লাইফস্টাইল
‘নিকন ফটো কনটেস্ট’ পুরস্কার জিতলেন বাংলাদেশের ফাহিম
জাপানের সবচেয়ে পুরাতন এবং সবচেয়ে বড় আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা পুরস্কার ‘নিকন ফটো কনটেস্ট ২০২০-২১’ জিতেছেন বাংলাদেশের তরুণ ফটোগ্রাফার শাহরিয়ার আমিন ফাহিম। সম্প্রতি বিশেষ ক্যাটাগরি নেক্সট জেনারেশন ক্যাটাগরিতে ‘কারওয়ান বাজার’ শিরোনামের ছবির জন্য এ পুরস্কার জিতেছেন তিনি।
জানা গেছে, ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা ও ওশেনিয়া মহাদেশের সর্বমোট ১৫০টি দেশের পেশাদার ও অপেশাদার ২৬ হাজার আলোকচিত্রীর পাঠানো ৬৫ হাজারেরও বেশি ছবি থেকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয় ৫৪টি ছবি। এরপর চুলচেরা বিশ্লেষণের পর পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয় মাত্র ১২টি ছবি, আবার এই ১২টির মধ্যে শুধুমাত্র দুটি ছবি মনোনয়ন পায় ক্যাটাগরি উইনার তালিকায়। যেখানে স্থান করে নেয় শাহরিয়ার আমিন ফাহিমের ‘কারওয়ান বাজার’ ছবিটি।
আগামী নভেম্বরের শেষ দিনগুলোতে ফাহিমের ছবিসহ ক্যাটাগরি উইওনার ছবিগুলো নিয়ে নিকন নিউইয়র্ক, নিকন লন্ডন আর নিকন টোকিওতে আরও বড় আকারে এক্সিবিশন অনুষ্ঠিত হবে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলিক্ট্রিকাল অ্যান্ড ইনেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট থেকে স্নাতক পাশ করা শাহরিয়ার আমিন ফাহিম এ বছর গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে। সে বর্তমানে সরকারি চাকরির চেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে। তবে পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিল্যান্স ফটোসাংবাদিকতা করেছেন। দেশ ও বিদেশে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ৩০টিরও বেশি পুরস্কার জিতেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: বিনা ও বিনা’র বিজ্ঞানীর আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ
অস্ট্রেলিয়ায় সেরা গবেষণা পুরস্কার পেলেন ইবি শিক্ষক
ফটোগ্রাফার শাহরিয়ার আমিন ফাহিম বলেন, ‘কোডিভ-১৯ এর পরবর্তীতে পুরো সময়টাই কেবল কেটেছে মানুষের বিয়োগাত্মক ঘটনা জেনে ও শুনে। প্রথম থেকেই আমি ফটোগ্রাফার হিসেবে উদ্যমী। কারণ এটা আমার ভালোলাগা। তাই ঝুঁকি হলেও আমি করোনার শুরুর পর থেকেই সবধরনের স্ট্রিট ডকুমেন্টারি নিয়ে কাজ এগিয়ে নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এই ছবিটি একজন একনিষ্ঠ এবং সাহসী জীবনের সঞ্জিবনী দর্জির ঘটনা বর্ণনা করে যেখানে ভারি করোনা পরিস্থিতিতেই একদিন কারওয়ান বাজার ভারি বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও, তার অদম্য সৎসাহস তাকে এতটুকুও দমিয়ে রাখতে পারেনি তার জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে। তাই আমার ঘুরে ফিরে মানুষের জীবন ও জীবিকা নিয়ে কাজ করার এক অসাধারণ ডকুমেন্টেশন এখানে ফুটে উঠেছে।’
ফাহিম বলেন, এবারই প্রথম নিকন ফটো কনটেস্ট আলোকচিত্র পুরস্কারে অংশগ্রহণ করেছি। মজার ব্যাপার হলো, প্রথমবারই এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে এতো বড় প্রাপ্তি নিয়ে আসবো, সেটা মাথায় কখনো আসেনি। এজন্য আমি আমার পরিবারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
শাহরিয়ার আমিন ফাহিম ২০১৮ সালে উইকিপিডিয়ার কনটেস্ট ‘উইকি লাভস মনুমেন্ট’ এ পঞ্চম ও ১৫তম হয়েছে। আবার, ফাহিমের কাজ ন্যাশনাল জিওগ্রাফির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও ফিচার পেয়েছে, তাছাড়া দ্য টেলিগ্রাফ, যুক্তরাজ্য, দ্য ডেইলি মেইল, যুক্তরাজ্যসহ আরও অনেক জায়গায় ফিচার পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী আলোকচিত্রশিল্পীদের জন্য জাপানের ক্যামেরা টেক জায়ান্ট নিকন কর্পোরেশন প্রতি দুই বছর অন্তর আয়োজিত করে আসছে ‘নিকন ফটো কনটেস্ট’। এবারের ২০২০-২১ সালের সিশনে ওপেন ক্যাটাগরিতে থিম ছিল ‘কানেক্ট’ আর নেক্সট জেনারেশন ক্যাটাগরিতে (আন্ডার ২৫) থিম ছিল ‘প্যাশন’।
শাহরিয়ার আমিন ফাহিম প্রথম বাংলাদেশি ফটোগ্রাফার যিনি নিকন ফটো কনটেস্টে কোন ক্যাটাগরি উইনার হয়েছেন, তার উইনিং অ্যাওয়ার্ড এর নাম ‘এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ এবং দেশের মাটিতে প্রথমবার নিকন ট্রফি আনতে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র ক্যাটাগরি উইনার ছাড়া নিকন ট্রফি প্রাপ্তি ঘটে না।
ঢাকার কাছে কাশফুলের খোঁজে: গন্তব্য যখন শরতের শ্বেতশুভ্র স্বর্গ
কাশফুলের দেখা মানেই প্রকৃতি জুড়ে চলে এসেছে শরৎকাল। সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে শুরু করে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়টুকুতে পূর্ণাঙ্গ কাশফুলের সমারোহে সৃষ্টি হয় কাশবনের। স্বভাবতই এই সময়টাই কাশফুল দেখার জন্য শ্রেষ্ঠ সময়। কাশফুল ফুটতে দেখা যায় নদীর তীর অথবা দীগন্ত বিস্তৃত ফাঁকা বালুময় জায়গায়। শরতের মনোরম সৌন্দর্যকে প্রাণভরে দেখতে প্রতি বছরেই এরকম জায়গায় জমায়েত হন প্রকৃতিপ্রেমীরা। এমনকি ঢাকা নিবাসী ভ্রমণপিপাসুরাও রাজধানীর এই যান্ত্রিক ধূসর কোলাহলের ভেতরে আবিষ্কার করে ফেলেছেন শ্বেতশুভ্র কাশবন। চলুন, ঢাকার ভেতরে এবং আশেপাশে সেরকম কয়েকটি জায়গার কাশফুলের খোঁজ জেনে নিই।
ঢাকার কাছেই ৭টি সেরা কাশবন
দিয়াবাড়ি
উত্তরার হাউস বিল্ডিংয়ের মাস্কট প্লাজা থেকে বটতলা এলাকায় প্রবেশের পর পরই রাস্তার দু’পাশ জুড়ে চোখে পড়বে অবারিত কাশবন। কাশফুলের বাগানগুলো এত বড় যে মাথা উচু করেও ঝোপ-ঝাড়ের ওপর দিয়ে দুরে দেখা যায় না। বাগানের ভেতর দিয়ে পায়ে চলা পথ ফটোগ্রাফারদের ছবি তোলার প্রিয় বিষয়বস্তু। যারা পরিবার নিয়ে ঘুরতে যান, এই দু’পাশ কাশফুলে ছেয়ে থাকা রাস্তাগুলোর সাথে তারাও নিজেদের ফ্রেমবন্দি করে নেন।
এই শুভ্রতার ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে তুরাগ নদীর একটি শাখা, যা সংস্কারের ফলে অপরূপ একটি লেকে রূপ নিয়েছে। লেকের দুই পাশ সংযোগকৃত ছোট্ট সেতুটি জায়গাটিকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে। লেকের পাড় ঘেষে কৃত্রিম ফুটপাতের পাশে বেশ কিছু ফুডকোর্টের ভিড় হয়। এগুলোর বিশাল ছাতার নিচে বসে বিকেলের স্ন্যাকস হাতে চারপাশের কাশফুল দেখার ব্যাপারটা বেশ লোভনীয়।
আরও পড়ুন: সাইক্লিং, দৌড় কিংবা সাঁতার: ওজন কমাতে কোনটি বেশি কার্যকরী?
