বায়ু, শব্দ ও পরিবেশ দূষণ হয়ে এলাকার মানুষ চরম অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্য দিয়ে বসবাস করছেন। যার ফলে ওই এলাকায় শিশু বৃদ্ধসহ সকল মানুষ শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, কাশি, চর্মরোগসহ বিভিন্ন প্রকার রোগে ভুগছে।
এসব অভিযোগের ফলে পরিবেশ অধিদপ্তর ও খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) মিল মালিকদের নোটিশ পাঠিয়েছে।
দৌলতখান রোড এলাকার বাসিন্দা ও সমাজসেবক ইঞ্জিনিয়ার শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, মিলের ধূলা ও শব্দের কারণে এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। চারতলা বিল্ডিং পর্যন্ত জানালা ও ভেন্টিলেটার দিয়ে ধূলা ঘরে ঢুকে। শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। এ অঞ্চলের বসবাসরত অসুস্থরা চিকিৎসকের কাছে গেলে কারণ হিসেবে এলাকার ধূলা ও শব্দ দূষণকে দায়ী করছে।
এ বিষয়ে এলাকার তিন শতাধিক বাসিন্দার গণস্বাক্ষর সম্বলিত দরখাস্ত পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি মেয়রসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান না হয়ে নতুন করে ওই এলাকায় আরও কল কারখানা গড়ে উঠছে বলে জানান এলাকার যুবক মিজানুর রহমান মিল্টন।
এলাকার ব্যবসায়ী মহিদুল ইসলাম জানান, এই এলাকা থেকে মিলগুলো অপসারণ করে অনাবাসিক এলাকায় স্থানান্তর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
এলাকাবাসী জানান, সকলের চলাচলের জন্য তৈরি দৌলতখান রোডটি ৩ টন ওজন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন অপ্রশস্ত সড়ক। তা সত্ত্বেও মিলের কারণে প্রতিনিয়ত ৩০ টন ওজনের মালবাহী ট্রাক অহরহ এই সড়কে চলাচল করছে। ফলে সড়ক দ্রুত নষ্ট ও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ভারি যানবাহন প্রবেশ করায় এলাকার কবরস্থানে বাউন্ডারি ওয়াল ও গেট হেলে পড়েছে, যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। এলাকায় যাতে ভারি যানবাহন ঢুকতে না পারে এ জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরের নিকট বারপোস্ট স্থাপনের আবেদন করা হয়েছে। তবে তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
স্থানীয় মুহসিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালটির ৫০ গজ দূরে অবস্থিত চিড়ার মিল। এতে করে পচা পানির দুর্গন্ধে এবং চুলার ছাইয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নোটিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করে মিল মালিক সমিতির সভাপতি এস এম লুৎফর কবির বনি বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কেডিএ আমাদেরকে নোটিশ দিয়েছে। ৬ মার্চের মধ্যে আমরা নোটিশের জবাব দিবো। ভারি মাল বোঝাই ট্রাক যাতে সড়কে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল করা হবে। একই সাথে ধূলাবালি রোধে আধুনিক ডাস্ট ফিল্টার সংযোজন করা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনার সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকার অধিকাংশ মিলের কোনো ছাড়পত্র নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সে মতে, ১৮টি প্রতিষ্ঠানের নামে গত ৭ জানুয়ারি নোটিশ দিয়েছি। সেই নোটিশের ইতোমধ্যে জবাব দিয়েছে। তারা সময় চেয়েছে। তবে কত দিন তা নির্দিষ্ট করে কিছু উল্লেখ করেনি।
মিল মালিকরা বলেন,‘ডাস্ট ফিল্টার সংযোজন করবে বলে তাদের জানিয়েছে। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রথম দফায় ৫টি মিলকে নোটিশ দিয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকলকে নোটিশ পাঠানো হবে বলে জানান কেডিএ’র ইমারত পরিদর্শক মো. আব্দুল হান্নান।
তিনি বলেন, ‘মিল মালিকরা ইমারত নির্মাণ আইন না মেনেই এসব মিল ভবন নির্মাণ করেছে। কীভাবে কোনো নিয়মে তারা ভবনগুলো তৈরি করেছে এ জন্য তাদের ধারাবাহিকভাবে নোটিশ দিয়ে ডাকা হবে। ওই নোটিশের অনুলিপি স্থানীয় থানা এবং বিদ্যুৎ অফিস ওজোপাডিকোতে পাঠানো হয়েছে।