এজেন্ডা
ইউনূস-তারেকের সাক্ষাৎ: আলোচনার এজেন্ডা ও ফলাফল কী হতে পারে?
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে একটি আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দুই নেতার এই বহুল আলোচিত বৈঠকটি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
এই সাক্ষাৎ ডর্চেস্টার হোটেলে লন্ডনে স্থানীয় সময় শুক্রবার(১৩ জুন) সকাল ৯টা থেকে ১১টা (স্থানীয় সময়) পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
এই বৈঠককে ঘিরে এরই মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী লন্ডনে পৌঁছেছেন, তবে এটি স্পষ্ট নয় যে আলোচনা একান্তভাবে হবে কিনা।
এই উচ্চপর্যায়ের সাক্ষাৎ ইতোমধ্যেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। সবাই এখন লন্ডনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। কারণ অনেকেই মনে করছেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে এই সাক্ষাতের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিতে পারে।
বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল আশা করছে, আলোচনাটি চলমান রাজনৈতিক সংকট ও নির্বাচন সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়গুলো সমাধানে সহায়ক হবে।
আরও পড়ুন: ইউনূস-তারেকের বৈঠক থেকে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইবে: রিজভী
যদিও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, এজেন্ডা উভয় নেতাই নির্ধারণ করবেন, বিএনপির শীর্ষ নেতারা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে কয়েকটি মূল বিষয় আলোচ্য সূচিতে স্থান পেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে-
• নির্বাচন সময়সূচি,• সংস্কার,• জুলাই ঘোষণা,• জুলাই-আগস্ট মাসের গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকারীদের বিচার,• শক্তিশালী এবং সুশৃঙ্খল ক্ষমতা হস্তান্তর,• অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তগুলোর অনুমোদন,• অন্তর্বর্তী প্রশাসনের জন্য মর্যাদাপূর্ণ প্রস্তানের কৌশল, ও• তারেক রহমানের বাংলাদেশে ফেরত আসার সম্ভাবনা।
এই সাক্ষাৎ অধ্যাপক ইউনূসের সাম্প্রতিক জাতীয় ভাষণে দেওয়া ঘোষণার পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিএনপি নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করে একে একপেশে এবং বাস্তবসম্মত নয় বলেও মন্তব্য করেছে দলটি।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, এই সাক্ষাৎ নির্বাচন সময়সূচি নিয়ে সংকট সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে, এবং আলোচনার কেন্দ্রে এই সময়সূচি সমন্বয় একটি প্রধান বিষয় হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সাক্ষাতে তারেক রহমান স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করবেন কেন এপ্রিল নির্বাচন করার জন্য উপযুক্ত সময় নয় এবং কেন ডিসেম্বর আরও বেশি উপযুক্ত হবে। তবে, যদি প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারি সময় হিসেবে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হন, তবে নমনীয়তার কিছু সুযোগ থাকতে পারে।’
তিনি আরও জানান, তারেক রহমান জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হলে, রমজানের আগে, তাতে কোনো আপত্তি নাও থাকতে পারে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টিও আলোচনায় উঠতে পারে, যা ১৭ বছর পর তার লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পথ সুগম করতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি জানিয়েছেন তারেক রহমান ‘শিগগিরই’ দেশে ফিরবেন।
আরও পড়ুন: তারেক রহমান শিগগিরিই দেশে ফিরবেন: মির্জা ফখরুল
এদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা নেই। বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশে নাগরিক এবং যেকোনো সময় দেশে ফিরে আসতে পারেন।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক সংকট আরও তীব্র হতে পারে। তারা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, সাক্ষাতের বিস্তারিত—যেমন আলোচনা, মতবিরোধ এবং ফলাফল—খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশ না করার জন্য—যাতে এটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং জনস্বার্থে গৃহীত উদ্যোগগুলোকে ব্যাহত না করে।
এছাড়া, তারা সুপারিশ করেছেন যে, সিদ্ধান্তগুলো ধীরে ধীরে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যকর করা উচিত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি একটি উচ্চ পর্যায়ের সাক্ষাৎ, যেখানে জাতীয় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে, বিশেষ করে সাধারণ নির্বাচনের জন্য একটি উপযুক্ত তারিখ নির্ধারণ নিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘একটি নিরপেক্ষ সরকারের গুরুত্ব, আইনের শাসন, আদালতের রায়, জাতীয় নিরাপত্তা এবং বৃহত্তর রাজনৈতিক বিষয়গুলোও গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংস্কারগুলোও একটি আলোচনার বিষয় হতে পারে। আমরা এটি একটি ইতিবাচক মানসিকতার সঙ্গে দেখছি। আমরা আশা করছি, এই উচ্চ পর্যায়ের সাক্ষাৎ থেকে একটি জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য সমাধান বা সিদ্ধান্ত বের হবে।’
