জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. খয়রুল কবীর জানান, বর্তমানে ঠাকুরগাঁও শহরে তিনটি বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে পাঁচ শতাধিক মেয়ে লেখাপড়া করছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ে বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু ২০১৬ সাল থেকে। শুরুটা হয় মনোয়ারা-আনোয়ারা নার্সিং ইন্সটিটিউট দিয়ে। এরপর আরও দুটি ইনস্টিটিউট চালু হয়। এগুলো হলো নর্থ বেঙ্গল নার্সিং ইনস্টিটিউট ও গোল্ডেন লাইফ নার্সিং ইনস্টিটিউট। এর একটি কলেজপাড়ায় অপরটি হাজীপাড়ায়। মনোয়ারা-আনোয়ারা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাস শহরের হলপাড়ায়।
মনোয়ারা-আনোয়ারা নার্সিং ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. সাইদ জানান, তারা বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিড ওয়াইফারি কাউন্সিল (বিএনএমসি) থেকে অনুমোদন নিয়ে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থী ভর্তি করান। প্রতি ব্যাচে ৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা যায়। এর মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ ছেলেদের জন্য সংরক্ষিত।
সেমিস্টার পদ্ধতিতে লেখাপড়া চলে। তিন বছরে ছয় সেমিস্টার লেখাপড়া শেষ করে একজন শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা অর্জন করেন। এরপর তাকে পেশাদারী লাইসেন্স পেতে দেশের ডিপ্লোমা নার্সদের সাথে পরীক্ষায় বসতে হয়। সেখানে পাশ করার পরই একজন নার্স সরকারি হাসপাতালে আবেদন করার সুযোগ পান, যোগ করেন তিনি।
ডা. সাইদ আরও জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের এসব বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে লেখাপড়া করতে তিন বছরে একজন শিক্ষার্থীর ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়।
ঠাকুরগাঁও শহরের কেন্দ্রস্থল হলপাড়ায় মনোয়ারা-আনোয়ারা নার্সিং ইনস্টিটিউটটি বিসমিল্লাহ টাওয়ারের দ্বিতীয় হতে পঞ্চম তলা নিয়ে অবস্থিত। সুসজ্জিত ল্যাব ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠানটিকে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রিয় করে তুলেছে।
ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ খোদেজা বেগম বলেন, এখানে লেখাপড়া করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকেই কম্পিউটার চালানোতে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন। দ্বিতীয় সেমিস্টারে থাকার সময়ই প্রত্যেক শিক্ষার্থী ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের সাথে থেকে বাস্তব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এছাড়া কোনো বিশেষ জরুরি সময়ে হাসপাতাল থেকে ডাক পেলে তারা সেখানে শিক্ষার্থী পাঠিয়ে দেন।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তারা নার্সিংকে পেশা হিসেবে নিতে চান। তারা মনে করেন, এ পেশায় যেমন মানব সেবা করার সুযোগ আছে তেমনি আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার একটা পথও পাওয়া যায়।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, নার্সিং ইন্সটিটিউটে পড়তে আসা অধিকাংশ শিক্ষার্থীই অসচ্ছল পরিবারের সদস্য। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড যেমন তাদের শিক্ষার্থীদের মাসিক বৃত্তি দেয় তেমনি নার্সিং ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীদেরও মাসিক বৃত্তি দেয়া দরকার।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের সেবার ওপরই একজন রোগীর দ্রুত সেরে ওঠা অনেকাংশে নির্ভর করে। কিন্তু আমরা খুব অবহেলিত। ক্লিনিকগুলোতে নামমাত্র বেতন দেয়া হয়। ওই বেতনে কাজ করতে না চাইলে তারা ডিপ্লোমাধারী নার্স বাদ রেখে সাধারণ কাউকে দিয়ে নার্সের কাজ চালিয়ে নেন।’
সুশীল সমাজের সংগঠন সুজন ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে বলেন, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমাদের স্বাস্থ্যখাতের বিশেষ করে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর স্বাস্থ্য সেবা নার্সদের হাতেই নির্ভর করে। সরকারি খাতে একজন ডিপ্লোমাধারী নার্সের বেতন সম্মানজনক হলেও বেসরকারি খাতে সেটা অবমাননাকর।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. কবীর বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে যে কয়েকটি নার্সিং ইনস্টিটিউট আছে সেগুলোর মান মোটামুটি ভালো। কিছু সমস্যা আছে, কিন্তু তারা আমাদের সাহায্যের জন্য ডাকে না। ডাকলে আমরা সহযোগিতা করতাম।’