ভ্রমণে সতর্কতা
বারিধারার ১০০ ফিট মাদানী এভিনিউ: যেভাবে যাবেন, যা দেখবেন
প্রতি ক্ষেত্রফলে সর্বাধিক জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি এই ঢাকা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিষ্প্রাণ আকাশচুম্বী অট্টালিকায় ভরে উঠেছে প্রাচীন এই শহর। আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থাকে সুগম করার পাশাপাশি এখানে সবুজায়নও অবধারিত হয়ে পড়েছে।
এই লক্ষ্য বাস্তবায়নেরই এক বিরাট পদক্ষেপ ঢাকার বারিধারার ১০০ ফিট মাদানী এভিনিউ। পরিকল্পিত কতগুলো উপশহর গড়ে তুলে সেগুলোকে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রের সঙ্গে সংযুক্ত করার মহাপ্রকল্পকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাবে এই সড়ক। চলুন, সদ্য চালু হওয়া অভিনব এই সড়কের আদ্যোপান্ত জেনে নেওয়া যাক।
৬ লেনের ১০০ ফিট মাদানী এভিনিউ
রাজধানীর নতুনবাজার থেকে শুরু হয়ে বালু নদীর দিকে চলে যাওয়া সড়কটির নামের অঙ্কুর লুকিয়ে আছে পাকিস্থান শাসনের সময়ে। সে সময় ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ছিলেন জিএ মাদানী। মূলত তার নামানুসারেই এই সড়কটির নাম হয়েছে মাদানী এভিনিউ।
রাজধানীর উত্তরাঞ্চলে যানজটের চাপ কমাতে এই সড়কটিকে প্রশস্ত করার প্রকল্প চালু হয়েছিল ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। তখন থেকেই এ প্রকল্পের আওতায় ৬ লেন সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরে সড়কটিকে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ে-এর সঙ্গে সংযুক্ত করার কাজ হাতে নেওয়া হয়।
১০০ ফুট প্রশস্ত এই সড়ক মোট ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। মূল প্রকল্পে দুটি সড়ক নির্মাণের কথা উল্লেখ ছিল। প্রস্তাবিত সড়ক দুটোর একটি পূর্বাচল নতুন শহর থেকে ইউসুফগঞ্জ হয়ে এই মাদানী এভিনিউ পর্যন্ত ৩.৩ কিলোমিটার।
আর অন্যটি পশি, কেরিয়া এবং জলশিড়ি আবাসনের মধ্য দিয়ে প্রায় ৫.২৩ কিলোমিটার অগ্রসর হবে। মূলত এই দ্বিতীয় সড়কটিকে রূপ দেয়া হবে ৬লেনে। ৪টি এক্সপ্রেসওয়ে আর ২টি সার্ভিস লেন। বেরাইদ অঞ্চলে সড়কটির ৬ লেন ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের তিনাপ সাইতার জলপ্রপাত ভ্রমণের উপায় ও খরচ
পুরো এই ৮.৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে নির্মাণাধীন আছে ৪টি সেতু ও ২টি কালভার্ট।
এই সড়কের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ স্থাপনা হচ্ছে বালু নদীর উপরে ৪৬৮ মিটার দৈর্ঘ্যের বালু সেতু। সংযোগ সড়ক মিলে ৫৯৩ মিটার এই সেঁতুটি দেখতে নড়াইলের ৬ লেন বিশিষ্ট মধুমতি বা কালনা সেতুর মতো।
এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় আরও আছে, ২১০ মিটার ৪টি সেতু প্রশস্তকরণ, ২০০ মিটারের নতুন ২টি সেঁতু নির্মাণ, এবং ৯০ মিটার সেঁতু প্রশস্তকরণ। পুরোদমে এগিয়ে চলছে ২ হাজার ৩৮৪ মিটারের ৪টি আন্ডারপাসসহ ৯০০ মিটারের ১টি ইউলুপ, এবং ৫০ মিটারের ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ কাজ।
১০০ ফিট সড়কটির অবস্থান
মাদানি এভিনিউ সড়কটি পড়েছে ঢাকার ভাটারা থানায়। বারিধারার মার্কিন দূতাবাস তথা নতুন বাজার থেকে এর শুরু। বালু নদী পেরিয়ে সোজা শেষ হয়েছে গিয়ে নারায়ণগঞ্চের রূপগঞ্জে। অবশ্য মধ্যপথে বালু ব্রিজের পর জলশিড়ি আবাসন সংলগ্ন স্থানে মোড় নিয়ে সড়কটি চলে গেছে পূর্বাচল ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ের দিকে।
