শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থীদের অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার: জাকসুর ভিপি প্রার্থী উজ্জল
দীর্ঘ ৩৩ বছরের অচলায়তন ভেঙে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা।
প্রতিশ্রুতি, প্যানেল গঠন ও নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেল থেকে মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইউএনবির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক যোবায়ের হোসেন জাকির।
আরিফুজ্জামান উজ্জল খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মো. আফজাল হোসেন এবং মাতা নাজমা খাতুন। তিনি কয়রা মদিনাবাদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হন এবং তিনি বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।
পড়ুন: জাকসু নির্বাচন: বাগছাসের জিএস প্রার্থী সিয়ামের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
বিগত জুলাই আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তৎকালীন সময়ে উজ্জল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সেইসঙ্গে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। কখনো সামনে থেকে এবং কখনো পিছন থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে তাকে।
এ ছাড়াও, উজ্জল ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌক্তিক আন্দোলনগুলোতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে তিনি সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
উজ্জল ভিপি পদে নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের কথাগুলোই তার মুখ দিয়ে বলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
প্যানেল গঠনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের সচেতন শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ নামে একটি ইনক্লুসিভ প্যানেল গঠন করেছি। এখানে এমন শিক্ষার্থীদেরই রাখা হয়েছে যারা দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করে আসছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে নেতৃত্ব দিয়েছেন’।
নির্বাচনে নারীদের অনাগ্রহের বিষয়ে বলেন, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মূলত এত লম্বা সময় ক্যাম্পাসে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ না থাকায় নারীদের অনাগ্রহের মূল কারণ বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে অনলাইনে নারীদের নিয়ে যে সমস্ত সাইবার বুলিং, ট্যাগিং, ফ্রেমিং করা হয়েছে, সেই জায়গা থেকেও এ নির্বাচনে নারীরা কিছুটা অনাগ্রহী।
পড়ুন: প্রতিশ্রুতি নয়, পরিবর্তনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ: জাকসুর ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী করার জন্য জোড়ালো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এসব কারণেই হয়তো নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম। তবে আমরা চেষ্টা করেছি, আমাদের প্যানেলে নারীদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে। এজন্য আমরা নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৬টি আসনের পাশাপাশি অন্য যে সকল সম্পাদকীয় পদে নারী-পুরুষ উভয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে সেই পদগুলোতেও নারী প্রার্থী দিয়েছি।’
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে এখন পর্যন্ত আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে দেখেছি। সেই জায়গা থেকে মনে হচ্ছে তারা বেশ স্বচ্ছতার সাথে কাজ করছে। ফলে তাদের বিষয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। আমরা আশা করছি এই নির্বাচন কমিশন একটি স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেবে।’
নির্বাচনের সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। যেহেতু কোনো দলীয় সরকার ক্ষমতায় নেই, সেই জায়গা থেকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার মতো কোনো পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত আমরা দেখছি না।’
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর থেকেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। কেননা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে তাদের পাশে থেকেছি, আন্দোলন করেছি। এ ছাড়া আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে আকাঙ্খার কথাগুলো শুনছি, আমাদের অঙ্গীকারগুলো উপস্থাপন করছি। এতে তারা আমাদের আরও উৎসাহ প্রদান করছে।’
আপনি ভিপি নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কি কি কাজ করবেন এর জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে ‘শিক্ষার্থীদের অধিকার, আমার অঙ্গীকার’। এছাড়া, শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, গবেষণা সহায়তা ও শিক্ষাবৃত্তি বৃদ্ধি, একাডেমিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, মানসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতি ও জাকসুর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চাই।’
পরিশেষে তিনি বলেন, ‘আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি—তাহলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে গবেষণাকর্মে অগ্রগামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাতারে জায়গা করে নিতে আমরা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণে সচেষ্ট হব।’
