সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন।
এসব পরিচ্ছন্নতাকর্মী সরাসরি সিটি করপোরেশনের অধীনে নন, তবে তারা এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক ও সংগঠনের অধীনে কাজ করেন। স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন দুই সিটি থেকে অনুমোদন নিয়ে বাসা বাড়ি থেকে ভ্যান গাড়ি দিয়ে ময়লা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে (এসটিএস) নিয়ে আসে।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করার নির্দেশনা থাকলেও বাসা বাড়ি থেকে ময়লা সরবরাহকারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তা ব্যবহার করছেন না।
কেউ কেউ মাস্ক ব্যবহার করলেও হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার করছেন না বলে গুলশান, উত্তরা ও মালিবাগ এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন।
রাজধানীর বারিধারা, কুড়িল ও গুলশান এলাকায় ময়লার সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে (এসটিএস) এবং বেশ কয়েকটি বাসার মালিকের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. খান আবুল কালাম আজাদ ইউএনবিকে বলেন, পরিচ্ছন্নকর্মীদের অবশ্যই ময়লা সংগ্রহের সময় হ্যান্ডগ্লাভস ও মাস্ক পরতে হবে।
‘অন্যথায় তারা যে বাড়ি থেকে ময়লা নেবে সে বাড়ির ময়লা থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে,’ তিনি বলেন।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম মঞ্জুর হোসেন ইউএনবিকে বলেন, ‘বাসা বাড়ি থেকে যারা ময়লা সংগ্রহ করে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে (এসটিএস) নিয়ে আসা সেসব পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা আমাদের অধীনে না। এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন দ্বারা এটি পরিচালিত হয়। তারপরও আমরা এসব সংগঠনকে নির্দেশনা দিয়েছি যাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা অবশ্যই হ্যান্ডগ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করে ময়লা সংগ্রহ করে।’
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস রোধে হ্যান্ডগ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করতে এসব পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিয়ে সেশন করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা ইউএনবিকে বলেন, সাধারণত বাসা বাড়ির ময়লা সংগ্রহকারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নজরদারি করেন।
‘অনেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী অলসতার কারণে মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার করে না। আমরা ইতোমধ্যে মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস এবং পিপিই দেয়া শুরু করেছি,’ তিনি বলেন।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. জাহিদ হোসেন ইউএনবিকে বলেন, অঞ্চলভিত্তিক সকল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোকে গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহের সময় মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
‘সংগঠনগুলো বর্জ্য সংগ্রহের জন্য বাড়ি থেকে অর্থ নিয়ে থাকে। তারপরেও, তারা কেন পরিচ্ছন্নকর্মীদের সুরক্ষার জন্য মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস সরবরাহ করবে না। সরবরাহ করতে হবে। এটি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে,’ ডিএসসিসির কর্মকর্তা যোগ করেন।
উত্তরা এলাকার বাসিন্দা জাহানারা বেগম জানান, তাদের যদি মাস্ক এবং হ্যান্ডগ্লাভস থাকে তবে নিরাপত্তার জন্য এটি ব্যবহার না করার কোনো যুক্তি নেই।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।
বসুন্ধরায় কামাল নামের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, করোনাভাইরাস রোধে মালিক আমাদের কোনো কিছু দেননি। ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মাস্ক কিনেছি। কিন্তু কাজের সময় অনেক ঝামেলা মনে হয়। মাঝে মাঝে মাস্ক পরি, তবে হ্যান্ডগ্লাভস নেই।’
এ বিষয়ে বারিধারা এলাকার একটি বাড়ির মালিক আবুল কালাম আজাদ ইউএনবিকে বলেন, ‘আমার বাসায় যারা ভ্যান গাড়ি দিয়ে ময়লা নেন, তারা কেউ মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার করেন না। আমি মনে করি এসব পরিচ্ছন্নকর্মীদের মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার করা খুবই জরুরি।’
ওই এলাকার অন্যান্য বাসিন্দারাও এই সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, কারণ এতে তারা নিজেরাও নিরাপদ নন। তাদের মাধ্যমে করোনভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।