বুধবার মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে প্রতিযোগী দেশগুলোর সাথে ব্যবসা বাণিজ্যে টিকে থাকতে হলে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এ জন্য দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণ, নতুন বাজার সৃষ্টি ও পণ্যের বহুমুখীকরণেও মনোযোগী হতে হবে।’
‘উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পণ্যের মানোন্নয়ন, পণ্যের ব্র্যান্ডিং ও আকর্ষণীয় করতে উদ্যোগী হতে হবে। নিজস্ব ব্র্যান্ডে পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হলে রপ্তানির পরিমাণসহ এ খাত হতে প্রাপ্ত সুবিধা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান করে নিতে পারবে- এ বিশ্বাস আমার রয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘তখন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য প্রবর্তিত অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকার সুবিধা আমাদের থাকবে না। তাছাড়া বিভিন্ন অশুল্ক বাধা অতিক্রম করার চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে। এরূপ পরিস্থিতিতে উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের তীব্র প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সামর্থ্য ও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।’
ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সরকারের সময়োপযোগী উদ্যোগের ফলে সমুদ্র জয়ের মাধ্যমে গভীর সমুদ্র এলাকার বিশাল অংশ বাংলাদেশের জলসীমায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সমুদ্রভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের সামনে খুলে দিতে পারে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত।’
উন্নত ও টেকসই অর্থনীতি বিনির্মাণে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রপ্তানি ঝুড়িতে অনেক পণ্য সংযোজিত হলেও এখনও আমাদের রপ্তানির সিংহভাগ নির্ভর করছে প্রধান কয়েকটি পণ্যের ওপর। এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন।’
মেধাবী তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি আপনাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। ব্যবসা করা সরকারের কাজ নয়, বরং ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতা করাই সরকারের কাজ। সরকার এ লক্ষ্যে অবকাঠামো ও নীতিগত সহযোগিতসহ সার্বিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এসব সুযোগ-সুবিধা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে আপনাদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।’
‘শ্রমঘন আইসিটি খাতকে শুধুমাত্র দেশের উন্নয়নের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা না করে আইসিটি সংশ্লিষ্ট সেবার রপ্তানি বাড়াতে আমি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি। এর মাধ্যমে আমরা সীমিত পণ্যের ওপর রপ্তানি নির্ভরতা দূর করে রপ্তানি খাতকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হব, ইনশাল্লাহ,’ যোগ করেন রাষ্ট্রপতি।
পরে উদ্বোধন শেষে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন আবদুল হামিদ।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা সাধারণ প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়। তবে এবার ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের কারণে মেলা পিছিয়ে দেয়া হয়।
ভারত, ভুটান, পাকিস্তান, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, হংকং, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, মরিশাস, রাশিয়া, ইরান ও সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অংশগ্রহণকারীরা মেলায় অংশ নিচ্ছে।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা চলবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।
মেলায় ৬০টি প্রিমিয়াম প্যাভিলিয়ন, ৩৮টি প্রিমিয়াম মিনি প্যাভিলিয়ন, নারীদের জন্য ২০টি সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন, বিদেশিদের জন্য ২৬টি প্যাভিলিয়ন, ১৮টি সাধারণ প্যাভিলিয়ন এবং ২২টি খাবারের স্টলসহ মোট ৫৫০টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন থাকছে।