা আর্থিক বাজারে ব্যাপক শঙ্কা সৃষ্টি করেছে৷ ফেডারেল ব্যাংক সেই ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশ করেনি যেগুলো তহবিলের বাকি অর্ধেক পেয়েছে বা তাদের কতজন পেয়েছে।
ফেডারেল ব্যাংক জানিয়েছে, দুটি ব্যর্থ ব্যাংকের হোল্ডিং কোম্পানিগুলো ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন স্থাপন করেছিল, যা উভয় ব্যাংকের দখল নিয়েছে৷ তারা যে অর্থ ধার করেছিল তা তাদের বীমাবিহীন আমানতকারীদের অর্থ প্রদানের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। উভয় ব্যাংকের মালিকানাধীন বন্ডগুলো জামানত হিসাবে পোস্ট করা হয়েছিল। এফডিআইসি ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা দিয়েছে।
এই পরিসংখ্যান গত সপ্তাহান্তে দুটি ব্যাংক পতনের পরে আর্থিক খাতে ফেডারেলের সহায়তার স্কেলের প্রথম আভাস দেয়।
বাকি টাকা নগদ সংগ্রহের জন্য ব্যাংকগুলো ধার করেছিল- সম্ভবত, অন্তত আংশিকভাবে আমানতকারীদের পরিশোধ করার জন্য। যারা তাদের টাকা তোলার চেষ্টা করেছিল। অনেক মেগা ব্যাংক, যেমন ব্যাংক অব আমেরিকা গত সপ্তাহান্তে ব্যাংকের ব্যর্থতার পর থেকে ছোট ব্যাংকগুলো থেকে তহবিল প্রাপ্তির প্রতিবেদন করেছে৷
গত সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভ থেকে অতিরিক্ত ১৫৩ বিলিয়ন ডলার ধার এসেছে ‘ডিসকাউন্ট উইন্ডো’ নামে একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রোগ্রামের মাধ্যমে। এটি সেই প্রোগ্রামের জন্য একটি রেকর্ড স্তরের পরিমাণ। ব্যাংকগুলো ডিসকাউন্ট উইন্ডো থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত ধার নিতে পারে। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সপ্তাহে এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে মাত্র চার বিলিয়ন থেকে পাঁচ বিলিয়ন ধার করা হয়।
ফেডারেল রিজার্ভের রবিবার ঘোষণা করা একটি নতুন ঋণ সুবিধা থেকে অতিরিক্ত ১১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ধার দিয়েছে। নতুন প্রোগ্রামটি ব্যাংকগুলোকে নগদ সংগ্রহ করতে এবং অর্থ উত্তোলনকারী যে কোনও আমানতকারীর অর্থ প্রদান করতে সক্ষম করে৷
জেপি মরগানের একজন অর্থনীতিবিদ মাইকেল ফেরোলি তার গবেষণা নোটে বলেছেন যে ফেডের সহায়তা এখন পর্যন্ত ১৫ বছর আগে আর্থিক সংকটের সময় যা ছিল তার প্রায় অর্ধেক।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র কিনবে অস্ট্রেলিয়া
তবে তিনি বলেছিলেন ‘এটি এখনও একটি বড় সংখ্যা,’ ‘গ্লাস অর্ধ-খালির দৃষ্টিভঙ্গি হলো যে ব্যাংকগুলোর প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। গ্লাস অর্ধ-পূর্ণ করে নেয়া হলো যে প্রক্রিয়াটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে হিসাবে কাজ করছে।’
ফেডারেল ব্যাংকের কাছ থেকে নেয়া গত সপ্তাহের জরুরি ঋণ দুটি ব্যাংকের পতনের একটি প্রধান কারণকে মোকাবিলা করতে চায়: সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক এবং সিগনেচার ব্যাংক বিলিয়ন ডলারের আপাতদৃষ্টিতে নিরাপদ ট্রেজারি এবং অন্যান্য বন্ডের মালিকানা যা কম সুদের হার প্রদান করে।
গত বছর ধরে ফেড ক্রমাগতভাবে তার বেঞ্চমার্ক সুদের হার বাড়ায়, দীর্ঘমেয়াদী ট্রেজারি এবং অন্যান্য বন্ডের সমর্পণ বেড়েছে। এর ফলে, ব্যাংকগুলোর ধারণকৃত নিম্ন-উৎপাদন ট্রেজারিগুলোর মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
ফলে ব্যাংকগুলো তাদের ট্রেজারি বিক্রি থেকে পর্যাপ্ত নগদ সংগ্রহ করতে পারেনি যে অনেক আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে তাদের অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করছিল। এটি একটি ক্লাসিক ব্যাংক চালানোর পরিমাণ।
ফেডের বিশেষ নতুন ঋণদান কর্মসূচির সুবিধা রবিবার উদ্বোধন করেছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জামানত হিসাবে বন্ড পোস্ট করতে এবং সেগুলো বিক্রি করার পরিবর্তে তাদের বিপরীতে ঋণ নিতে সক্ষম করে।
নতুন ঋণ সুবিধার জন্য ফেড বলেছে যে এটি জামানত হিসাবে ১৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন পেয়েছে। এটি ধার দেয়া ১১ দশমিক ৯ বিলিয়নের চেয়ে বেশি। ব্যাংক কখনও কখনও ঋণ নেয়ার আগে ফেড জামানত প্রদান করে। এটি পরামর্শ দেয় যে অতিরিক্ত ঋণ দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ও স্বাগতিকদের জন্য আরও ২৬ মিলিয়ন ডলার সহায়তা ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের আস্থা ও সুশাসন নিশ্চিত করুন: সিপিডি আলোচনায় অর্থনীতিবিদরা
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ব্যাংকগুলোতে আস্থা ও সুশাসনের অভাবে দেশের ব্যাংকিং খাত হুমকির মুখে পড়েছে। তারা আরও বলেছেন যে এতে প্রভাবশালী গোষ্ঠী জড়িত, যা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক।
শনিবার ঢাকার একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক সংকট ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এ মন্তব্য করেন।
রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী আবদুল মান্নান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালাহউদ্দিন আহমেদ; অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনুর; বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন; অধ্যাপক আবু আহমেদ; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী; বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী হক চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স সলিডারিটির সেক্রেটারি কামরুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: উচ্চ মূল্যের সরকারি ঋণ অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে: সিপিডি
সালেহউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়সহ নীতি বাস্তবায়ন কঠোরভাবে পরিচালনা করতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আমার বিশ্বাস।
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে সঠিক নীতি নিতে হবে, কারো মুখের দিকে তাকাতে হবে না, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এটি দাবি করে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সিদ্ধান্ত বিলম্বিত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
একটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১২ সাল থেকে গত ১০ বছরে মোট নন-পারফর্মিং লোনের (এনপিএল) পরিমাণ তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি রিপোর্ট অনুসারে এনপিএলগুলো ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা থেকে ২০১২ অর্থবছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে এক দশমিক ৩৪ লাখ কোটি টাকার বেশি বেড়েছে।
তিনি বলেন, অর্থনীতি এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে সঠিক সংস্কার করতে হবে অথবা এর পতন দেখতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ২৭ শতাংশ বেড়েছে। কারণ মানুষ তাদের অর্থের নিরাপত্তার জন্য ভালো ব্যাংক খুঁজছে। ‘সুতরাং, আস্থা এবং সুশাসন একটি ব্যাংককে বাঁচাতে পারে।’
তিনি বলেন, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য ঋণ কেলেঙ্কারির জন্য কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন, পর্যবেক্ষক নিয়োগই যথেষ্ট নয়।
ড. জাহিদ বলেন, মুদ্রাস্ফীতি বাহ্যিক প্রভাবে তৈরি হয় না, অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও জিডিপি বাড়ছে, অর্থনীতির সঙ্গে এর কোনো মিল নেই।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন অনুষ্ঠানে ‘অর্থনৈতিক সংকট ব্যবস্থাপনা: সিপিডির নীতি সুপারিশ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশেষ উল্লেখ অ্যাকাউন্টে ঋণ, আদালতের নিষেধাজ্ঞাসহ ঋণ এবং পুনঃনির্ধারিত ঋণ অন্তর্ভুক্ত করা হলে প্রকৃত এনপিএল অনেক বেশি হবে।’
সিপিডি উল্লেখ করেছে যে রাজনৈতিক সংযোগের ভিত্তিতে ব্যাংক পরিচালকদের নিয়োগ, রাজনৈতিক কারণে মঞ্জুর করা ঋণ, ঋণ পরিশোধের রেকর্ড খারাপ থাকা সত্ত্বেও ঋণের পুনঃতফসিল করা এবং করের বোঝা কমাতে ঋণ বাতিল করা এবং ব্যাংকের ক্লিন ব্যালেন্স শীট দেশে উচ্চহারের এনপিএল এর পরিমাণও কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে।
এনপিএলগুলো বলছে, ব্যাংকগুলোর দুর্বল অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও কমপ্লায়েন্স ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতার অভাব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক খেলাপিদের দেয়া নমনীয়তাও এই উচ্চ পরিমাণের জন্য দায়ী।
আরও পড়ুন: বিপিসির দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির দরকার হতো না: সিপিডি
বাজেটে নিম্ন-মধ্যম আয়ের জনগণের জন্য কোনো সুখবর নেই: সিপিডি
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না মর্মে হাইকোর্টের রায় স্থগিত
কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোনো ব্যক্তিও সংস্থার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না মর্মে হাইকোর্টের দেয়া রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আদালতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল্লা আল বাকি।
জানা গেছে, গত ২৩ নভেম্বর চেক ডিজঅনার মামলা সংক্রান্ত রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে আদালত বলেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য শুধুমাত্র ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনের বর্ণিত উপায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। পাশাপাশি বর্তমানে আদালতে চলমান ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা সব চেক ডিজঅনার মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলেও রায়ে বলা হয়।
ঋণ আদায়ের জন্য এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্র্যাক ব্যাংকের চেক ডিজঅনার মামলা বাতিল করে ২৩ নভেম্বর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা: দণ্ডিত আবদুস সামাদকে জামিন দেননি হাইকোর্ট
