স্বাস্থ্য
বাইপোলার ডিসঅর্ডার: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
একটি সুস্থ মানসিক অবস্থা একটি উন্নত জীবনযাত্রার রূপকল্প। অন্যদিকে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ক্রমশ বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে নিত্য দিনের জীবনধারাকে। শুধু তাই নয়, গুরুতর রোগের মতোই তা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে মানবদেহের ওপর। বাইপোলার ডিসঅর্ডার মনস্তত্ত্বের ঠিক তেমনি একটি অবস্থা, যেখানে মেজাজের স্বাভাবিক কার্যকলাপে দেখা দেয় অসংলগ্নতা। চলুন, মানসিক এই সমস্যাটির কারণ ও লক্ষণ জানার পাশাপাশি এ থেকে উত্তরণের উপায় সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বাইপোলার ডিসঅর্ডার কি
মেজাজের ভারসাম্যহীনতার মাধ্যমে যে মানসিক সমস্যার প্রকাশ ঘটে সেটি বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা দ্বিপ্রান্তিক ব্যাধি নামে পরিচিত। ‘বাইপোলার’ শব্দটির মাধ্যমে মেজাজের দুই বিপরীত মেরুকে বোঝানো হয়, যার একটি উন্মাদনা, এবং অন্যটি বিষণ্নতা। উন্মাদনার মাধ্যমে ব্যক্তির মাঝে উচ্ছ্বাসের অপ্রতিরোধ্য অনুভূতি বিরাজ করে। অন্যদিকে, বিষণ্নতা মুহূর্তগুলোতে ব্যক্তি গভীর দুঃখ ও হতাশার ভেতর দিয়ে সময় কাটান।
বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগের কারণ
বাইপোলার ডিসঅর্ডার মূলত কতগুলো দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সমষ্টি, যা ধীরে ধীরে ব্যক্তিকে অসামঞ্জস্য আচরণের দিকে ধাবিত করে। প্রধানত তিনটি কারণে এমন অবস্থার অবতারণা ঘটে। এগুলো হলো-
জিনগত কারণ
বাবা-মা এবং ভাইবোনদের মধ্যে একজনের এ সমস্যা থাকলে পরবর্তীতে অন্যজনের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ওয়েবএমডি অনুসারে, বাবা বা মা যে কোনো একজনের এই ব্যাধি থাকলে তাদের সন্তানদের এই ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১০ থেকে ২৫ শতাংশ। আর দুজনেরই থাকলে এই সম্ভাবনা ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়। যমজ ভাইবোনের মধ্যে একজনের এই ব্যাধি থাকলে অন্যজনের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১০ থেকে ২৫ শতাংশ।
আরো পড়ুন: অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
জীবনের কোনো স্পর্শকাতর ঘটনা
যাদের পরিবারের পূর্বে কারো দ্বিপ্রান্তিক ব্যাধি রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী ঘটনাগুলো ট্রিগার হিসেবে কাজ করতে পারে। তাছাড়া জিনগত বৈশিষ্ট্য না থাকলেও ট্রমাজনিত অভিজ্ঞতাগুলো এই ব্যাধির দিকে ধাবিত করতে পারে। যেমন শৈশবের কোনো অপ্রিয় ঘটনা, প্রিয়জনের মৃত্যু, জীবনের বড় পরিবর্তন, চাকরি, সম্পর্ক বা আর্থিক চাপ উন্মাদনা বা বিষণ্নতার দশাগুলোর সূচনা ঘটাতে পারে।
মাদকাসক্তি
উত্তেজক রাসায়নিক, ওষুধ বা অ্যালকোহল নেওয়া মেজাজের ভারসাম্যতাকে বিনষ্ট করে। শুধু মাদকের নেশাই নয়, প্রয়োজনীয় ওষুধ ঘন ঘন সেবনের ফলেও মেজাজের অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়াও অনেক বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেদের অবস্থার উন্নতির জন্য নিজে থেকে ঔষধ সেবনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এতে তাদের ব্যাধির উপসর্গগুলো উল্টো বেড়ে গিয়ে মানসিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগে কারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়
জিনগত কারণগুলো থেকে এই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ। শৈশবের কোনো অপ্রিয় ঘটনা এবং প্রিয়জনের ক্ষতি থেকে সৃষ্ট ট্রমা সবচেয়ে বড় ঝুঁকি তৈরি করে। মাদক সেবন থেকে এই মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতার ক্ষেত্রে সর্বাধিক বিপদের মধ্যে রয়েছে তরুণরা।
আরো পড়ুন: রক্তের গ্রুপ: কে কাকে রক্ত দিতে পারবে?
বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগের লক্ষণ
মেজাজ ও কার্যকলাপের মাত্রার নাটকীয় পরিবর্তনটা দৃশ্যমান হতে শুরু করে উন্মাদনা ও বিষণ্নতা এই দুই ভিন্ন পর্যায়ে।
উন্মাদনাকেন্দ্রিক উপসর্গ
এই উপসর্গগুলোর মাধ্যমে মূলত ব্যক্তির শারীরিক সক্ষমতা ও কার্যকলাপের মাত্রার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হয়।
· উচ্ছ্বাস বা বিরক্তি: কোনো কোনো সময় ব্যক্তি অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস অনুভব করেন বা নিজেকে সর্বাধিক সুখী মনে করেন। এই অনুভূতির আরেক নাম ইউফোরিয়া। কিছু সময় (অনির্দিষ্ট) পরেই তিনি আকস্মিকভাবে প্রচণ্ড ক্রোধ অনুভব করেন। বিশেষ করে যখন কোনো চ্যালেঞ্জ অনুভব করেন তখন তিনি রীতিমতো আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় অবস্থান নেন।
· চিন্তা ও কথাবার্তায় দ্রুততা: এ ধরনের ব্যক্তিরা একাধিক বিষয়ের চিন্তায় নিমজ্জিত থাকে। অথচ নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন। তার বহিঃপ্রকাশ তাদের কথাবার্তায়ও দেখা যায়। প্রতিটি বাক্য খুব দ্রুতগতিতে বলার কারণে প্রায় পুরোটা সময় শ্রোতাদের কাছে তা দুর্বোধ্য মনে হয়।
· আবেগপ্রবণতা এবং যে কোনো কিছু ভুলভাবে বিচার করা: এ সমস্যার ভূক্তভোগীরা আর্থিক সিদ্ধান্ত, সম্পদের অপব্যয় বা বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের মতো বিষয়গুলোতে আবেগের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া জীবনের নানা লেনদেন বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সময় সবকিছুকে ভুল ব্যাখা দাঁড় করান।
· অনিদ্রা বা অতিরিক্ত ঘুম: এ সমস্যায় জর্জরিত ব্যক্তিদের কখনো স্বাভাবিকের চেয়ে কম ঘুমের দরকার হয়। আবার কখনো দেখা যায় যে, দীর্ঘক্ষণ যাবত ঘুমের পরেও জেগে থাকতে (বিশেষ করে দিনের বেলা) সমস্যা হচ্ছে।
আরো পড়ুন: বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার উপায়
বিষণ্নতার উপসর্গ
মানসিক অবস্থার এই পর্যায়ে মেজাজ এবং আচরণের অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়।
· ক্রমাগত দুঃখ বা হতাশা: এক্ষেত্রে ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ধরে হতাশার মাঝে নিমজ্জিত থাকেন এবং সর্বদা দুঃখী অনুভব করেন।
· আগ্রহ বা আনন্দ কমে যাওয়া: এক সময় যে বিষয়গুলো অত্যন্ত উপভোগ্য ছিল, সেগুলোর প্রতি আর ভালো লাগা কাজ করে না।
· ক্লান্তি: প্রতিদিনের সাধারণ এবং সহজ কাজগুলোতে অত্যধিক ক্লান্তি অনুভূত হয়। সেই সঙ্গে স্পৃহা না থাকায় সব মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে কর্মদক্ষতা লোপ পায়।
· মনোযোগ নিবদ্ধ করতে অসুবিধা: সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে মনোযোগে অপারগতা দেখা দেয়। এর ফলে ব্যক্তি যথেষ্ট প্রচেষ্টার পরেও যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন।
মিশ্র উপসর্গ
অধিকাংশের মধ্যে এই বিষণ্নতা এবং উন্মাদনা একই সঙ্গে শুরু হয়। এতে করে এমন এক মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, যেখানে ভুক্তভোগী অযাচিত কোনো ভুল করে বসেন বা বড় কোনো ঝুঁকি নিয়ে ফেলেন। মনের এই মিশ্র অবস্থা সবথেকে গুরুতর, কেননা চরম পর্যায়ে এটি ওই ব্যক্তিকে আত্মহত্যার দিকেও ঠেলে দিতে পারে।
আরো পড়ুন: এমপক্সের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
জিনগত বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে বাইপোলার ডিসঅর্ডার এড়ানোটা জটিল। তবে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা না গেলেও এর ক্ষতির মাত্রা কমানো যেতে পারে। যে পদক্ষেপগুলো এখানে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে সেগুলো হলো-
· নিয়মিত সঠিক ব্যায়াম, ইয়োগা ও ধ্যান করার অভ্যাস করা
· প্রতিদিনই পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানো
· যে কোনো মূল্যে মাদক থেকে বিরত থাকা
· মেজাজে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এমন ওষুধ এড়িয়ে চলা
· নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি বজায় রাখা