তিনি আরও বলেন, সাক্ষাৎ রাজনৈতিক উত্তেজনা কমাতে এবং প্রধান মতবিরোধগুলোর সমাধান করতে সাহায্য করতে পারে।প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিল থেকে নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে আনার জন্য রাজি হতে পারেন কিনা—এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা আশা করি, যখন দুই নেতা দেখা করবেন, তখন এই বিষয়টি—এবং আরও অনেক বিষয়—গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।’
তিনি আশাবাদী যে, অধ্যাপক ইউনূস প্রস্তাবিত সময়সূচি সংশোধন করবেন এবং আবহাওয়া, রমজান এবং পাবলিক পরীক্ষাগুলোর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে একটি বাস্তবসম্মত সময়সূচি গ্রহণ করবেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. এ.জেড.এম. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা এবং বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে—যে অন্ধকার মেঘগুলো জমেছিল—এই সাক্ষাতের মাধ্যমে তা পরিষ্কার হতে শুরু করবে।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই সাক্ষাৎ ন্যায়বিচার, জরুরি সংস্কার, দ্রুত নির্বাচন এবং দেশের পুনর্গঠন ও পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ভিত্তি তৈরি করবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণ গভীরভাবে এই আলোচনার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে এবং নির্বাচনের সময়সূচি, সংস্কার এবং এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে দুই নেতার অবস্থান এবং যে কোনো সমঝোতার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
আরও পড়ুন: অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের সময়সূচি পুনঃবিবেচনার আহ্বান ফখরুলের
তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফলাফল আসবে, যা শান্তি এবং স্থিতিশীলতা তৈরি করতে সাহায্য করবে।
বিএনপি নেতা আরও আশা করেছেন, এই সাক্ষাৎ দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য গঠনমূলক সমাধান খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে ফলাফল ইতিবাচক হবে। বলেন ‘আমি আশা করি উভয় পক্ষ আলোচনা করে একটি সমঝোতায় পৌঁছাবে।’ তিনি বলেন।
তিনি আরও বলে, ‘ব্যর্থতার জন্য কোনো জায়গা নেই। যদি আলোচনা ব্যর্থ হয়—তাহলে একাধিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে। তবে আমরা বিশ্বাস করি, যদিও আলোচনা চলাকালীন মতপার্থক্য স্বাভাবিক, উভয় পক্ষই অবশেষে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে, কিছু ছাড় দিয়ে সমঝোতা পৌঁছবে। পুরো জাতি এমন একটি সমাধানের জন্য আশাবাদী।’
১৭৬ দিন আগে
ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে এজেন্ডাগুলোর অগ্রগতির আশা করছে রাশিয়া ও চীন
চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠেয় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে উন্নয়নশীল বিশ্বে আরও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্র লাভের দিকে নজর দেবে রাশিয়া ও চীন। এ সময় পশ্চিম-বিরোধী যৌথ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সৌদি আরবকে কাছে টানতে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে পারে তারা।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রিকস অর্থনৈতিক ব্লকের নেতারা জোহানেসবার্গের স্যান্ডটনে তিন দিনের বৈঠক করবেন। গত দেড় দশকে চীন এই ব্লকে কূটনৈতিক মূলধন বিনিয়োগ করেছে এবং এটা নিয়ে তাদের উচ্চাকাক্ষা রয়েছে তার প্রমাণ ওই বৈঠকে চীনের প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিংয়ের উপস্থিতি।
ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। একারণে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ক্ষেত্রে জটিলতা থাকায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন তিনি। এ ছাড়া ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা উপস্থিত থাকবেন।
বুধবার প্রধান শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার সাইডলাইন বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হবে। বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পশ্চিমা আধিপত্য নিয়ে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বাড়াতে সাধারণ আহ্বান জানানো হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাশিয়া ও চীন সবেচেয়ে বেশি আগ্রহী। দক্ষিণ আফ্রিকায় পুতিনের প্রতিনিধিত্ব করবেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। এ ছাড়া আরও কয়েক ডজন উন্নয়নশীল দেশের নেতা বা প্রতিনিধিরা সাইডলাই বৈঠকে যোগ দেবেন।
