ল্যাটিন-আমেরিকা
ব্রাজিলে ওরোপুচে জ্বরে বিশ্বে প্রথম মৃত্যু
ব্রাজিলে ওরোপুচে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২৬ জুলাই) দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে, ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাহিয়া রাজ্যের ৩০ বছরের কম বয়সি দুই নারী এই প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘রোগীদের মধ্যে মারাত্মক ডেঙ্গু জ্বরের মতো লক্ষণ ও উপসর্গ ছিল।’
আরও পড়ুন: জলবায়ু সংকটে ব্রাজিলে ২০২৪ সালে শস্য উৎপাদন কমবে ৫.৯ শতাংশ
এতে আরও বলা হয়, 'এখন পর্যন্ত বিশ্বের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এই রোগে মৃত্যুর কোনো ঘটনা ছিল না।’
কর্তৃপক্ষ দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য সান্তা ক্যাটারিনায় ওরোপুচে জ্বরে আরও একটি সন্দেহভাজন মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত করছে। এছাড়া দুটি ভ্রূণের মৃত্যুর পর বংশগত সংক্রমণের ছয়টি সম্ভাব্য ঘটনাও (মা থেকে সন্তানের মধ্যে) তদন্ত করছে কর্তৃপক্ষ।
১৯৬০ সালে ব্রাজিলে প্রাথমিকভাবে ওরোপুচে জ্বর শনাক্ত হয়। তখন থেকে অন্যান্য সংক্রমণের ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই সংক্রমণের ঘটনাগুলো প্রধানত আমাজন অঞ্চল এবং অন্যান্য লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে ঘটছে।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ব্রাজিলে ৭ হাজার ২৩৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৫
ব্রাজিলে সশস্ত্র হামলায় ৭ জন নিহত
ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৫
ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে দুটি বাসের সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
লাতিন আমেরিকার দেশটির বৃহত্তম শহরটি থেকে ২০৬ কিলোমিটার দূরে ইপিউনা পৌরসভার ১৯১ নম্বর মহাসড়কে সোমবার (৮ জুলাই) এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুটি বাসের মধ্যে একটি ক্লিনিক্যাল স্টাডির জন্য রোগীদের স্থানীয় একটি মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছিল এবং অন্যটি খালি ছিল।
নিহতদের চারজন রোগী বহনকারী বাসে ছিলেন। অন্যজন হলেন খালি বাসটির চালক।
দুর্ঘটনার পর উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে মহাসড়কের উভয় দিক বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলে সশস্ত্র হামলায় ৭ জন নিহত
‘বেরিলের’ আঘাতে ভেনিজুয়েলায় নিহত ২, ক্ষতিগ্রস্ত ২৫ হাজার নাগরিক
হারিকেন বেরিলের আঘাতে উত্তর-পূর্ব ভেনিজুয়েলার সুক্রে রাজ্যের অন্তত ২৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে রাজ্যের দুজন নাগরিক নিহত হয়েছেন, এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন আরও পাঁচজন।
ভেনিজুয়েলার স্বরাষ্ট্র ও বিচারমন্ত্রী রেমিজিও সেবায়োস মঙ্গলবার বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত ঘূর্ণিঝড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছেন, যাদের অনুসন্ধান চলছে।’
দেশটির রাষ্ট্রীয় ভেনেজোলানা দে টেলিভিশনকে তিনি বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টিতে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুন: চতুর্থ ক্যাটাগরির অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে ‘বেরিল’
এদিকে, ভেনেজুয়েলার ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলসি রদ্রিগেজ একটি এক্স পোস্টে বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত একটি কমিশন সুক্রে যাচ্ছে।
‘বেরিলের’ প্রভাবে মঙ্গলবার সকাল থেকে সুক্রের কুমানাকোয়ায় ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। এতে শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মানজানারেস নদী প্লাবিত হয়ে কুমানাকোয়া শহরটি তলিয়ে যায়।
দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুসারে, ২৭০ কিলোমিটার বেগে ভেনেজুয়েলা উপকূলে আছড়ে পড়ে পঞ্চম ক্যাটাগরির অতি তীব্র হারিকেন বেরিল।