· সুষম খাদ্যাভ্যাস চালু রাখা
· সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত হওয়া
· ইতিবাচক সম্পর্ক লালন করা
আরো পড়ুন: অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়
বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগ প্রতিকারের উপায়
শারীরিক ব্যাধির মতো এই মানসিক অবস্থার আসলে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই। তবে জীবনযাত্রার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনসহ কিছু থেরাপিতে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে মানসিক অবস্থার উন্নতি করা যায়। এই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে-
ওষুধ
এ ক্ষেত্রে সাধারণত যে ওষুধগুলো গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয় সেগুলো হলো- মুড স্টেবিলাইজার, অ্যান্টিসাইকোটিক্স ও অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট্স। এখানে লিথিয়ামের মতো মুড স্টেবিলাইজারগুলো মিশ্র উপসর্গগুলো প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে, অ্যান্টিসাইকোটিকগুলো উন্মাদনাকে নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়। এখানে খেয়াল রাখা উচিত যে, ওষুধগুলোর অনিয়ন্ত্রিত ডোজ সেবনে উল্টো উন্মাদনাকে ত্বরান্বিত করতে পারে। তাই এগুলো ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া অত্যাবশ্যক।
সাইকোথেরাপি
জ্ঞানগত-আচরণগত থেরাপি (সিবিটি) ব্যক্তির চিন্তাভাবনা এবং আচরণগত অসামঞ্জস্যতাগুলোর চিকিৎসায় বেশ কার্যকর। ইন্টার্পাসনাল ও সোশ্যাল রিদম থেরাপি দৈনন্দিন রুটিন বজায় এবং সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে। এই কৌশলগুলো ব্যক্তির ঘুম, খাবার ও অন্যান্য কার্যকলাপের সময়সূচি স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন: এসির বাতাসে শিশুকে নিরাপদ রাখবেন যেভাবে
জীবনধারার পরিবর্তন
এই ডিসঅর্ডার থেকে আরোগ্য লাভের সবচেয়ে মোক্ষম উপায় হলো জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা। তবে এটি বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। নিয়মিত ব্যায়াম দীর্ঘ মেয়াদে মেজাজকে স্বাভাবিক ও আবেগকে স্থিতিশীল রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর ঘুম ও পুষ্টিকর খাবার সর্বাঙ্গীনভাবে মানসিক সুস্থতাকে বিকশিত করে।
মানসিক সমর্থন
জীবনধারাকে পরিবর্তিত করতে যে বিষয়টি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে তা হলো পরিবার, বন্ধু ও থেরাপিস্টের মানসিক সমর্থন। দ্বিপ্রান্তিক ব্যাধির মূল চিকিৎসাটিই হচ্ছে এই সমর্থন নিশ্চিত করা। এগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তির মনস্তত্ত্বে অনেকটা সাপ্লিমেন্টের মতো কাজ করে।
শেষাংশ
বাইপোলার ডিসঅর্ডার সনাক্ত করার জন্য এর কারণ ও লক্ষণগুলো গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই করা প্রয়োজন। মানসিক সমস্যাটির নেপথ্যে রয়েছে জিনগত বৈশিষ্ট্য, মানসিক আঘাত ও মাদকাসক্তি। লিঙ্গ বা বয়স নির্বিশেষে প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলোকে সূচনালগ্নেই খেয়াল করা উচিত। এর ফলে প্রাথমিক অবস্থাতেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
অপরদিকে, এরইমধ্যে এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওষুধ ও থেরাপির পাশাপাশি দরকার মানসিক সমর্থন। উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা বজায় রাখার সার্বিক প্রচেষ্টাকে সফল করে তুলতে পারে।
আরো পড়ুন: ভিমরুলের কামড় কতটা ভয়ংকর? সাবধানতা ও করণীয়
১ ঘণ্টা আগে
ভিমরুলের কামড় কতটা ভয়ংকর? সাবধানতা ও করণীয়
বিষাক্ত পোকামাকড়ের উপদ্রব মানুষের বসবাসের পরিবেশকে অনায়াসেই প্রতিকূল করে তোলে। বোলতা ও মৌমাছির মতো কীটপতঙ্গগুলোর হুল ফোটানো বা কামড় থেকে প্রচণ্ড ব্যথা, এমনকি সংক্রমণের দিকে নিয়ে যেতে পারে। একসঙ্গে অনেকগুলোর আক্রমণ প্রাণঘাতী হতে পারে। যাদের পতঙ্গ নিয়ে গুরুতর অ্যালার্জি রয়েছে তাদের জন্য দু-একটির কামড়ই মারাত্মক হুমকির কারণ হতে পারে। তবে এই বিষাক্ত পতঙ্গগুলোর মধ্যে আক্রমণাত্মক প্রকৃতি ও বিষের ভয়াবহতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভিমরুল। চলুন, বিষাক্ত পতঙ্গ ভিমরুল থেকে নিরাপদ থাকার উপায় এবং আক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে করণীয় সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক।
ভিমরুল কতটা বিপজ্জনক
মূলত বৈশিষ্ট্যগত কারণে ভিমরুলের ভয়াবহতা অন্য সব কীটপতঙ্গ থেকে বেশি। এই বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে আকার-আকৃতি, একাধিকবার কামড়ানোর প্রবণতা, প্রতি কামড়ে নির্গত বিষের তীব্রতা এবং তাতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। চলুন, এই বিষয়গুলো আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করা যাক।
ভিমরুল কেন অন্যান্য বিষাক্ত পোকামাকড় থেকেও বিপজ্জনক
প্রায় সময় বোলতার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হলেও ভিমরুল একটি স্বতন্ত্র প্রজাতি। এরা বোলতার সমগোত্রের; তবে আকারের দিক থেকে এগুলো অপেক্ষাকৃত বড় হয়ে থাকে। এগুলো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলকে আঁকড়ে পড়ে থাকে। নিজেদের আবাস বাঁচানোর ক্ষেত্রে এরা ভয়ংকর রকম রক্ষণাত্মক হয়। যার কারণে যেকোনো পরিস্থিতে হুমকি অনুভব করলে সঙ্গে সঙ্গে শিকারের প্রতি ঝাঁকে ঝাঁকে আক্রমণ চালায়। এতে শিকারের শরীরে বেশ অল্প সময়ের মধ্যেই অসংখ্য হুল ফোটে।
সমগোত্রের অন্যান্য কীটপতঙ্গের হুল ফোটানো বা কামড়ানোর ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্যগত সীমাবদ্ধতা থাকে। তাই শুধু প্রাণনাশের হুমকি থাকলেই সেগুলো মরিয়া হয়ে আক্রমণ করে। কিন্তু ভিমরুলে এমন কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। কোনো রকম শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই এগুলো একের পর এক হুল ফোটাতে পারে। এমনকি এই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমার জন্য অত্যন্ত নগণ্য কারণই যথেষ্ট।
আরো পড়ুন: থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
ভিমরুলের কামড়ে বিষের তীব্রতা
যে ধরনের পোকামাকড় হুলের মাধ্যমে বিষ ছড়ায়, সেগুলোর মধ্যে ভিমরুলের বিষের শক্তি সর্বাপেক্ষা বেশি। এগুলোর বিষে অ্যাসিটাইলকোলিনসহ বিষাক্ত কিছু পদার্থের মিশ্রণ থাকে। একটি ভিমরুল কামড়ের ফলে মানুষের দেহে ২ থেকে ৩ মিলিগ্রাম বিষ প্রবেশ করে। সাধারণত মানবদেহের প্রতি কেজি ওজনে ১০ মিলিগ্রাম বিষ ঢুকলে মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। অর্থাৎ ৬০ কেজি ওজনের সুস্থ একজন ব্যক্তির দেহে ৬০০ মিলিগ্রাম বিষ প্রবেশ করলেই তার মৃত্যু হবে। আর বলাই বাহুল্য যে, একটি ভিমরুল শুধু একবার হুল ফুটিয়েই ক্ষান্ত হয় না।
ভিমরুলের কামড়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
অ্যাসিটাইলকোলিনসহ বিষাক্ত পদার্থ শরীরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয়। তাৎক্ষণিকভাবেই কামড়ের স্থানটি ফুলে গিয়ে লাল বর্ণ ধারণ করে। তারপর ধীরে ধীরে সেখানে চুলকানি বাড়তে থাকে। এভাবে একে একে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, অতঃপর কিডনি বা লিভারের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে সারা দেহ ক্রমশ অবনতির দিকে এগোতে থাকে।
যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের এই অবনতি আরও দ্রুততর হয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে এই অবস্থা অ্যানাফিল্যাক্সিস নামে পরিচিত। এতে শ্বাসনালী ফুলে যেতে পারে, শ্বাসকষ্ট হতে পারে এবং রক্তচাপ দ্রুত হ্রাস পেতে পারে। অ্যানাফিল্যাক্সিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি থাকে।
আরো পড়ুন: মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায়
ভিমরুলের কামড় থেকে নিরাপদ থাকার উপায়
.