গত ২৮ নভেম্বর এখন থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না, হাইকোর্টের এ সংক্রান্ত রায় স্থগিত না করে শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেদিন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। সে অনুযায়ী আজ এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানি হয়।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে চেক নিচ্ছে সেটা জামানত। বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে রাখা সেই চেক দিয়ে চেক ডিজঅনার মামলা করা যাবে না।
আদালত বলেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ একটি চুক্তির মাধ্যমে নেয়া হয়ে থাকে। ব্যাংকের কিছু দুর্নীতিবাজ, অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে, তাদের হিডেন এজেন্ডা বাস্তবায়নে চেকের অপব্যবহার করে মামলা করে থাকে। তাদের ব্যবহার দাদন ব্যবসায়ীদের মতো।
আদালত আরও বলেন, ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে।
রায়ে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আজ থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি চেক ডিজঅনার মামলা করে তাহলে আদালত তা সরাসরি খারিজ করে দেবেন। একইসঙ্গে তাদের ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দেবেন।
আদালত বলেন, ব্যাংক হওয়ার কথা ছিল গরিবের বন্ধু, কিন্তু তা না হয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গরিবের রক্ত চুষছে। এটা হতে পারে না। যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছে ব্যাংক তাদের ঋণ মওকুফ করার কথা শুনি। কিন্তু কোনো গরিবের ঋণ মওফুফ করার কথা কোনোদিন শুনিনি। নীলকর চাষিদের মতো, দাদন ব্যবসায়ীদের মতো যেন-তেন ঋণ আদায় করাই তাদের লক্ষ্য। ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আইনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মামলা দায়ের না করে চেক ডিজঅনার মামলা করছে। এ কারণে আমাদের ক্রিমিনাল সিস্টেম প্রায় অকার্যকর হয়ে গেছে। তাই এখন থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। অন্যকোনো আইনে নয়।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হাইকোর্টের রায়ের আলোকে নির্দেশনা জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এছাড়াও সব ধরনের ঋণের বিপরীতে ইনস্যুরেন্স কাভারেজ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।আজ পুরো রায়টি স্থগিত করা হয়েছে বলেও জানান আদালত।
আরও পড়ুন: ফটো সাংবাদিক শহিদুল আলমের মামলার তদন্ত চলবে: আপিল বিভাগ
আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশ যেতে পারবেন না বিডিনিউজের সম্পাদক
ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাড়িতে রাখলে চোরেরা উৎসাহিত হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু লোক ব্যাংকে টাকা নেই বলে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে এবং সেই গুজবে কান দিয়ে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাড়িতে রাখলে চোরেরা টাকা চুরি করতে উৎসাহিত হবে। এটা শুধু চোরদের জন্য একটা সুযোগ তৈরি করছে।’
বৃহস্পতিবার যশোর জেলা স্টেডিয়ামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় ‘ব্যাংকগুলো তীব্র তারল্য সংকটে রয়েছে এমন গুজবের’ নিন্দা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন,‘ব্যাংকে টাকা নেই, এটা একটা নির্জলা মিথ্যাচার। ’
শেখ হাসিনা জানান, বুধবারও তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘ব্যাংকে যথেষ্ট টাকা আছে’।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এখন আগের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী: যশোরে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু লোক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কথা বলছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে কোন সমস্যা নেই।’
তিনি বলেন, রেমিট্যান্স আসছে, বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে, রপ্তানি আয় বেড়েছে, কর আদায়ও বেড়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্যান্য দেশগুলো যখন বৈশ্বিক মন্দার কারণে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে, তখনও বাংলাদেশ শক্তিশালী হচ্ছে।’
তিনি জনগণকে কোনো গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা জানেন, সব সময় গুজব ছড়ানো বিএনপির কাজ।
বিএনপি কখনো দেশ ও জনগণের কল্যাণে কিছু করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা যখন ক্ষমতায় ছিল সব সময় লুটপাটে লিপ্ত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে রেখেছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালীন কোনও রপ্তানি বা আমদানি হয়নি, তাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে জমা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর জনসভার জন্য প্রস্তুত যশোর
