আরডার্ন
পদত্যাগী জেসিন্ডার পরবর্তী কাজ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা
চলতি সপ্তাহে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেয়ার পর জেসিন্ডা আরডার্ন এর পরবর্তী কাজ নিয়ে ইতোমধ্যেই জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
মাত্র ৪২ বছর বয়সে আইন প্রণেতা হিসেবে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা এবং নেতা হিসেবে সাড়ে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে জেসিন্ডা নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে যাচ্ছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ক্যারিয়ারের সব ধরনের সম্ভাবনা তার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।
জেসিন্ডা বলেছিলেন যে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন, কারণ তার কাছে ‘ন্যায়বিচার করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সুযোগ নেই’ এবং তার বাগদত্তা ও চার বছর বয়সী কন্যার সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানো ছাড়া তার নিজের ভবিষ্যতের জন্য কোনও তাৎক্ষণিক পরিকল্পনাও নেই।
জেসিন্ডা শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাকে স্বীকার করতে হবে প্রথমবারের মতো গত রাতে আমি দীর্ঘ সময় ভাল ঘুমিয়েছি।’
তিনি জানান, দুঃখ এবং স্বস্তি উভয়ই অনুভব করেছেন তিনি।
অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সহকারী অধ্যাপক স্টিফেন হোডলি বলেছেন যে তিনি কল্পনা করতে পারছেন না যে জেসিন্ডা তার সামর্থ্য এবং দক্ষতা নিয়ে দীর্ঘ সময় বাড়িতে থাকবেন।
হোডলি বলেন, ‘তার সম্ভাবনা আছে, তার ক্ষমতা আছে, তার অনেক কিছু করার গ্রহণযোগ্যতা আছে। কিন্তু আমি ধারণা করি, এই বছরের শেষ নাগাদ সে থেমে যাবে এবং সম্পূর্ণ নতুন ক্যারিয়ার নিয়ে এগুবে।’
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১৪ জন নিহত
হোডলি নিউজিল্যান্ডের আরেকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্কের কর্মজীবনের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন, যিনি উন্নয়ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়ে জাতিসংঘের শীর্ষ প্রশাসক হয়েছিলেন।
হোডলি বলেছিলেন, ‘জেসিন্ডাকে যেকোনো সংখ্যক জাতিসংঘ বা দাতব্য বা জনহিতকর বা অন্যান্য সংস্থা সম্পৃক্ত করতে পারে।’
‘অনেক, অনেক সম্ভাবনা রয়েছে এবং তার প্রোফাইল এত বেশি হাই যে আমি মনে করি সে নিজেকে মেলে ধরবে।’
জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী জেমস শ ২০০৭ সালে জেসিন্ডার সঙ্গে প্রথম দেখা করেছিলেন এবং বন্ধু হিসেবে থেকেছেন, তিনি বলেছিলেন যে তিনি হতবাক হয়েছিলেন, যখন জেসিন্ডা তাকে পদত্যাগ করার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। তখন তিনি পুরোপুরি অবাক হননি।
শ বলেছেন, ‘এটি সত্যিই দারুণ পাঁচ বছর হয়েছে।’
একটি আইন প্রণয়ন কর্মসূচির শীর্ষে থাকা শ বলেছেন, ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে গুলিবর্ষণ, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ২২ জনের মৃত্যু এবং করোনাভাইরাস মহামারিসহ ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে ব্যাপক গুলিবর্ষণসহ সঙ্কটের একটি সিরিজের মধ্য দিয়ে দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য জেসিন্ডার প্রয়োজন ছিল।
শ বলেছেন, সর্বোপরি জেসিন্ডা ক্রমবর্ধমান সংখ্যক হুমকির শিকারও হয়েছেন এবং একটি বিষাক্ত, মিসগোইনিস্টিক অনলাইন সংস্কৃতি যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও খারাপ হয়েছে।
শ বলেছেন, ‘আমি আশা করি তিনি সৈকতে তার পরিবারের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাটাতে কিছু সময় পাবে।’
তিনি আরও বলেন, জেসিন্ডাকে তিনি বিশ্বাস করেন, যখন তিনি বলেছিলেন যে তার এখনও ভবিষ্যতের জন্য দৃঢ় পরিকল্পনা নেই।
শ বলেছেন, ‘আমি মনে করি সে এই মুহূর্ত থেকে যা চায় তাই করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেসিন্ডা আমার দেখা সবচেয়ে নিঃস্বার্থ, দৃঢ়চিত্ত, সর্বজনীন মনের মানুষদের মধ্যে একজন। তাই আমি মনে করব যে যাইহোক না কেন, এটি জনস্বার্থে হবে।’
আরও পড়ুন: প্রথম সপ্তাহে ‘স্পেয়ার’ ৩২ লাখ কপি বিক্রি
১ বছর আগে
