������������������
সরকার জ্বালানি খাতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে জনগণের টাকা লুটপাট করছে: বিএনপি
আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের টাকা লুটপাটের অস্ত্র হিসেবে জ্বালানি খাতকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান জ্বালানি সংকটের মূল কারণ দুর্নীতি। এটা (জ্বালানি) তাদের (সরকার) জন্য একটি বড় অস্ত্র। তারা দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাটের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে জ্বালানি খাতকে ব্যবহার করছে।’
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘দুর্নীতি জ্বালানি সংকট এর উৎস’- শীর্ষক সেমিনারে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
এই বিএনপি নেতা বলেন, সরকার জ্বালানি খাত ছাড়াও বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টর থেকে জনগণের অর্থ লুটপাট করছে এবং জনগণের জীবন ও জীবিকা ঝুঁকিতে ফেলেছে।
আরও পড়ুন:আ.লীগ সরকার সংবিধানকে আওয়ামী সংবিধানে পরিণত করেছে: মির্জা ফখরুল
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন কীভাবে তারা স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছে, কোভিডের সময় মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করেছে। আপনারা আরও দেখেছেন কিভাবে উত্তরায় একটি গার্ডার পড়ে পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া সারাদেশে সেতু ও সড়কে দুর্ঘটনায় শত শত মানুষ মারা যাচ্ছেন।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা আওয়ামী লীগ সরকারকে বর্গিদের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, তারা (আ.লীগ) এখন বর্গীর ভূমিকা পালন করছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। যিনি ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী ছিলেন।
মূল প্রবন্ধে মোশাররফ হোসেন অর্থনীতিতে তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ক্ষমতাসীন দলের ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাটের কথা তুলে ধরেন।
ফখরুল বলেন, স্বাধীন-সার্বভৌম, উদার ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করলেও গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার হরণকারী বর্তমান সরকার দেশকে পুরোপুরি ‘ফ্যাসিবাদী’ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
আরও পড়ুন:প্রস্তাবিত বাজেট লুটেরা বান্ধব: মির্জা ফখরুল
মির্জা ফখরুল ফের করোনায় আক্রান্ত
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিকালে হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া
স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে আজ (সোমবার) বিকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ইউএনবিকে বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) তার মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী আজ (সোমবার) বিকাল ৩টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাওয়ার কথা রয়েছে।’
৭৭ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।
এর আগে ১০ জুন বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাম ধমনীতে ৯৫ শতাংশ ব্লকের কারণে তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন। ব্লক সরিয়ে সেখানে একটি স্টেন্ট (রিং) বসানো হয়।
চিকিৎসকরা তার রক্তনালীতে আরও দুটি ব্লক খুঁজে পেয়েছেন, তার বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতার কারণে তারা সেগুলো অপসারণ করতে পারেনি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালত পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিলে তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরে একই বছর আরেকটি দুর্নীতির মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
করোনার কারণে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের বাড়িতে থাকার এবং দেশ না ছাড়ার শর্তে সাজা স্থগিত করে একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সাময়িকভাবে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়।
আরও পড়ুন: জনরোষ এড়াতে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান: বিএনপি
খালেদা জিয়াকে সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া
অন্যের সহায়তায় যারা ক্ষমতায় আছে তারা বাংলাদেশকে শাসন করতে পারে না: ফখরুল
শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের ‘সমর্থন’ চাওয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিন্দা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যারা অন্যের দয়ায় ক্ষমতায় থাকে তাদের বাংলাদেশকে শাসন করার অধিকার নেই।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না এবং তারা একের পর এক তার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ যখন নিজেদের স্বাধীন (জাতি) হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে, তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সরকারকে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে সাহায্য করতে বলেন।’
লোডশেডিং, জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও রাজনৈতিক দমননীতির প্রতিবাদে শনিবার ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউটিএবি)-আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে দেয়া বক্তব্যে ফখরুল এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের মন্তব্যে প্রতীয়মান হয়েছে যে আওয়ামী লীগ সরকার ভারত সরকারের মদদে ক্ষমতায় এসেছে।
