বন্যা
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে গৃহ হস্তান্তর করলেন প্রধান উপদেষ্টা
গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত গৃহ ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে হস্তান্তর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে গৃহ হস্তান্তর করেন।
২০২৪ সালের ওই বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। অসংখ্য বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যে সব পরিবারের বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থাৎ যাদের ঘর নির্মাণের সামর্থ্য নেই এমন ৩০০ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনর্নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রধানের পেশা, আয়, ঘর নির্মাণে আর্থিক অসামর্থ্য, দুস্থতা, ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ধরন ও স্থানীয় অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে উপকারভোগী পরিবার বাছাই করা হয়।
জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত অন্যান্য এক বা একাধিক প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যৌথ জরিপের মাধ্যমে উপকারভোগীদের অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করা হয়।
৩০০টি ঘরের মধ্যে ফেনী জেলায় ১১০টি, নোয়াখালী জেলায় ৯০টি, কুমিল্লা জেলায় ৭০টি ও চট্টগ্রাম জেলায় ৩০টি বরাদ্দ দেওয়া হয়। ঘরগুলো যেন দুর্যোগ সহনীয় ও টেকসই হয় সে লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সহযোগিতায় প্রস্তুত করা হয়।
প্রতিটি ডিজাইনে ২টি মূল কক্ষসহ কমন স্পেস, টয়লেট, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। প্রথম ডিজাইনের ঘরের আয়তন ৪৯২ বর্গফুট এবং টাকার পরিমাণ ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা ও দ্বিতীয় ঘরের আয়তন ৫০০ বর্গফুট এবং টাকার পরিমাণ ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা।
ঘরগুলো নির্মাণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল হতে প্রাথমিকভাবে ৫০.০০ (পঞ্চাশ) কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৩০০ টি ঘর নির্মাণে প্রায় ২৪ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অত্যন্ত পরিশ্রম ও দক্ষতার সঙ্গে গৃহগুলোর নির্মাণ কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা বাড়ি পেয়েছেন সবাইকে অভিনন্দন। দেশের মানুষ আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে যে সাহস জুগিয়েছে সে সাহস সবসময় মনের মধ্যে ধারণ করবেন। এই কাজে যারা নিরলস পরিশ্রম করে গৃহহীন পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসন, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের সদস্যগণ, এলজিইডির প্রকৌশলীগণ ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা। তাদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ।’
প্রকল্পের কাজ সঠিক সময়ে সম্পন্ন করায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি একটি ছোট প্রকল্প। ৩০০ ঘর নির্মাণ, কিন্তু এর মাধ্যমে সঠিকভাবে কাজ করার যে দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করলাম তা আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘ভবিষ্যতেও এ ধরনের দায়িত্ব দেওয়া হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা পালন করার জন্য প্রস্তুত থাকবে।’
তিনি জানান, প্রকল্পের আওতায় ২৯৮টি ঘর ইতোমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় দুটি ঘর নির্মাণ করা যায়নি, সেগুলো খুব শিগগিরই নির্মাণ হয়ে যাবে।
গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান। ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলার চারজন উপকারভোগী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের পরিচালক মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী।
২২০ দিন আগে
বান্দরবানে সাম্প্রতিক বন্যায় নিহত ১১, ক্ষয়-ক্ষতি ৪৯৮ কোটি টাকা
বান্দরবানে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যা ও প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড় ধস ও নদীর স্রোতে ভেসে ১১ জন নিহত হয়েছে। এসময় আহত হয়েছে ৫৬ জন, নিখোঁজ আছে একজন। সব মিলিয়ে ৪৯৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে বন্যা পরবর্তী ক্ষতি উত্তরণ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।
এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, বন্যার্তদের জন্য ২০৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৩০ হাজার ২২০ জন বন্যাদুর্গত ব্যক্তি আশ্রয় নেন।
তিনি বলেন, বন্যায় ১০ হাজার ৬৬০টি ঘরবাড়ি, ৯ হাজার ৫০৯টি গবাদি পশু, ৭ হাজার ৯৯৯ হেক্টর শস্যখেত ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮৯ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন, ১১ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ৬৩৪ কলোমিটার কাঁচা এবং এইচবিবি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ছাড়া ৯৩টি ব্রিজ ও ৯২টি কালভার্ট, ৬০টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ১৫৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে বন্যায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্তদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫৫ টন চাল, নগদ ১২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ১০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১২ হাজার ৫০০ লিটার বোতলজাত পানি এবং ৩ হাজার প্যাকেট প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে পাওয়া মানবিক সহায়তা করা হয়েছে।
জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৪০ লাখ টাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রায় ২ লাখ লিটার সুপেয় পানি বিতরণ করেছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর উদ্যোগে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা দুর্গতদের মাঝে রান্না করা খাবার এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে রান্না করা খাবার ও মানবিক সহায়তা এবং ফ্রি চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে শুকনো খাবার এবং প্রায় ৫ হাজার পরিবারের মাঝে আইজিপির উপহার হিসেবে পাঠানো মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে প্রায় ৭ হাজার পরিবারের মাঝে ফুড প্যাকেজ বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও সংগঠনের পক্ষ থেকেও বন্যা দুর্গতদের মাঝে মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে ডিডি এলজি এস এম মঞ্জুরুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ফজলুর রহমান, বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চুসহ প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে ভূমিধসে মা-মেয়েসহ নিহত ৩
চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বন্যা-ভূমিধস মোকাবিলায় সেনা মোতায়েন
৮২৭ দিন আগে
বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা লোকজন নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে সীমিত আকারে শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়েছে। আজ বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ চালু হয়েছে। প্রবল বর্ষণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রোয়াংছড়ি, রুমা এবং থানচি উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ এখনো স্থাপিত হয়নি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর বন্যা পরিস্থিতি ২৪ ঘণ্টায় উন্নতি হতে পারে: এফএফডব্লিউসি
জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন জানান, বন্যার্তদের জন্য ইতোমধ্যে ১৬৮ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০ হাজার লিটার বোতলজাত পানি বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বন্যা ও পাহাড় ধ্বসে এ পর্যন্ত ৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন এবং ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা শহরের মধ্যমপাড়ায় সাংগু নদীর তীরবর্তী এলাকায় একটি পাকা ভবন এবং চারটি কাঁচা বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বন্যার পানিতে নিখোঁজের ৩২ ঘণ্টা পর যুবকের লাশ উদ্ধার
৮৪৮ দিন আগে