শিক্ষার্থী
প্রতিটি হামলার বিচার হবে, প্রকৃত শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা হবে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সাম্প্রতিক নাশকতার প্রতিটি হামলার ঘটনার বিচার হবে। আন্দোলনকারী প্রকৃত শিক্ষার্থীদের কোনো হয়রানি করা হবে না।
মন্ত্রী বলেন, যারা গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের পিএসকে এবং ঢাকায় পুলিশকে হত্যা করে তাদের লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে, চট্টগ্রামে ছয়তলা ভবন থেকে ছাত্রলীগ কর্মীদের ফেলে দিয়েছে, মানুষ ও রাষ্ট্রের সম্পত্তি জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং বিটিভিতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করেছে- তাদের কেউ আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে 'দেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের দুর্জয় শপথ' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৩-১৪ সালে নাশকতার পর অনেকের বিচার হয়েছে, কেউ কেউ আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে গেছেন। এবার সেটি হবে না। প্রত্যেক হামলাকারীকে বিচারের আওতায় আনা হবে।
'রাষ্ট্রের ওপর হামলা বিএনপির তারেক রহমানের নির্দেশে হয়েছে' উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, 'তারেক রহমানের ভয়েস সরকারের হাতে এসেছে। সে বলছে- বড় হামলা করলে বড় পদ, কারফিউ ভঙ্গ কর, না হলে পদ ছাড়। বিএনপির আরেক নেতা বলেছেন-তোমরা আন্দোলনে ঢুকে যাও, নৈরাজ্য সৃষ্টি কর। ছাত্রলীগের কর্মী মারলে ৫ হাজার, পুলিশ মারলে ১০ হাজার টাকা পুরস্কারের স্বীকারোক্তি তারাই দিয়েছে। এটি কোন রাজনৈতিক দল? এটি একটি দেশবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন।'
আরও পড়ুন: রাজাকারের পক্ষে স্লোগানদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সাম্প্রতিক নাশকতার চিত্র তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশন স্থাপিত হয়েছে ১৯৬৪ সালে। কিন্তু গত ৬০ বছরে বিটিভিতে কখনো হামলা ভাঙচুর হয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিটিভির কিছু কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু কখনো বিটিভিতে হামলা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, দুর্যোগকালে মানুষ যেখানে ছুটে যায়, সেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে ভাঙচুর চালিয়েছে তারা। ঢাকাবাসী ও দেশবাসীর গর্ব মেট্রোরেলের স্টেশন জ্বালিয়ে দিয়েছে তারা। বিদেশি রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনারের আইডি হ্যাক করে ভুল বার্তা পোস্ট করা হয়েছে।
মন্ত্রী হাছান বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে সমাধান হবে। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যা চেয়েছিল, তার থেকে বেশিই পেয়েছে। যদি শিক্ষার্থীরা একটু ধৈর্য্য ধরত, তাহলে বিএনপি-জামায়াত এই সুযোগটা পেত না।
ড. হাছান বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সাধারণ কোনো শিক্ষার্থী মানুষ হত্যা বা জনগণ ও রাষ্ট্রের সম্পত্তির ওপর হামলা চালাতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বাস দিয়েছেন, কোনো শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হবে না। কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে তোমাদের কেউ যেন ব্যবহার না করতে পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।
সাপ্তাহিক গণবাংলা ও বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদের সভায় আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিমের সভাপতিত্বে ও স্বাধীনতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন টয়েলের পরিচালনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান, সংসদ সদস্য আওলাদ হোসেন, ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: ধ্বংসযজ্ঞ দেখে কূটনীতিকরা স্তম্ভিত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারতীয় শিক্ষার্থীদের নিরাপদে ফিরতে ঢাকার সহযোগিতার প্রশংসা দিল্লির
ভারতীয় ৬ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থী নিরাপদে দেশে ফিরে যেতে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে যে 'চমৎকার সহযোগিতা’ পেয়েছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেছে ভারত।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, 'এ পর্যন্ত আমাদের ৬ হাজার ৭০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে ফিরে এসেছেন। আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে চমৎকার সহযোগিতা পেয়েছি।’
আরও পড়ুন: ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস সচল, জরুরি নয় এমন কর্মীদের স্বেচ্ছায় প্রস্থানের অনুমোদন: স্টেট ডিপার্টমেন্ট
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতায় তারা তাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছেন। এজন্য তারা 'গভীরভাবে' কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতে সম্পর্ক দৃঢ়, উষ্ণ ও অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। ‘এভাবেই আমরা দেশটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে দেখি।’
তিনি বলেন, ভারতের হাইকমিশন সীমান্ত ক্রসিং পয়েন্ট বা বিমানবন্দরে তাদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছে।
আরও পড়ুন: চলমান পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে পুনর্ব্যক্ত করেছে ভারত
মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের হাইকমিশন ও সহকারী হাইকমিশনের বেশ কয়েকটি হেল্পলাইন রয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক হেল্পলাইন পরিচালনা করছে এবং সেখানে থাকা আমাদের সব লোক, শিক্ষার্থী ও আমাদের নাগরিকরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তারা যেকোনো সহায়তার অনুরোধ করলে, তা দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে তাদের সঙ্গে অত্যন্ত উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলে অনুভব করে। ‘আমরা আশাবাদী, দেশের পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
ভারত বাংলাদেশের ঘটনাবলী 'নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ' করছে এবং ভারত দেশটির চলমান পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের 'অভ্যন্তরীণ বিষয়' বলে মনে করে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ও মূল্যবোধ নবায়নের আশাবাদ ইইউ রাষ্ট্রদূতের
২০০০ বিরোধী নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে: ফখরুল
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সারাদেশে অন্তত দুই হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (২৪ জুলাই) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অবিলম্বে গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।
ফখরুল বলেন, 'আমরা জানতে পেরেছি, এখন পর্যন্ত আমাদের প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
তবে সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ায় গ্রেপ্তার ও হতাহতের সঠিক তথ্য তাদের কাছে নেই বলেও জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি এবং সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রাখায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযানের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তালাবদ্ধ করে রাখায় তারা এখনও তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করতে পারছেন না। আপনারা দেখেছেন কীভাবে আমাদের অফিসে অভিযান চালানো হয়েছে এবং সবকিছু তছনছ করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার ও আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করাই আ. লীগের লক্ষ্য: মির্জা ফখরুল
হতাহতের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার কতজন নিহত ও আহত হয়েছে, সেই তথ্য না দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চায়।
সরকার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হতাহতের বিষয়টি এড়িয়ে শুধু হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করছে এবং বিএনপির ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, সরকার আন্দোলনের বিষয়টি পুরোপুরি বাদ দিতে চায় এবং হতাহতের ঘটনা বাদ দিয়ে কেবল সরকারি ভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাই সামনে আনতে চায়, কারণ তারা এর দায় বিএনপির ওপর চাপাতে চায়।
নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে বিএনপিকে জড়িয়ে সরকারের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘তারা আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন, তার মানে এই নয় যে তারা নাশকতাকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। তারা (সরকার) সহিংসতায় উসকানি দিয়েছে এবং সমস্যাটিকে টেনে এনেছেন।’
তিনি দাবি করেন, দলের ৪০ বছরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ইতিহাসে বিএনপি কখনো রাষ্ট্রের ওপর হামলা চালায়নি।
আরও পড়ুন: খালেদার নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে পরিণতি ভোগ করতে হবে: মির্জা ফখরুল
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশ স্বাধীনতা হারাবে: মির্জা ফখরুল
কোটা আন্দোলন: সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সিলেট-সুনামগঞ্জ অবরোধ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববদ্যোলয়ের শিক্ষার্থীরা। শাবিপ্রবি ফটকের সামনে সড়ক অবরোধের কারণে সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকাল সাড়ে পাঁচটার পর মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এসময় রাস্তায় বসে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন ‘আমার ভাইয়ের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান, এক হও লড়াই করো’ ইত্যাদি।
এর আগে ক্যাম্পাসে লাঠিসোঁটা হাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বেলা ৩টার দিকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
আরও পড়ুন: কোটা সংস্কারের দাবিতে ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
এদিকে সকাল থেকে ক্যাম্পসে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঠেকাতে তারা এ অবস্থান নেন।
তবে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। মঙ্গলবার বিকালে নগরের বন্দরবাজারে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা জড়ো হলে লাঠিসোটা হাতে তাদের ধাওয়া করে ছাত্রলীগ। ধাওয়া খেয়ে সড়ক ছেড়ে চলে যায় শিক্ষার্থীরা। এসময় কয়েকজন আহত হন।
কোটা আন্দোলনের শাবিপ্রবির সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, সারাদেশে আমাদের উপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ হামলা করছে। আমাদের অনেকে নিহত হয়েছেন। যতই হামলা-নির্যাতন চলুক আমাদের আন্দোলন চলবেই। দাবি আদায় করেই আমরা রাজপথ ছাড়ব।
আরও পড়ুন: ঢাকার সায়েন্সল্যাব এলাকায় আহত যুবকের মৃত্যু
কোটা সংস্কারের দাবিতে ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
কোটা সংস্কারের দাবিতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। এসময় প্লে-কার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান নেন তারা। ক্লাস-পরীক্ষাও বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল থেকেই মেডিকেল কলেজের গোলচত্বরে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা।
কোটা না মেধা, মেধা মেধা, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই স্লোগানে মুখরিত হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গন। কলেজের গোলচত্ত্বর থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে শতাধিক শিক্ষার্থীর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ।
আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলন: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহত
কোটা আন্দোলন: শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় আহত ১০
ঝিনাইদহে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) এ ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলন: সংঘর্ষের জেরে ৩ বিভাগীয় শহরসহ বগুড়ায় বিজিবি মোতায়েন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোটা বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সকালে বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য শহরের উজির আলী স্কুল মাঠে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। এসময় শহরের পায়রা চত্বর এলাকা থেকে ছাত্রলীগের একটি মিছিল লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
হামলায় অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলন: ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ
কোটা সংস্কার আন্দোলন: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ
কোটা সংস্কারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ক্যাম্পাসের সামনে আন্দোলনরত চার শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ওই শিক্ষার্থীদের গুলি করে আহত করা হয়েছে।
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা যখন রায় সাহেব বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন তখন একটি গলি থেকে গুলি ছোড়া হয়, এতে চার শিক্ষার্থী আহত হয়।
এদের মধ্যে ব্যবস্থাপনা বিভাগের ফেরদৌস আহমেদ ও অনিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: সাধারণ শিক্ষার্থী-ছাত্রলীগের ওপর হামলার নিন্দা কাদেরের
আহতদের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কোতোয়ালি জোনের এএসপি নজরুল বলেন, ‘গুলির খবর শুনেছি। কিন্তু আমরা দেখলাম মাত্র একটি দল মিছিল করছে। আমরা হামলাকারীকে দেখিনি।’
ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. আরিফ জানান, গুলিবিদ্ধ চার শিক্ষার্থীসহ আরও একজনক আহতকে হাসপাতালে আনা হয়।
গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং অন্য আহত শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কোটা সংস্কার: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহত
কোটা সংস্কার: শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ
কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশাল অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে মহাসড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে অচল হয়ে পড়েছে বরিশাল নগরী।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিএম কলেজ ও ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ।
এদিকে নগরের চৌমাথা এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এসময় কোটা সংস্কারের পক্ষে ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে তারা।
আরও পড়ুন: কোটা সংস্কার: মঙ্গলবারের কর্মসূচি ঘোষণা আন্দোলনকারীদের
অন্যদিকে, আমতলার মোড় এলাকায় বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের (শেবামেক) শিক্ষার্থীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার ও কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে স্লোগান দেয় তারা।
অবরোধের স্থানগুলোতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হলেও আন্দোলনকারীদের কোনোরকম বাধা দেওয়া হচ্ছে না। সকালে বিএম কলেজ এলাকায় ছাত্রলীগের কিছু কর্মী আন্দোলনকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
মঙ্গলবার দুপুরে সোয়া ১টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সবগুলো অবরোধ চলমান ছিল।
বরিশাল মহানগরীর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার ফজলুর রহমান বলেন, ‘কোথাও কোনো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমরা শান্তভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’
আরও পড়ুন: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ স্লোগানে এডিটরস গিল্ড ও বিএফইউজের নিন্দা
কোটা সংস্কার: রবিবার বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা করবে শিক্ষার্থীরা
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আগামীকাল রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করতে চান।
স্মারকলিপিতে নতুন আইন বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে 'কোটা বৈষম্য' দূর করতে জরুরি পার্লামেন্ট অধিবেশনের আহ্বান জানাবে।