মাদানী এভিনিয়ের রুপগঞ্জ প্রান্তে রয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত বীর প্রতীক গাজী সেতু।
অর্থাৎ সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে এ পথ ধরেই পূর্বাচল হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম বা সিলেট মহাসড়কের দিকে যাওয়া যাবে। এছাড়া এই পথটি কুড়িল বিশ্বরোডের উপর চাপ কমাবে। পূর্বাচল থেকে এই পথে সরাসরি গুলশান-২ এবং বেরাইদ ও নতুন বাজার হয়ে রামপুরায় প্রবেশ করা যাবে।
আরও পড়ুন: মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় এবং আনুষঙ্গিক খরচ
১ বছর আগে
ঢাকার পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়ক: কীভাবে যাবেন, কী দেখবেন
অবকাঠামোগত উন্নয়নে ধীরে ধীরে অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। স্বভাবতই দেশজুড়ে দিন বদলের এই হাওয়ার সবচেয়ে বেশি সান্নিধ্য পেয়েছে রাজধানী ঢাকা। ছোট্ট ভূখণ্ডে আকাশসম জটিলতা নিয়ে বিশ্বমানের সভ্যতার সঙ্গে তাল মেলানো শুরু করেছে প্রায় ৪০০ বছরেরও পুরানো এই শহর। ঢাকার পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়ক বজ্রকণ্ঠে যেন তারই ঘোষণা দিচ্ছে। উপশহর গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ঢেলে সাজানো এই বিস্তৃত অঞ্চলটি ইতোমধ্যে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেসওয়েতে। চলুন, খুব শিগগিরই উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা নতুন এই মাইলফলকের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বিশ্ব মানের ৩০০ ফিট সড়ক
সংশোধিত নকশায় ২৩৫ ফিট হলেও পূর্বের নামেই এখনও পরিচিত কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েটি। মূলত প্রস্থ বরাবর ৩০০ ফিট সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের সূচনালগ্ন থেকেই প্রসিদ্ধি লাভ করে ৩০০ ফিট নামটি।
এখন কুড়িল থেকে সড়কটি ১৪ লেনে ভাগ হয়ে সাড়ে ৬ কিলোমিটার চলে গেছে বালু ব্রিজ পর্যন্ত। ১৪ লেনের ৮টি এক্সপ্রেসওয়ে, যে পথে দ্রুতগামী যানবাহনগুলো ঢাকার বাইরে থেকে যাওয়া-আসা করবে। আর ৬টি হলো সার্ভিস রোড, যেগুলোতে চলাচল করবে স্থানীয় গাড়িগুলো।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণ: বাংলার নায়াগ্রাতে যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
তারপর বালু ব্রিজের পর থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়কটি ১২ লেনের। এখানে ৬টি এক্সপ্রেসওয়ে, ৬টি সার্ভিস রোড।
এগুলোতে না আছে কোনো স্টপওভার পয়েন্ট, না কোনো ট্র্যাফিক সিগনাল। কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আপন গতিতে চলতে পারবে প্রতিটি যানবাহন। সার্ভিস লেন থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে যাওয়ার জন্য পুরো সড়কটিতে নির্দিষ্ট দূরুত্ব পর পর রয়েছে মোট ৫টি এ্যাটগ্রেড ইন্টার-সেকশন। এগুলোর নিচের আন্ডারপাস বা পাতাল সড়ক দিয়ে গাড়িগুলো চলে যেতে পারে এক্সপ্রেসওয়েতে। এরকম পাতাল সড়ক রয়েছে ১২টি।
বালু ব্রিজসহ ৬টি প্রশস্ত সেতু তো আছেই, সেই সঙ্গে হাতিরঝিলের আদলে বানানো হয়েছে ১৩টি আর্চ ব্রিজ। এগুলোর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী এলাকার ছোট ও মাঝারি গাড়িগুলো সার্ভিস লেন হয়ে ঢুকতে পারে মূল সড়কে। পাখির চোখে দেখলে ৪টি আইলুপ আলাদা করে দৃষ্টি কাঁড়ে।
