জানা গেছে, কৃষকদের স্বার্থ না দেখে সম্প্রতি ইজারাদার দোয়ারাবাজারের লক্ষ্মীপুর ও সদর উপজেলার রঙ্গাররচর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী সিঙ্গের ধাইর বিল শুকিয়ে মাছ ধরায় হাওরের বোরো চাষাবাদ এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বোরো আবাদের ভরা মৌসুমে উপজেলার কাংলার হাওরের পূর্ব অংশের ‘হিল্লার খেউড়’ সিঙ্গির ধাইর, বিল ও হাওরের ডোবা-নালায় পানি নেই। হাওরের বিস্তৃর্ণ ফসলী মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পানির অভাবে সবজি ক্ষেত হুমকির মুখে পড়েছে।
প্রতি বছর ওই হাওরের বিস্তৃর্ণ এলাকায় সেচ সুবিধা না থাকায় এখানকার কৃষকদের একমাত্র ভরসা হাওরের বিল ও ডোবা নালার পানি। বিলের পানি দিয়েই হাওরে বোরো চাষাবাদ করা হয়।
এ বছর ইজারাদার বোরো চাষাবাদের আগেই বিলের পানি শুকিয়ে মাছ শিকার করায় অনাবাদি থেকে যাচ্ছে কৃষকদের জমি।
বোরো চাষাবাদ করতে না পারায় হাওরপাড়ের তিলোরা কান্দি, বড়কাটা, কান্দা হাটি, সোনাপুর, নুরপুর, বৈঠাখাইসহ লক্ষ্মীপুর ও সুরমা ইউনিয়নের শত শত কৃষক এখন আহাজারি করছেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, সিঙ্গের ধাইর বিলটি শুকিয়ে মাছ ধরার ফলে বোরো চাষাবাদে সমস্যা হয়েছে। সরকারি জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরার সুযোগ না থাকলেও জলমহালের ইজারাদার বৈটা খাই গ্রামের হারু মিয়া, হরিণাপাটি গ্রামের হেলাল মিয়া, ফরিদ মিয়া, সোনাপুর গ্রামের আজিজুর রহমান বিল শুকিয়ে মাছ শিকার করেছে। এ কারণে বর্তমানে পানির অভাবে বোরো জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।
কৃষকরা জানায়, সিঙ্গের ধাইর বিলের ভূমির মালিকানা ব্যক্তি পর্যায়ে থাকার পরও প্রতি বছর সরকারিভাবে বন্দোবস্ত দেয়া হয় এই জলমহাল। সরকারি নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে ইজারাদার হারু মিয়া প্রভাব খাটিয়ে মাঘ মাসের শুরুতেই বিলগুলো শুকিয়ে মাছ শিকার করায় হাজার হাজার একর বোরো জমি এখন অনাবাদি রয়ে গেছে।
উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের কৃষক রাশিদ আলী, তিলোরা কান্দি গ্রামের হাছেন আলী ও বরকাটা গ্রামের আব্দুর রহমান জানান, সিঙ্গের ধাইর হাওরের সিন্ধের ধাইর বিল মাঘ মাসে ফিসিং না করে ফাল্গুন মাসে ফিসিং করলে জমিতে আরও ১৫-২০ দিন পানি সেচ দেয়া যেত। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত সেচ দেয়া গেলে ধান ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেত। জমিতে ভালো ফসল হত। কিন্তু বিলের ইজারাদারের কারণে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
টেংরাটিলা গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালিব, বৈঠাখাই গ্রামের কৃষক আব্দুল করিমসহ অসংখ্য কৃষকের অভিযোগ, স্থানীয় বৈঠাখাই দিগন্ত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে সরকারি বিল নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়ে ভরা মৌসুমের শুরুতেই বিল শুকিয়ে মাছ ধরায় হাওরপাড়ের শত শত কৃষকরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
তারা জানায়, ইজারাদার ও তাদের সহযোগীরা ইজারার বাইরেও বিভিন্ন বিল ও ডোবা নালা অবৈধভাবে ভোগ দখল করে পানি শুকিয়ে মাছ ধরেছে। ফলে হাওরের কোথাও কোনো পানি নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ বলেন, ‘বিল শুকিয়ে মাছ ধরার বিষয়টি শুনেছি। তবে ইজারাদার পানি শুকিয়ে ফেলার পর আমাকে অবহিত করায় এবছর আর কিছু করার নেই। এখানকার কৃষকদের সেচসুবিধা দিতে ইতোমধ্যে বিএডিসি’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি।’