আরও পড়ুন: গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ‘ঘূর্ণিঝড় ফ্রেডি’ সবচেয়ে দীর্ঘ ছিল: জাতিসংঘের আবহাওয়া সংস্থা
চতুর্থ ক্যাটাগরির অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে ‘বেরিল’
চতুর্থ ক্যাটাগরির অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব ক্যারিবীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় বেরিল। এ বছর সমুদ্রের পানি উষ্ণায়নের ফলে আটলান্টিকে তৈরি হওয়া এই ক্যাটাগরির প্রথম ঘূর্ণিঝড় এটি।
স্থানীয় সময় সোমবার (১ জুলাই) বার্বাডোস, গ্রেনাডা, টোবাগো, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনে হারিকেন সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
জানমালের নিরাপত্তায় এরই মধ্যে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে হাজার হাজার মানুষ।
ঝড়টি উপকূলে আছড়ে পড়ার আগে সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনের প্রধানমন্ত্রী রাল্ফ গনসালভেস বলেন, ‘এটি ভয়ানক হতে চলেছে।’
ওই এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঝড়টি চলে যাওয়া পর্যন্ত সবাই নিরাপদে থেকে অপেক্ষা করুন।’
সোমবার দিনের শুরুতে গ্রেনাডা থেকে ১২৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থান করছিল ‘বেরিল’। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১৫ কিলোমিটার। ৩১ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী ভারত দলকে দেশে ফিরতে দিচ্ছে না ঘূর্ণিঝড় বেরিল
অত্যন্ত শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র থেকে ৫৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের পরিমাণ বেশি রয়েছে।
ঝড়টি স্থলভাগে আছড়ে পড়ার আগেই বার্বাডোস দ্বীপজুড়ে ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে, গাছপালা উপড়ে পড়েছে এবং বৈদ্যুতিক পোস্টগুলো ভেঙে পড়তে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন দ্বীপের আপৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেরি হিন্ডস।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বার্বাডোস এবং আশপাশের দ্বীপগুলোতে ৭.৬ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে কিছু জায়গায় ২৫.৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
এছাড়া, ‘বেরিল’ যেসব জায়গায় আঘাত হানবে বিশেষ করে গ্রেনাডা ও গ্রেনাডাইনে ৯ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলেও স্থানীয়দের সতর্ক করা হয়েছে।
এরপর ক্যারিবীয় সাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় ঝড়টি দুর্বল হয়ে জ্যামাইকার দক্ষিণে ও মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপের কাছে ক্যাটাগরি ১ ঝড়ে পরিণত হবে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
এর আগে, দক্ষিণ-পূর্ব ক্যারিবীয় অঞ্চলে আঘাত হানা সর্বশেষ শক্তিশালী হারিকেন ছিল ‘ইভান’। প্রায় ২০ বছর আগে গ্রেনাডায় এই হারিকেনের আঘাতে বেশকিছু প্রাণহানি হয়।
ব্রাজিলে সশস্ত্র হামলায় ৭ জন নিহত
ব্রাজিলের উত্তর-পূর্ব সিয়ারা রাজ্যের টাউন স্কয়ারে একটি উদযাপন অনুষ্ঠানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় অন্তত সাতজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছে।
দেশটির মিলিটারি পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ভিকোসা দো সিয়ারা শহরের ওই স্কয়ারে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি গাড়িতে করে সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থেলে পৌঁছায়। এরপর হঠাৎ অস্ত্র বের করে অনুষ্ঠানে উপস্থিতদের মাথায় হাত রাখতে বাধ্য করে তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান্, তারা অন্তত ৫০ বার গুলির শব্দ শুনেছেন। এতে ঘটনাস্থলেই নারী-পুরুষ মিলিয়ে সাতজন নিহত হন। আহত দুজনকে স্থানীয় পৌর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এখনও হামলার উদ্দেশ্য শনাক্ত করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। তবে তারা বলছে, হামলাকারীদের একজনের গোড়ালিতে বেড়ি পরানো ছিল, যা সাধারণত প্যারোলে বা বিচারের অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিরা পরে থাকেন।