ব্রিকস ব্লকের সম্ভাব্য সম্প্রসারণসহ একটি সুনির্দিষ্ট নীতির বিষয়ে আলোচনা করা হবে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের উদীয়মান বাজারভিত্তিক দেশগুলোর সমন্বয়ে ২০০৯ সালে গঠিত হয়েছিল ব্রিকস। পরের বছর সংস্থাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করেছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তারা বলছেন, আরেকটি সম্ভাব্য সম্প্রসারণে ব্রিকসে যোগদানের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদনকারী ২০টিরও বেশি দেশের মধ্যে একটি হলো সৌদি আরব। রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক ব্লকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উত্পাদককে অন্তর্ভুক্ত করার যে কোনো পদক্ষেপ স্পষ্টতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে। অতিরিক্ত শীতল ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ এবং পারস্য উপসাগরে কিছুটা প্রভাব বিস্তারের জন্য বেইজিংয়ের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এরই মধ্যে অনেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
আরও পড়ুন: দ. আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ
সৌদি আরবে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত তালমিজ আহমেদ বলেছেন, ‘যদি সৌদি আরব ব্রিকসে প্রবেশ করে তবে এটি এই গ্রুপিংকে অসাধারণ গুরুত্ব দেবে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইতোমধ্যেই উন্নয়নশীল বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির একটি বড় অংশ নিয়ে গঠিত ব্রিকস সম্প্রসারণের নীতিতে একটি চুক্তিও জি-৭ এর ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্লকের জন্য রাশিয়ান ও চীনা দৃষ্টিভঙ্গির জন্য একটি নৈতিক বিজয়।
ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধের মতো স্থবিরতার মধ্যে উভয়ই এক ধরনের জোটকে শক্তিশালী করার জন্য আরও দেশকে যুক্ত করার পক্ষে -- এমনকি এটি শুধুমাত্র প্রতীকী হলেও৷
আর্জেন্টিনা থেকে শুরু করে আলজেরিয়া, মিশর, ইরান, ইন্দোনেশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত পর্যন্ত সব দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে সৌদির সঙ্গে যোগদানের জন্য আবেদন করেছে এবং সম্ভাব্য নতুন সদস্যও হতে পারে।
জোহানেসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের অধ্যাপক অ্যালেক্সিস হাবিয়ারেমি বলেছেন, ‘যদি তাদের মধ্যে কয়েকটি দেশকে নেওয়া হয়, তাহলে এটি একটি বৃহত্তর অর্থনৈতিক ব্লকে পরিণত হবে এবং সেখান থেকে শক্তির উৎস তৈরি হবে।’
যদিও ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা সম্প্রসারণে কম আগ্রহী এবং বর্তমানে একটি একচেটিয়া উন্নয়নশীল বিশ্ব সংগঠনে তাদের প্রভাব হ্রাস পেয়েছে। যদিও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি এবং পাঁচটি দেশকে প্রথমে নতুন সদস্য হওয়ার যে মানদণ্ড পূরণ করতে হবে তাতে একমত হতে হবে। বেইজিংয়ের চাপের মধ্যে এটি জোহানেসবার্গের এজেন্ডায় রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় চীনের রাষ্ট্রদূত চেন জিয়াওডং বলেছেন, ‘ব্রিকস সম্প্রসারণ এই মুহূর্তে শীর্ষ আলোচিত বিষয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে৷’ সম্প্রসারণই ব্রিকসের মূল কার্যক্রম বাড়ানোর চাবিকাঠি। আমি বিশ্বাস করি আসন্ন এই বছরের শীর্ষ সম্মেলন একটি নতুন ও দৃঢ় পদক্ষেপের সাক্ষী হবে।’
ব্রিকস থেকে উদ্ভূত যে কোনো রুশ ও চীনা প্রভাবকে বন্ধ করার প্রয়াসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও ভারতের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উপর জোর দিয়েছে। শীর্ষ সম্মেলনের আগেই স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘ব্রিকস অ্যাসোসিয়েশনের অনেক নেতৃস্থানীয় সদস্যদের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত আছে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে ব্রিকস জোটে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত চীন: মুখপাত্র
ইউরোপীয় ইউনিয়নও জোহানেসবার্গের ঘটনাগুলো ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করবে, তবে ইউক্রেনের যুদ্ধের উপর প্রায় একমাত্র মনোযোগ এবং উন্নয়নশীল বিশ্ব থেকে রাশিয়ার আগ্রাসনের জন্য ঐক্যবদ্ধ নিন্দা জানাতে ব্লকের অব্যাহত প্রচেষ্টা এখনও পর্যন্ত অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে।
শি, লুলা, মোদি ও রামাফোসা একত্রিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র পিটার স্ট্যানো বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের এই মুহূর্তটি আন্তর্জাতিক আইন বজায় রাখার জন্য ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছে।
স্ট্যানো বলেছেন, ‘আমরা পুতিনকে তার অবৈধ, অস্থিতিশীল আচরণ বন্ধ করতে তাদের ভূমিকার জন্য অপেক্ষা করছি।’