বসুন্ধরা ৩০০ ফিট
কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বসুন্ধরার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া পূর্বাচল হাইওয়ের ওপর দিয়ে যাবার সময় ফটোগ্রাফাররা তাদের ক্যামেরার শাটার রিলিজ বাটন থেকে আঙ্গুল সরাতে পারেন না। অনেকে আবার নিজের চোখে পুরোটা ধারণ করবেন না ফ্রেমবন্দি করে স্মৃতিতে রাখবেন তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান। পিচঢালা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে এটাই একমাত্র জায়গা যেখানে দু’চোখ দিয়ে দু’পাশের দিগন্তকে স্পর্শ করা যায়। আর আশ্বিন মাসের কাশফুলের মৌসুমে সেই দিগন্ত ভরে যায় অকৃত্রিম শুভ্রতায়। মেঘলা দিনগুলোতে আকাশের ঠিক কোন দিগন্তরেখায় কাশফুলের প্রান্তর গিয়ে মিশেছে তা বুঝা কঠিন হয়ে পড়ে।
শহীদ ময়েজ উদ্দিন চত্ত্বর ও নীলা মার্কেটের জন্য ভোজন রসিক ভ্রমণপিপাসুদের নিদেনপক্ষে খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। বেশ কিছু ব্যতিক্রম ধরনের রেস্তোরা চালু হওয়ায় পরিবার নিয়ে অনেকেই এখানে চলে আসছে একটি পড়ন্ত বিকাল কাটাতে।
আফতাব নগর
হাতিরঝিল থেকে বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম সরণী অতিক্রম করে জহুরুল ইসলাম সরণী ধরে লোহার সেতু পেরিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার এগুলে চোখে পড়বে আফতাব নগর কাশবন। আফতাব নগর হাউজিং প্রোজেক্টের আওতাধীন এই জায়গাগুলো প্রতি শরতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কাশফুল দখল করে বসে। এমনকি পাশ দিয়ে সরু হয়ে বয়ে যাওয়া তুরাগ নদীর মৃত অংশ রামপুরা খালের আশপাশও ছেয়ে যায় কাশফুলের ছোট ছোট ঝাড়ে।
ঢাকার ভেতরে কাশফুলের শুভ্রতা ও বৈকালী রোদের মিতালীতে নিজেকে হারিয়ে ফেলার জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা। আফতাব নগরের একদম পেছনের এই অংশে প্রায়ই আশপাশের আবাসিক এলাকার পাশাপাশি দূর থেকেও অনেক দর্শনার্থীদের সমাগম হয়।
কাশফুলের ঝাড়ের ওপর দিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা আকাশ ছোয়া বহুতল ভবনগুলো দেখে মনে হয় যেন এই কাশবনকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ওরা পাহাড়া দিচ্ছে।
মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ
মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের বসিলা সড়ক ছাড়িয়ে ওয়াশপুর গার্ডেন সিটি মূলত কোন তথাকথিত দর্শনীয় স্থান নয়। প্লট বিক্রির জন্য ফাঁকা পড়ে থাকা এখানকার জায়গাগুলো সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ভরে যায় কাশফুলে।
এছাড়া বেড়িবাঁধের পশ্চিম পাশে ঢাকা উদ্যান হাউজিংয়ের প্লটগুলো থেকে শুরু করে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর পর্যন্ত ছেয়ে যায় কাশফুলের রাজ্যে। নীচে ইট-সুড়কির বাদামী রঙের মাঝে একটি দুটি গাছের সবুজ আর উপরে সাদা মেঘের পেছনে নীল আকাশ সেই অফুরন্ত শুভ্রতার সজ্জা সঙ্গী হয়।
পুরো জায়গাটা ঘুরতে হলে নিজস্ব গাড়ি করে যাওয়াটাই উত্তম কারণ হেটে চলার ক্লান্তি এই দীর্ঘ সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে উঠতে পারে না। তাছাড়া রিজার্ভ গাড়ি হলে ইচ্ছে মত যেকোন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলার সুযোগটাও থাকে।
আরও পড়ুন: বর্ষাকালে ভ্রমণের পূর্বে কিছু সতর্কতা
সিলেটে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত
সিলেট, ৩ সেপ্টেম্বর (ইউএনবি)- সিলেট সদর উপজেলার ৭নং মোগলগাঁও ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড এলাকার চেঙ্গের খাল নদীতে বৃহস্পতিবার এক ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রতিযোগিতা উপলক্ষে আনন্দে মেতেছিল এলাকাবাসী। বাইচের নৌকার মাঝি-মাল্লারা নেচে-গেয়ে মাতিয়ে তুলে এলাকা। বিপুল সংখ্যক মানুষ ছোট ছোট নৌকা নিয়ে, কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন নৌকা বাইচ। বাইচে অংশ নিয়ে এলাকার মানুষদের আনন্দ দিতে পেরে খুশি মাঝি-মাল্লারা।
প্রতিযোগিতায় ১০টি নৌকার মধ্যে জৈন্তাপুর উপজেলার 'ছাতার খাই' নৌকা প্রথম হয়।
আরও পড়ুন: ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে ১৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আর দ্বিতীয় হয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলার 'লেংগুরা'। তৃতীয় হয়েছে জৈন্তাপুর উপজেলার ‘দক্ষিণ কাঞ্চন’।
প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার ছিল একটি গরু, দ্বিতীয় পুরস্কার একটি ছাগল এবং তৃতীয় পুরস্কার ছিল একটি এলইডি টিভি।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা শেষে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হামিদ চুনু মিয়ার সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মিল্লাত আহমদ চৌধুরী।
আরও পড়ুন: সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক দলের শতাধিক নেতার পদত্যাগ
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া।
কোভিড-১৯: শিশু-কিশোর এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আপনার করণীয়
কোভিড-১৯ মহামারির দরুণ দৈনন্দিন জীবনের পরিবর্তন আপনার পরিবারের শিশু, কিশোর এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রতিদিনকার করোনা আগ্রাসন এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রার স্থবিরতা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় আপনার নিজের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করার পাশাপাশি আপনার প্রিয় মানুষগুলোর মাঝে তা ছড়িয়ে দিতে পারেন। চলুন, কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পরিবারের শিশু, কিশোর এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে জেনে নেই।
করোনাকালে শিশুদের মানসিক বিকাশ
শিশুদের আবেগ প্রকাশের ধরন যে কোন বয়সের মানুষের থেকে আলাদা। কেউ অস্বাভাবিকভাবে নীরব হয়ে উঠে আবার কেউ অতিরিক্ত রাগ এবং চিৎকার করে। তাই পরিবারের বড়দের এক্ষেত্রে ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হবে।
কখনো কখনো খেলাধুলা ও চিত্রাঙ্কনের মত বিভিন্ন সৃজনশীল ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে তাদের মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন।
শিশুদেরকে নিজেদের বিরক্তিকর অনুভূতি যেমন রাগ, ভয় এবং দুঃখ প্রকাশ করার জন্য ইতিবাচক উপায় খুঁজে পেতে সাহায্য করুন।
আরও পড়ুন: করোনা মহামারি থেকে শিশুকে নিরাপদ রাখবেন কীভাবে?