ভিমরুলের আবাসস্থলগুলো এড়িয়ে চলা
সাধারণত গাছের ডালে এই পতঙ্গের বসতি বেশি দেখা যায়। এছাড়াও দালানের বাইরের দেওয়ালে সানশেডে, টালি দেওয়া ছাতের ফাঁকে এরা বাসা করে। গ্রীষ্মের শেষের দিকে এবং শরতের প্রথম দিকে এরা সংখ্যায় বেশি থাকে। সেই সঙ্গে এই মৌসুমগুলোতে বেশ সক্রিয়ও থাকে এরা। এই সময়ে বাড়ির আশেপাশে এদের আবাসস্থলের উপস্থিতি টের পেলেই সাবধান হয়ে যাওয়া উচিত।
উজ্জ্বল রঙের পরিধেয় এবং কড়া সুগন্ধি ব্যবহার না করা
ভিমরুল উজ্জ্বল রঙ বিশেষ করে হলুদ রঙ এবং কড়া সুগন্ধির প্রতি আকৃষ্ট হয়। এছাড়া মৌমাছির মতো এরাও অমৃতের জন্য ফুলের দিকে ধাবিত হয়। তাই ঘরের ভেতর বাগান থাকাটাও বিপজ্জনক। উপরন্তু, পারফিউম, কোলোন বা সুগন্ধি লোশনের তীব্র ঘ্রাণ শুঁকে ভিমরুল কাছাকাছি চলে আসতে পারে। ঠিক একই কারণে খাবারের মিষ্টি গন্ধও এদের আকৃষ্ট করে। তাই পরিধানের ক্ষেত্রে সাদা বা হাল্কা রঙ এবং ব্যবহারের জন্য হাল্কা সুগন্ধি বেছে নেওয়া উচিত।
খাবার ও পানীয় ঢেকে রাখা
মিষ্টি গন্ধ যেন চারপাশ ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য খাবার বা পানীয় ঢেকে রাখা জরুরি। বিশেষ করে বাইরে খোলা আকাশের নিচে ভোজের সময় এই বিষয়টি খেয়াল রাখা দরকার। এক্ষেত্রে সিল করা পাত্র ব্যবহার করা উত্তম। আর খাওয়া শেষে অবশ্যই সেগুলো ডাস্টবিনে ফেলে তার ওপর ঢাকনা লাগিয়ে দিতে হবে। এর জন্য কোনোভাবেই উন্মুক্ত ডাস্টবিন ব্যবহার করা সমীচীন নয়।
আরো পড়ুন: রক্তের গ্রুপ: কে কাকে রক্ত দিতে পারবে?
প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরিধান করা
বাগান বা পার্কের মতো স্থানে বিচরণের সময় প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরা আবশ্যক। লম্বা হাতার শার্ট, লম্বা প্যান্ট, গ্লাভ্স ও ক্যাপ প্রভৃতির মাধ্যমে শরীরের ত্বক তুলনামূলকভাবে কম উন্মুক্ত হয়।
এগুলো ভিমরুল দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে। উষ্ণ আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হাল্কা ঢিলেঢালা কাপড় বেছে নেওয়া যেতে পারে। এমনকি জুতা পরার ক্ষেত্রেও কেডসের মতো পুরো পা ঢেকে রাখে এমন কিছু জুতাগুলো পড়া উচিত।
প্রাকৃতিক প্রতিরোধক ব্যবহার করা
সিট্রোনেলা, ইউক্যালিপ্টাস ও পেপারমিন্টের তেলগুলোতে ভিমরুল প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো পানির সঙ্গে মিশিয়ে বাড়ির আঙিনা বা বাগানে স্প্রে করা যায়। চিলেকোঠা, স্টোর রুম, বা বাইরের সিঁড়ি ঘরে সিট্রোনেলা মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখলে তা ভিমরুলকে দূরে রাখতে পারে।
বাড়ির আশেপাশে ভিমরুলের বসতি ধ্বংস করা
ভিমরুলের উপদ্রব থেকে বাঁচার সর্বোত্তম পন্থা হলো তাদের সমূলে উৎপাটন করা। এর জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় মিষ্টি টোপ দিয়ে ফাঁদ তৈরি করতে হবে। ফাঁদগুলো জনাকীর্ণ স্থান থেকে যথেষ্ট দূরে রাখা উচিত। অন্যথায় কোলাহলপূর্ণ জায়গায় ফাঁদ পাতা মানে উল্টো মানুষকে কামড়ানোর আশঙ্কা বাড়ে। এর জন্য বসন্তের প্রথম দিকের মাসগুলোকে বেছে নেওয়া যায়। কারণ এ সময় ভিমরুল সংখ্যা সবেমাত্র বাড়তে শুরু করে।
আরো পড়ুন: বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার উপায়
ভিমরুল কামড়ালে করণীয়
.
দ্রুত নিরাপদ দূরত্বে সরে পড়া
ভিমরুল কামড়ানোর পর সঙ্গে সঙ্গেই প্রাণঘাতী পতঙ্গগুলোর কাছ থেকে দূরে সরে পড়তে হবে। অন্যথায় একাধিক কামড় খাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া আশেপাশে ভিমরুলের বাসা থাকতে পারে। সেখান থেকে আরও ভিমরুল আক্রমণ চালাতে পারে।
মূলত একবার কামড়ানোর পর ভিমরুলের শরীর থেকে ফেরোমোন নিঃসৃত হয়। এই রাসায়নিক শিকারের ব্যাপারে অন্যান্য ভিমরুলদের জানান দেয়। ফলে তারাও আক্রমণ করতে উদ্দত হয়।
ক্ষত স্থান পরিষ্কার করে তাতে ঠান্ডা কম্প্রেস লাগানো
সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাবান ও পানি দিয়ে ক্ষত স্থানটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। অতঃপর একটি ঠান্ডা কম্প্রেস বা কয়েকটি বরফ টুকরা একটি কাপড়ে পেঁচিয়ে জায়গাটিতে চেপে ধরতে হবে। এই শীতল পরশ ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করবে, ব্যথা উপশম করবে এবং বিষের বিস্তার রোধে সহায়তা করবে।
আরো পড়ুন: এমপক্সের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
ব্যথা উপশমকারী ব্যবহার
তাৎক্ষণিকভাবে ব্যথা কমানোর জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। যেমন কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল, তুলসি পাতার রস, অ্যালোভেরা জেল, ইউক্যালিপ্টাস তেল প্রভৃতি ক্ষত স্থানে লাগানো যেতে পারে। এগুলোতে থাকা প্রদাহবিরোধী উপাদান ব্যথা, জ্বালাভাব, চুলকানি, ও ফোলা অবস্থা কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়া অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ও বেকিং সোডার মিশ্রিত পেস্ট ব্যবহার করা যায়। ভিনেগারে সাধারণত বিষের অ্যাসিড নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতা থাকে। শুধু ভিনেগার তুলোয় ভিজিয়েও আক্রান্ত স্থানে আলতো করে বুলিয়ে দেওয়া যায়।
ফোলা ভাব ও ব্যথা কমাতে কার্যকর একটি ওষুধ হচ্ছে অ্যান্টিহিস্টামিন বা আইবুপ্রোফেন। তবে ব্যবহারের আগে ঠিক কতটুকু ডোজ ব্যবহার করতে হবে সে ব্যাপারে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
আক্রান্ত স্থান উঁচু করে রাখা
হাতে বা পায়ে কামড়ালে বিষ যেন সারা দেহে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ক্ষত স্থানযুক্ত অঙ্গটিকে উঁচু করে ধরতে হবে। এতে আক্রান্ত জায়গাটির অভ্যন্তর ভাগে বিষ জমাট বাঁধার গতি কমে গিয়ে ফুলে যাওয়ার তীব্রতা হ্রাস পায়। একই সঙ্গে উঁচু করে রাখলে অঙ্গটিতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, যা নিরাময় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
আরো পড়ুন: অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়
যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়া
গুরুতর প্রভাবগুলো সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব হয় না। যেমন অ্যানাফিল্যাক্সিসের লক্ষণগুলো কেবল একজন বিশেষজ্ঞই ধরতে পারেন। এ অবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে এপিনেফ্রিন অটো-ইনজেক্টর (এপিপেন) ব্যবহারের প্রয়োজন পড়তে পারে।
তাছাড়া অ্যালার্জি না থাকলেও যাদের শরীরে একাধিক হুল ফুটেছে তাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই অবিলম্বে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিকটস্থ চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া অপরিহার্য।
পরিশিষ্ট
ভিমরুলের কামড়ে তীব্র ব্যথা ও ফুলে যাওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত পর্যায়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই বিষাক্ত পতঙ্গ থেকে নিরাপদে থাকতে এগুলোর আবাসস্থল থেকে দূরে থাকা এবং প্রয়োজনে এগুলোর বাসা ধ্বংস করা জরুরি। উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরিধান বা কড়া সুগন্ধি মাখা ত্যাগ করা এবং খাবার ও পানীয় ঢেকে রাখা উচিত। কেননা উজ্জ্বল রঙ ও কড়া গন্ধের মাধ্যমে ভিমরুল আকৃষ্ট হয়। ভিমরুল দ্বারা আক্রান্ত হলে কামড়ের স্থানটি পরিষ্কার করা, এবং সর্বাত্মক ভাবে জায়গাটি ঠাণ্ডা রাখা দরকার। এ অবস্থায় নানা রকম স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে, তাই অনতিবিলম্বে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা প্রদান আবশ্যক।
আরো পড়ুন: এসির বাতাসে শিশুকে নিরাপদ রাখবেন যেভাবে
২১ ঘণ্টা আগে
এসির বাতাসে শিশুকে নিরাপদ রাখবেন যেভাবে
উষ্ণ মৌসুমের ভয়াবহ উত্তাপ থেকে স্বস্তির জন্য এখন একটি অপরিহার্য গৃহস্থালি যন্ত্র এসি (এয়ার কন্ডিশনার) বা এয়ার কুলার। এটি শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। শিশুদের প্রাথমিক শারীরতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য পরিবেশের যে কোনো প্রতিক্রিয়ার জন্য পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুত নয়। যার ফলশ্রুতিতে দীর্ঘক্ষণ যাবত ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই এসি ব্যবহারের সময় সার্বিক দিক থেকে তাদের আরামপ্রদ পরিবেশ ও নিরাপত্তা বজায় রাখা জরুরি। চলুন, এসিতে শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ ও তা থেকে বাঁচতে করণীয়গুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
এসির বাতাসে শিশুদের ঠান্ডা লেগে যায় কেন?