তিন বছরে ভিকোসা দো সিয়ারায় দ্বিতীয় সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা এটি। এর আগে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে একটি বাড়ির ভেতরে ঢুকে চারজনকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সশস্ত্র হামলায় নিহত ৭
ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিয়ারা রাজ্যের একটি টাউন স্কয়ারে বৃহস্পতিবার ভোরে সশস্ত্র হামলাকারীদের হামলায় অন্তত সাতজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দেশটির সামরিক পুলিশ।
ভিকোসা দো সিয়ারা শহরের চত্বরের নিরাপত্তা ক্যামেরায় ধারণ করা ছবিতে দেখা গেছে, সশস্ত্র সন্দেহভাজনরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ঘটনাস্থলে নেমে বেশ কয়েকজন মানুষকে তাদের হাত মাথার উপর উঁচু করে রাখতে বাধ্য করে।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলে ডে কেয়ার সেন্টারে ৪ শিশুকে হত্যা, আহত ৩
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা অন্তত ৫০টি গুলির শব্দ শুনেছেন, এতে নারী-পুরুষসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত দুজনকে পৌর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ এই হামলার কোনও কারণ খুঁজে পাননি, তবে উল্লেখ করেছে যে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে কমপক্ষে একজনের গোড়ালিতে মনিটর পরা ছিল। সাধারণত প্যারোলে মুক্ত থাকা বা বিচারের অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিরা এ ধরণের পোশাক পরেন।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে একটি বাড়ির ভিতরে চারজনকে গুলি করে হত্যার পর সাম্প্রতিক সময়ে ভিকোসা দো সিয়ারায় এই হামলাটি দ্বিতীয় সহিংস ঘটনা।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলে কারাগারে দাঙ্গায় নিহত ৫
জলবায়ু সংকটে ব্রাজিলে ২০২৪ সালে শস্য উৎপাদন কমবে ৫.৯ শতাংশ
খারাপ আবহাওয়ার কারণে ব্রাজিলের বেশ কয়েকটি অংশে ২০২৪ সালের শস্য উৎপাদন ২০২৩ সালের তুলনায় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ কমে যাবে বলে জানিয়েছে ব্রাজিলিয়ান ইনস্টিটিউট অব জিওগ্রাফি অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকস (আইবিজিই)।
বৃহস্পতিবারের (১৩ জুন) আইবিজিইর প্রতিবেদন অনুসারে, আবাদি জমি দশমিক ৬ শতাংশ বাড়া সত্ত্বেও এই বছর খাদ্যশস্য, শিম ও তেলবীজের উৎপাদন মোট ২৯৬ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা গত বছরের ফসলের চেয়ে ১৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন কম।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় নিহত ৩৯, নিখোঁজ অর্ধশতাধিক
সরকারি এই সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘উৎপাদন কমে যাওয়ার এই চিত্র ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ঘটে যাওয়া জলবায়ু সমস্যার প্রভাবকে তুলে ধরে। ফসল রোপণ এবং মধ্য-পশ্চিম অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হওয়া থেকে শুরু করে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে কিছু ফসলের চক্রকে সংক্ষিপ্ত করে এবং ফসলের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে ফেলে।’
দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির শীর্ষ তিনটি কৃষি পণ্য হলো ধান, ভুট্টা ও সয়াবিন। এটি আনুমানিক মোট উৎপাদনের ৯১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং চাষ করা জমির ৮৭ দশমিক ২ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
এতে আরও বলা হয়েছে, আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে সয়াবিন ও ভুট্টা উৎপাদন উভয়ই হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে চলতি ২০২৪ সালে কম উৎপাদনশীলতার দিকে পরিচালিত করবে এটি।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করেছে ব্রাজিল
মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হলেন ক্লাউদিয়া শাইনবাউম
মেক্সিকোর ২০০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ক্লাউদিয়া শাইনবাউম।