তাদেরকে যতটা সম্ভব একটি নির্দিষ্ট রুটিনের ভেতর রাখুন। প্রতিটি সময়ে তাদেরকে একটি করে কাজে নিযুক্ত রাখুন।
শিশুদেরকে সহিংসমূলক ঘটনা থেকে দূরে রাখুন। এরকম অভিজ্ঞতা তাদের স্বাভাবিক আচরণের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তাদের বুঝিয়ে বলুন যে করোনা সংক্রমণের জন্য কাউকে দোষারোপ করা উচিত নয়। কোভিড -১৯ সম্পর্কে খবর দেখা, পড়াশোনা বা আলোচনা করার সময় সংক্রমণ ও মৃত্যুর কথা উপেক্ষা করে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠার ঘটনাগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করুন। অন্যান্য সৃজনশীল ও মজাদার বিষয়গুলোর প্রতি তাদের আকৃষ্ট করুন।
যদি পরিবারে কেউ অসুস্থ হয় বা কাউকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, অথবা যদি কোন মৃত্যু হয়, তাহলে শিশুরা অতিরিক্ত উদ্বেগ অনুভব করতে পারে। এমতাবস্থায় যতটুকু সম্ভব তাদেরকে সবকিছুর আড়ালে কোন অভিভাবকের সাথে রাখার চেষ্টা করুন। ভয় কাটানোর জন্য তাদের সাথে কথা বলে তাদেরকে সহজ রাখার চেষ্টা করুন।
আরও পড়ুন: সাইক্লিং, দৌড় কিংবা সাঁতার: ওজন কমাতে কোনটি বেশি কার্যকরী?
শিশু দুর্ব্যবহার করলে বা কোন ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করলে শান্তভাবে কথা বলুন। দুরন্ত শিশুদের মধ্যে অনেকেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্রোধ প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে যখন তারা শান্ত হয়ে যাবে তখন ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করুন তারা কেমন অনুভব করছে। সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং শান্ত্বনামূলক উপায়ে বুঝিয়ে বলুন যে তারা যে আচরণ করেছিলো তা ঠিক নয়। নেতিবাচক আচরণের পিছনে কারণ বোঝার চেষ্টা করুন।
পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তাদের খারাপ লাগা সময়গুলোতে তাদেরকেই জিজ্ঞেস করুন পরিবারের বাইরে তাদের পছন্দের কারো সাথে দেখা করবে কিনা।
শিশুদেরকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার নিয়ম সম্পর্কে শেখান। তাদের শরীরের ব্যাপারে যে কোনো অস্বস্তিকর স্পর্শ বা অনিরাপদ অঙ্গভঙ্গির ব্যাপারে তাদের সতর্ক করুন। তাদের অভিযোগগুলো মনযোগ দিয়ে শুনুন।
আপনার শিশু সম্পর্কিত যে কোন বিশেষ প্রয়োজনে কল করুন চাইল্ডলাইন ১০৯৮-তে।
আরও পড়ুন: বর্ষা মৌসুমে যেসব পুষ্টিকর সবজি খেতে পারেন
করোনাকালে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমর্থন
করোনাভাইরাস সংক্রমণ কিশোর-কিশোরীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করতে পারে। বয়সন্ধিঃকাল জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এ সময়ে করোনা প্রাদুর্ভাব মানসিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে যার মানসিক আঘাত সারা জীবনভর থেকে যেতে পারে।
যে কোন হৃদয়বিদারক ঘটনা, মানসিক চাপ কিশোর-কিশোরীদের অতিরিক্ত উদ্বেগের কারণ হতে পারে, যার প্রতিফলন ঘটতে পারে তাদের খাওয়া-দাওয়ায় বা ঘুমের অভ্যাসে। এমনকি পারস্পরিক কথাবার্তার সময় মনোযোগ এবং একাগ্রতার অভাব হতে পারে। এ সময় তাদের অস্থিরতা কাটাতে তাদেরকে সঙ্গ দিন। তাদেরকে মন খুলে কথা বলার জায়গা তৈরি করে দিন।
আরও পড়ুন: লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
এই মহামারির সময় মানুষের অসুস্থ হওয়া রোধকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোতে কিশোর-কিশোরীদের ভালো রোল মডেল হতে উৎসাহিত করুন। যদি তারা প্রায়ই হাত ধোয়, অন্যদের থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকে এবং নিজেদের এবং অন্যদের সুরক্ষার জন্য সর্বত্র মাস্ক পরে, তাহলে ছোট বাচ্চারা এমনকি তাদের সমবয়সীরাও তাদেরকে দেখে শিখবে।
কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকতে এবং প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখতে অনুপ্রেরণা দিন। তাদেরকে এই নীতি অনুসরণ করতে সাহায্য করুন যে, এ সময়টি খারাপ নয় বরং ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে তৈরির মোক্ষম সময়। এটি তাদের সুস্থ ও মনোযোগী থাকতে সাহায্য করবে। শুধু তাই নয়, অনলাইন মাধ্যমগুলোতে নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে নিজেদের উপার্জন শুরু করতে পারবে। এই করোনা মহামারীর মধ্যে অনেক কিশোর-কিশোরী নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করছে।
স্মার্টফোন, ভিডিও চ্যাট, সোশ্যাল মিডিয়া, এমনকি ভিডিও গেমের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করে দিন। স্কুল-কলেজগুলো অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে তাদের সামাজিক এবং মানসিক চাহিদাগুলোকে পরিপূর্ণ করার জন্য শিক্ষনীয় নির্দেশনা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: মশার উপদ্রব থেকে সুরক্ষিত থাকার কিছু সহজ ঘরোয়া উপায়
করোনাকালে বয়োজ্যেষ্ঠদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা
বিষণ্নতা এবং গুরুতর উদ্বেগ বার্ধক্যের ক্ষেত্রে কোন স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বয়স্করা করোনাভাইরাসের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। এই ব্যাপারটি তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা, ভয় ও হতাশা উদ্রেকের মাধ্যমে তাদেরকে চূড়ান্তভাবে বেঁচে থাকার আশা হারিয়ে ফেলার দিকে ধাবিত করতে পারে। তাই এর জন্য তাৎক্ষণিক ক্লিনিকাল চিকিৎসা এবং সামাজিক সহায়তা আবশ্যক।
বর্তমান সংকট সামাজিক দূরত্বের মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে প্রত্যেকের রুটিনকে বদলে দিচ্ছে। এতে স্বাভাবিক সামাজিক সহায়তা এবং বৃদ্ধ মানুষগুলোর অন্যদের সাথে যোগাযোগ হ্রাস পাচ্ছে। পরিবার এবং প্রতিবেশী এখন যে কোনও নিয়মিত যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে কাজ করতে পারে। এমনকি সামাজিক পরিষেবাগুলোর (যেমন খাবার সরবরাহ কর্মী) সাথে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। আসলে সামাজিক দূরত্ব মানে তো পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেয়া নয়।
বার্ধক্যের সময়ে মানুষ বন্ধু বা পরিবারের কারো মৃত্যু, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও আর্থিক বিপর্যয় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলা প্রভৃতি অভিজ্ঞতাগুলোর সম্মুখীন হয়। যদিও অনেকেরই দুঃখ এবং ক্ষতিগুলোকে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা থাকে। তবুও কারো কারো জন্য শোক কাটানোটা জটিল হয়ে উঠতে পারে। এই অভিজ্ঞতাগুলোর সাথে কোভিড-১৯ মহামারির চাপ মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাতে পারে। তাই এ সময় আপনি ছায়া হয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান। তাদেরকে শুধু আশা দেয়া নয়, তাদের মধ্যে এই নিশ্চয়তার অনুভূতিটা জাগ্রত রাখুন যে, তাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক বা মানসিক সমস্যায় আপনি তাদের সাথে আছেন।
আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক: করণীয় এবং প্রতিরোধে যে সকল পদক্ষেপ নিতে হবে
তাদের প্রতিদিন রুটিনে যেন ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখুন। বিশেষ করে খাওয়া, ওষুধ নেয়া, ব্যায়াম করা ইত্যাদির প্রতি জোর দিন। এছাড়া প্রতিবেশীদের সাথে আড্ডাতেও তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করুন। অবশ্যই করোনাভাইরাস নিয়ে ইতিবাচক আলোচনাতে উৎসাহ দিন।
