প্রাথমিকভাবে এ কাজ গত বছরের এপ্রিলে শুরু করে ২০২১ সালের এপ্রিলে শেষ করার পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি)। কিন্তু আইনি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং নকশায় বারবার পরিবর্তনের কারণে প্রক্রিয়াটি হোঁচট খায়। পরে এটি গত মাসে শুরু করার কথা ছিল।
বিমানবন্দর এলাকায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে জমি ইজারা দেয়া আছে। এ জমি খালি করতে সিএএবি নোটিশ জারি করলে একটি প্রতিষ্ঠান আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ইউএনবিকে জানান যে এ সমস্যা সমাধান করা হয়েছে এবং নির্মাণ কাজ ডিসেম্বরে শুরু হবে।
‘প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলে নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে,’ বলেন প্রতিমন্ত্রী।
সিএএবি চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান সম্প্রতি জানিয়েছেন যে নির্মাণ কাজ ২৮ ডিসেম্বর শুরু হবে।
গত ১১ ডিসেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এ কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
সিএএবি সূত্র জানায়, নির্মাণ ও সম্প্রসারণ কাজের প্রারম্ভিক সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন ও খসড়া মহাপরিকল্পনা ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছিল।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর এ সম্প্রসারণ প্রকল্প অনুমোদন করে। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। পরে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। এ নির্মাণে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
নির্মাণ প্রকল্পটির পরামর্শক হিসেবে ২০১৭ সালের ১১ জুন চার কোম্পানি নিপ্পন কোই, ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল, সিপিজি কনসালটেন্টস অব সিঙ্গাপুর ও ডিজাইন কনসালটেন্টস লিমিডেট অব বাংলাদেশকে যৌথভাবে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো যথাসময়ে কাজ শুরু করতে পারেনি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৭০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন সিঙ্গাপুরের সিপিজি করপোরেশন (প্রাইভেট) লিমিডেটের স্থপতি রুহানি বাহারিনের নকশা করা তিন তলা বিশিষ্ট তৃতীয় টার্মিনাল ভবনে মেঝের আয়তন থাকবে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গ মিটার। এতে থাকবে ১৫টি সেলফ সার্ভিস কাউন্টারসহ ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ১০টি অটোমেটিক পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার, ৫টি অটোমেটিক চেক-ইন কাউন্টারসহ ৫৯টি অ্যারাইভ্যাল ইমিগ্রেশন ডেস্ক ও ১৯টি চেক-ইন অ্যারাইভ্যাল কাউন্টার। সেই সাথে বসানো হবে ১৬টি অ্যারাইভ্যাল ব্যাগেজ বেল্ট।
প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনালে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ ও প্রতিটিতে কনভেয়ার ভেল্ট থাকবে। সেই সাথে অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগের জন্য আরও চারটি কনভেয়ার ভেল্ট বসানো হবে।
প্রকল্পের প্রথম ধাপে বর্তমান টার্মিনাল ভবনগুলোর সাথে তৃতীয় টার্মিনালের সংযোগ থাকবে না। তবে দ্বিতীয় ধাপে একটি সংযোগ কোরিডোরের মাধ্যমে পুরাতন টার্মিনাল ভবনগুলোর সাথে যোগাযোগ তৈরি করা হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তৃতীয় টার্মিনালের সাথে বহুতল পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে শাহজালাল বিমানবন্দর বছরে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দিতে পারবে। বর্তমানে এ সক্ষমতা বছরে ৮০ লাখ। ধারণা করা হচ্ছে যে যাত্রী সংখ্যা বেড়ে ২০২৫ নাগাদ ১ কোটি ৪০ লাখ এবং ২০৩৫ নাগাদ ২ কোটি ৪৮ লাখে পৌঁছাবে।