ব্রিটিশ রাজপুত্র প্রিন্স হ্যারি
ডেইলি মিররের প্রকাশকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আদালতে প্রিন্স হ্যারি
ব্রিটিশ রাজপুত্র প্রিন্স হ্যারি মঙ্গলবার ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্র ‘ডেইলি মিরর’-এর প্রকাশকের বিরুদ্ধে করা মামলায় সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হন। এরমধ্য দিয়ে ১৯ শতকের পর রাজপরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে আদালতে হাজির হয়ে ইতিহাস গড়েছেন তিনি।
হ্যারি মিররের ওই প্রকাশকের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে ফোন হ্যাকিং ও অন্যান্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। এরকম একটি মামলায় সাক্ষ্য দিতেই এদিন আদালতে হাজির হন হ্যারি।
তিনি একটি কালো এসইউভি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল) গাড়িতে করে আদালতে আসেন এবং কয়েক ডজন ফটোগ্রাফার ও টিভি ক্যামেরাকে পাশ কাটিয়ে আদালতে প্রবেশ করেন।
সাক্ষ্য দেওয়ার আগে হ্যারি লন্ডন হাইকোর্টের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বাইবেল হাতে নিয়ে শপথ নেন। এরপর অভিযুক্তের আইনজীবী তাকে জেরা শুরু করেন।
৩৮ বছর বয়সী হ্যারি ঊনবিংশ শতাব্দীর পর প্রথম ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে আদালতে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হচ্ছেন।
এর আগে, ১৮৯১ সালে তৎকালীন ভাবি রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড এক জুয়া কেলেঙ্কারির মামলার বিচারে সাক্ষ্য দিতে আদালতে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: ‘একাকীত্ব' মোকাবিলায় রাজা চার্লস নিজের সঙ্গে একটি টেডি বিয়ার রাখেন: হ্যারি
সোমবার আদালতে প্রিন্সের মামলার বিবরণ দিতে গিয়ে তার আইনজীবী ডেভিড শেরবোর্ন বলেন, হ্যারির শৈশব থেকেই ব্রিটিশ সংবাদপত্রগুলো হ্যাকিং ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এমন কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছে, যেগুলোকে পত্রিকাগুলো ‘স্কুপ’ (এক্সক্লুসিভ সংবাদ) হিসেবে পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, হ্যারির এইসব গল্প সংবাদপত্রটির বিক্রি বাড়ানোর একটি বড় হাতিয়ার ছিল এবং ১৯৯৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত স্কুলে ব্যথা পাওয়া থেকে শুরু করে গাঁজা ও কোকেন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রেমিকাদের সঙ্গে উত্থান-পতন বিষয়ে প্রায় ২ হাজার ৫০০টির মতো নিবন্ধে তার জীবনের প্রায় সমস্ত দিক তুলে ধরা হয়েছিল।
তার আইনজীবী বলেন, ‘ট্যাবলয়েডগুলোর জন্য কিছুই পবিত্র বা সীমার বাইরের ছিল না।’
হ্যাকিং অর্থাৎ তারকাদের ফোনে আড়ি পাতার জন্য ডিফল্ট সিকিউরিটি কোড অনুমান বা ব্যবহার করার অভ্যাস এই শতাব্দীর প্রথম দিকে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলোতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো।
২০১১ সালে নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড ১৩ বছর বয়সী এক নিহত কিশোরীর ফোন হ্যাক করার খবর প্রকাশের পর এই বিষয়টি অস্তিত্বের সংকটে পড়ে।
এরপর মালিক রুপার্ট মারডক পত্রিকাটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং তার বেশ কয়েকজন নির্বাহী বিচারের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: শপথ নিয়ে মাথায় রাজমুকুট পড়লেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস
মিরর গ্রুপ ২০১৫ সালে শত শত অবৈধ তথ্য সংগ্রহের দাবি নিষ্পত্তি করতে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড ১২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে এবং ফোন হ্যাকিংয়ের শিকারদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছে।
তবে ৩৩টি প্রকাশিত নিবন্ধের বিষয়ে পত্রিকাটি হ্যারির সব দাবি অস্বীকার করেছে বা মেনে নেয়নি।
মিরর গ্রুপের অ্যাটর্নি অ্যান্ড্রু গ্রিন বলেন, ডিউক অব সাসেক্সের হ্যাক হওয়ার ঘটনার পক্ষে সমর্থন করার মতো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এরপরই গ্রিন হ্যারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করেন।
সোমবার সংবাদপত্রটির বিরুদ্ধে করা তার বেশ কয়েকটি মামলার মধ্যে প্রথম মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য হ্যারির অপেক্ষা করা হয়।
বিচারক টিমোথি ফ্যানকোর্টের স্পষ্ট ক্ষোভের জবাবে তার আইনজীবী ডেভিড শেরবোর্ন বলেন, তিনি (হ্যারি) অনুপস্থিত ছিলেন, কারণ তিনি তার দুই বছর বয়সী মেয়ে লিলিবেটের জন্মদিন উপলক্ষে রবিবার লস অ্যাঞ্জেলেস ছিলেন, সেখান থেকে ফেরার জন্য তিনি বিমানে উঠেছেন।
হ্যারিকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ফ্যানকোর্ট বলেন, ‘আমি কিছুটা বিস্মিত।’
আরও পড়ুন: জীবনভর প্রস্তুতি নিয়ে ৭৩ বছর বয়সে রাজা হলেন প্রিন্স চার্লস
১ বছর আগে