এছাড়া আপনার বন্ধু, প্রতিবেশী এবং আত্মীয়দের মধ্যে যারা বৃদ্ধ তাদের নিয়মিত খোঁজ-খবর নিন।
যেহেতু অনেকে ম্যাসেজ বিনিময় এবং সোশ্যাল মিডিয়া সংযোগে সাবলীল নাও হতে পারে, তাই তাদের সাথে সরাসরি কল বা ভিডিও-চ্যাট করুন।
এই সময়টা তারা কীভাবে পার করছে, তাদের রুটিনে কেমন পরিবর্তন করতে হতে পারে এবং হতাশা মোকাবিলায় তারা কী ধরনের কাজ করছে তা জিজ্ঞাসা করুন।
আরও পড়ুন: কোলেস্টেরল কমানোর কার্যকরী ঘরোয়া উপায়
কোভিড চলাকালীন তাদেরকে কিছু মজার ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে পারেন। যেমন: দৈনন্দিন হাঁটা, গান শোনা বা বাজানো, প্রিয় গল্পের বই পড়া, হাস্যরস উপভোগ করা, ধাঁধা, খেলা, ছোট ছোট বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম এবং ধ্যান বা প্রার্থনা।
তাদের অভিজ্ঞতা এবং মেধার ভিত্তিতে তাদের কাছ থেকে আপনার জীবনের জন্য বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা নিন। তাদের কাজ থেকে পাওয়া যে কোন সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। সর্বোপরি, তাদের জীবন -যাপনের পদ্ধতিতে কোন জিনিসটি আপনার ভালো লাগে তা ব্যক্ত করুন।
পরিশেষে, কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিশু, কিশোর এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার্থে তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ কাজের ব্যস্ততায় আপনি ঘরের বাইরে থাকলেও তারা নিজেদের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে পারবে। এমনকি, এই করোনাকালীন অনিশ্চিত অবস্থায় যখন আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন, তখন তারা আপনার যত্ন নিতে পারবে।
আরও পড়ুন: বর্ষায় পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে বাঁচতে করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন
লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
ধান থেকে খোসা ছাড়ানোর পর পরই পাওয়া যায় ব্রাউন রাইস বা লাল চাল। ধানের তিনটি অংশ থাকে। ফাইবার-ভরা বাইরের স্তরটি তুষ, একদম ভেতরের স্তরে থাকে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বীজ যা এন্ডোস্পার্ম নামক কঠিন মধ্যম স্তর দিয়ে আবৃত। বাইরে থাকা তুষের খোসা ফেলে দেয়া হয়।
সাধারণত আমরা যে চালের ভাত খাই অর্থাৎ সাদা চাল অপেক্ষা এই লাল চাল স্বাস্থ্যের জন্য অধিক উপকারী। চলুন জেনে নেই, কেন এই লাল চাল খাওয়া উচিত, আর কোন কোন ক্ষেত্রে লাল চাল এড়িয়ে চলবেন।
ব্রাউন রাইস বা লাল চাল খাওয়ার উপকারিতা-
লাল চালের পুষ্টিগুণ
যদিও সাদা চালের মত লাল চালে ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট ভরপুর, তবে অন্যান্য প্রায় সকল পুষ্টি ক্ষেত্রে বাদামী বা লাল চাল সাদা চালকে ছাড়িয়ে যায়।
এই গোটা শস্যটি ফোলেট, রাইবোফ্লাভিন (বি-২), পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের একটি ভাল উৎস।
উপরন্তু, লাল চালে অধিক হারে ম্যাঙ্গানিজ বিদ্যমান। এই খনিজ উপাদানটি শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার জন্য অত্যাবশ্যক, যেমন হাড়ের বিকাশ, ক্ষত নিরাময়, পেশী সংকোচন, বিপাক, স্নায়ুর কার্যকারিতা এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ। ম্যাঙ্গানিজের অভাবে বিপাকীয় সমস্যা, হাড়ের ক্ষয়, দূর্বল বৃদ্ধি এবং কম উর্বরতা সম্বলিত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। আপনার প্রায় সমস্ত দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্যে এই চালের মাত্র এক কাপ ভাত-ই যথেষ্ট।
ভিটামিন এবং খনিজ ছাড়াও, লাল চাল শক্তিশালী উদ্ভিদ যৌগ সরবরাহ করে। উদাহরণস্বরূপ, লাল চালের মধ্যে রয়েছে ফেনল এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস নামক এক শ্রেণির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরকে জারণ চাপ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং অকাল বার্ধক্য সহ বেশ কয়েকটি ভয়াবহ রোগের দিকে ধাবিত করে।
ব্রাউন রাইসে পাওয়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো ফ্রি-র্যাডিক্যাল নামক অস্থির অণু দ্বারা সৃষ্ট কোষের আঘাত রোধ করতে এবং শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক: করণীয় এবং প্রতিরোধে যে সকল পদক্ষেপ নিতে হবে
ওজন কমাতে লাল চাল
লালা চাল ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সাদা চালের মতো পরিশোধিত শস্যের তুলনায় লাল চালের মতো গোটা শস্য প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং পুষ্টি ধারণ করে।
উদাহরণস্বরূপ, ১৫৮ গ্রাম লাল চালের মধ্যে ৩.৫ গ্রাম ফাইবার থাকে, যা সাদা ভাতের মধ্যে থাকে ১ গ্রামেরও কম।
ফাইবার দীর্ঘ সময় ধরে আপনার পাকস্থলি পরিপূর্ণ রাখে বিধায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার নির্বাচন আপনাকে সামগ্রিকভাবে কম ক্যালোরি গ্রহণে সাহায্য করতে পারে। লাল চাল পেটের মেদ কমাতেও সাহায্য করে।
হার্টের সুস্থতায় লাল চাল
লাল চাল ফাইবার এবং উপকারী যৌগসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হৃদরোগের ঝূঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
লাল চালের ভাতে লিগনান্স নামক যৌগ রয়েছে যা হৃদরোগের ঝূঁকির কারণগুলো উপশমে সাহায্য করতে পারে। লিগনান সমৃদ্ধ খাবার যেমন- তিসি, তিল এবং বাদাম, উচ্চ কলেস্টেরল, নিম্ন রক্তচাপ এবং ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া হ্রাসে সাহায্য করে।
লাল চালের মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম নামক খনিজ উপাদান হার্ট-সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন: কোলেস্টেরল কমানোর কার্যকরী ঘরোয়া উপায়
উচ্চ ডায়াবেটিস কমাতে লাল চাল
যদিও রক্তে শর্করার উপর কার্বোহাইড্রেট সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাদা ভাতের মতো পরিশোধিত শস্য জাতীয় খাবারগুলো কম খেয়ে রক্তে শর্করা এবং ইনসুলিনের স্পাইক কমিয়ে থাকেন।
সাদা চালের বদলে লাল চাল খেয়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন উপায়ে উপকৃত হতে পারেন। লাল চালে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার উভয়ই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
লাল চালে সাদা ভাতের তুলনায় কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকে, যার অর্থ হল এটি ধীরে হজম হয় এবং রক্তে শর্করার উপর কম প্রভাব ফেলে। নিম্ন গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার নির্বাচন করা ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের রক্তের শর্করাকে আরও ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে।
সাদা চালে গ্লাইসেমিক সূচক (জিআই)-এর মাত্রা বেশি, যা একটি খাদ্য কত দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়ায় তা পরিমাপ করে। লাল চালের জিআই-৫০ এবং সাদা চালের জিআই-৮৯, যার অর্থ হল সাদা চাল রক্তে শর্করার মাত্রা লাল চালের তুলনায় অনেক দ্রুত বৃদ্ধি করে। উচ্চ-জিআই খাবার খাওয়ার সাথে টাইপ-২ ডায়াবেটিস সহ বেশ কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ হওয়ার সম্ভাবনা জড়িত।
ঘ্রেলিনের মাত্রা কমানো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, যা অতিরিক্ত খাওয়া কমাতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করতে পারে।
এছাড়াও, লাল চাল প্রাথমিক অবস্থায় টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে।
আরও পড়ুন: করোনা মহামারি থেকে শিশুকে নিরাপদ রাখবেন কীভাবে?