আগামী ১১ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক এবং স্বতন্ত্র মিলে মোট ৮ প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন ফরম ৮১৩ জন সংগ্রহ করে জমা দেন ৭৪০ জন। এর মধ্যে বাতিল হয় ২১ জনের। চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে জাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৭৮ জন। আর হল সংসদসহ মোট প্রার্থী ৪৭৫ জন। বাকী প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। তবে প্রার্থিতা ফিরে পেতে রিট করেছেন এক ভিপি প্রার্থী। রিটটি হাইকোর্টে এখন চলমান।
৮৭ দিন আগে
৬২ বছর ধরে স্কুল আছে শিক্ষার্থী নেই, জানেন ঊর্ধ্বতনরাও
প্রতি ক্লাসে ৩ থেকে ৪ জন শিক্ষার্থী, তারপরও খিচুড়ি খাওয়া হলেই ছুটি; বাড়ি চলে যায় তারা। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। গাইবান্ধা শহরের প্রাণকেন্দ্র ভি এইড রোডে অবস্থিত কে এন রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিত্যকার চিত্র এটি। গত ৬২ বছর থেকে এভাবেই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চললেও বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অজানা নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও বিদ্যালয়টির সরকারিকরণ করা হয় ১৯৭৩ সালে। শুরু থেকে এমপি মন্ত্রীদের সুপারিশে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়ে আসছে বিদ্যালয়টিতে। এ কারণে প্রথম থেকেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম থাকলেও শিক্ষক ছিল পর্যাপ্ত।
বিদ্যালয়টি বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে সুন্দর মনোরম পরিবেশে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীর কোলাহলপূর্ণ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বাস্তবে তা নয়, কোমলমতি শিশুদের ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে স্কুলের কার্যক্রম।
প্রতিষ্ঠার ৬২ বছর পরও স্কুলের শিক্ষকের সংখ্যা কম না হলেও শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। কোনো বছর প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীই ছিল না বলেও স্কুলের খাতাপত্র ঘেটে দেখা যায়। আবার কোনো কোনো ক্লাসে ছিল ১০ জন, কোনো ক্লাসে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ছিল না।
আবার দুটি ক্লাস চলে একই কক্ষে। দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা কীভাবে এক সঙ্গে নেওয়া হয়, তা অভিভাবকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ।
আরও পড়ুন: প্রভোস্টবিহীন জাবির কাজী নজরুল হল, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৬২ বছরেও স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল দেখাতে পারেনি বিদ্যালয়টি। অথচ শিক্ষকরা তাদের কর্তাব্যক্তিদের ‘ম্যানেজ’ করে মাসিক ভুয়া প্রতিবেদন দাখিল করে বহাল তবিয়তে চাকরি করে আসছেন।
অনিয়মের পাশাপাশি এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় কেউ এখানে ভর্তি হয় না বলে জানান স্থানীয় কাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, পড়ালেখার পরিবেশ নেই, শুধু ফাঁকিবাজি। সব জেনেও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা সব হজম করে পকেট ভরছেন আর ভালো রিপোর্ট দিচ্ছেন।
সম্প্রতি স্কুলের পড়ালেখার পরিবেশ তৈরি করতে ৬ জন শিক্ষিকা ছাড়াও একজন দপ্তরি নিয়োগ করা হয়। নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষিকারা কোমলমতি শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নের চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শিক্ষার্থী পেতে বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন, কিন্তু কাজ হয়নি। বরং শিক্ষার্থী না পেয়ে তারাও হতাশ। অনেক চেষ্টা করে ৬টি শ্রেণির জন্য মাত্র ৬০ জন শিক্ষার্থীকে ধরে রাখতে পেরেছেন তারা। তার মধ্যে তৃতীয় শ্রেণিতে ৩ জন আর চতুর্থ শ্রেণিতে ৪ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করে।
স্কুলের সামনের বাসিন্দা এবং ওই স্কুলের একসময়ের শিক্ষার্থী দুলাল মিয়া বলেন, ‘স্কুলের চারদিকে ভালো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। শিশুরা সেখানে পড়তে যায়। সেই কারণে কে এন রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদা শিরিন বলেন, ‘স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়াতে আমরা কম চেষ্টা করিনি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের স্কুলে পাঠানোর অনুরোধ করেছি, কিন্তু কাজ খুব বেশি হয়নি। তাছাড়া এই স্কুলের চারপাশে কোচিং সেন্টারসহ ভালো কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সে কারণে শিশুরা ওই দিকে ঝুঁকে পড়ছে।’
স্কুলের অন্যান্য শিক্ষিকারা বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থী ধরে রাখতে এবং উপস্থিতি বাড়াতে আমরা নিজেদের বেতনের টাকায় ছাত্রছাত্রীদের দুপুরে খিচুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। খিচুড়ি খেয়েই শিক্ষার্থীরা চলে যায়। এই স্কুলের অবস্থা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও গুঞ্জন থাকলেও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা তা এড়িয়ে যান। তারা কোনো পরামর্শ দিতেও স্কুলে আসেননি।
গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লক্ষণ কুমার দাস স্কুলের বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘জেলা পর্যায়ের সভায় বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। আমরা স্কুলে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করছি।’
৯৯ দিন আগে
প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস পর ক্লাসে ফিরছেন কুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