এসি থেকে নির্গত জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস)
শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য এসির সবচেয়ে গুরুতর বিষয়টি হচ্ছে এর বাতাসের সঙ্গে নির্গত জীবাণু। বিশেষত সময়মতো পরিষ্কার করা না হলে এসির বাতাস রীতিমতো বিষাক্ত হয়ে যায়। কারণ দীর্ঘদিন নোংরা থাকা এসিতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাস জন্ম নেয়। এই জীবাণুগুলো বাতাসে সঞ্চালিত হয়ে শিশুদের দেহে প্রবেশ করে। এর ফলে শিশুদের নানা ধরনের বায়ুবাহিত রোগে সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
শিশুর দুর্বল শারীরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
এসি থেকে ক্রমাগত ঠান্ডা বাতাসে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো শিশুরা অভ্যস্ত হতে পারে না। এ মূল কারণ হচ্ছে এমন পরিবেশের জন্য শিশুদের শারীরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখনও পরিপক্ক নয়। ভয়ের বিষয় হচ্ছে- এসির শীতলতার সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার পরিবর্তে তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা উল্টো বরং কমে যেতে পারে। এটি ক্রমশ তাদের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষাকে দুর্বল করে বিধায় তারা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়।
আরো পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
তাপমাত্রার আকস্মিক ওঠানামা
অনেকটা সময় এসি রুমে থাকার পর হঠাৎ সেখান থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইরের গরম বাতাস রীতিমত হামলে পড়ে। এরকম দ্বৈত আবহাওয়া শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিষয়টি বাইরের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এসি রুমে প্রবেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাপমাত্রার এই আকস্মিক ওঠা-নামা শিশুর শরীরকে সর্দি-কাশিসহ অন্যান্য অসুস্থতার জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
এসির বাতাসের ফলে সৃষ্ট শুষ্কতা
এয়ার কুলার ও এসির শুষ্ক বাতাস ঘরের আর্দ্রতাকে আশঙ্কাজনক হারে কমিয়ে দেয়। এই শুষ্কতা সরাসরি শিশুর নাসারন্ধ্র ও গলাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা বেষ্টনী হিসেবে কাজ করে শ্লেষ্মা ঝিল্লি। শুষ্ক বাতাস এই বেষ্টনীকে দুর্বল করে দিতে পারে। ফলে শিশুদের শ্বাসকষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
আরো পড়ুন: শিশুকে ডেঙ্গু থেকে রক্ষার উপায়
৫ দিন আগে
এমপক্স ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
আফ্রিকার পর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার প্রারম্ভে এমপক্সের প্রথম ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়ে শুক্রবার ডব্লিউএইচও বলেছে, আফ্রিকাসহ বিশ্বজুড়ে এমপক্সের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’।
ডেনমার্কের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাভারিয়ান নর্ডিক এ/এস এই ভ্যাকসিনটি প্রস্তুত করেছে।
তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শুধুমাত্র ইউনিসেফ এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থা এই ভ্যাকসিন কিনতে পারবে। একটিমাত্র প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে এই ভ্যাকসিনটির প্রাপ্যতা এবং সীমিত সরবরাহের কারণে আপাতত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডব্লিউএইচও।
আরও পড়ুন: এমপক্সের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, ‘আফ্রিকায় বর্তমান প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে ভ্যাকসিনের এই প্রথম প্রাক-যোগ্যতা ভবিষ্যতে এমপক্সের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
এদিকে, অন্যান্য পদক্ষেপের পাশাপাশি যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেখানে জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, অনুদান ও সরবরাহের পরিমাণ বাড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন অনুযায়ী, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সীদের দুই ডোজে টিকা দেওয়া যাবে।
অনুমোদনে আরও বলা হয়েছে, ভ্যাকসিনটি বর্তমানে ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য লাইসেন্স না পেলেও প্রাদুর্ভাবের পরিস্থিতি বুঝে এটি শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের শরীরে ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি কোথাও এই টিকার ঝুঁকির চেয়ে জীবনের ঝুঁকি বেশি দেখা যায়, সেক্ষেত্রে বয়সের সীমা না মেনেও এই টিকা প্রয়োগ করা যাবে।
আরও পড়ুন: এমপক্স প্রতিরোধে দেশের প্রবেশ পথ-বিমানবন্দরে নতুন নির্দেশনা
গত মাসে আফ্রিকা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, এমপক্সে বিশ্বে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ভুগছে কঙ্গো। দেশটির মোট আক্রান্তদের প্রায় ৭০ শতাংশই ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু। এমনকি এমপক্সে সেখানে নিহতদের ৮৫ শতাংশেরই বয়স ১৫ বছরের কম।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) আফ্রিকা সিডিসি জানায়, এমপক্সে আক্রান্ত হয়ে গত সপ্তাহে ১০৭ জনের প্রাণ গেছে। এছাড়া নতুন করে ৩ হাজার ১৬০ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
এমপক্স গুটিবসন্তের মতো ভাইরাসের একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। আক্রান্তের শরীরে এটি জ্বর, সর্দি ও শরীরের ব্যথার মতো হালকা লক্ষণ সৃষ্টি করে। আরও গুরুতর ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ, হাত, বুক, এমনকি যৌনাঙ্গেও ক্ষত বিস্তৃত হতে পারে।
১ মাস আগে
অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়
বৃষ্টির মৌসুমে বাতাসে আর্দ্রতা বাড়ায় মোল্ডসহ বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া জাতীয় অণুজীবের বংশবিস্তার ঘটে। ফলে স্যাঁতসেঁতে দূষিত বাতাস শ্বাসকষ্টজনিত স্বাস্থ্য জটিলতাগুলোকে আরও গুরুতর করে তোলে। এরমধ্যে যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে রোগটি দেখা যায় সেটি হচ্ছে অ্যাজমা। মূলত এই রোগের কোনো প্রতিকার নেই, তবে এর লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। চলুন, অ্যাজমা রোগের কারণ, লক্ষণ, ও প্রতিরোধের উপায়গুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
অ্যাজমা কি
ফুসফুসে বাতাস চলাচলের জন্য নির্ধারিত শ্বাসনালীগুলোতে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহজনিত রোগ অ্যাজমা বা হাঁপানি। এটি কোনো সংক্রামক ব্যাধি নয়, তবে হৃদরোগ বা ক্যান্সারের মতো বিশ্বের মারাত্মক ব্যাধিগুলোর একটি।
শ্বাসযন্ত্রের নিম্নদেশের শ্বাসনালীগুলো ব্রঙ্কি নামে পরিচিত। এগুলোর ছোট ছোট শাখাগুলোকে বলা হয় ব্রঙ্কিওল্স। হাঁপানির সময় বিশেষত এই ব্রঙ্কি এবং ব্রঙ্কিওল্সে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ঘটে, যার ফলে পার্শ্ববর্তী মসৃণ পেশীগুলো সংকুচিত হতে থাকে। এভাবে সংকোচনের পুনরাবৃত্তির ফলে নালীগুলো ফুসফুসে বাতাস পরিবহনের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এরই চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে অ্যাজমা।
অ্যাজমা বা হাঁপানির কারণ
মূলত পরিবেশ, বংশগতি ও নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন তীব্রতার অ্যাজমা সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই তীব্রতা রোগের উপসর্গ ও চিকিৎসা উভয়কেই প্রভাবিত করে। জিনগত প্রভাবের কারণে ১২ বছর বয়সের আগে হাঁপানি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অপরদিকে, ১২ বছর বয়সের পরে এই ব্যাধি হওয়ার পেছনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী থাকে পরিবেশগত প্রভাব।
আরো পড়ুন: সার্কেডিয়ান রিদম বা দেহ ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
পরিবেশগত কারণ
এখানে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থ বা অ্যালার্জেন এবং বায়ু দূষণসহ অন্যান্য পরিবেশগত রাসায়নিক উপাদান। অ্যাজ্মাজেন নামে পরিচিত পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যামোনিয়া, ল্যাটেক্স, ফর্মাল্ডিহাইড, গ্লুটারাল্ডিহাইড ও অ্যানহাইড্রাইড্স। এছাড়াও রয়েছে কীটনাশক, ঝালাই ও ঢালাই থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া, ধাতু বা কাঠের ধূলিকণা, যানবাহন মেরামতে ব্যবহৃত আইসোসায়ানেট স্প্রে, আঠা, রঞ্জক, ধাতব কাজ করা তরল, তেল, ও ছাঁচ।
কোনো ধূমপায়ীর ধোঁয়া তার আশেপাশে থাকা গর্ভবতী নারীর হাঁপানির কারণ হতে পারে। ট্র্যাফিক দূষণ বা উচ্চ ওজোন স্তর নিম্নমানের বাতাসের জন্য দায়ী। এমন পরিবেশে তীব্র অ্যাজমার ঝুঁকির মধ্যে থাকে এখানে বসবাসরত শিশুরা।