ক্ষতিকর গ্লুটেন এড়াতে লাল চাল
গ্লুটেন একটি প্রোটিন যা গম, বার্লি এবং রাইয়ের মতো শস্যে পাওয়া যায়।
অনেকে গ্লুটেনে অ্যালার্জি থাকার কারণে পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, ফুসকুড়ি এবং বমির মতো হালকা থেকে গুরুতর প্রতিক্রিয়া অনুভব করে থাকেন। উপরন্তু, গাঁট-ফোলানো বাত ও টাইপ-১ ডায়াবেটিসের মত অটোইমিউন রোগাক্রান্ত লোকেরা প্রায়ই গ্লুটেন-মুক্ত খাদ্য থেকে উপকৃত হন।
এই সকল কারণে গ্লুটেন-মুক্ত খাবারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।
সৌভাগ্যবশত, লাল চালের ভাত প্রকৃতিগতভাবেই এই সমস্যাযুক্ত প্রোটিন থেকে মুক্ত থাকার কারণে যারা গ্লুটেন নিতে পারেন না তাদের নিরাপদ পছন্দে পরিণত হয়েছে।
গ্লুটেন-মুক্ত ডায়েটে থাকা লোকেদের জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর গ্লুটেন-মুক্ত পণ্য যেমন ক্র্যাকার এবং পাস্তার মধ্যে লাল চাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: কোরিয়ান মেয়েদের রূপ রহস্য: দৈনন্দিন ত্বক পরিচর্যার ১০টি ধাপ
আইয়ুব বাচ্চুর জন্মবার্ষিকী আজ
আজ জনপ্রিয় গায়ক, গিটারিস্ট, সুরকার, গীতিকার ও সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর ৫৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৬২ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের পটিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের এই কিংবদন্তি, যিনি এবি নামেই বেশি পরিচিত।
সোমবার আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তার ভক্ত অনুরাগী এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।
১৯৭৭ সালে চট্টগ্রামের স্থানীয় ব্যান্ড ‘ফিলিংস’-এ যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে ব্যান্ড জগতে প্রবেশ করেন আইয়ুব বাচ্চু। এরপর ১৯৮০ সালে তিনি যোগ দেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ‘সোলস’ ব্যান্ডে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি এই ব্যান্ডের সাথেই যুক্ত ছিলেন। পরে ১৯৯১ সালে গড়ে তোলেন ব্যান্ডদল (লাভ রানস ব্লাইন্ড) এলআরবি।
আরও পড়ুন: ঝালকাঠিতে ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
‘আম্মাজান’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘সেই তুমি’, ‘ফেরারি এই মনটা আমার’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’ সহ আরও অসংখ্য জনপ্রিয় গান। এখনও এসকল সকলের মাঝে, এমনকি বর্তমান প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয় এবং চর্চা চলছে।
আরও পড়ুন: ফিলিপাইনের রিজাল জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু প্রদর্শনী শুরু
২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশের অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জনপ্রিয় সংগীত ব্যান্ড এলআরবি’র প্রতিষ্ঠাতা ও ফ্রন্টম্যান আইয়ুব বাচ্চু। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এলআরবি’র মূল কন্ঠশিল্পী (ভোকাল) ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।
তুরস্কে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী
বাংলাদেশ দূতাবাস আঙ্কারার উদ্যোগে ও আঙ্কারা সিটি করপোরেশন সহযোগিতায় “মুজিব বর্ষ” উদযাপনের অংশ হিসেবে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের উপর চারদিন ব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আঙ্কারাস্থ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধর করেন ডেপুটি মেয়র মিসেস গুলসুন বোর গুনের ও মান্যবর রাষ্ট্রদূত মস্য়ূদ মান্নান।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে ‘সুইডিশ ড্যাডস অ্যান্ড বাংলাদেশি বাবা’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী
দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১২ আগস্ট বৃস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী।
আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় জীবন, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বাংলাদেশের আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
স্বাগত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মস্য়ূদ মান্নান এনডিসি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতির পিতার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও অবদানের প্রতি আলোকপাত করে তিনি বলেন যে, প্রদর্শনীর আলোকত্রিগুলোতেও তার সেই সুবিশাল কর্মযজ্ঞ প্রতিফলিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে ফেলানীর বাড়িতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে যৌথভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরর জীবন ও কর্মের উপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করতে পেরে চানকায়ার ডেপুটি মেয়র আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রদর্শনীটি আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
হার্ট অ্যাটাক: করণীয় এবং প্রতিরোধে যে সকল পদক্ষেপ নিতে হবে
যখন হার্টের পেশীর একটি অংশ পর্যাপ্ত রক্ত পায় না, ঠিক তখনি হার্ট অ্যাটাক হয়। রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক হতে যত বেশি সময় যায়, হার্টের পেশীর তত বেশি ক্ষতি হয়। সাধারণত করোনারি ধমনীর মারাত্মক খিঁচুনি বা আকস্মিক সংকোচনের ফলে হৃদপিণ্ডের পেশীতে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হতে পারে। চলুন, ভয়াবহ এই হৃদরোগটির লক্ষণ ও প্রতিরোধের পাশাপাশি জেনে নিই- হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিকভাবে কি করবেন।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণসমূহ
দেহের বিভিন্ন অংশে ব্যথা বা অস্বস্তি
বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাক-এর সময় বুকের মাঝখানে বা বাম দিকে ব্যথা বা অস্বস্তি শুরু হয়, যা কয়েক মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় অথবা কখনো হঠাৎ চলে যেয়ে আবার ফিরে আসে। কখনও কখনও এই অস্বস্তি ঘন্টাখানেক পর বা এমনকি এক দিন পরে ফিরে আসে। এমনটা হলে বুঝতে হবে যে, আপনার হার্টের পেশী পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাচ্ছে না।
বুক ব্যথা হার্ট অ্যাটাকের একটি সাধারণ লক্ষণ। অনেকে এই ব্যথাকে ব্যথা বলে না বলে বুকে চাপ অনুভব করছে বলে। কিন্তু এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, বুক ব্যথা প্রতিটি হার্ট অ্যাটাকের সময় নাও হতে পারে।
অনেকেই হার্ট অ্যাটাকের সময় তলপেটের উপরের দিক, কাঁধ, পিঠ, ঘাড়/গলা, দাঁত বা চোয়াল ইত্যাদি স্থানে ব্যথা অনুভব করে। মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে তলপেটে এবং বুকের নিচের অংশে ব্যথা করে। পিঠের উপরের দিকে ব্যথা সাধারণত পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়।
পড়ুন কোলেস্টেরল কমানোর কার্যকরী ঘরোয়া উপায়
সারাদিন ধরে প্রচণ্ড ঘাম
আপনি যদি ব্যায়াম না করেন, তাহলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘাম হওয়া আপনার হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক কারণ হতে পারে। জমে থাকা ধমনীর মধ্য দিয়ে রক্ত পাম্প করতে যেয়ে আপনার হৃদযন্ত্র বেশি পরিশ্রম করে, কাজেই শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য ঠিক রাখতে আপনার শরীর বেশি ঘাম ছেড়ে দিতে থাকে।
অনেক সময় রাতের বেলা অতিরিক্ত ঘামের জন্য চাদর ভিজে যায় বা ঘুম হয় না। এটিও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে।
পড়ুন করোনা মহামারি থেকে শিশুকে নিরাপদ রাখবেন কীভাবে?
