জাতীয় উন্নয়ন
জাতীয় উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করুন: জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়তে জাতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা সম্মিলিতভাবে শপথ নিই যে, সকল ষড়যন্ত্রের জাল ভেঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিজয় দিবসের প্রাক্কালে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়কে স্মরণ করে শুক্রবার পালিত হবে বিজয় দিবস।
তিনি একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জাতির প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ যখন নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন স্বাধীনতা ও উন্নয়নবিরোধী এক চতুর্থাংশ অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ‘তাদের অতীত ইতিহাস দেখুন। তাদের একটি অংশ শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাই করেনি, তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হয়ে মানুষ হত্যা করেছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান তাদের (স্বাধীনতাবিরোধীদের) রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেন।’
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনানিবাস থেকে জেনারেলের পকেটে আরেকটি গ্রুপের জন্ম ও প্রজনন, এই দলের হাতে শুধু রক্তের দাগ। এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জাতির পিতাকে হত্যার চক্রান্তে সরাসরি জড়িত ছিলেন।
আরও পড়ুন: সংসদীয় গণতন্ত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখায় জাপাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এদেশে একাত্তরের শকুনের বংশধর ও ১৯৭৫ সালের হায়েনারা এখনও সক্রিয়।
‘তারা সুযোগ পেলেই দাঁত-নখ দিয়ে দেশকে আঘাত করে।’ তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ ভালো থাকবে এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠবে এটা তারা মেনে নিতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ তাদের চিহ্নিত করেছে। তাদের (জনগণ) আর ষড়যন্ত্র করে বিভ্রান্ত করা যাবে না।’
বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকলে এ ধরনের উন্নয়ন সম্ভব হতো না।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা ১৯৭৫ সালের পর ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিল এবং তারা দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকলে (২০০৯ থেকে ২০২২) বাংলাদেশ কখনোই এতটা উন্নতি করত না। উন্নয়নশীল দেশ হতে পারেনি। এখন এটা আপনার ওপর নির্ভর করছে, দেশের জনগণ, আপনি যা চান তা বেছে নেবেন - একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবনের ধারাবাহিকতা নাকি বিএনপি-জামায়াত জোটের দুষ্কৃতিতে জীবন কাটাতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতা এতিমখানার অর্থ আত্মসাৎ মামলায় দণ্ডিত এবং আরেক শীর্ষ নেতা পলাতক এবং অর্থ পাচার, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় দণ্ডিত। কেন সাধারণ মানুষ তাদের ভোট দিতে যাবে? তিনি প্রশ্ন করেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণের প্রতি আস্থা হারিয়ে বিএনপি-জামায়াত এখন বিদেশিদের কাছে দেশকে নষ্ট করার জন্য কিছু ভাড়াটে লোক নিয়োগ করেছে। তারা পাচারকৃত অর্থ ব্যবহার করছে এবং দেশের মানহানি করছে।’
বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের দুঃশাসন এবং ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের অগ্নিসংযোগ সহিংসতার উল্লেখ করে হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জনগণ বিএনপি-জামায়াত জোটকে ভোট দেয়নি।
তিনি বলেন, জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তারা এখন অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক হয়েছে:
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারকে জনগণের সরকার আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের মূল লক্ষ্য জনগণের কল্যাণে কাজ করা এবং তারা কখনই চায় না জনগণের কষ্ট হোক।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এখন এটি অনেকাংশে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতিও কমছে। ‘আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি সহ যেকোন পণ্যের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দাম সমন্বয় করব।’
আরও পড়ুন: আমরা বাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিনির্ভর দেশগুলো সমস্যায় পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিবেচনা করে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করছি- এটি বিশ্বের যেখানেই পাওয়া যাক না কেন এবং দাম যাই হোক না কেন।’
প্রধানমন্ত্রী কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং চলমান সংকট মোকাবিলায় এক ইঞ্চি আবাদি জমি অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানান।
সংকট আসতেই পারে এটাই স্বাভাবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সঙ্কটকে ভয় পাবেন না। জনগণের সহযোগিতায় আমরা সফলভাবে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা করেছি। বর্তমান বৈশ্বিক মন্দাও আমরা মোকাবিলা করব, ইনশাআল্লাহ। এ জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
পাঁচ মাসের আমদানির জন্য যথেষ্ট রিজার্ভ আছে
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য দেশে এখন পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে অনেকেই নানা বানোয়াট মন্তব্য করছেন। মাত্র তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট। কিন্তু এখন আমাদের কাছে যা রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য যথেষ্ট।’
কোভিড-১৯ সময়ের পরে রিজার্ভ কেন ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে কমেছে তার কারণগুলোও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন।
আরও পড়ুন: বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে সন্ধ্যায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী
ব্যাংকের টাকা নিয়ে গুজবে কান দেবেন না:
শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাংকে টাকা নেই এমন গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘অকারণে গুজবে কান দেবেন না। ব্যাংকগুলোতে টাকার অভাব নেই। নিজের কষ্টার্জিত টাকা ঘরে রেখে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। আমাদের সবকিছু বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ১৪ বছরে দেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। দেশ এখন খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।’
তিনি বলেন, দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে এবং সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ২২ হাজার ডাক্তার এবং ৪০ হাজার নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি ও সংযোগ, অবকাঠামো, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য কর্মসূচি এবং কৃষিসহ অন্যান্য খাতের উন্নয়নের দিকেও মনোনিবেশ করেন।
মহান বিজয় দিবস-২০২২ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী দেশে এবং বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে তার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের ডাককে প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ: প্রধানমন্ত্রী
২ বছর আগে