দুই তৃতীয়াংশ জমি
ফেনীতে দুই তৃতীয়াংশ জমিতে আবাদ হয়নি, খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় কৃষক
আগস্টের বন্যার কারণে ফেনীর কৃষিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। গত মৌসুমের অর্ধেক জমিতেও এবার আমন চাষাবাদ হয়নি। এছাড়া জেলার ছয়টি উপজেলায় শুধু কৃষিজাত ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৪৫১ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি। খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
জমি খালি পড়ে থাকায় দুশ্চিন্তায় প্রান্তিক কৃষকেরা। প্রণোদনাসহ সার, বীজের সহায়তার কথা থাকলেও তা কাগজে কলমে। ঘরে ধান তোলার কথা থাকলেও কৃষকের মনে হতাশা। ক্ষতি পোষাতে চাইছেন সরকারি সহায়তা।
জেলার সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, দাগনভূঞাঁসহ জেলার সবখানে ফসলের মাঠের এমন চিত্র।
ফেনীতে চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে মাত্র ২৬ হাজার ৭৬৪ হেক্টর জমিতে। অথচ গত বছরে জেলায় আমনের আবাদ হয়েছিল ৬৬ হাজার ৭৫২ হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, বন্যায় জেলার ৩০ হাজার ৩৫২ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা মোট ফসলি জমির ৭৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তার মধ্যে ১ হাজার ৮৬৫ হেক্টর আমন বীজতলা, ২৬ হাজার হেক্টর আমন খেত, ১ হাজার ৮৫৪ হেক্টর আউশ, আবাদ করা ৫২৫ হেক্টর শরৎকালীন সবজির পুরো অংশ, ৬৯ হেক্টর ফলবাগান, ৭ হেক্টর আদা, ১৬ হেক্টর হলুদ এবং ১৬ হেক্টর আখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ছয়টি উপজেলায় শুধু কৃষিজাত ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৪৫১ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি। এতে প্রায় দুই লক্ষাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে চলতি আমন মৌসুমে মাত্র ১৭৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। যেখানে গত আমন মৌসুমে (২০২৩ এর ১৫ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর) আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ২৬০ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছিল ৬ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ধান। অনাবাদি রয়েছে ১ হাজার ৮৭ হেক্টর জমি।
আরও পড়ুন: 'স্মার্ট এগ্রিকালচার কৃষিপণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে সক্ষম’
সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, বন্যার কারণে বেশির ভাগ জমিই খালি রয়েছে। ঘরের খোরাকি কীভাবে মেটাবে সেই চিন্তা মাথায়। ধান আবাদের যেটুকু জমি ছিল। বন্যার প্রভাবে ফসলি জমি থেকে খালি পড়ে আেছে। তাই সম্ভব হয়নি আমন আবাদ।
সোনাগাজী এলাকার আরেক কৃষক এসহাক আহমেদ বলেন, বন্যার পর আরেক সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ধরনের পোকা। আর্মিওয়ার্মসহ নানা ধরনের পোকায় যেমন নষ্ট হচ্ছে ধান তেমনি নষ্ট হচ্ছে সবজিসহ সব ধরনের ফুল-ফসল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফেনীর অতিরিক্ত উপপরিচালক পুষ্পেন্দু বড়ুয়া বলেন, বন্যার কারণে মাঠের অনেক জমির ধান নষ্ট হয়েছে। আবাদি জমিগুলো খালি পড়ে রয়েছে। তবে বীজ ও প্রণোদনাসহ সার্বিক সহায়তা নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে আছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আমন আবাদ বিঘ্ন ঘটায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চলতি মৌসুমে সবজি আবাদ, রবি ফসল এবং বোরো আবাদে কৃষকদের উৎসাহ যোগাচ্ছে কৃষি বিভাগ। এরই মধ্যে সরকার জেলার ৬ উপজেলায় ৬০ হাজার কৃষককে পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় এনেছেন। এদের মধ্যে উপসি জাতের ৫ কেজি বীজ, ৫ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সারসহ মোট ২৫ কেজি কৃষি উপকরণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এদের মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ১৫ হাজার, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ১১ হাজার, ফুলগাজী উপজেলায় ৯ হাজার ৫০০, পরশুরাম উপজেলায় ৭ হাজার, দাগনভূঞা উপজেলায় ১৩ হাজার ও সোনাগাজী উপজেলায় ৪ হাজার ৫০০ কৃষক রয়েছেন।
ফেনীস্থ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. একরাম উদ্দিন জানান, বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে কৃষকদের উৎসাহিত করছে সরকার। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক তাদের পাশে রয়েছেন। এরই মধ্যে উপকারভোগী ৭০ ভাগ কৃষকের হাতে পুনর্বাসন কর্মসূচির বীজ-সার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ৫ কৃষি-ইকোলজিক্যাল এলাকায় কাজ করবে ইউএনডিপি
১ সপ্তাহ আগে