প্রচণ্ড ক্লান্তি ও নিঃশ্বাসের দূর্বলতা
হার্ট অ্যাটাকের সময় বুকে অস্বস্তির সাথে অথবা আগে নিঃশ্বাসের দুর্বলতাও অনুভূত হতে পারে। মুলত রক্ত প্রবাহের একটি এলাকা বন্ধ থাকার কারণে আপনার হৃদযন্ত্র অতিরিক্ত চাপের ফলে পাম্প করার চেষ্টা করে। ফলে আপনার প্রচন্ড অবসন্ন অনুভূত হয়। যদি আপনি প্রায়শই বিনা কারণে ক্লান্ত হন, তাহলে ব্যাপারটিকে কোনভাবেই উপেক্ষা করা চলবে না।
ক্লান্তি এবং শ্বাসকষ্ট পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং এমনকি হার্ট অ্যাটাকের কয়েক মাস আগে থেকেও শুরু হতে পারে।
আপনার শ্বাস -প্রশ্বাস এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকরীভাবে রক্ত পাম্পিং; পরস্পর খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আপনার হৃদযন্ত্র রক্ত পাম্প করে যাতে এটি আপনার টিস্যুতে রক্ত সঞ্চালন করতে এবং ফুসফুস থেকে অক্সিজেন পেতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে যখন আপনার হার্ট ভালভাবে রক্ত পাম্প করতে পারে না, তখনি শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
পড়ুন কঠোর ডায়েটের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসমূহ জেনে নিন
দ্রুত হৃদস্পন্দন
দ্রুত হৃদস্পন্দনের সময় মনে হয় হৃদযন্ত্রটা বুকের ভেতর জোরে জোরে ধাক্কা মারছে বা বুক ধড়ফড় করছে। আপনার হৃদযন্ত্র এবং শরীর আপনার শরীরের সর্বত্রে রক্ত সঞ্চালনের জন্য একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও নিরবচ্ছিন্ন বিটের উপর নির্ভর করে। যে কোন একটি ছন্দপতন আপনার হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাব বা বমি
হার্ট অ্যাটাকের আগে মাথা ঘোরা অনুভূত হতে পারে। অতিরিক্ত পরিশ্রম করার সময় আপনি মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন। হার্ট অ্যাটাকের অন্যান্য উপসর্গগুলোর মধ্যে বমি বমি ভাব বা বমিও অন্তর্ভুক্ত। বিশেষত মহিলাদের এই উপসর্গ দেখা দেয়ার সম্ভাবনা বেশি।
পড়ুন বর্ষা মৌসুমে যেসব পুষ্টিকর সবজি খেতে পারেন
হার্ট অ্যাটাকের সময় তাৎক্ষণিকভাবে করণীয়
তাৎক্ষণিকভাবে হার্ট অ্যাটাক বন্ধ কোন মতেই সম্ভব নয়। কিন্তু এসময় জরুরি চিকিৎসার সরণাপন্ন হওয়ার পাশাপাশি নিচের পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে।
১৬২৬৩-তে কল করা
এটি হার্ট অ্যাটাকের সময় সেবা পাওয়ার দ্রুততম ও নিরাপদ উপায়। ১৬২৬৩ তে কল করে ২ প্রেস করে সরাসরি অ্যাম্বুলেন্সের পরিষেবা নিতে পারেন।
দরজা-জানালা খুলে আরামদায়ক বিশ্রামের ব্যবস্থা
হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তি বাড়ির ভেতর থাকলে তার আশেপাশের লোকজন ঘরের দরজা-জানালা খুলে বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এছাড়া এতে অ্যাম্বুলেন্স দল যতদ্রুত সম্ভব বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যেতে পারবে।
অ্যাম্বুলেন্স আসা পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তিটিকে একটি আরামদায়ক অবস্থানে বিশ্রাম নেয়ার ব্যবস্থা করুন। বিশ্রাম হার্টের চাপ কমায় কারণ এটি শরীরের সর্বত্র রক্ত পাম্প করার চেষ্টা করে।
পড়ুন মশার উপদ্রব থেকে সুরক্ষিত থাকার কিছু সহজ ঘরোয়া উপায়
আঁটসাঁট পোশাক আলগা করা
আঁটসাঁট পোশাক, যেমন নেকটি বা বেল্টগুলি আলগা করে দিন। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস নেওয়া সহজ হবে। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স দলের জন্যও ঢিলেঢালা জামাকাপড় পরিহিত ব্যক্তিকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে নেয়া সহজ হবে।
প্রাথমিক সিপিআর
আক্রান্ত ব্যক্তিতে ঘুমিয়ে পড়া থেকে বিরত রাখুন। তার সাথে অবিরত কথা বলতে থাকুন। মাথাটি দেহের সাথে ৩০-৪৫ ডিগ্রি কোণ করে উচু অবস্থায় রাখুন। এতে তার শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া সহজ হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিৎ করে শুইয়ে দিন। তারপর আপনার এক হাতের আঙ্গুলগুলোর ফাঁকে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে অন্য হাতের আঙ্গুলগুলো ঢুকিয়ে (এই পদ্ধতি কার্ডিয়াক পালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) হিসেবে বহুল পরিচিত) আপনার পুরো শরীরের ভর আলিঙ্গনবদ্ধ দুই হাতের উপর চাপিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির বুকের মাঝখানে পাম্প করতে থাকুন। ১৬-১৮ সেকেন্ড ধরে ৩০ বার এভাবে পাম্প করুন। রোগীর নাক দু’আঙ্গুলে চেপে চিবুক উচু করে দিন। তারপর আবার বুকে পাম্প শুরু করুন। কমপক্ষে পাঁচবার প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করুন।
পড়ুন সাইক্লিং, দৌড় কিংবা সাঁতার: ওজন কমাতে কোনটি বেশি কার্যকরী?
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়
সুষম খাদ্য গ্রহণ
সুষম খাদ্য খাওয়া আপনার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে। সুষম খাবারের তালিকায় ফল, সবজি, শাকসবজি, বাদাম, চর্বিহীন প্রোটিন এবং মাছ অন্তর্ভুক্ত থাকে। পাশাপাশি প্রতিদিনের খাবারে প্রক্রিয়াজাত মাংস, পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট এবং মিষ্টি পানীয়ের পরিমাণও সীমিত করা উচিত।
শারীরিক ব্যায়াম
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে সাহায্য করে। প্রাপ্তবয়স্কদের সম্ভব হলে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি বা ৭৫ মিনিট জোরালো ব্যায়াম করার চেষ্টা করা উচিত।
আর যারা ইতিমধ্যে সক্রিয়, তাদের কার্যকলাপের মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করতে পারেন।
পড়ুন জেনে নিন ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের ক্ষতিকর দিকগুলো!
