নির্মাণের এক বছর না পেরুতেই পিচ ঢালাই উঠে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রাস্তাগুলো। পরিণত হয়েছে খানা-খন্দে। এতে চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন হাজার হাজার মানুষ।
ভাঙা রাস্তায় খানাখন্দে পড়ে বিকল হচ্ছে যানবাহন। প্রতি বছর সংস্কারকাজে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও উপকার পায়নি এলাকাবাসী।
জনপ্রতিনিধিরা মনে করছেন, রাস্তা মেরামত কাজে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে গাফিলতির কারণে কাজের মান সঠিক হয় না। এতে রাস্তাগুলো খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
মানিকগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাত উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, নিয়মিত কার্যক্রম ও ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক মেরামত প্রকল্পের আওতায় গত (২০১৭-১৮) অর্থ-বছরে জেলায় মোট ৯০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামতে ১৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। এই অর্থবছরে একই প্রকল্পে রাস্তার উন্নয়ন কাজ, রাস্তার নিয়মিত কাজ ও ৯৭ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তার মেরামতসহ মোট ১৬৭ কিলোমিটার রাস্তার কাজ করা হবে। এতে ৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে।
সরেজমিন জেলার সাত উপজেলায় দেখা গেছে, গ্রামীণ রাস্তাগুলোর বেশিরভাগেরই বেহাল অবস্থা। পাকা সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে পিচঢালাই উঠে গেছে। পরিণত হয়েছে খানা-খন্দে। আর কাঁচা সড়কগুলো ভেঙে ভেঙে গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে জেলা থেকে উপজেলায় কিংবা ইউনিয়নে যেতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাতায়াতকারীদের।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামীণ সড়ক রয়েছে সিংগাইর উপজেলায়। সিংগাইরের নীলটেক-সাহরাইল-মানিকনগরের ৭ কিলোমিটার সড়ক গত বছর প্রায় আড়াই কোটি টাকা খরচে সংস্কার করেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি)। কিন্তু বছর ঘুরতেই সেটির এখন বেহাল দশা। বর্ষার সময় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। শুধু এই সড়ক নয়, সিংগাইর উপজেলায় নীলটেক-সাহরাইল-মানিকনগরের ৭ কিলোমিটার সড়ক, ৯ কিলোমিটারের চারিগ্রাম-গোলাইডাঙ্গা-জামশা সড়ক, আন্ধারমানিক-নয়ারহাট সড়ক, বেতিলা-বালিরটেক সড়কসহ এরকম প্রায় একশ কিলোমিটারের ২০টি সড়ক রয়েছে।
সিংগাইরের মতো জেলার সদর, সাটুরিয়া, ঘিওরসহ সাত উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলোর একই দশা। যাতায়াতকারীরা এসব সড়কে দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছেন।
গ্রামীণ সড়কগুলো যাতায়াতকারী যাত্রী ও যানবাহন চালকরা জানায়, জেলা কিংবা উপজেলা সদরে যেতে ভাঙাচুড়া রাস্তায় তাদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। মিনিবাস, অটোরিকশা, টেম্পো, লেগুনা, রিকশা, ইজিবাইক চলাচলে মারাত্মক অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। যাত্রীদের যাতায়াতে অনেক বেশি সময় লাগছে। জরুরি প্রয়োজনে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। রোগী কিংবা বয়স্করা এসব রাস্তায় চলাচলের সময় ঝাঁকুনিতে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছতে পারে না। এছাড়া কৃষিপণ্য পরিবহনেও ব্যাঘাত ঘটছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গ্রামীণ এসব রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ সঠিকভাবে করা হয় না। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো মেরামত কাজের সময় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় অল্পদিনেই রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া দায়সারা গোছে কোনোমতে কাজ দেখিয়ে ঠিকাদার বিল তুলে নেয়। মূলত অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে রাস্তাগুলো সঠিকভাবে মেরামত কিংবা সংস্কার কাজ হয় না। যার কারণে অল্প সময়ে নষ্ট হয়ে যায়। অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য জনপ্রতিনিধিদেরও দোষারাপ করেন স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধি মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি রাস্তা সংস্কার কাজের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের দোষারোপ করেন।
তিনি বলেন, নতুন রাস্তা তৈরি, রাস্তা মেরামত কিংবা রাস্তা সংস্কার কাজ পাওয়ার অনুমোদন তারা করিয়ে দেন। তবে রাস্তার সংস্কার কাজের তদারকি, রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দপ্তরের।
তার মতে, ওইসব দপ্তরে প্রকৌশলীরা ঠিকাদারদের দিয়ে সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করালে রাস্তাগুলো অনেক বেশি টেকসই হবে। গাফিলতি আর অবহেলার কারণেই সড়কগুলোর সংস্কার কাজ সঠিকভাবে হয় না বলে তিনি মনে করেন।
তবে, মানিকগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাঈমা নাজনীন নাজ বলেন, বিগত অর্থ বছরগুলোতে মানিকগঞ্জের গ্রামীণ সড়কগুলোর সংস্কার কাজ তার সময়কালে হয়নি। কাজেই আগের কোনো কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে যদি সড়ক সংস্কারের কাজ ভালো না হয়ে থাকে তার দায়ভার তিনি নিতে পারবেন না।
চলতি অর্থবছরে প্রায় ৯৭ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কাজের জন্য ৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এরই মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। তিনি আশা করছেন, চলতি মাসেই সংস্কার কাজ শুরু হবে। সেক্ষেত্রে ঠিকাদারদের কাজের গুনগত মান নিয়ম অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করা হবে।