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন, সার, চাল ও গম কিনতে সরকার অর্থ ব্যয় করেছে। ‘এগুলো (বৈদেশিক মুদ্রা) কোথাও যায় নি, এগুলো জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন কাজে বিনিয়োগ করেছি। যেমন- রপ্তানি করেছি, কৃষিতে প্রনোদনা দিয়েছি এবং আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘাটতির অর্থ দিয়েছি।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, খুলনা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শেখ হেলাল, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য ও জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যশোর জেলা আ’লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার।
আরও পড়ুন: এখন মেগাপ্রজেক্ট নয় জনকল্যাণমুখী প্রকল্প নিয়ে আসুন: প্রধানমন্ত্রী
আর কোন চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আর কোন চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বর্তমানে বিচারিক আদালতে চলমান ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করা সব চেক ডিজঅনার মামলার কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ঋণ আদায়ের জন্য শুধু ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনে অর্থঋণ আদালতে মামলা করা যাবে বলে এই রায়ে বলা হয়েছে।
বুধবার ঋণ আদায়ে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্র্যাক ব্যাংকের চেক ডিজঅনার মামলা বাতিল করে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী সাইফুজ্জামান তুহিন। ব্যাবসায়ীর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল্লা আল বাকি।
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে গ্রেপ্তার এক জঙ্গির জামিন প্রত্যাহার করলেন হাইকোর্ট
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে চেক নেয়া হচ্ছে, সেটা জামানত। বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে রাখা সেই চেক দিয়ে চেক ডিজঅনার মামলা করা যাবে না।‘ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ একটি চুক্তির মাধ্যমে নেয়া হয়ে থাকে। ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেওয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে। তাদের ব্যবহার দাদন ব্যবসায়ীদের মতো।’
নিম্ন আদালতের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে রায়ে হাইকোর্ট বলেন, আজ থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি চেক ডিজঅনার মামলা করে, তাহলে আদালত তা সরাসরি খারিজ করে দেবেন। একইসঙ্গে তাদের ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দেবেন।
আদালত আরও বলেন, ব্যাংক হওয়ার কথা ছিল গরিবের বন্ধু, কিন্তু তা না হয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গরিবের রক্ত চুষছে। এটা হতে পারে না। যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছে ব্যাংক তাদের ঋণ মওকুফ করার কথা শুনি, কিন্তু কোনো গরিবের ঋণ মওফুফ করার কথা কোনোদিন শুনিনি।
নীলকর চাষি ও দাদন ব্যবসায়ীদের মতো যেনতেন ঋণ আদায় করাই ব্যাংকের লক্ষ্য উল্লেখ করে আদালত বলেন, লোন আদায়ের জন্য অর্থঋণ আইনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মামলা দায়ের না করে চেক ডিজঅনার মামলা করছে। এ কারণে আমাদের ক্রিমিনাল সিস্টেম প্রায় অকার্যকর হয়ে গেছে। তাই এখন থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে। অন্য কোনো আইনে নয়।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হাইকোর্টের রায়ের আলোকে নির্দেশনা জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও সব প্রকার ঋণের বিপরীতে ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
২০১১ সালের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর সেলিমগঞ্জের বরাইল মধ্যপাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ব্র্যাক ব্যাংক থেকে চার লাখ টাকা ঋণ নেন। পরে ৩৬ কিস্তির মধ্যে ২২ কিস্তি দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কিস্তি জমা দিতে না পেরে দুই লাখ ৯৫ হাজার ৯০৪ টাকার চেক দেন। কিন্তু এ চেক ডিজঅনার হওয়ায় ব্র্যাক ব্যাংক ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই মামলা করে। এ মামলায় ২০১৬ সালের ২০ জুন মোহাম্মদ আলীকে বিচারিক আদালত ৬ মাসের সাজা ও দুই লাখ ৯৫ হাজার ৯০৪ টাকা জরিমানা করেন।
আইনজীবী আব্দুল্লা আল বাকী জানান, ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন মোহাম্মদ আলী। ওই আপিলের শুনানি শেষে আজ রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে আপিল গ্রহণ করে তাকে ছয় মাসের সাজা থেকে খালাস দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মোহাম্মদ আলীকে ৫০ শতাংশ তথা এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা ১০ দিনের মধ্যে দিতে ব্যাংককে নির্দেশ দেন আদালত।
আরও পড়ুন: বিচারের দাবিতে আদালতে শিশু, বিজিবি সদস্যের খালাস বাতিল করল হাইকোর্ট
ঢাকার ফুটপাত বিক্রি ও ভাড়া উত্তোলনে জড়িতদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট