তিনি বলেন, ‘নুসরাত হত্যাকাণ্ড মানবতার ইতিহাসে জঘন্যতম অপরাধ। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করে দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে সমাজ থেকে আমরা কেউই রক্ষা পাব না। সমাজ বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে পরিণত হবে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কমিশন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নুসরাত হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল নুসরাতের মৃত্যুর পর ১১ তারিখ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সংস্থার পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর এবং উপ-পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) এম রবিউল ইসলামের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যরা পরদিন সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। সেখানে তারা নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনাস্থল, তার পরীক্ষার হল ও অধ্যক্ষের দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। সেই সাথে তারা নুসরাতের পরিবারের সদস্য, থানা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ অন্যদের সাথে কথা বলেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় প্রশাসন ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটি যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড এড়ানো যেত। কমিশন মনে করে, এ ঘটনায় পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবহেলা ও অপরাধ করেছেন। জেলা প্রশাসনেরও অবহেলা ছিল। তারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এসব কর্মকর্তাদের অপরাধ ও অবহেলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে কমিশন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নিজ দপ্তরে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। তার নির্দেশেই তার ঘনিষ্ঠ সহচরেরা নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়, ফলে তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর থানা পুলিশ নুসরাতকে বিভিন্ন অশালীন প্রশ্ন করে। তারা বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখানোর চেষ্টা করেন। পুলিশের সাথে নুসরাতের সাক্ষাতের ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এতে সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিপন্থী।
সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, নুসরাতের মতো অনেক নারী ও মেয়ে প্রতিনিয়ত হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করে দৃশ্যমান শাস্তি দিতে হবে। নুসরাতের মতো নির্যাতনের শিকার অনেক পরিবার বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। শুধু আইন প্রণয়ন করলে হবে না, আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকতে হবে। যদি অপরাধীদের যথাযথ বিচার হয় তবেই নুসরাতের আত্মা শান্তি পাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজের বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে তিনি বলেন, যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে এত অভিযোগ তিনি একটি মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে কীভাবে নিয়োগ পান? কারা তাকে নিয়োগ দিলো? এসব বিষয় যথাযথভাবে তদন্ত হওয়া উচিত।