স্থানীয় সময় রবিবার (২ জুন) দেশটির নির্বাচনি কর্তৃপক্ষ একটি পরিসংখ্যানগত নমুনা ঘোষণা করেন। যেখানে ক্লাউদিয়া শাইনবাউম এগিয়ে রয়েছেন।
এর পরই ডাউনটাউনের একটি হোটেলে শেইনবাউম হাসিমুখে বলেন, ‘আমি হব মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।’ তিনি বলেন, ‘আমার একার দ্বারা এটি সম্ভব হয়নি। আমরা সবাই এটা করতে পেরেছি, আমাদের নেত্রীরা, যারা আমাদের মাতৃভূমি দিয়েছে, আমাদের মা, আমাদের মেয়ে এবং আমাদের নাতনিরাও সঙ্গে রয়েছেন।’
তিনি বলেন, 'আমরা প্রমাণ করেছি যে মেক্সিকো একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে।’
ন্যাশনাল ইলেক্টোরাল ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, পরিসংখ্যানগত নমুনা অনুযায়ী, শেইনবাউম ৫৮ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। বিরোধী প্রার্থী জোচিটল গ্যালভেজ পেয়েছেন ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। এছাড়া আরেক প্রার্থী জর্জ আলভারেজ মায়েনেজ পেয়েছেন ৯ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট ছিল। শেইনবাউমের মোরেনা পার্টিও কংগ্রেসের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে বলে ধারণা করা হয়েছিল।
জলবায়ু বিজ্ঞানী ও মেক্সিকো সিটির সাবেক মেয়র বলেন, তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী তাকে ফোন করে জয়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটকেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক গণনায় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গালভেজের চেয়ে ২৮ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন মেক্সিকোর সাবেক মেয়র শাইনবাউম।
এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় হলো প্রধান দুই প্রার্থী নারী হওয়া সত্ত্বেও রবিবার মেক্সিকো ইতিহাস গড়বে, তা নিয়ে সংশয় ছিল না। শাইনবাউমই হবেন ইহুদি বংশোদ্ভুত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ক্যাথলিক অধ্যুষিত দেশটির নেতৃত্ব দেবেন।
আরও পড়ুন: মেক্সিকোয় ঝড়ের কবলে নির্বাচনি সমাবেশ, ৯ জন নিহত
আগামী ১ অক্টোবর থেকে তার ছয় বছরের মেয়াদ শুরু হবে। মেক্সিকোর সংবিধান পুনর্নির্বাচনের সুযোগ নেই।
এই বামপন্থী নেত্রী বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন অর্থনৈতিক বৈষম্য মোকাবিলা এবং একটি শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা জাল সরবরাহে সরকারের দৃঢ় ভূমিকা রয়েছে। যা অনেকটা তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডরের মতো।
লোপেজ ওব্রাদর যে রাজনৈতিক আন্দোলন তৈরি করেছিলেন তা শোইনবাউম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয়ী হওয়ার পরও তা টিকে থাকবে বলে ইঙ্গিত দেয়।
তার অভিষিক্ত উত্তরসূরি, ৬১ বছর বয়সী শাইনবাউম গ্যালভেজের উৎসাহী চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তারবার্তায় প্রচারণায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মেক্সিকোতে এবারই প্রথম প্রধান দুই প্রতিপক্ষই ছিল নারী।
নির্বাচনি কর্তৃপক্ষের ঘোষণার পরপরই লোপেজ ওব্রাদর বলেন, 'অবশ্যই আমি ক্লাউদিয়া শাইনবাউমকে আমার শ্রদ্ধার সঙ্গে অভিনন্দন জানাচ্ছি। ২০০ বছরের মধ্যে তিনিই হতে যাচ্ছেন মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।’
ব্যবধান ধরে রাখতে পারলে ২০১৮ সালের পর তার ব্যাপক বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাবে। লোপেজ ওব্রাদর দুটি ব্যর্থ চেষ্টার পরে ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হন। ত্রিমুখী প্রতিযোগিতায় ন্যাশনাল অ্যাকশন ২২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ইনস্টিটিউশনাল রেভল্যুশনারি পার্টি ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।
তারপরও লোপেজ ওব্রাদর যে ধরনের প্রশ্নাতীত ভক্তি উপভোগ করেছেন, শাইনবাউমের ক্ষেত্রে তা উপভোগ করার সম্ভাবনা কম।
আরও পড়ুন: প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পাওয়ার আশায় মেক্সিকোতে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন
