বন্যা
বান্দরবানে সাম্প্রতিক বন্যায় নিহত ১১, ক্ষয়-ক্ষতি ৪৯৮ কোটি টাকা
বান্দরবানে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যা ও প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড় ধস ও নদীর স্রোতে ভেসে ১১ জন নিহত হয়েছে। এসময় আহত হয়েছে ৫৬ জন, নিখোঁজ আছে একজন। সব মিলিয়ে ৪৯৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে বন্যা পরবর্তী ক্ষতি উত্তরণ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।
এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, বন্যার্তদের জন্য ২০৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৩০ হাজার ২২০ জন বন্যাদুর্গত ব্যক্তি আশ্রয় নেন।
তিনি বলেন, বন্যায় ১০ হাজার ৬৬০টি ঘরবাড়ি, ৯ হাজার ৫০৯টি গবাদি পশু, ৭ হাজার ৯৯৯ হেক্টর শস্যখেত ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮৯ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন, ১১ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ৬৩৪ কলোমিটার কাঁচা এবং এইচবিবি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ছাড়া ৯৩টি ব্রিজ ও ৯২টি কালভার্ট, ৬০টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ১৫৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে বন্যায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্তদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫৫ টন চাল, নগদ ১২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ১০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১২ হাজার ৫০০ লিটার বোতলজাত পানি এবং ৩ হাজার প্যাকেট প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে পাওয়া মানবিক সহায়তা করা হয়েছে।
জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৪০ লাখ টাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রায় ২ লাখ লিটার সুপেয় পানি বিতরণ করেছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর উদ্যোগে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা দুর্গতদের মাঝে রান্না করা খাবার এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে রান্না করা খাবার ও মানবিক সহায়তা এবং ফ্রি চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে শুকনো খাবার এবং প্রায় ৫ হাজার পরিবারের মাঝে আইজিপির উপহার হিসেবে পাঠানো মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে প্রায় ৭ হাজার পরিবারের মাঝে ফুড প্যাকেজ বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও সংগঠনের পক্ষ থেকেও বন্যা দুর্গতদের মাঝে মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে ডিডি এলজি এস এম মঞ্জুরুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ফজলুর রহমান, বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চুসহ প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে ভূমিধসে মা-মেয়েসহ নিহত ৩
চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বন্যা-ভূমিধস মোকাবিলায় সেনা মোতায়েন
১ বছর আগে
বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা লোকজন নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে সীমিত আকারে শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়েছে। আজ বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ চালু হয়েছে। প্রবল বর্ষণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রোয়াংছড়ি, রুমা এবং থানচি উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ এখনো স্থাপিত হয়নি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর বন্যা পরিস্থিতি ২৪ ঘণ্টায় উন্নতি হতে পারে: এফএফডব্লিউসি
জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন জানান, বন্যার্তদের জন্য ইতোমধ্যে ১৬৮ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০ হাজার লিটার বোতলজাত পানি বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বন্যা ও পাহাড় ধ্বসে এ পর্যন্ত ৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন এবং ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা শহরের মধ্যমপাড়ায় সাংগু নদীর তীরবর্তী এলাকায় একটি পাকা ভবন এবং চারটি কাঁচা বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বন্যার পানিতে নিখোঁজের ৩২ ঘণ্টা পর যুবকের লাশ উদ্ধার
১ বছর আগে