মিষ্টি আলু চাষ
রাণীশংকৈল মিষ্টি আলু চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ও উচ্চ ফলনশীল মুড়াসাকি ও ওকিনামা জাতের মিষ্টি আলু চাষ করছেন কৃষকেরা। বিশেষ করে নদীর তীরে চরাঞ্চলের কৃষক মিষ্টি আলু চাষে ঝুঁকেছেন। অল্প খরচে ও কম পরিচর্যায় বেশি ফলন এবং অধিক লাভ হওয়ায় মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহী বেশি এ অঞ্চলের কৃষকদের। ফলন ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।
জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা জগদল নাগর নদীর পতিত বালুর চরে মিষ্টি আলু চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কৃষক হাসান আলী।
কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহায়তায় কৃষকরা জমিতে মুড়াসাকি ও ওকিনামা জাতের মিষ্টি আলু চাষ করেন। কৃষক হাসান আলীর জমিতে যে আলু হয়েছে তার মধ্যে কোনো কোনো আলুর ওজন তিন থেকে চার কেজি। উৎপাদিত এতো বড় আকারের মিষ্টি আলু দেখতে গ্রামের মানুষ ভিড় করছেন। দূর দূরান্ত থেকেও আসছেন অনেকে। তারা আলু দেখছেন ও পরামর্শ নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: আলু চাষের কথা বলে নিষিদ্ধ মাদক পপি চাষ!
সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মিষ্টি আলু চাষের ভালো ফলনের চিত্র দেখা যায়।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রাণীশংকৈল উপজেলায় মোট পাঁচ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
ধর্মগড় এলাকার কৃষক জমির উদ্দীন জানান, চরের বালু মাটিতে এত সুন্দর ফসল হবে ভাবতেও পারিনি। এতো বড় মিষ্টি আলু জীবনেও দেখিনি। দেখে খুব ভালো লাগছে। যত্ন করলে যে রত্ন পাওয়া যায় হাসান আলী তার উদাহরণ।
কৃষক হাসান আলী জানান, প্রথমে যখন শুরু করি হতাশা কাজ করছিল। এমন ফলনে আমি সত্যিই আনন্দিত। প্রথম বারেই এতো সাফল্য পাব ভাবতে পারিনি। এ যাবত ৫০ হাজার টাকার মিষ্টি আলু বিক্রি করেছি। জমিতে আরও তিনশ’ মনের বেশি আলু রয়েছে, যার বাজার দর তিন লাখ টাকার বেশি বিক্রি হবে বলে আশা করছি। তবে পানির সেচ বেশি দিতে হয়েছে কারণ চরের জমি মানেই বালু। আশা রাখি এবারও মিষ্টি আলু চাষে লাভবান হয়ে লাভের টাকায় কিছু একটা করবো।’
একই এলাকার দেলদার হোসেন বলেন,আমাদের এলাকা চরাঞ্চল হওয়ায় এখানে অনান্য ফসলের চেয়ে মিষ্টি আলু চাষ করলে ফলন বেশি হয়। মিষ্টি আলু চাষে পরিশ্রম কম ও লাভ বেশি। ফলন ভালো হওয়ায় আশা রাখি এবারও লাভবান হবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, মিষ্টি আলু চাষে তেমন রোগবালাই নেই। এতে লেদা পোকা নামের এক ধরনের পোকার আক্রমণ হয়, যা থেকে পরিত্রাণের জন্য অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।
তিনি বলেন, কৃষক হাসান আলী তিন থেকে চার কেজি ওজনের মিষ্টি আলু উৎপাদন করে উপজেলায় তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বাজারে এ বিশেষ পুষ্টি গুণ সম্পন্ন মিষ্টি আলুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আশা করছি অন্য কৃষকেরা উদ্বুদ্ধ হবেন।
তিনি আরও বলেন, ভালো ফলন পেতে হলে আগাছা পরিষ্কার, সুষম সারের ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হয়। সাধারণত বেলে-দোঁ-আশ মাটিতে মিষ্টি আলুর চাষ ভালো হয়। বীজ রোপণের ১৫০ থেকে ১৬০ দিন পর মিষ্টি আলুর ফলন ঘরে তোলার উপযোগী হয়। প্রতি শতকে ৬০০ থেকে ৬৫০ আলুর কাটিং ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। এবার জেলায় মিষ্টি আলুর ফলন ভালো হওয়ায় লাভবান হবেন কৃষকরা।
আরও পড়ুন: যশোরে বিপাকে আলু চাষিরা
১ বছর আগে