আন্দোলনকারীরা এক পুলিশ কর্মকর্তার দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে মামলাটিকে 'মিথ্যা ও বানোয়াট' আখ্যা দিয়ে দাবি জানান।
শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে 'বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের' ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব ঘোষণা দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করবেন না, কোটা সমাধান আদালতের মাধ্যমেই হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ঢাকার গণপদযাত্রা ছাড়াও রাজধানীর বাইরের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি পেশ করবেন।
রবিবার বেলা ১১টায় মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার অধিভুক্ত কলেজসহ ঢাকার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রধান ফটক থেকে শুরু হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের দাবিতে চলমান শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন অব্যাহত থাকবে। এ সমস্যা সমাধানে জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন বসার অনুরোধ জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপিও দেব।’
আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, সরকার পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনকে ব্যবহার করে আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা করছে। সরকারের উচিত ছিল শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপে বসা এবং এই সংকট নিরসনে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া। আমরা বলতে চাই, এ ধরনের পরিকল্পনা আমাদের প্রতিবাদ থামবে না।’
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে ধাবিত করার অপচেষ্টা করছে সরকার: মির্জা আব্বাস
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভে পুলিশ 'কোনো ক্ষয়ক্ষতির' খবর পায়নি। ‘আমাদের কাছে এ বিষয়ে রেকর্ড আছে। আমরা এই আকস্মিক ঘটনার জন্য পুলিশের কাছে জবাবদিহিতা দাবি করছি। এ ধরনের হুমকি আমাদের দমাতে পারবে না। আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। তারা যদি মামলা করতে চায় তাহলে ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে মামলা করতে পারে।’
শিক্ষকদের উদ্দেশে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, 'আপনাদের পেনশন স্কিমের জন্য ক্লাস বর্জন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আপনাদের সহযোগিতা করেছে। এখন সময় এসেছে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে সমর্থন করার। আপনাদের দাবি মানা হলেও আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাস বা পরীক্ষায় অংশ নেব না। আমরা দেখতে চাই না যে আমাদের শিক্ষকরা আমাদের ক্লাস এবং পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে এবং তীব্রতর করতে হবে, তবে এর দায় সরকারের। সরকার আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিলে আমরা রাজপথে থাকব না। এ অবস্থার দায় সরকারের, শিক্ষার্থীদের নয়।’
আরও পড়ুন: শাহবাগ থানায় কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা
‘বাংলা ব্লকেডে’ শিক্ষার্থীদের ওপর 'পুলিশের বর্বরতার' বিচারের দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বৃহস্পতিবার ‘বাংলা ব্লকেড’ চলাকালে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী তাদের ওপর 'পুলিশি বর্বরতার' প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
সরকারি চাকরিতে সব ধরনের অযৌক্তিক কোটা বাতিলের দাবিতে ছুটির দিনেও শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই সমাবেশে যোগ দেন।
শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে মিছিল করে ভিক্টোরিয়া পার্ক প্রদক্ষিণ করে এবং তারপরে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে জড়ো হয়। বিক্ষোভের কারণে সদরঘাট এলাকায় ব্যাপক যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা 'কোটা নাকি মেধা, মেধা, মেধা', 'কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন বর্বরতা? আমরা জবাব চাই!’ এবং ‘বাংলায় খবর ছড়িয়ে দাও, কোটা পদ্ধতিকে কবর দাও!’বলে স্লোগান দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া ইসলাম বলেন, 'দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাব। যতক্ষণ না সরকার সব ধরনের অন্যায্য কোটা বাতিল করে সংসদে আইন প্রণয়ন না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাব না, যতক্ষণ না সংবিধানে উল্লেখিত কোটা শুধুমাত্র সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যবহৃত হবে।’
আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি: শুক্রবার দেশব্যাপী সমাবেশ
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, 'আমরা সরকারি চাকরিতে সব ধরনের অযৌক্তিক কোটা বাতিলের যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছি। তবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সহপাঠীদের ওপর সহিংসতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা এই হামলার জন্য দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও শুক্রবার বিকালে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে এবং শাহবাগ মোড় অবরোধ করে।
আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আবু বক্কর মজুমদার জানান, শনিবার আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তারা।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদে বাকৃবিতে বিক্ষোভ