গৃহস্থালি বিভিন্ন উদ্বায়ী জৈব যৌগের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ঘরের শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়েরই অ্যাজমা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ফর্মাল্ডিহাইড, প্লাস্টিকের সিন্থেটিক পলিমার হিসেবে প্রস্তুতকৃত পলিভিনাইল ক্লোরাইড বা পিভিসি।
সাধারণ গৃহস্থালি অ্যালার্জেনগুলো হলো ধুলিকণা, তেলাপোকা, পশুর পশম বা পাখির পালকের অংশ ও ছাঁচ। এছাড়া রেসপিরেটরি সিন্সিশিয়াল ভাইরাস এবং রাইনোভাইরাসের মতো শ্বাসযন্ত্রের কিছু সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণ রয়েছে। এগুলো ছোট বাচ্চাদের অ্যাজমা হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
আরো পড়ুন: অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
বংশগতি-সংক্রান্ত কারণ
জিনগত বৈশিষ্ট্য জীবদ্দশায় যে কোনো সময় অ্যাজমার দিকে পরিচালিত করতে পারে। যমজ সন্তানদের একজনের এই রোগ হলে, অপরজনেরও এতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ২৫ শতাংশ।
কিছু জিনগত বৈচিত্র্য শুধুমাত্র তখনই হাঁপানির কারণ হতে পারে, যখন সেগুলো নির্দিষ্ট পরিবেশগত অ্যালার্জেনের সান্নিধ্যে আসে। এর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হলো এন্ডোটক্সিন ব্যাকটেরিয়া। এর সম্ভাব্য উৎস হলো তামাকের ধোঁয়া, কুকুর-বিড়াল, এবং গৃহপালিত পশুপাখির খামারসহ।
স্বাস্থ্যগত অবস্থা
অ্যাটোপিক এক্সিমা, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস এবং অ্যাজমা- এই তিনের সমন্বিত ব্যাধিকে বলা হয় অ্যাটোপি। হাঁপানি হওয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ঝুঁকির কারণ হলো অ্যাটোপিক রোগের ইতিহাস। যাদের এক্সিমা বা হে ফিভার আছে তাদের মধ্যে হাঁপানি অনেক বেশি হারে দেখা দেয়।
চর্বি জমা হওয়ার কারণে শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় ফলে শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।
আরো পড়ুন: থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
অ্যারিথমিয়া বা অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকরী একটি ওষুধ ক্যাটাগরি বিটা ব্লকার। মূলত প্রথম হার্ট অ্যাটাকের পরে দ্বিতীয় অ্যাটাক থেকে হার্টকে রক্ষা করতে এগুলো ব্যবহৃত হয়। এগুলোর মধ্যে বিশেষ করে প্রোপ্রানোলল সেবনকারী রোগীদের হাঁপানি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া অন্যান্য হাঁপানি সৃষ্টিকারী ওষুধগুলোর মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত হলো অ্যাস্পিরিন। গর্ভাবস্থায় অ্যাসিড-প্রতিরোধী ওষুধ ব্যবহারের ফলে পরবর্তীতে শিশুর শ্বাসকষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অ্যাজমা রোগের লক্ষণসমূহ
প্রাথমিক পর্যায়ে ঘন ঘন নিশ্বাস টানা, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ অনুভব করা এবং ঘন ঘন কাশি হয়। ব্রঙ্কি থেকে উৎপন্ন কাশিতে শ্লেষ্মা থাকতে পারে, যা বের করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। শ্বেত রক্তকণিকার উচ্চমাত্রার কারণে হাঁপানির আক্রমণের প্রতিরোধ করার সময় পুঁজের সৃষ্টি হতে পারে। সংক্রমণের সময় প্রদাহের জায়গায় তৈরি হওয়া সাদা-হলুদ, হলুদ বা হলদে-বাদামী বর্ণের এই পুঁজকে ইওসিনোফিল্স বলা হয়।
সাধারণত রাতে এবং ভোরে ব্যায়াম করা বা ঠান্ডা বাতাসের প্রতিক্রিয়ায় লক্ষণগুলোর অতি মাত্রায় বিকাশ ঘটে।
অ্যাজমার ধারাবাহিকতায় গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্ল্যাক্স ডিজিজ বা জিইআরডি, রাইনোসাইনুসাইটিস ও অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপ্নিয়ার মতো ব্যাধিগুলো দেখা দিতে পারে। অধিকাংশ রোগীদের ক্যাভিটি দেখা যায়। এছাড়া এ সময় বিভিন্ন ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধির মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যেরও বিপর্যয় ঘটে।
আরো পড়ুন: রক্তের গ্রুপ: কে কাকে রক্ত দিতে পারবে?
হাঁপানির রেশ ধরে পরবর্তীতে হৃদরোগ ও ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
হাঁপানি প্রতিরোধে করণীয়
অ্যাজমার কোনো প্রতিকার নেই, তাই এই ব্যাধির আক্রমণ এড়াতে এর কারণগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেগুলো থেকে যথাসম্ভব নিজেকে দূরে রাখার মাধ্যমেই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে। এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতাসহ পরিবর্তন আনতে হবে নিয়মিত জীবনধারণে।
১ মাস আগে
এমপক্সের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
২০২২ থেকে ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এমপক্স। এটি ছিল আফ্রিকার বাইরে বিশ্বব্যাপী এমপক্স প্রাদুর্ভাবের প্রথম ঘটনা। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে এর বিস্তৃতি ঘটে কঙ্গো, উগান্ডা, কেনিয়া, রুয়ান্ডা ও বুরুন্ডিতে। এমনকি ইউরোপের দেশ সুইডেনেও ধরা পড়তে শুরু করে এমপক্স আক্রান্ত রোগী। সম্প্রতি এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে এমপক্স আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হয় পাকিস্তান। ফলে এমপক্স নিয়ে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত কোনো এমপক্স রোগী ধরা না পড়লেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলুন, এমপক্স সংক্রমণের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসার উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
এমপক্স সংক্রমণের কারণ
এই রোগের সৃষ্টি হয় অর্থোপক্স ভাইরাস এমপক্সের মাধ্যমে, যার পূর্ব নাম ‘মাঙ্কিপক্স ভাইরাস’। এই জুনোটিক ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে থাকে মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণীর মাধ্যমে। ভেরিওলা ভাইরাস, (যেটি মূলত গুটিবসন্ত সৃষ্টি করে), কাউপক্স এবং ভ্যাক্সিনিয়া ভাইরাসের সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভাইরাসটি ক্ল্যাড-১ এবং ক্ল্যাড-২ নামে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত। ক্ল্যাড ২-এর রয়েছে আরও দুটি সাব-ক্যাটাগরি: ক্ল্যাড-২এ ও ক্ল্যাড-২বি।
এর সংক্রমণ শরীরের ত্বক বা শরীর থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন তরলের সরাসরি সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ঘটে থাকে। অপরদিকে, সংক্রমিত পশুর সঙ্গে সংঘর্ষ কিংবা কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে পশু থেকে পশুতে ছড়িয়ে পড়ে। আর পশু থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটে আক্রান্ত পশুর কামড় অথবা আঁচড় বা পশু শিকার, চামড়া কাটা বা রান্নার মতো কার্যকলাপের সময়। এমপক্স ভাইরাস ত্বক, থুথু, লালা, নাকের পানি ও যৌনাঙ্গের শ্লৈষ্মিক পৃষ্ঠের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। অর্থাৎ কথা বলা, কাশি বা হাঁচির মাধ্যমেও এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আরো পড়ুন: অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
এমপক্সের লক্ষণ
একদম শুরুতে জ্বর, পেশিতে ও গলায় ব্যথা থাকে। তারপর ধীরে ধীরে চুলকানি বা তীব্র ব্যথাসহ ফুসকুড়ি, মাথাব্যথা, লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ক্লান্তি যোগ হয়। অবশ্য সবার ক্ষেত্রে উপসর্গের এতটা বিস্তৃতি নাও থাকতে পারে। আপাতদৃষ্টে ফুসকুড়িগুলোর কারণে সাধারণ হাম বা চিকেনপক্স মনে হতে পারে। কিন্তু লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া বিশেষত অন্যান্য পক্স থেকে এমপক্স কে আলাদা করে।
অধিকাংশ লক্ষণ সংক্রমণের ৪ থেকে ১১ দিন পরে দৃষ্টিগোচর হওয়া শুরু হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রথম দিনেই গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
অনেক ছোট ছোট ক্ষতের সমন্বয়ে গঠিত হয় ফুসকুড়িগুলো, যা হাতের উভয় পৃষ্ঠ, মুখ, গলা, যৌনাঙ্গ বা মলদ্বারে প্রদর্শিত হয়ে থাকে। শুরুটা হয় ছোট ছোট সমান দাগ দিয়ে। অতঃপর ফুলেফেঁপে ওঠার আগ মুহূর্তে ভেতরে তরল পুঁজে পূর্ণ হয়ে যায়। পরে তা ফেটে গিয়ে প্রায় ১০ দিন চামড়ায় থেকে যায়। বিরল ক্ষেত্রে ক্ষতগুলোতে ইনফেকশন হয়ে চামড়ায় নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, যা সেরে উঠতে যথেষ্ট সময় লাগতে পারে।
আরো পড়ুন: সার্কেডিয়ান রিদম বা দেহ ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
গোটা শরীর জুড়ে এই ক্ষতগুলো যে শুধু একসঙ্গে অনেকগুলো দেখা দেয় তা নয়। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে শুধু একটি ঘা থাকে। কারো কারো ক্ষেত্রে এমনকি কোনো লক্ষণ নাও দেখাতে পারে। লক্ষণগুলো সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। তবে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার রোগীদের ক্ষেত্রে তা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