প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পাওয়ার আশায় মেক্সিকোতে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন
উত্তাপ, সহিংসতা ও রাজনৈতিক মেরুকরণের উত্তেজনার মধ্য দিয়ে রবিবার মেক্সিকোতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে মেক্সিকো প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দুয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ছাড়া দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে মেক্সিকো সিটির সাবেক মেয়র ক্লাউদিয়া শাইনবাউম ভোটে জিতলেও তিনি বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেস মানুয়েল লোপেস ওব্রাদরের মতো প্রশ্নাতীত সমর্থন পাবেন না। শাইনবাউম ও ওব্রাদর উভয়ই ক্ষমতাসীন মোরেনা পার্টির নেতা।
২০১৮ সালে লোপেস ওব্রাদরের জয়ের পর জনতার মাঝে যে উল্লাস দেখা যায়, জনমত জরিপে শাইনবাউম এগিয়ে থাকলেও মেক্সিকো সিটির ঔপনিবেশিক যুগের প্রধান প্লাজা জোকালোতে সে ধরনের উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: মেক্সিকোয় ঝড়ের কবলে নির্বাচনি সমাবেশ, ৯ জন নিহত
ফের্নান্দো ফের্নান্দেস মেক্সিকো সিটির ২৮ বছর বয়সী একজন শেফ। শাইনবাউমের সমর্থকদের তুলনামূলক ছোট একটি মিছিলে ছিলেন তিনি। প্রাথমিক গণনায় শাইনবাউম জিতেছেন দেখা গেলেও তাতে সমস্যা দেখা দেয় বলে স্বীকার করেন তিনি।
ফের্নান্দেস বলেন, ‘ক্লাউদিয়াকে নিশ্চিন্তে ভোট দেওয়া যায়। ক্ষমতায় থাকাকালে লোপেস ওব্রাদর গ্যাসের দাম, অপরাধ ও মাদক পাচারের মতো বিষয় কমাতে পারতেন। তবে তিনি চেষ্টাই করেননি। এসব বিষয়ে উন্নতি করতে পারেন ক্লাউদিয়া।’
মিছিল থেকে ইতশেল রব্লেদো নামের আরেক যুবক বলেন, ‘লোপেস ওব্রাদর যা করেননি, শাইনবাউম তা-ই করবে বলে আশা করছি। এক্ষেত্রে ক্লাউদিয়াকে যা করতে হবে, তা হলো প্রতিটি ক্ষেত্রে পেশাদারদের নিয়োজিত করা।’
ক্লাউদিয়ার প্রধান বিরোধী প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ছেন ন্যাশনাল অ্যাকশন পার্টির প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও সাবেক সিনেটর শোচিত গালভেস। জনগণের নিরাপত্তা ও সংগঠিত অপরাধ দমনে আরও কঠোর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছেন।
প্রায় ১০ কোটি ভোটার রবিবার ভোট দেওয়ার কথা ছিল। তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ভোটের হার কিছুটা কম ছিল বলে মনে হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে দেশটির ৩২ রাজ্যের ৯টিতে গভর্নর নির্বাচনের জন্যও ভোট দেন ভোটাররা। একইসঙ্গে হাজারো মেয়র পদ ও অন্যান্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও নির্বাচন করছেন তারা। ফলে এটি দেশটির সবচেয়ে বড় ভোটগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: মেক্সিকোর দক্ষিণে সিটি হলে মাদক চক্রের হামলায় ২০ জন নিহত
সদ্য শেষ হওয়া এই নির্বাচনকে লোপেস ওব্রাদরের ওপর গণভোট হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তবে ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি সামাজিক কর্মসূচির প্রসার ঘটালেও মাদক ও সহিংসতা দমনে ব্যর্থ হয়েছেন। ওব্রাদর যা করে গিয়েছেন, তার পর থেকে ক্লাউদিয়া শুরু করবেন বলে বিশ্বাস তার দলের সমর্থকদের।
শাইনবাউমও লোপেস ওব্রাদরের সমস্ত নীতি অক্ষুণ্ন রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার মধ্যে সর্বজনীন পেনশন ও যুবকদের শিক্ষানবিশ কর্মকাণ্ডে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার মতো প্রকল্প রয়েছে।
অন্যদিকে, আদিবাসী বাবার সন্তান, শহরের রাস্তায় স্ন্যাকস বিক্রি করে উঠে আসা গালভেস এখন টেক ফার্মের মালিক। প্রধান বিরোধী দলগুলোর জোটের হয়ে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য লড়ছেন তিনি। মাদক মাফিয়াদের দমন করার পরিবর্তে ওব্রাদর ‘গুলি নয়’ নীতি ধারণ করলে গত বছর সিনেট থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। নির্বাচনি ইশতেহারে অপরাধীদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এবারের ভোটে ভোটারদের মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মাদক মাফিয়াদের সহিংসতা ও মেক্সিকোর মধ্যবর্তী অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা।