এছাড়াও রয়েছে ৩০০ ফিটের সব থেকে চোখে পড়ার মতো বিষয় হচ্ছে সড়কের দু’পাশে ১০০ ফুটের দৃষ্টিনন্দন খাল। এর পাশ দিয়ে ৩৯ কিলোমিটার পায়ে হাটা পথ রীতিমতো উদ্যানে পরিণত করেছে জায়গাগুলোকে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকলে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন যেসব দেশে
৩০০ ফিটে রয়েছে ১টি পাম্প হাউজ এবং খালের পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে ৫টি স্লুইস গেট। পানি গিয়ে মিলিত হয়েছে বালু নদীতে।
বর্ষা মৌসুমে আশেপাশের আবাসিক এলাকাসহ বিস্তীর্ণ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসণকল্পে আরও খাল খননের কাজ চলছে। পার্শ্ববর্তী ডুমনি, বোয়ালিয়া ও এডি-৮ খালের পানি এক হয়ে এসে মিশবে এই ১০০ ফুট খালের সঙ্গে। এডি-৮ খাল খনন করা হবে ৪ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ করে, আর বোয়ালিয়া খাল হবে ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ। ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ করে খনন করা হবে ডুমনি খাল। ৩০০ ফিট সড়কের খালের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তিনটি খালেরই প্রস্থ ১০০ ফুট রাখা হবে।
বোয়ালিয়া, এডি-৮ ও ১০০ ফুট খালের পানি এক হয়ে গিয়ে পড়বে বালু নদীতে। অন্যদিকে খননের পর ডুমনি খালটি যুক্ত হবে পাশের কাঁঠালিয়া খালের সঙ্গে, যার শেষ গন্তব্য বালু নদী। ফলে ডুমনি খালেরও বালু নদীতে বের হওয়ার পথ থাকবে।
আরও পড়ুন: মিরসরাই খৈয়াছড়া ঝর্ণা: যাওয়ার উপায় ও ভ্রমণ খরচ
এতে করে নিকুঞ্জ, বারিধারা ডিওএইচএস, বারিধারা, জোয়ারসাহারা, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সেনানিবাস, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, কালাচাঁদপুর, কাওলাসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না।
ঢাকার ৩০০ ফিট সড়কের অবস্থান
সড়কটির অবস্থান ঢাকার উত্তর-পূর্ব দিকে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানায়। শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর মাঝখানে প্রায় ৬২১৩ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে মনোরম সড়কটি। ঢাকার সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের সংযোগ স্থাপন করেছে এই বিরতিহীন সড়কটি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, নারায়ণগঞ্চ, নরসিংদী, গাজীপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, ও কিশোরগঞ্জ। মূলত ৩০০ ফিটের মাধ্যমে ঢাকার পশ্চিমাংশের সঙ্গে দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যাতায়াত পথ সুগম হয়েছে।
বিমান বন্দর সড়ক ও প্রগতি সরণির সঙ্গে ঢাকার পূর্বের ইস্টার্ন বাইপাসের সংযোগ ঘটায় বহিরাগতরা ঝামেলাবিহীন ভাবে নানা গন্তব্যে যেতে পারবেন।
এছাড়া ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে নামে নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়েটি পূর্বাচল ১০০ ফিট মাদানী এভিনিউকে সংযুক্ত করবে এই এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের তিনাপ সাইতার জলপ্রপাত ভ্রমণের উপায় ও খরচ
১ বছর আগে