চরম পর্যায়ে সেকেন্ডারি ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, সেপসিস, এনসেফালাইটিস ও দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে যায়। দুর্বল রোগীদের ক্ষেত্রে এই রোগ আরও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। গর্ভাবস্থায় এই ভাইরাস সংক্রমণ মৃত সন্তান প্রসব বা অন্যান্য জটিলতার কারণ হতে পারে।
এমপক্স প্রতিরোধের উপায়
এই রোগের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে কোনো ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি, তবে গুটিবসন্তের টিকা অনেকাংশে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড ও কানাডা জুড়ে শুধু একটি টিকা অনুমোদিত হয়েছে। এর নাম এমভিএ-বিএন, যার পূর্ণ রূপ মডিফাইড ভ্যাক্সিনিয়া আঙ্কারা-বাভ্যারিয়ান নর্ডিক। ভ্যাকসিনটি তৈরি হয়েছে অর্থোপক্সভাইরাসের সম গোত্রভুক্ত ভ্যাক্সিনিয়া ভাইরাস থেকে। এটি সাধারণত ২৮ দিনের ব্যবধানে দুটি মাত্রায় দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন: দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-১৯ এ ভুগছেন বিশ্বের প্রায় ৪০ কোটি মানুষ: গবেষণা
বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনে আরও ৩টি ভ্যাকসিন রয়েছে। এগুলো হলো- জাপানের এলসি-১৬, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার এসিএএম-২০০০ এবং রাশিয়ার অর্থোপক্সভ্যাক।
তবে বর্তমানে ডব্লিউএইচও অনুসারে, এখনও বিশ্বব্যাপী গণ টিকাদান কর্মসূচির সময় আসেনি। যারা ঝুঁকিতে আছেন বা ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন, শুধু তাদের এসব টিকা দেওয়া যেতে পারে।
তাছাড়া এগুলোর সবই মূলত প্রস্তুত করা হয়েছিল গুটিবসন্ত ও অর্থোপক্স গোত্রের অন্যান্য ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে। একক ভাবে এমপক্সের জন্য ভ্যাকসিন তৈরি এখনও গবেষণাধীন।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন বিএনটি-১৬৬ বিশেষভাবে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়। এটি নিয়ে বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এখানে উল্লেখ্য যে, কোভিড-১৯-এর জন্য বানানো ভ্যাকসিনের মতো এটিও একটি এমআরএনএ ভ্যাকসিন।
আরো পড়ুন: মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায়
উপরুন্ত, সুনির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের অনুপস্থিতিতে এমপক্স ভাইরাসের সংক্রমণ বা বিস্তার রোধ করতে ঘরোয়াভাবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। সেগুলো হলো-
- ফুসকুড়ি আছে এমন লোকেদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলা।
- সংক্রামিত প্রাণী ও তার ব্যবহৃত কিংবা তার সংস্পর্শে থাকা কাপড়, চাদর, কম্বল বা অন্যান্য উপকরণগুলো থেকে দূরে থাকা।
- সরাসরি এমপক্স আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা অবস্থানে রাখা।
- সংক্রামিত ব্যক্তি বা প্রাণীর সঙ্গে যোগাযোগের পরে সাবান ও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া। বিশেষ করে খাওয়ার আগে বা মুখ স্পর্শ করার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পরে। সাবান ও পানি পাওয়া না গেলে বিকল্প হিসেবে অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
- অর্থোপক্স ভাইরাস বহন করতে পারে এমন সব গৃহস্থালি বা পোষা প্রাণী এড়িয়ে চলা।
আরো পড়ুন: নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি যে কারণে
এমপক্স রোগের চিকিৎসা
অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেওয়ার ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের প্রভাব ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করে। এর মধ্যে রোগের ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে রক্ষা পেতে সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে এমপক্সের গুরুতর অবস্থায় বেশ ভালো কাজ দেওয়ায় প্রতিষেধক হিসেবে টেকোভিরিমাট ও সিডোফোভির প্রেস্ক্রাইব করা হয়। এছাড়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিনিয়া ইমিউন গ্লোবুলিন দেওয়া হতে পারে। মূলত গুটিবসন্তের মতো অন্যান্য ভাইরাসজনিত সংক্রমণের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ওষুধের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
প্রাথমিক স্তরে উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্য সবার থেকে আলাদা রাখা উচিত। এ সময় তাকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি ও ভালো খাবার দেয়ার পাশাপাশি তাকে দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখতে হবে।
এই রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের মধ্যে রয়েছে শিশু, গর্ভবতী নারী, বয়স্কসহ দুর্বল রোগ প্রতিরোধ সম্পন্ন ব্যক্তিরা। এদের যথা শিগগিরই হাসপাতালে ভর্তি করে বিশেষ পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
আরো পড়ুন: বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার উপায়
এমপক্স নির্ণয়ের জন্য প্রথমেই একটি উন্মুক্ত ক্ষত থেকে টিস্যুর নমুনা নেওয়া হয়। এটি পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) পরীক্ষার (জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্টিং) জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। এছাড়া রোগীর সর্বশেষ রোগ প্রতিরোধ অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য তার রক্ত পরীক্ষাও করা হয়।
শেষাংশ
সাধারণ ক্ষেত্রে ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে এমপক্স-এর লক্ষণগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তবে ঝুঁকিপূর্ণ লোকদের জন্য এর জটিলতাগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই দেশে প্রাদুর্ভাবে পরিণত হওয়ার আগেই মাঙ্কি পক্সের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্বন্ধে জেনে থাকা জরুরি। সক্রমণ এড়াতে যে ব্যক্তি, প্রাণী ও বস্তুর এমপক্স আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সে সবকিছু থেকে দূরে থাকতে হবে। সুনির্দিষ্ট ভ্যাকসিন এখনও গবেষণাধীন থাকায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক। সম্মিলিতভাবে সতর্ক থাকা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পথ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা যাবে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি।
আরো পড়ুন: মাঙ্কি পক্স নিয়ে বিশ্ব জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি
১ মাস আগে
মাঙ্কি পক্স নিয়ে বিশ্ব জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি
বিশ্বজুড়ে মাঙ্কি পক্স নিয়ে উদ্বেগের মাঝেই এটি নিয়ে বিশ্ব জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
বুধবার (১৪ আগস্ট) জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘আজ জরুরি কমিটির বৈঠকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, এই অবস্থা বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের ওপর উদ্বেগের পরিস্থিতি (পিএইচইআইসি) সৃষ্টি করেছে। আমি সেই পরামর্শ গ্রহণ করে মাঙ্কি পক্স নিয়ে বিশ্ব জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছি।’
টেড্রোস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য আইন অনুযায়ী পিএইচইআইসি হচ্ছে সর্বোচ্চ মাত্রার সতর্কতা। এটি এমন একটি বিষয় যাতে আমাদের সবার উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। আফ্রিকায় এবং এই মহাদেশের বাইরেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই উদ্বেগজনক।’
ডব্লিউএইচওর তথ্যানুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত মাঙ্কি পক্সে আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের মোট সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে, ১৪ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এই রোগে এখন পর্যন্ত ৫২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মাঙ্কি পক্সের চলমান প্রাদুর্ভাবকে আফ্রিকা মহাদেশের জন্য জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে আফ্রিকা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (আফ্রিকা সিডিসি)। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও একই ঘোষণা এল।
আরও পড়ুন: দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-১৯ এ ভুগছেন বিশ্বের প্রায় ৪০ কোটি মানুষ: গবেষণা
১ মাস আগে
দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-১৯ এ ভুগছেন বিশ্বের প্রায় ৪০ কোটি মানুষ: গবেষণা
বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০ কোটি মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) নেচার মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, স্বাস্থ্যসেবা ও কাজে ফিরতে অক্ষম (কোভিড) রোগীদের পেছনে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ১ শতাংশ।
কোভিড-১৯ আবির্ভূত হওয়ার চার বছর পর বিশ্বজুড়ে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের সারসংক্ষেপ জানানোর প্রচেষ্টা থেকেই গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল এপিডেমিওলজিস্ট এবং ভিএ সেন্ট লুইস হেলথ কেয়ার সিস্টেমের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান জিয়াদ আল-আলী বলেন, গবেষণাটির লক্ষ্য নীতি নির্ধারণ ও এ বিষয়ে গবেষণা এগিয়ে নিতে একটি রোড ম্যাপ সরবরাহ করা।
আরও পড়ুন: নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১ সংক্রমণের অর্ধেকই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে
আল-আলী আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-১৯ গবেষক এবং রোগীদের নিয়ে গবেষণা করা তিন গবেষকের সঙ্গে গবেষণাপত্রটি লিখেছেন।
গবেষণার অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-১৯ এ ভুগছেন; অনেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি এবং এর চিকিৎসা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে রয়ে গেছে।
২ মাস আগে
বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার উপায়
প্রতিবারের মতো এ বছরের বর্ষা মৌসুমেও বন্যাগ্রস্ত অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি সামলাতে হচ্ছে দেশের উত্তর-পূর্বের বিভাগ সিলেটের অধিবাসীদের। বন্যার পানি ও শিল্পকারখানার বর্জ্যের সঙ্গে মিশ্রিত পানি সৃষ্টি করছে অস্বাস্থ্যকর বিপজ্জনক পরিবেশ। ফলে শঙ্কা বাড়ছে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড ও হেপাটাইটিস এ-এর মতো রোগের সংক্রমণের। ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রগুলোকে। এমন ক্রমবর্ধমান সঙ্কটে প্রতিটি মহল্লা বা পাড়া, পরিবার, এমনকি ব্যক্তি পর্যায় থেকেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলুন, বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ থেকে দূরে থাকার উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে করণীয়
পানি ফুটিয়ে নেওয়া
পানি থেকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও অন্যান্য পরজীবীর মতো ক্ষতিকারক রোগজীবাণু নির্মূল করার সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে পানি ফুটানো। এর জন্য কমপক্ষে এক মিনিট থেকে সর্বোচ্চ তিন মিনিট পর্যন্ত পানি গরম করা উচিৎ। অতঃপর ঠান্ডা করে পান করা সহ প্রয়োজনীয় কাজে এই পানি ব্যবহার করা যাবে। ফুটানোর বিকল্প হিসেবে পানি পরিশোধন ট্যাবলেট বা পানির ফিল্টার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এগুলোর থেকে ফুটানোর মাধ্যমেই সবচেয়ে কার্যকরী ভাবে জীবাণু নির্মূল হয়। সর্বত ভাবে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বন্যার পর ডায়রিয়া বা কলেরার সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা যায়।
আরও পড়ুন: বন্যার সময় খাবার পানি পরিশোধিত করার উপায়
বন্যার পানি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা
পয়ঃনিষ্কাশন, রাসায়নিক পদার্থ এবং অন্যান্য আবর্জনার কারণে বন্যার পানি দূষিত হয়। প্লাবিত রাস্তাঘাটে যাতায়াতের সময় এবং ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়লে হরহামেশাই মানুষ এই দূষিত পানির সংস্পর্শে আসে। আর এ থেকেই তৈরি হয় নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি। বন্যার পানিতে থাকে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু, যা বিভিন্ন ভাবে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই সংস্পর্শ যতটা সম্ভব কমানোর জন্য পানিরোধী বুট এবং গ্লাভ্স পরা যেতে পারে। এছাড়া সংস্পর্শের সঙ্গে সঙ্গেই সাবান এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে সংস্পর্শে যাওয়া শরীরের স্থানটি ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই সাবধানতা ত্বকের সংক্রমণের মতো গুরুতর রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে।
ঘরবাড়ির মেঝে জীবাণুমুক্ত করা
অতিরিক্ত বন্যায় দূষিত পানি বাড়ির আঙ্গিনা সহ ঘরের ভেতরে ঢুকে যেয়ে সর্বত্রে রোগজীবাণু ছড়াতে পারে। গ্রামের ঘরবাড়ি এবং শহরের নিচ তলার বারান্দা ও ঘরগুলো এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তাই বাড়ির চারপাশ সহ ঘরের মেঝে, ফার্নিচার, দরজার হাতল এবং পানির কলগুলো জীবাণুমুক্ত করা আবশ্যক। এর জন্য এক গ্যালন পানিতে এক কাপ পরিমাণ ব্লিচ মিশিয়ে তৈরিকৃত দ্রবণ দিয়ে স্থানগুলো মুছতে হবে। পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলার আগে দ্রবণটিকে কমপক্ষে ১০ মিনিটের জন্য ভালভাবে মিশতে দিতে হবে। এ সময় হাতে ডিস্পোজেবল গ্লাভ্স পরতে হবে, আর ধোয়া-মোছার সময় জানালা খুলে দিয়ে ঘরে বায়ুচলাচল নিশ্চিত করতে হবে।
শুকনো খাবার, পানি ও চিকিৎসা সামগ্রী সংরক্ষণ
ভারী বর্ষণে এবং পরবর্তীতে বন্যার সময় দীর্ঘ সময় যাবৎ পানিবন্দি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় তাৎক্ষণিক ভাবে খাদ্যসামগ্রী, খাবার পানি এবং ঔষধপত্র সংগ্রহের উপায় থাকে না। তাই আগে থেকেই মুখবন্ধ পানিরোধী পাত্রে জরুরি খাবার এবং খাবার পানি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। টিনজাত এবং শুকনো খাবারের মতো অ-পচনশীল খাবার বা যেগুলোর জন্য খুব বেশি রান্নার প্রয়োজন হয় না এমন খাবার জমিয়ে রাখতে হবে। পানীয় এবং স্যানিটেশনের প্রয়োজনে পর্যাপ্ত পানি সঞ্চয় করতে হবে। সঞ্চয়ের তালিকায় প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দরকারি প্রতিটি ঔষধও রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বেই যেসব খাবার সংরক্ষণ করা জরুরি
বর্জ্য অপসারণ
নর্দমা এবং বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সামগ্রী বা ধ্বংসস্তূপের ময়লা-আবর্জনার যথাযথ নিষ্পত্তি দরকার। বর্জ্যের জন্য নির্দিষ্ট বিন ব্যবহার এবং তা সময়মতো অপসারণ করা হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। ধোঁয়া ছড়াতে পারে এমন পোড়া উপকরণগুলোর নিষ্পত্তির সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে। সিটি করপোরেশনের নিয়োজিত আবর্জনা সংগ্রহকারী কর্মীরা যথাসম্ভব দ্রুত বর্জ্য অপসারণে সক্রিয় থাকছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই বিষয়ে এলাকার সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কেননা অব্যবস্থাপনার শিকার হওয়া বর্জ্য হেপাটাইটিস ই এবং গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়।
বৃষ্টির পানি কাজে লাগানো
বন্যার সময় যখন পানির প্রায় সব কৃত্রিম উৎসগুলো দূষিত হয়ে যায়, তখন বৃষ্টির পানি হতে পারে সব থেকে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। খোলা জায়গায় মুক্ত ভাবে পড়ন্ত বৃষ্টির পানি সরাসরি একটি পরিষ্কার পাত্রে সংগ্রহ করা যায়। যেখানে এই সুযোগ নেই সেখানে পানি সংগ্রহের পর তা একটি পরিষ্কার কাপড়ের মাধ্যমে ফিল্টার করতে হবে। অতঃপর কমপক্ষে এক মিনিট সিদ্ধ করে যাবতীয় রোগজীবাণু মেরে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুন: স্পঞ্জ সিটি: ঢাকা ও অন্যান্য শহরে বন্যা-জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান
৩ মাস আগে
রক্তের গ্রুপ: কে কাকে রক্ত দিতে পারবে?
নিরাপদ রক্তদানের জন্য দাতা-গ্রহীতাসহ রক্তদানের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে যে বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়, তা হচ্ছে রক্তের শ্রেণীবিভাগ। রক্তের ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের মধ্যে রক্তের আদান-প্রদানের সামঞ্জস্যতার ওপর নির্ভর করে জরুরি চিকিৎসার অগ্রীম প্রস্তুতি। সঠিক সময়ে সঠিক রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে বেঁচে যেতে পারে একটি জীবন। আর এই মহৎ উদ্দেশ্যকে সাধুবাদ জানিয়েই প্রতিবছর ১৪ জুন পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। এই উপলক্ষটি নিরাপদ রক্তের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায় এবং উদ্বুদ্ধ করে এই মহান কাজে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে। চলুন, বিভিন্ন ধরনের রক্তের গ্রুপের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের মধ্যকার সামঞ্জস্যতা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা নেওয়া যাক।