মূল শীর্ষ সম্মেলনের আগে জুন মাসে কেপটাউনে ব্রিকস পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যদি কোনো সমাধান হয়ে থাকে, তাহলে যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়া বা পুতিনের প্রকাশ্য সমালোচনা হবে না। স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারের বাইরে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রাইটস গ্রুপ এবং ইউক্রেনীয় অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ আফ্রিকার ঘোষিত প্রতিবাদ সম্ভবত একমাত্র নিন্দা জানাবে।
যদ আগের বৈঠকে কোনো সমাধান হয়, এই শীর্ষ সম্মেলন থেকে কিছু সুবিধা পেতে পারে রাশিয়া।
ইউরোপ, রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগ্রামে ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো মারিয়া স্নেগোভায়া বলেছেন, গত মাসে ইউক্রেনের বাইরে শস্য পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার একটি চুক্তি স্থগিত করার পরে পুতিন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আরও বিনামূল্যে রাশিয়ান শস্যের চালান ঘোষণা করতে ব্রিকস সমাবেশ ব্যবহার করতে পারেন। তিনি ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশের জন্য করেছেন।
স্নেগোভায়া বলেন, ইউক্রেনকে প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার সময় এটি পুতিনকে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাছে ‘সদিচ্ছা’ প্রদর্শনের অনুমতি দেবে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন,পুতিন একটি ভিডিও লিঙ্কে উপস্থিত হওয়া সত্ত্বেও শীর্ষ সম্মেলনে ‘সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ’ করবেন এবং একটি বক্তব্য দেবেন।
আরও পড়ুন: ব্রিকসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি নির্ভর করছে সদস্যদের উপর: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জোহানেসবার্গে তিন দিন ধরে নিয়মিতভাবে যা সম্প্রচারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা হলো বর্তমান বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার উপর উন্নয়নশীল বিশ্ব আঁকড়ে ধরা। শীর্ষ সম্মেলনের আগের কয়েক মাস ও সপ্তাহ ধরেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য বিশ্বের মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলারের আধিপত্যের সমালোচনা চলছে।
পাঁচটি দেশের ভিন্ন ভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের কারণে এবং চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে নীতি বাস্তবায়নে ব্লকের যে অসুবিধা রয়েছে তা নির্দেশ করতে ব্রিকস বিশেষজ্ঞরা সাধারণত ঐক্যবদ্ধ।
চায়না গ্লোবাল সাউথ প্রজেক্টের বিশ্লেষক কোবাস ভ্যান স্টাডেন বলেন, স্থানীয় মুদ্রায় আরও বেশি বাণিজ্যের দিকে মনোনিবেশ করা এমন একটি বিষয় যা তারা সকলেই পিছনে ফেলতে পারে।
তিনি দেখেছেন যে ব্রিকস বিশ্বের কিছু অংশে আঞ্চলিক বাণিজ্যে ডলারের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, ঠিক যেভাবে তিনি এই শীর্ষ সম্মেলনকে সামগ্রিকভাবে দেখেন।
ভ্যান স্ট্যাডেন বলেন, ‘এগুলোর কোনোটিই বড় অস্ত্র নয় যা ডলারকে মোকাবিলা করতে চলেছে। এটা নাটক নয়।’ ‘এটি একটি বড় তরবারির ক্ষত নয়, এটি অনেকগুলো কাগজ কাটার মতো। এটি ডলারকে দমাবে না, তবে এটি অবশ্যই বিশ্বকে আরও জটিল করে তুলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের ডলারকে হারানোর দরকার নেই এবং তাদের জি-৭ কে পরাজিত করার দরকার নেই। তারা বিশেষভাবে যা করতে চায় তা হলো এর একটি বিকল্প উত্থাপন। এটা অনেক দীর্ঘ কাজ।’
আরও পড়ুন: ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন: সাইডলাইন বৈঠকে বসতে পারেন শেখ হাসিনা-মোদি
৮৩৭ দিন আগে
১৯৭১ সালের গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতির দাবি জাতিসংঘের এজেন্ডায়
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঙালিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল অন্তর্ভুক্ত করেছে।
আগামী ১৯ জুন থেকে ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৩তম অধিবেশনের এজেন্ডা আইটেম-৩ এ এই দাবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস প্রবাসী বাংলাদেশি সংগঠন স্টিচিং বাসুগ (বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রুপ) জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) বিশেষ পরামর্শক মর্যাদার সঙ্গে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলো- আমরা একাত্তর, প্রজন্ম '৭১, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম ও সেরাজী ফাউন্ডেশন-এর জারি করা লিখিত বিবৃতি গ্রহণ করেছেন।
১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বিবৃতিটি ২৯ মে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) রেজুলেশন ১৯৯৬/৩১ অনুযায়ী প্রচারিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের গণহত্যার ওপর প্রথম আলোকচিত্র প্রদর্শনী
৯১৯ দিন আগে