বিদ্যুৎ-জ্বালানি
বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনার দ্রুত সংশোধনের দাবি তরুণ জলবায়ুকর্মীদের
সমন্বিত বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) দ্রুত সংশোধনের দাবি জানিয়েছে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস। সংগঠনটি জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অর্থায়ন বন্ধের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার আহ্বানও জানিয়েছে।
বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে জলবায়ু অর্থায়নের পরিমাণ বাড়ানোর দাবিতে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জলবায়ু ধর্মঘট কর্মসূচির আয়োজন করে সংগঠনটি।
আইইপিএমপির বর্তমান অবস্থার কঠোর সমালোচনা করে তরুণরা জানায়, এই বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনাটি অপ্রমাণিত ও ব্যয়বহুল প্রযুক্তির ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। সমন্বিত এই পরিকল্পনা এমনকি জাতীয় জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রাগুলোর সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
সমাবেশে দেওয়া বক্তব্য ছাড়াও কর্মসূচিতে জলবায়ুকর্মীদের স্লোগান এবং প্ল্যাকার্ডেও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নতুন জ্বালানি নীতির দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।
ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, ‘আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। সময় এসেছে আমাদের জ্বালানি নীতি ঢেলে সাজানোর, নবায়নযোগ্য শক্তি অভিমুখী জ্বালানি রূপান্তর এবং টেকসই অর্থনীতিকে আলিঙ্গন করার। বাংলাদেশের তরুণরা পরিবর্তনের জন্য আর অপেক্ষা করবে না— দেরি হওয়ার আগে এখনই এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের নেতাদেরও অবশ্যই সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে একটি টেকসই ও জলবায়ু-সহনশীল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়।’
তরুণ জলবায়ুকর্মী আরুবা ফারুক বলেন, ‘কেবল নীতি বদলানোর জন্য নয়, বরং আমাদের ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্যই জীবনযাত্রার একটি সুস্পষ্ট পরিবর্তন চাই আমরা। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর এবং এই রূপান্তরের জন্য জলবায়ু অর্থায়ন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ানো জরুরি। এজন্য বিশ্ব সম্প্রদায় ও আমাদের রাষ্ট্রনেতাদের দ্রুত পদক্ষেপ দেখতে চাই।’
তরুণদের এসব দাবিকে সমর্থন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নিঃসরণ অর্জন করতে চায়। উল্টোদিকে আমাদের এখনকার আইইপিএমপি কার্বন লক-ইনকে শক্তিশালী করবে এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ন্যায্য রূপান্তরকে বিলম্বিত করবে। টেকসই ভবিষ্যৎ অর্জনে জাতীয় জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রাগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে দ্রুত আইইপিএমপির সংশোধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটের অংশ হিসেবে আয়োজিত আজকের এ কর্মসূচি থেকে উন্নত দেশগুলোর প্রতি জলবায়ু অর্থায়নে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ ও গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর ওপর ঋণভিত্তিক অর্থায়নের বোঝা চাপিয়ে না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ধনী দেশগুলোকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ এবং প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করতেও বলেছে বক্তারা।
কার্যকর জলবায়ু অর্থায়নের দাবিতে সংহতি জানিয়ে চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান বলেছেন, ‘কেবল তাৎক্ষণিক ঝুঁকি মোকাবিলা নয়, জলবায়ু অর্থায়নের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিস্থাপকতা ও প্রকৃতি সংরক্ষণের পথও সুগম করা উচিত। বাংলাদেশে ব্যয়-সাশ্রয়ী স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিতে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৌর, বায়ু এবং অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারে, প্রবেশগম্যতা ও স্থায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার জন্য সরাসরি, অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়নের উপর জোর দিতে হবে আমাদের।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়ন বাড়াতে উন্নত বিশ্বের প্রতি আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
২ মাস আগে
বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে বিইআরসির ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে ফিরিয়ে দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও স্টেকহোল্ডাররা।
তারা বলেন, এ ধরনের কর্তৃত্ব জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে ফেরত গেলে কোনো কারণ ছাড়াই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘন ঘন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রবণতা বন্ধ হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জেষ্ঠ সহসভাপতি অধ্যাপক এস এম শামসুল আলম বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবিলম্বে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’
এর আগে গণশুনানি ছাড়াই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সমন্বয়ের সুযোগ রেখে ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন-২০০৩ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করেছে।
অধ্যাদেশ জারির আগে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের আইনি ক্ষমতা ছিল বিইআরসির। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের আগে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে গণশুনানি করতো বিইআরসি।
বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, ‘এ ধরনের গণশুনানি যে কোনো মূল্য বাড়ানোর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং এর মাধ্যমে জনগণের কাছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।’
তিনি আরও বলেন, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্য ও অগণতান্ত্রিক চর্চার অবসান ঘটানোর দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। তাই সব ধরনের জ্বালানির দাম নির্ধারণের কর্তৃত্ব বিইআরসির কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
অধ্যাদেশ জারির পর থেকে গণশুনানি ছাড়াই নিয়ম করে বিরতি দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে সরকার।
এই অধ্যাদেশ জারির আগ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বা গ্যাসের দাম নির্ধারণের আগে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের স্ব স্ব প্রস্তাব জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থায় জমা দিতে হতো। এরপর তাদের পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরার জন্য গণশুনানি করতে হতো।
আরও পড়ুন:বিপিডিবির বকেয়া বিল বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা
গণশুনানিতে পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই ও দীর্ঘ বিতর্কের পর বিইআরসি সিদ্ধান্ত নিত।
গণশুনানিতে স্টেকহোল্ডার ও ভোক্তারা প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান ও মুনাফার হালনাগাদ তথ্য এবং দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কারণ সম্পর্কে জানতে পারেন।
অধ্যাপক এস এম শামসুল আলম বলেন, গণশুনানি প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয় এবং দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জেনে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর বলেন, বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বিইআরসিকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘এর ফলে ভোক্তাদের প্রকৃত পরিস্থিতি বুঝতে এবং দাম বাড়ানোর যে কোনও পদক্ষেপের আগে পক্ষে ও বিপক্ষে যৌক্তিকতা খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।’
আরও পড়ুন: নগদ অর্থ সংকটের মধ্যেই আদানি পাওয়ারের সঙ্গে চুক্তি পুনর্বিবেচনার আহ্বান
৩ মাস আগে