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আরডার্নের পদত্যাগের ঘোষণা
নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন।
তিনি বলেছেন, ‘তিনি অফিস ছাড়ছেন। দেশটির সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বন্দুক হামলায় হত্যাকাণ্ড ও করোনাভাইরাস মহামারির প্রাথমিক পর্যায় পরিচালনার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছেন।’
বৃহস্পতিবার দেশটির উপকূলবর্তী শহর নেপিয়ারে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার শেষ কার্যদিবস।
আরডার্নে নিজ দেশে এমন কিছু রাজনৈতিক চাপ এবং এমন কিছু ব্যক্তির কাছ থেকে তিক্ত সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছিলেন। তার আগে দেশটির কোনো নেতা এগুলোর সম্মখীন হননি। তবুও,তার এই ঘোষণা ৫০ লাখ মানুষের দেশটিতে বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
আরডার্ন বলেন,‘অফিসে আমি ষষ্ঠ বছরে পা দিয়েছি এবং এই বছরগুলোতে আমি আমার সব কিছু দিয়েছি।’
তুলনামূলক কম বয়সে ২০১৭ সালে যখন ৩৭ বছর বয়সী আরডার্ন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জয়লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি বিশ্বজুড়ে নারীদের মাঝে অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে ওঠেন।
ব্যক্তিজীবনে অন্যান্য রাজনীতিবিদদের মতো তিনি বিবাহিত ছিলেন না। খণ্ডকালীন ডিজে হিসেবে কিছু মিউজিক রেকর্ড করেছেন তিনি। সবকিছু মিলিয়েই তিনি এক নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের সূচনা করেছিলেন।
অনেকেই মনে করেন যে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিরোধী ছিলেন।
২০১৮ সালে অফিসে থাকা অবস্থায় তিনি সন্তান জন্ম দেন। ওই বছরের শেষের দিকে তিনি তার শিশু কন্যাকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নিয়ে আসেন।
আরও পড়ুন: আবারও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আরডার্ন
২০১৯ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকার দিনের সম্মুখীন হন আরডার্ন। সেদিন এক শ্বেতাঙ্গ বন্দুকধারী ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলা চালিয়ে ৫১ জনকে হত্যা করে। এ ঘটনায় যারা বেঁচে গিয়েছিলেন এবং দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি যেভাবে সহানুভূতি দেখিয়েছেন তা বিশ্বজুড়ে বেশ প্রসংসিত হয়েছে।
৯ মাসেরও কম সময় পরে তাকে আরেকটি ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হতে হয়। সেবার হোয়াইট আইল্যান্ড আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় ২২ জন পর্যটক ও গাইড নিহত হন।
আরডার্ন তার দেশে করোনভাইরাস মহামারির প্রাথমিক পর্যায় পরিচালনার জন্যও বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছন, আরডার্ন বিশ্বকে দেখিয়েছেন কীভাবে মেধা ও শক্তি দিয়ে নেতৃত্ব দিতে হয়।
আলবানিজ টুইট করে জানান, তিনি দেখিয়েছেন যে সহানুভূতি ও অন্তর্দৃষ্টি শক্তিশালী নেতৃত্বের গুণাবলী।
তিনি আরও বলেন, জেসিন্ডা অনেকের অনুপ্রেরণা এবং আমার একজন ভালো বন্ধু।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো টুইটারে আরডার্নকে তার বন্ধুত্ব, সহানুভূতিশীল, শক্তিশালী ও অবিচল নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার আরডার্ন ঘোষণা করেন যে নিউজিল্যান্ডের ২০২৩ সালের সাধারণ নির্বাচন ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে এবং ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি একজন আইনপ্রণেতা থাকবেন।
নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন তা স্পষ্ট নয়।
উপপ্রধানমন্ত্রী গ্রান্ট রবার্টসন ঘোষণা করেছেন যে তিনি লেবার পার্টির নেতৃত্বের লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।
লেবার পার্টির আইনপ্রণেতারা রবিবার নতুন নেতার জন্য ভোট দেবেন। যদি কোনো প্রার্থীই ককাস থেকে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন না পায়, তাহলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা চলে যাবে বৃহত্তর দলের সদস্যপদে।
আরডার্ন সুপারিশ করেছেন যে তিনি ৭ ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব শেষ করার সময় পার্টি তার স্থলাভিষিক্ত বেছে নেবে।
আরও পড়ুন: জেসিন্ডা আরডার্নের প্রতি কৃতজ্ঞ তামিম ইকবাল
১ বছর আগে