উল্লেখ্য, ৩২টি গভর্নর পদের ২৩টিতেই বর্তমানে নিজেদের প্রার্থী রয়েছে মোরেনা পার্টির। মেক্সিকোর কংগ্রেসের উভয় কক্ষেও দলটির সংখ্যাগরিষ্টতা রয়েছে।
সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি পদের দুই প্রার্থীই নারী। আর তৃতীয় প্রার্থী হোর্গে আলভারেস মায়নেস জনমত জরিপে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এবারের ভোটে প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি পেতে যাচ্ছে মেক্সিকো।
মেক্সিকোয় ঝড়ের কবলে নির্বাচনি সমাবেশ, ৯ জন নিহত
মেক্সিকোয় নির্বাচনি প্রচার সমাবেশের মঞ্চ ভেঙে ৯ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৬৩ জন।
স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় উত্তর মেক্সিকোর নুয়েভো লিওন রাজ্যে সিটিজেনস মুভমেন্ট পার্টির নির্বাচনি সমাবেশে এই ঘটনা ঘটে। হঠাৎ করে ঝড়ো বাতাস শুরু হলে সমাবেশ ও মঞ্চের ওপর আশপাশের প্রচার স্ক্রিন, বোর্ড প্রভৃতি ভেঙে পড়ে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এ সময় সিটিজেনস মুভমেন্ট পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হোর্গে আলভারেস মায়নেস দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মানুষ চিৎকার করছে, কেউ কেউ দৌড়ে পালাচ্ছে, আবার কেউ ধাতব দণ্ডের নিচ থেকে উঠছে।
আরও পড়ুন: মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলে বাস দুর্ঘটনায় ১৬ অভিবাসী নিহত, আহত ২৯
ঘটনার পরপরই পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের অন্যন্য কর্মকর্তারা দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় অনেককে হতচকিত হয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।
এ ঘটনার পর দেশের অন্যান্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। মেক্সিকোর বর্তমান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস মানুয়েল লোপেস ওব্রাদর দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেছেন, ‘ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধব এবং রাজনৈতিক সমর্থকদের জন্য আমার এক বুক আলিঙ্গন।’
ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার প্রত্যয় জানিয়ে সামনের নির্বাচনি সমাবেশগুলো স্থগিত করেছেন মায়নেস।
নিজের সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট থেকে তিনি লিখেছেন, দুর্ঘটনার পর তিনি স্থানীয় সান পেদ্রো গার্সা গার্সিয়ার একটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং বর্তমানে ভালো আছেন।
তিনি বলেন, ‘এখন শুধু একটাই কাজ, ক্ষতিগ্রস্তদের খেয়াল রাখা।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোয় আঘাত হানতে যাচ্ছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিলারি
দুর্ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মঞ্চে উঠে হাত নাড়ছেন মায়নেস। সমর্থকরা তার নামে স্লোগান দিচ্ছে। এরইমধ্যে প্রবল বাতাসে একটি ধাতব কাঠামোসহ বিশালাকৃতির একটি স্ক্রিন তার ওপর ভেঙে পড়ছে। চাপা পড়ার হাত থেকে বাঁচতে তিনি দৌড়ে মঞ্চের পেছনের দিকে ছুটে যান।
আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন মায়নেস। এ নির্বাচনে তার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন ক্ষমতাসীন মোরেনা পার্টির ক্লাউদিয়া শাইনবাউম ও বিরোধী জোটের প্রার্থী শোচিটল গালভেজ। এই দুই প্রার্থীও দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। শাইনবাউম মন্তেরেতে তার একটি নির্বাচনি সমাবেশ বাতিল করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গালভেস লিখেছেন, ‘নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও প্রার্থনা জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’
আগামী ২ জুন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগমুহূর্তে প্রচার ও গণসংযোগ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। এর মাঝেই এমন দুর্ঘটনা ঘটল।