পরিমিত ওজন বজায় রাখা
পরিমিত ওজন বজায় রাখা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। আপনার উচ্চতা এবং বয়স অনুসারে আপনার ওজন কতটা হওয়া উচিত তা পরীক্ষা করে নিতে পারেন। এটি আপনার ক্যালোরি গ্রহণ এবং প্রয়োজনে ব্যায়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে।
ধূমপান পরিত্যাগ
যে কোন মূল্যেই ধূমপান বন্ধ করা উচিত। সিগারেট বা বাষ্পের মতো তামাকজাত দ্রব্যের ধোঁয়া হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে।
অন্যান্য শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন স্বাস্থ্যের অবস্থার চিকিৎসা করা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের আরেকটি উপায়। এই অবস্থার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, এবং ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্ত শর্করা অন্তর্ভুক্ত।
পড়ুন যদি স্লিম থাকতে চান রোজ ৫ রকমের বাদাম খান
পর্যাপ্ত ঘুম
সুস্বাস্থ্যের জন্য সঠিক পরিমাণে ঘুমের কোন বিকল্প নেই। এমনকি এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়, যা হার্ট অ্যাটাকের কারণগুলোর মধ্যে একটি। ১৮-৬০ বছর বয়সী বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে ৭ বা তার বেশি ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন।
পর্যাপ্ত পানি পান করা
প্রচুর পানি পান ডিহাইড্রেশন এড়াতে সাহায্য করে। রক্তরসে পানির পরিমাণ ৯০-৯২ শতাংশ তাই পানিশূন্যতাতে হৃদযন্ত্র ও সারা দেহে রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটে যা হার্ট অ্যাটাকের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক নারী -পুরুষ উভয়েরই যেকোন বয়সে হতে পারে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর ঝুঁকি বাড়তে থাকে। কিন্তু জীবন ধারণ নিয়ে একটু সতর্ক হলেই আপনি এই ঝুঁকি এড়াতে পারবেন। স্বাস্থ্য প্রত্যেকের কাছেই মহামূল্যবান সম্পদ। তাই শত কষ্ট হলেও এই সম্পদটি রক্ষার জন্য রুটিন মাফিক চলা উচিত।
পড়ুন জেনে নিন ডেঙ্গু জ্বর থেকে সুরক্ষার উপায় ও করণীয়
কোলেস্টেরল কমানোর কার্যকরী ঘরোয়া উপায়
কোলেস্টেরল একটি মোমের মতো পদার্থ যা যকৃতে উৎপন্ন হয়। এটি কোষের দেয়াল নমনীয় রাখতে সাহায্য করে এবং বেশ কয়েকটি হরমোন তৈরির জন্য প্রয়োজন। মানবদেহ তার প্রয়োজনীয় সমস্ত কোলেস্টেরল নিজেই তৈরি করে, তাই খাবারের মাধ্যমে কোলেস্টেরল যোগানের দরকার হয় না। বরং স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ প্রচুর খাবার খাওয়া উচ্চ কলেস্টেরল এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে। চলুন জেনে নিই- কীভাবে আপনি ঘরে থেকেই শরীরে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
কোলেস্টেরল কমানোর কার্যকরী ঘরোয়া উপায়
সাদা আটার পরিবর্তে লালা আটার রুটি বেছে নিন
লালা আটার রুটি বিভিন্ন ধরণের রোগবালাই যেমন টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে। এ রুটি থেকে ফাইবার, ভিটামিন বি, খনিজ যেমন দস্তা, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায়।
আপনার ডায়েটে গ্রীক দই যোগ করুন
গ্রীক দই নিয়মিত দইয়ের চেয়ে ঘন এবং অধিক সরের আস্তরণ সম্পন্ন। এতে নিয়মিত দইয়ের চেয়ে চর্বি এবং প্রোটিন বেশি থাকে। প্রকৃতপক্ষে, এটি একই পরিমাণে নিয়মিত দই থেকে দ্বিগুণ পর্যন্ত প্রোটিন ধারণ করে। প্রতি ১০০ গ্রাম গ্রীক দইয়ে ১০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন থাকে।
এটি খাওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ আপনার পাকস্থলী পরিপূর্ণ মনে হবে। এতে সেই সময়টুকু ধরে আপনার ক্ষুধা নিবারণ হবে। ডায়েট করার জন্য গ্রীক দই কার্যকরী একটি খাবার।
পাশাপাশি এতে নিয়মিত দইয়ের তুলনায় কম কার্বোহাইড্রেট এবং কম ল্যাকটোজ থাকে। এটি এমন লোকদের জন্য উপযুক্ত যারা কম কার্ব ডায়েট অনুসরণ করে বা যাদের ল্যাকটোজ নিতে সমস্যা হয়।
আরও পড়ুন: কঠোর ডায়েটের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসমূহ জেনে নিন
সকালের নাস্তায় ডিম খান
ডিম যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর, বিশেষ করে সকালের নাস্তায়। ডিমের মধ্যে থাকে উচ্চমানের প্রোটিন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি সমৃদ্ধ কোলিন যা অন্য খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন ধরনের ক্যালোরি সম্পন্ন নাস্তার সাথে তুলনা করলেও ডিমের অবস্থান সব দিক থেকে উপরে থাকে।
সকালে ডিম খাওয়া পাকস্থলি ভরার অনুভূতি বাড়ায়। তাই এটি ওজন কমানোর জন্য বেশ সহায়ক।
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়ান
প্রোটিনকে প্রায়ই পুষ্টির রাজা বলা হয়ে থাকে। যে হরমোনগুলো মানুষের ক্ষুধা এবং তৃপ্তি অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে, এই খাদ্য উপাদানটি সেগুলোকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। কাজেই এটি ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টে ভরা থাকে।
প্রোটিন পেশীর ভর ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং প্রতিদিন পোড়ানো ক্যালোরির সংখ্যাও সামান্য বৃদ্ধি করে। পেশী ভর হ্রাস রোধ করার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ, যা সাধারণত ওজন হ্রাস এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হতে পারে।
প্রোটিনের ভালো উৎসগুলোর মধ্যে দুগ্ধজাত পণ্য, বাদাম, বাদামের মাখন, ডিম, মটরশুটি, চর্বিহীন মাংস অন্যতম।
আরও পড়ুন: বর্ষা মৌসুমে যেসব পুষ্টিকর সবজি খেতে পারেন
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন
খাবার পানি ওজন হ্রাস করতে পারে এবং প্রতিদিন পোড়ানো ক্যালোরিগুলোর সংখ্যা সামান্য বাড়িয়ে তুলতে পারে। খাবারের আগে পানি পান করা ক্ষুধা এবং খাবারের পরিমাণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সহায়ক।
এমনকি অন্যান্য পানীয়র পরিবর্তে সাধারণ খাবার পানি পান চিনি যুক্ত এবং অন্যান্য ক্যালোরি যুক্ত খাবার গ্রহণের পরিমাণ হ্রাস করতে সাহায্য করে।
ভাজার পরিবর্তে রোস্ট করুন
গ্রিলিং, ফ্রাইং এবং ডিপ ফ্রাইং সবই মাংস এবং মাছ তৈরির জনপ্রিয় পদ্ধতি। এই ধরনের রান্নার সময়, বেশ কিছু বিষাক্ত যৌগ গঠিত হয়। যেমন, পলিসাইক্লিক সুগন্ধযুক্ত হাইড্রোকার্বন, উন্নত গ্লাইকেশন জাত বস্তু, হেটারোসাইক্লিক অ্যামাইনস। এই সমস্ত যৌগগুলো ক্যান্সার এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতিগুলোর মধ্যে বেকিং, ব্রোয়লিং, পোচিং, প্রেশার কুকিং, ফুটানো, গরম ভাপে সিদ্ধ করা প্রভৃতি অবলম্বন করতে পারেন। এগুলো ক্ষতিকারক যৌগ গঠন করে না, বরং খাবারকে আরো স্বাস্থ্যকর করে তুলে।
ভাজা আলুর উপর সিদ্ধ আলুকে অগ্রাধিকার দিন
১০০ গ্রাম সিদ্ধ আলুতে ৯৩ ক্যালোরি থাকে, যা একই পরিমাণ ভাজা আলুতে থাকে ৩ গুণেরও বেশি (৩৩৩ ক্যালোরি) তদুপরি, বেশি ভাজা আলুতে সাধারণত ক্ষতিকারক যৌগ থাকে যেমন অ্যালডিহাইড এবং ট্রান্স ফ্যাট।
আরও পড়ুন: সাইক্লিং, দৌড় কিংবা সাঁতার: ওজন কমাতে কোনটি বেশি কার্যকরী?
শাক জাতীয় খাবারকে অধিক গুরুত্ব দিন
শাক খাওয়ার অভ্যাস গড়ার একটি ভাল উপায় হল ক্ষুধার মুহুর্তে সর্বপ্রথম সেগুলো খাওয়া। ফলে প্রচন্ড ক্ষুধার্ত অবস্থায় আপনি সব শাক শেষ করে ফেলবেন। এতে করে পরবর্তীতে অস্বাস্থ্যকর খাবারগুলো এড়ানো হবে।
এই কাজটি আপনাকে সামগ্রিকভাবে কম এবং স্বাস্থ্যকর ক্যালোরি সম্পন্ন খাবারে অভ্যস্ত করে তুলবে। পাশাপাশি ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করবে।
কার্ব-সমৃদ্ধ খাবারের আগে সবজি খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি রক্তের প্রবাহে কার্বস শোষিত হওয়ার গতি হ্রাস করে। এছাড়াও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিসরে রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ করে।
ফলের জুসের বদলে আস্ত ফলটি খান
ফল পানি, ফাইবার, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। বারবার ফল খাওয়ার সাথে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের মতো বেশ কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমে যায়।
যেহেতু ফলে ফাইবার এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ যৌগ থাকে, তাই সেগুলোর প্রাকৃতিক শর্করা সাধারণত খুব ধীরে ধীরে হজম হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না। কিন্তু ফলের রসের এমনটা হয় না। অনেক ফলের রস প্রকৃত ফল থেকে তৈরি না করে চিনিযুক্ত কোমল পানীয় দিয়ে বানানো হয়।
এমনকি আসল ফলের রসে ফাইবারের অভাব রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ানোর সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
পড়ুন: করোনা মহামারি থেকে শিশুকে নিরাপদ রাখবেন কীভাবে?
চিনিযুক্ত পানীয়গুলোর বদলে সোডা পানি পান করুন
চিনিযুক্ত পানীয়গুলো হৃদরোগ, স্থূলতা ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মত মারাত্মক সব রোগের কারণ হতে পারে। এছাড়া, এই পানীয়গুলো সাধারণ খাবারের মতো দেহের উপর প্রভাব ফেলে না। চিনিযুক্ত পানিয় কম খাওয়ার মাধ্যমে আপনি ক্যালোরি কমাতে পারবেন না একটি ৪৯২-মিলিগ্রাম চিনিযুক্ত সোডায় প্রায় ২০৭ ক্যালোরি থাকে।
এর বদলে শুধু সোডা বা স্পার্কলিং পানি বেছে নিন। এর ফলে আপনার শরীরে অপকারী ক্যালোরিগুলোর প্রবেশ বন্ধ হবে এবং অতিরিক্ত চিনির পরিমাণ হ্রাস পাবে।
চিপসের পরিবর্তে পপকর্ন খান
পপকর্ন বা খৈ-ভাজা যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টি এবং ফাইবার সম্পন্ন। ১০০ গ্রাম পপকর্নে ৩৮৭ ক্যালরি এবং ১৫ গ্রাম ফাইবার থাকে। একই পরিমাণ আলুর চিপসে ক্যালোরি থাকে ৫৩২ এবং ফাইবার থাকে মাত্র ৩ গ্রাম। এই খাবারটির সুবিধা হলো- প্রদাহ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো।
একটি স্বাস্থ্যকর নাস্তার হিসেবে বাড়িতেই পপকর্ন তৈরি করার চেষ্টা করুন। বাইরে থেকে কিনলে এয়ার-পপড পপকর্ন কিনতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, অনেক বাণিজ্যিক জাত চর্বি, চিনি এবং লবণ দিয়ে তাদের পপকর্ন প্রস্তুত করে, এটি আলুর চিপের চেয়ে স্বাস্থ্যকর নয়।
রান্নায় স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করুন
দুর্ভাগ্যবশত, সয়াবিনের মত অত্যন্ত প্রক্রিয়াজাত বীজ এবং উদ্ভিজ্জ তেল গৃহস্থালিতে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই তেলগুলিতে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি কিন্তু হার্টের জন্য উপকারী ওমেগা-৩ এস কম থাকে। উচ্চ ওমেগা -৬ ও ওমেগা -৩ অনুপাত প্রদাহ সৃষ্টি করার পাশাপাশি আরো জটিল রোগ সৃষ্টি করতে পারে যেমন হৃদরোগ, ক্যান্সার, অস্টিওপোরোসিস এবং অটোইমিউন ডিসঅর্ডার। তাই বিকল্প হিসেবে অতিরিক্ত কুমারি জলপাই তেল, সরিষার তেল, অ্যাভোকাডো তেল ও নারকেল তেল ইত্যাদি তেলগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুন: যদি স্লিম থাকতে চান রোজ ৫ রকমের বাদাম খান
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
শারীরিক ক্রিয়াকলাপ আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আপনার কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতি সপ্তাহে আড়াই ঘন্টার মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম, যেমন দ্রুত হাঁটা বা সাইকেল চালানো উত্তম। শিশু-কিশোরদের প্রতিদিন ১ ঘণ্টা ব্যায়াম করা উচিত।
ব্যায়ামকে প্রতিদিনের একটি অংশ করে ফেলুন। লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন, অপেক্ষাকৃত একটু দূরে গাড়ি পার্ক করুন যেন বাকি পথ পেরিয়ে বাড়ি পৌছতে হেটে যেতে হয়, নিত্য সদাই কিনতে হেটে যান।
শেষাংশ
এই প্রাকৃতির উপায় ছাড়াও কোলেস্টেরল কমানোর অনেক ওষুধও আছে যেগুলো ব্যবহার করে অনেকেই উপকৃত হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকার কারণে সেগুলো ব্যবহারের আগে সতর্ক থাকা উচিত। বিশেষত অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। সর্বসাকুল্যে, নিরবচ্ছিন্ন সুস্থ জীবনের জন্য একটি সুষম খাবার গ্রহণ করে নির্দিষ্ট জীবন ব্যবস্থা মেনে চলুন, আপনাকে কোন ওষুধের শরণাপন্ন হতে হবে না।
আরও পড়ুন: করোনা মহামারি থেকে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠদের নিরাপদ রাখবেন কিভাবে?
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
‘শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে’, - গানের পংক্তির মতোই কোনও এক শ্রাবণের দিনে এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ ২২ শে শ্রাবণ (শুক্রবার) বিশ্বকবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০তম মৃত্যুবার্ষিকী।
পৃথিবী যখন সুস্থ ছিল, স্প্যানিশ ফ্লু মহামারির প্রায় এক শতাব্দী পর বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি আসার আগে, প্রতি বছর বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যথাযথ মর্যাদার সাথে দিবসটি পালন করার জন্য বিশাল কর্মসূচি গ্রহণ করার প্রচলন ছিল। কিন্তু গত বছরের ন্যায় এবছরও করোনার প্রকোপ এবং দেশে লকডাউন চলায় সীমিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হচ্ছে দেশে ও দেশের বাইরে।
জনসমাগম এড়াতে স্বল্প পরিসরে এবার দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভার্চুয়াল কর্মসূচির মাধ্যমে কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ও কবি ভক্তরা দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানে বাঙালির প্রাণের কবিকে স্মরণ করছে।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সারদা দেবীর ১৩ সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫ বৈশাখে (৭ মে, ১৮৬১) জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি প্রায় দুই হাজারেরও বেশি সংগীত রচনা করেছেন যা দুই বাংলায় ‘রবীন্দ্র সংগীত’ হিসেবে পরিচিত। সেই সাথে তিনি প্রায় সাত দশক ধরে তার দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে আটটি উপন্যাস, ৮৮টি ছোট গল্প এবং অসংখ্য কবিতা লিখেছেন। তার রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ ও ‘জন গণ মন’ গান দু’টি যথাক্রমে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত। এছাড়া অনেক ইতিহাসবিদের মতে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীতের রচয়িতা এবং সুরকার এই মহান কবি।
সংস্কৃতি ও সাহিত্যের চর্চা ছড়িয়ে দিতে এবং ভবিষ্যতের শিল্পী ও সাহিত্যিক তৈরি করতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম বাঙালি এবং অ-ইউরোপীয় কবি হিসেবে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।