আরও পড়ুন: ভারতের ‘সমর্থন চাওয়া’ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা চায় বিএনপি
তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি তার অবস্থান থেকে সরে আসেননি এবং তিনি আগে যা বলেছিলেন পুনরায় তা নিশ্চিত করেছেন।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘সুতরাং আমাদের পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, যারা অন্যের দয়ায় ক্ষমতায় থাকে তাদের এই দেশ শাসন করার অধিকার নেই। তাদের এদেশের সরকার চালানোর কোনো অধিকার নেই।’
এর আগে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে ক্ষমতায় থাকতে পারেন তার জন্য তিনি ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ তুলে ফখরুল বলেন, এই সরকার দেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ‘এটাই আমাদের সমস্ত সংকটের মূল কারণ। আওয়ামী লীগ বিনা ভোটে এবং নির্বাচিত না হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে বলপ্রয়োগ করে ক্ষমতায় টিকে আছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশকে ধ্বংসকারী এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে অপসারণ করে সত্যিকারের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করা এখন আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।’
আরও পড়ুন: বাম জোটের হরতালে বিএনপির সমর্থন
জ্বালানি সংকটের পেছনে রয়েছে দুর্নীতি, লুটপাট, আত্মঘাতী চুক্তি: বিএনপি
ভারতের ‘সমর্থন চাওয়া’ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা চায় বিএনপি
আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের 'দয়ায়' ক্ষমতায় আছে কিনা প্রশ্ন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে ভারতের সমর্থন চাওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক সমাবেশ থেকে মন্ত্রীরা বিভিন্ন হুমকি দিয়েছেন। আপনারা যখন এত হুমকি দিচ্ছেন, তখন কেন আপনাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আপনাদের সরকার এবং আপনাদের প্রধানমন্ত্রীকে টিকিয়ে রাখতে ভারতের সাহায্য চাইছেন?’
সোমবার এক আলোচনা সভায় এই বিএনপি নেতা এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল।
আরও পড়ুন: ভারতকে দেশে স্থিতিশীলতা বজায়ে সাহায্য করতে বলেছিলাম: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তাদের দল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা চায় জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সরকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারত সরকারের কাছেও জানতে চাই যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন তার অর্থ কী? তার মানে কি এই সরকার ভারতের সমর্থনে টিকে আছে? মানুষ এর অর্থ জানতে চায়। এটা জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সত্যিই স্বাধীন রাষ্ট্র হবে কি না, বাংলাদেশ সত্যিই একটি গণতান্ত্রিক দেশ হবে কি না এবং বাংলাদেশের জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের জনগণের অধিকার হরণ করেছে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে সংবিধান সংশোধন করে জনগণকে ভোট ও নির্বাচিত করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে ক্ষমতায় থাকতে পারেন তার জন্য তিনি ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভারত নিয়ে মোমেনের বক্তব্যের সঙ্গে আ.লীগের কোনো যোগসূত্র নেই: ওবায়দুল কাদের
বাম জোটের হরতালে বিএনপির সমর্থন
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী, জ্বালানি ও সারের পাশাপাশি পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামী ২৫ আগস্ট সারাদেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের (এলডিএ) ডাকা অর্ধদিবস হরতালে সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
বুধবার রাজধানীর বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানে কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘোষণা দেন।
অস্বাভাবিক জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম লাগামহীন বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বিএনপি বাম দলগুলোর হরতালকে সমর্থন করবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি ন্যায্য দাবি আদায়ে যে কোনো দলের আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি।’
এর আগে ১৬ আগস্ট বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর জোট এলডিএ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, জ্বালানি ও সারের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ২৫ আগস্ট দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতাল ডাকে।
গত ৫ আগস্ট সরকার ডিজেল, অকটেন ও পেট্রোলের দাম যথাক্রমে ৪২.৫ শতাংশ, ৫১.৭ শতাংশ এবং ৫১ শতাংশ বাড়িয়েছে।
বর্তমানে ডিজেল প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, অকটেন প্রতি লিটার ১৩৫ টাকা ও পেট্রোল প্রতি লিটার ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতি এবং দীর্ঘদিন ধরে লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে গত ৯ আগস্ট বিএনপি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে আজ বুধবার এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি। আগামী ১৯ আগস্ট রাজধানীতে জ্বালানি খাত নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করবে দলটি।
