সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প
সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প জনগণের টাকা চুরির আরেকটি কৌশল: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার জনগণের টাকা চুরি করে আগামী নির্বাচনে ব্যবহার করার কৌশলের অংশ হিসেবে সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প চালু করেছে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সম্পদ লুট করে ধ্বংস করেছে। পেনশন স্কিমের নামে জনগণের টাকা চুরির আরেকটি কৌশল নিয়েছে তারা। তারা সেই টাকা চুরি করে আগামী নির্বাচন করতে চায়।’
এই বিএনপি নেতা বলেন, দেশের মানুষ আর সরকারকে তাদের টাকা লুট করতে দেবে না।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ মহানগর শাখার আয়োজনে রাজধানীর দয়াগঞ্জ এলাকা থেকে গণমিছিল বের করার আগে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সরকারকে মর্যাদার সঙ্গে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণ ভালো করেই জানে কীভাবে ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকারকে নামাতে হয়। তারা ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১ ও ১৯৯০ সালে এই কাজ করেছিল। তাই জনগণের দাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।’
বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর নিপীড়ন ও মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের জন্য সরকারের নিন্দা জানান এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, ‘দেশ কার্যত জেলখানায় পরিণত হয়েছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তারা আমাদের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে।’
আরও পড়ুন: এক দফা আন্দোলন: বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর ইউনিটের গণমিছিল
বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ অর্জনকারী ৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা এখন সেখানে যেতে পারবেন না। ‘তারা এখন রাতে ঘুমাতে পারে না এই ভেবে যে তারা বিদেশে যে সম্পদ জমা করেছে তার কী হবে।’
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান মার্কিন সরকারকে আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে বলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে।
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছু দেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও মানবাধিকার রক্ষার নামে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য নিয়ে এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করে তাদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর নিয়ে কথা বলে কোনো লাভ নেই… (সরকারের) পালানোর কোনো উপায় নেই। কোনো দিকে পালানোর পথ নেই।’
পরে ফখরুল দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনসহ দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মিছিল বের করেন। হাজার হাজার দলীয় নেতা-কর্মী এতে অংশ নেন। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে খিলগাঁও মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে রাজধানীর গুলশান-১ এলাকায় ডিএনসিসি মার্কেটের কাছে ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির গণমিছিলের উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
মিছিল বের করার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, জনগণ আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। কারণ তারা ১৫ বছরের দুঃশাসনে বিরক্ত হয়ে পড়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকায় জনগণকে বিভ্রান্ত করতে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: সব মহানগরে গণমিছিল করবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো
আব্বাস বলেন, সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য বিরোধীদের দমন করতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছে।
বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও নিপীড়ন বন্ধ করতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান এই বিএনপি নেতা।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতেও তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
অন্যথায় কারাগার থেকে তার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে তার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তুমুল আন্দোলন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি নেতা।
পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিলটি বের করে মহাখালী বাসস্টেশনে গিয়ে শেষ হয়।
দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্রতিকৃতি নিয়ে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী দুই মিছিলে যোগ দেন।
বিএনপি ছাড়াও গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, ১২ দলীয় জোট, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), এনডিএম, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংসদ ও গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশের নেতা-কর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পৃথকভাবে মিছিল করেছে।
বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর আয়োজনে সব মহানগরেও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়।
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানোর লক্ষ্য নিয়ে বিরোধী দলের এক দফা আন্দোলনের এটি ছিল চতুর্থ কর্মসূচি।
গত ১২ জুলাই বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো দাবি আদায়ে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়।
আরও পড়ুন: স্বৈরাচারী এ সরকারের আমলে কেউই নিরাপদ নয়: রিজভী
১ বছর আগে