বিভিন্ন ধরনের রক্তের গ্রুপ
রক্তের শ্রেণীবিন্যাসের নেপথ্যে রয়েছে রক্তে বিদ্যমান দুটি উপাদান।
১. লোহিত রক্তকণিকার (আরবিসি) পৃষ্ঠে থাকা প্রোটিন অণু, যার নাম অ্যান্টিজেন। অ্যান্টিজেন মুলত 'এ', 'বি', এবং ‘রেসাস (আরএইচ) ডি’ – এই ৩ ধরনের হয়ে থাকে।
২. প্লাজমাতে অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন, যেগুলো অ্যান্টিবডি নামে পরিচিত। অ্যান্টিবডি ‘অ্যান্টি-এ’ এবং ‘অ্যান্টি-বি’ – এই ২ শ্রেণীর হয়ে থাকে।
এই উপাদানগুলো মা-বাবার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তানের দেহে আসে। রক্তের শ্রেণীবিন্যাসের মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত দুটি ব্যবস্থা হচ্ছে- ‘এবিও’ এবং ‘রেসাস (আরএইচ) ফ্যাক্টর’।
আরও পড়ুন: মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায়
এবিও সিস্টেমে রক্তের ধরন ৪ প্রকার- 'এ', 'বি', 'এবি', এবং 'ও'। রক্তে অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতির উপর নির্ভর করে এগুলোর ভিন্নতা হয়।
আরএইচ সিস্টেমে রক্তে 'আরএইচডি'র উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে এবিওর প্রত্যেকটি গ্রুপ পজিটিভ বা নেগেটিভ হয়ে থাকে। এভাবে আরএইচ সিস্টেম অনুসারে গ্রুপ হয় মোট ৮টি। চলুন, এবার এই গ্রুপগুলোর বিস্তারিত জানা যাক।
এ+
লোহিত রক্তকণিকার পৃষ্ঠে অ্যান্টিজেন 'এ' এবং 'আরএইচডি’র উপস্থিতির মাধ্যমে গ্রুপ 'এ+' চিহ্নিত করা হয়। এই গ্রুপের রক্তের প্লাজমাতে অ্যান্টি-বি অ্যান্টিবডি থাকে। এই অ্যান্টিবডিগুলো 'বি' অ্যান্টিজেনযুক্ত লোহিত রক্ত কোষকে আক্রমণ করে। 'আরএইচডি'র উপস্থিতির অর্থ হলো এই রক্ত 'এ-' রক্তের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থা এবং রক্তদানের সময় এই দুই মেরুর রক্ত শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।
এ-
এই গ্রুপেও লোহিত রক্তকণিকায় অ্যান্টিজেন 'এ' উপস্থিত থাকে। তবে 'আরএইচডি'র অভাবে গ্রুপটি 'আরএইচডি-' হিসেবে প্রতীয়মান হয়। 'এ+' রক্তের মতো 'এ-' রক্তের প্লাজমাতেও অ্যান্টি-বি অ্যান্টিবডি থাকে। ফলে এটি 'বি' গ্রুপের রক্তের বিরুদ্ধে নেতিবাচক অবস্থান নেয়। অন্যদিকে, 'আরএইচডি'র অনুপস্থিতি গর্ভাবস্থায় আরএইচ অসামঞ্জস্যতার মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে একজন ‘আরএইচডি-’ মায়ের রক্ত একটি ‘আরএইচডি+’ ভ্রূণের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এতে করে নবজাতকের হেমোলাইটিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
বি+
বি অ্যান্টিজেন এবং 'আরএইচডি' সমন্বিত লোহিত রক্তকণিকার পৃষ্ঠ রক্তকে 'বি+' গ্রুপ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। এই ধরনের রক্তের প্লাজমাতে থাকে অ্যান্টি-এ অ্যান্টিবডি, যা অ্যান্টিজেন 'এ' সমৃদ্ধ লোহিত রক্তকণিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। 'বি+' রক্তের 'আরএইচডি' 'বি-' রক্তের তুলনায় ভিন্ন প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করতে পারে।
বি-
এই গ্রুপটি রক্তের এমন ধরনকে প্রতিনিধিত্ব করে, যার লোহিত রক্ত কণিকায় অ্যান্টিজেন 'বি' থাকে কিন্তু 'আরএইচডি' থাকে না। এই রক্তের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এর প্লাজমায় অ্যান্টি-এ অ্যান্টিবডি বিদ্যমান। আরএইচ ফ্যাক্টর না থাকার ফলে 'বি-' রক্তের অধিকারী ব্যক্তিরা রক্ত সঞ্চালন এবং গর্ভাবস্থায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। কেননা ‘আরএইচডি+’ ভ্রূণ বহনকারী একজন 'আরএইচডি-' মায়ের রক্ত আরএইচ ফ্যাক্টরের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে।
ও+
এই গ্রুপের রক্তে লোহিত রক্তকণিকার পৃষ্ঠে 'এ' এবং 'বি' কোনো অ্যান্টিজেনই থাকে না, কিন্তু 'আরএইচডি' থাকে। 'ও+' রক্তের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর প্লাজমায় অ্যান্টি-এ এবং অ্যান্টি-বি দুই অ্যান্টিবডিই থাকে। এতে করে এই রক্ত ‘এ’ এবং 'বি' উভয় অ্যান্টিজেন থাকা লোহিত রক্তকণিকাকে আক্রমণ করে। 'এ' এবং 'বি' অ্যান্টিজেনের অনুপস্থিতির কারণে অন্যান্য রক্তের সঙ্গে এর ব্যাপক সামঞ্জস্যতা রয়েছে।
আরও পড়ুন: সার্কেডিয়ান রিদম বা দেহ ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
ও-
এটি এমন একটি গ্রুপ যার রক্তের লোহিত রক্তকণিকায় অ্যান্টিজেনে 'এ', 'বি', এবং 'আরএইচডি' কোনোটাই থাকে না। 'ও+' এর মতো এই রক্তেও প্লাজমা অ্যান্টি-এ এবং অ্যান্টি-বি অ্যান্টিবডিতে সমৃদ্ধ। এই সমস্ত অ্যান্টিজেনের অনুপস্থিতির কারণে 'ও-' রক্ত সার্বজনীন দাতার গ্রুপ হিসেবে বিবেচিত। এটি অ্যান্টিজেন সংক্রান্ত কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়াই যে কোনো রক্তের রোগীদের দেওয়া যেতে পারে।
এবি+
যে রক্তের লোহিত রক্তকণিকার পৃষ্ঠে অ্যান্টিজেন 'এ' এবং 'বি' এর পাশাপাশি আরএইচ ফ্যাক্টরও থাকে, সে রক্তের গ্রুপের নাম 'এবি+'। এ ধরনের রক্তের প্লাজমায় অ্যান্টি-এ বা অ্যান্টি-বি কোনো অ্যান্টিবডিই থাকে না। এই বৈশিষ্ট্যটি 'এবি+' রক্তকে সার্বজনীন গ্রহীতা গ্রুপ হিসেবে প্রতীয়মান করেছে। 'এ' এবং 'বি' উভয় অ্যান্টিজেন এবং আরএইচ ফ্যাক্টরের উপস্থিতির কারণে রক্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এটি সর্বাঙ্গীনভাবে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ গ্রুপ।
এবি-
লোহিত রক্ত কণিকায় 'আরএইচডি' নেই অথচ 'এ' এবং 'বি' উভয় অ্যান্টিজেনই বিদ্যমান, এমন রক্তকে চিহ্নিত করা হয় 'এবি-' হিসেবে। 'এবি+' এর মতো এই রক্তের প্লাজমাও অ্যান্টি-এ বা অ্যান্টি-বি অ্যান্টিবডি-বিহীন। 'এবি-' রক্তের অধিকারীদের আরএইচ সংবেদনশীলতা রোধ করতে অবশ্যই আরএইচ পজিটিভ রক্ত গ্রহণ থেকে দূরে থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
রক্তের গ্রুপগুলোর মধ্যে কে কাকে রক্ত দিতে পারবে
যে রক্তগুলো পারস্পরিক সহাবস্থানে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, অনাকাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে সেগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরী। চলুন, রক্তের বিভিন্ন গ্রুপগুলোর মধ্যকার রক্ত সঞ্চালনের সামঞ্জস্যতা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
টেবিল: রক্তের বিভিন্ন গ্রুপের সামঞ্জস্যতা সারণী
রক্তের গ্রুপ
গ্রহীতা গ্রুপ
দাতা গ্রুপ
এ+
এ+, এবি+
এ+, এ-, ও+, ও-
এ-
এ+, এ-, এবি+, এবি-
এ-, ও-
বি+
বি+, এবি+
বি+, বি-, ও+, ও-
বি-
বি+, বি-, এবি+, এবি-
বি-, ও-
ও+
এ+, বি+, এবি+, ও+
ও+, ও-
ও-
সব গ্রুপ
ও-
এবি+
এবি+
সব গ্রুপ
এবি-
এবি+, এবি-
এবি-, এ-, বি-, ও-
আরও পড়ুন: নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি যে কারণে
'এ+' গ্রুপের ব্যক্তিরা 'আরএইচডি' নির্বিশেষে 'এ' বা 'ও' গ্রুপ থেকে রক্ত গ্রহণ করতে পারবে, কিন্তু দিতে পারবে শুধুমাত্র 'এ+' এবং 'এবি+' গ্রুপের ব্যক্তিদের। 'এ-' গ্রুপ শুধু 'এ-' এবং 'ও-' গ্রুপ থেকে রক্ত নিতে পারবে, তবে দান করতে পারবে 'আরএইচডি' নির্বিশেষে 'এ' এবং 'এবি' উভয় গ্রুপকে।
'বি+' এর দাতা হিসেবে করতে পারে 'বি+', 'বি-', 'ও+', এবং 'ও-' গ্রুপ। অন্যদিকে গ্রহীতা হিসেবে কাজ করতে পারবে শুধু 'বি+' এবং 'এবি+' গ্রুপ। 'বি-' গ্রুপ 'বি-' এবং 'ও-' গ্রুপের রক্ত নিতে পারবে, আর রক্ত দিতে পারবে 'বি+', 'বি-', 'এবি+', এবং 'এবি-' গ্রুপগুলোকে।
'ও+' রক্তের গ্রহীতারা হলো যেকোনো আরএইচ+ গ্রুপ, তবে দাতা গ্রুপ হলো শুধু 'ও+' এবং 'ও-'। 'ও-' রক্ত গ্রহীতা হিসেবে শুধু 'ও-' রক্ত নিতে পারে, কিন্তু সার্বজনীন দাতা হিসেবে রক্ত দিতে পারে সমস্ত গ্রুপকে। অপরদিকে, সার্বজনীন গ্রহীতা হিসেবে 'এবি+' গ্রুপ সব ধরনের রক্ত গ্রহণ করতে পারে, কিন্তু দাতা হিসেবে শুধু 'এবি+' গ্রুপভুক্ত ব্যক্তিদেরকেই রক্ত দিতে পারে। 'এবি-' রক্তের দাতা গ্রুপ হলো 'এবি-', 'এ-', 'বি-', এবং 'ও-' এবং গ্রহীতা গ্রুপ 'এবি+' এবং 'এবি-'।
আরও পড়ুন: সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
শেষাংশ
সর্বপরি, লোহিত রক্তকণিকায় অ্যান্টিজেন 'এ' এবং 'বি' থাকা এবং না থাকার ভিত্তিতে রক্তের গ্রুপ যথাক্রমে 'এ' এবং 'বি' হিসেবে চিহ্নিত হয়। দুটো অ্যান্টিজেনই থাকলে 'এবি' গ্রুপ এবং দুটোর কোনটিই না থাকলে নির্ধারিত হয় গ্রুপ 'ও' হিসেবে।
পাশাপাশি আরএইচ ফ্যাক্টরের উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতি সংশ্লিষ্ট গ্রুপের সঙ্গে যথাক্রমে পজিটিভ এবং নেগেটিভি মার্ক যুক্ত করে। ৮টি গ্রুপের প্রত্যেকটি নিদেনপক্ষে নিজ গ্রুপের সঙ্গে রক্তের আদান-প্রদান করতে সক্ষম। তন্মধ্যে প্রতিটি ‘আরএইচ+’ গ্রুপকে রক্ত দিতে পারে বিধায় 'ও+' রক্তের চাহিদা থাকে সর্বাধিকা। উপরন্তু, সর্বদাতা গ্রুপ হিসেবে পরিচিত 'ও-' এবং সর্বগ্রহীতা 'এবি+'।
আরও পড়ুন: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
৪ মাস আগে