এছাড়া ২২ আগস্ট থেকে মহানগর ও তাদের সকল ওয়ার্ড, জেলা ও উপজেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
জ্বালানি সংকটের পেছনে রয়েছে দুর্নীতি, লুটপাট, আত্মঘাতী চুক্তি: বিএনপি
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বর্তমান সংকটের জন্য সরকারের ‘ব্যাপক দুর্নীতি, আত্মঘাতী চুক্তি এবং ভ্রান্ত পরিকল্পনা’কে দায়ী করেছে বিএনপি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি ও ব্যাপক লুটপাটের মূল্য এখন সাধারণ মানুষকে দিতে হচ্ছে। দুই-তিনজনের জন্য লোডশেডিং। শহরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এবং গ্রামাঞ্চলে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা বিদুৎ থাকছে না। জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। তিনি সম্মেলনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব কালো আইন ও বিধিবিধান বাতিল, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের চুক্তি বাতিল এবং অনুসন্ধানসহ ১২ দফা পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তাদের দল ক্ষমতায় এলে বঙ্গোপসাগর থেকে গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য খনিজ সংগ্রহ করবে বলেও তিনি জানান।
ফখরুল বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যখন মানুষকে ভীষণভাবে আঘাত করছে, তখন লোডশেডিং সেই কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছে। মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। কারণ তাদের পিঠ দেয়ালের ঠেকে গেছে।’
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি সব ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট এবং পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলায় ব্যর্থতার দায়ভার কাঁধে তুলে সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান।
অন্যথায়, তাদের দল সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন এই বিএনপি নেতা।
ফখরুল বলেন, ১৯টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট অপ্রয়োজনীয়ভাবে এখনও চালু রয়েছে, যদিও সেগুলো চালু হওয়ার ২/৩ বছর পর বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও ক্যাপাসিটি চার্জে মোটা অংকের টাকা পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘সরকারকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াই ক্যাপাসিটি চার্জে ৯০ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছে। ক্যাপাসিটি চার্জ অযৌক্তিক, অনৈতিক এবং জনস্বার্থের পরিপন্থী। এটাও একটা অপরাধ।’
তিনি বলেন, দেশের মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাত্র ৪৩ শতাংশ এখন ব্যবহার হচ্ছে। বাকি ৫৭ শতাংশ নিষ্ক্রিয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াই ভাড়া হিসেবে টাকা পাচ্ছে।
ফখরুল বলেন, অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যে আরও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে যা কেবল নিষ্ক্রিয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচ আরও বাড়িয়ে দেবে।
ফখরুল বলেন, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হচ্ছে। ‘বর্তমানে ভারত থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। এর জন্য, গত তিন অর্থ বছরে প্রায় পাঁচ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ভারতীয় আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ‘বাংলাদেশের প্রায় ৬০ শতাংশ ওভার ক্যাপাসিটি থাকা অবস্থায় ভারত থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’
বিএনপি নেতা বলেন, এই বিদ্যুতের আমদানির প্রায় ৪০ শতাংশ যায় ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে। ‘বাংলাদেশকে ২৫ বছরে আদানি গ্রুপকে এক লাখ কোটি টাকার বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে, যা তিনটি পদ্মা সেতু, নয়টি কর্ণফুলী টানেল বা দুটি মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য যথেষ্ট।’
তিনি বলেন, আদানি গ্রুপকে তিন বছরে মোট ভাড়া দেয়া হয়েছে ৫৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতিসহ মোট ব্যয় ৩০ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।
সরকার গ্যাস অনুসন্ধানের সক্ষমতা না বাড়িয়ে আইপিপি’র মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জনগণের ওপর অন্যায়ভাবে বড় বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।
আরও পড়ুন: এটা জনগণের সঙ্গে তামাশা, মোমেনের মন্তব্য নিয়ে বিএনপি
তিনি বলেন, ‘সরকার গত দশ বছরে অফ-শোর গ্যাস অনুসন্ধানের সম্ভাবনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করেনি।’
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, তাদের দল ক্ষমতায় ফিরলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট সমাধান করবে। ‘আমরা কুইক এনহ্যান্সমেন্ট অব ইলেক্ট্রিসিটি অ্যান্ড এনার্জি সাপ্লাই (স্পেশাল প্রভিশন) অ্যাক্ট এবং কুইক রেন্টাল কোম্পানির সঙ্গে সমস্ত চুক্তিসহ সমস্ত কালো আইন বাতিল করব৷ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ স্বচ্ছ প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে করা হবে।’
তিনি বলেন, তাদের দল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতেও পদক্ষেপ নেবে।
এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে জানান বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন এবং বিতরণ লাইনগুলি জরুরিভাবে স্থাপন করা হবে।’
ফখরুল বলেন, তারা বাপেক্স এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্থানীয় গ্যাস ও খনিজ অনুসন্ধানে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি: নয়াপল্টনে চলছে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ
এটা জনগণের সঙ্গে তামাশা, মোমেনের মন্তব্য নিয়ে বিএনপি
বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ সুখে আছে, বেহেস্তে আছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের এমন উক্তি জনগণের সঙ্গে তামাশা বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশের মানুষ যখন প্রতি মুহূর্তে ভোগান্তি পোহাচ্ছে, কষ্ট করছে, সেই সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, (মানুষ) বেহেশতে আছে, এটা হাস্যকর।’
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগেও এমন কিছু হাস্যকর মন্তব্য করেছেন। কিন্তু জনগণের সঙ্গে এরকম পরিহাস করার কোনো অধিকার উনার নেই।’
তিনি বলেন, আমি দুঃখিত ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথা বলছি। ইদানীং উনার (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) চেহারার মধ্যে যেটা ফুটে উঠেছে…ক্ষিপ্ত হয়েছেন; বেশিরভাগ মন্ত্রীদের যেটা হয়েছে…প্রচুর লুটপাট হচ্ছে। সেই লুটপাটের কারণে তারা জনগণের সঙ্গে পরিহাস, তামাশা শুরু করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সিলেটে সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ব মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের মানুষ অন্য অনেক দেশের তুলনায় সুখে আছে, বেহেশতে আছে।
পড়ুন: বোয়ালখালীতে ছাত্র ইউনিয়নের মানববন্ধনে ছাত্রলীগের হামলা, আহত ১০
জ্বালানি খাতের দুর্নীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের আহ্বান জিএম কাদেরের
জনতার ঢেউয়ে সরকার ভেসে যাবে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী শাসক আওয়ামী লীগ সরকার জনরোষের সুনামিতে ভেসে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ জেগে ওঠায় তাদের (সরকারের) পতন অনিবার্য। রাজপথে জনতার যে ঢেউ উঠবে সেই ঢেউয়ের সুনামিতে এই ফ্যাসিবাদী ও দানবীয় আওয়ামী লীগ সরকার ভেসে চলে যাবে।’
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সংকট, পুলিশের গুলিতে রাজনৈতিক নেতার মৃত্যু এবং বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনগণকে সংগঠিত করার জন্য তিনি বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, ‘তারা (সরকার) বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আত্মাকে ধ্বংস করেছে বলে জাতি এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেই আত্মাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। এই সরকারকে সরাতে আমাদের রাজপথ দখল করতে হবে।’
তিনি বলেন, নতুন করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ এখন তাদের সংসার চালাতে চরমভাবে হিমশিম খাচ্ছে।
আরও পড়ুন: জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি: বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে ‘বিশাল শোডাউনের’ প্রস্তুতি বিএনপির
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের অবস্থা কী তা এখন বলার দরকার নেই। কত ভাড়া বাড়ানো হয়েছে তা রাস্তায় বাস যাত্রীদের জিজ্ঞাসা করুন। রিকশাচালক, কৃষক ও শিক্ষকসহ সকল মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে।’
এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, মধ্যবিত্ত মানুষ, যারা তাদের দুঃখ প্রকাশ করতে পারে না এবং পণ্যের অতিরিক্ত দাম বহন করতে পারে না, তারা জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি শিকার।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশের চাপের কারণে সরকার এখন বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল ও প্ল্যাটফর্মকে কোনো ঝামেলা ছাড়াই সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিচ্ছে। ‘তারা এখন একটি গণতান্ত্রিক এবং বিনয়ী দল হওয়ার ভান করছে। এটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রতারণা তাদের চরিত্রের মধ্যে গেঁথে আছে।’
সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যাবে না: ফখরুল
ফখরুল আরও বলেন, ‘ব্যাপক লুণ্ঠনের কারণে ব্যাংকগুলো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও লুট হয়েছে।’
তিনি বলেন, সরকার কিছুদিন আগে বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পরিণত করার স্বপ্ন দেখছিল, কিন্তু ডলারের রিজার্ভ কমে যাওয়ায় এখন ঋণ চাইছে। ‘তারা আমাদের সম্পদ চুরি ও ছিনতাই করেছে এবং বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৮২৭ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পাচার হচ্ছে।’
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করতে সরকারকে পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান ফখরুল।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ফলাফল কারচুপি করে ক্ষমতায় আঁকড়ে ধরতে চাইছে। ‘ইভিএম প্রতারণার হাতিয়ার। ক্ষমতায় বসতে আওয়ামী লীগের কাছে ইভিএম ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। ইভিএমের মাধ্যমে ধানের শীষে ভোট দিলে ভোট গণনা হবে নৌকায়। তাই তারা ইভিএম ব্যবহার করতে চায়।’
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র মঞ্চকে স্বাগত জানাল বিএনপি
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি: নয়াপল্টনে চলছে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ সংকটের প্রতিবাদে রাজধানীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির বিশাল সমাবেশ চলছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১টা ৫০ মিনিটে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর শাখার আয়োজনে সমাবেশ শুরু হয়।
সকাল থেকেই দল ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হয়ে সড়কের একপাশ অবরোধ করে।
বিজয়নগর ক্রসিং থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত রাস্তার অপর পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। এতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির বিভিন্ন সিনিয়র নেতা সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন।
এর আগে গত সোমবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে পরিবহন ভাড়া এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সমাবেশসহ দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
চলমান লোডশেডিং এবং ভোলায় পুলিশের হাতে দলটির সহযোগী সংগঠনের দুই নেতা মৃত্যুর প্রতিবাদ করাও এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য।
এছাড়া আগামীকাল শুক্রবার সারাদেশে দলের সকল মহানগর ও জেলা ইউনিট প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করবে।
সরকার গত শুক্রবার রাতে ডিজেল, অকটেন এবং পেট্রোলের দাম যথাক্রমে ৪২.৫ শতাংশ, ৫১.৭ শতাংশ এবং ৫১ শতাংশ বাড়িয়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও পেট্রোল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাকর্মীরা দুই সপ্তাহ ধরে সারাদেশে বিক্ষোভ করছে এবং বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে।
গত ৩১ মে ভোলায় লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে করা বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনসমূহের এক মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়, এতে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং আরও অনেকে গুরুতর আহত হন।
পরে আহতদের মধ্যে একজন ভোলা জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলম রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি: বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে ‘বিশাল শোডাউনের’ প্রস্তুতি বিএনপির
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ সংকটের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে জনসভার মাধ্যমে ‘বিশাল শোডাউন’ করার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি।
আন্দোলনের বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলকে শক্তিশালী বার্তা দিতে দলটির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর ইউনিট এরই মধ্যে রাজধানীর সব ওয়ার্ড থেকে জনসভায় ব্যাপক জনসমাগম নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
বুধবার ইউএনবিকে দলটির শীর্ষ নেতারা এসব কথা জানিয়েছেন।
এদিন দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এতে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যৈষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দেবেন।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র মঞ্চকে স্বাগত জানাল বিএনপি
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, জনগণ যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দাম মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে তখন সরকার জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি করেছে। তারা সরকারের এই অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সমাবেশে বিশাল জনসমাগম প্রত্যাশা করছেন।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানা থেকে আমাদের দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেবেন।’
সালাম জানান, নগরবাসী যারা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়, তারাও সমাবেশে অংশ নেবেন বলে তারা আশাবাদী।
তিনি বলেন, সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সমাবেশকে ব্যাপক সফল করতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
সমাবেশের জন্য পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছে কি না জানতে চাইলে সালাম বলেন, তারা বিষয়টি পুলিশ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, বৃহস্পতিবার নয়াপল্টন জনসমুদ্রের সাক্ষী হবে। ‘এটি একটি স্মরণীয় সমাবেশ হবে কারণ আমরা এর জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছি।’
তারা শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমাবেশ করবে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা সমাবেশের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে আমাদের শক্তি সম্পর্কে বার্তা দেব এবং অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানাব।’
এর আগে সোমবার জ্বালানি তেলের সর্বশেষ মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন ভাড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারের প্রতিবাদ সমাবেশসহ দুইদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।