দীর্ঘ পাঁচ মাস ১০ দিন পর আজ (মঙ্গলবার) ক্লাসে ফিরছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে ক্লাস শুরুর নির্দেশ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদ হেলালী।
এর আগে, গতকাল (সোমবার) সকালে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত দুই দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, সাধারণ শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন উপাচার্য। এরপরই ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত আসে।
এদিকে, দীর্ঘদিন পর ক্লাস ও পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বস্তি নিয়ে এসেছে।
আরও পড়ুন: কুয়েটের নতুন উপাচার্য ড. মাকসুদ হেলালী
এ বিষয়ে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, ‘উপাচার্যের আশ্বাসে আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। প্রশাসন ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিলে শিক্ষকরা যোগ দেবেন।’
উপাচার্য ড. মাকসুদ হেলালী বলেন, ‘শিক্ষক ও ছাত্ররা একমত হয়েছে যে ক্লাস ও তদন্ত কার্যক্রম একসঙ্গে চলবে। এজন্য মঙ্গলবার থেকে ক্লাস শুরুর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক আহত হন। ওই রাতেই হামলাকারীদের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে তৎকালীন উপাচার্যসহ কয়েক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ২৫ এপ্রিল উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদকে অব্যাহতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে ৪ মে থেকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। এরপর শিক্ষকরা আর ক্লাসে ফেরেননি।
১২৯ দিন আগে
জবি শিক্ষার্থীদের গণঅনশন শুরু
শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের দাবিতে যমুনা অভিমুখের কাকরাইল মসজিদ মোড়ে গণঅনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১৬ মে) বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে অনশন শুরু করেন তারা। অনশন কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র ও ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ ভূইঁয়া।
এর আগে বিকাল ৩টায় সমাবেশে জবি ঐক্যের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহতাব লিমন।
তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে আমাদের আর পেছনে ফেরার জায়গা নেই। আমরা বিকাল সাড়ে ৩টায় অনশন কর্মসূচি শুরু করব। বিজয় না নিয়ে আমরা ফিরছি না।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে ‘জবি ঐক্যের’ পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছউদ্দীন এ ঘোষণা দেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাকরাইল মোড়েই অবস্থান করবেন শিক্ষার্থীরা।
অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, আমরা সরকারের নিকট আমাদের অধিকার আদায়ের দাবি জানিয়েছিলাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মেরেছে কিন্তু আমাদের অধিকারের বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি। এমনকি ৩৫ ঘণ্টা পার হলেও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি প্রশাসন। সরকার থেকে কোনো বার্তাও আসেনি।
আরও পড়ুন: জবি শিক্ষার্থীদের সমাবেশ শুরু
তিনি আরও বলেছেন, দাবি আদায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাল জুম্মার পরে গণঅনশন শুরু করবে। এতে সকল সাবেক ও বর্তমান জবিয়ানদের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকদের উপর পুলিশের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ১৪ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবস পালনের ঘোষণা দেন তিনি।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হলো- আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে হবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে এবং শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
২০২ দিন আগে
শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
শিক্ষার্থীদের নতুন এক বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (১৪ মে) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত নতুন কিছু গড়ার সক্ষমতা রাখি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলে আমাদের মতো করে এক নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি।’ তবে প্রত্যেকেরই স্বপ্ন থাকা দরকার- কেমন পরিবেশ ও সমাজ তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেই সম্পর্কে।
আরও পড়ুন: চবির সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে উষ্ণতায় বরণ
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পটভূমি স্মরণ করে তিনি বলেন, বর্তমানে যে সভ্যতা চলছে—তা একটি ধ্বংসাত্মক অর্থনীতির সভ্যতা।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে অর্থনীতি তৈরি করেছি—তা মানুষের জন্য নয়, বরং ব্যবসার জন্য।’ ব্যবসাকেন্দ্রিক এই সভ্যতা আত্মঘাতী—তা টিকবে না বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
ড. ইউনূস বলেন, দীর্ঘদিন পর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আনন্দিত। তিনি স্মরণ করেন, ১৯৭২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন।
তিনি ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ এবং কীভাবে গ্রামীণ ব্যাংক চট্টগ্রামে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের সহায়তা করতে গঠিত হয়েছিল—তা তুলে ধরেন। চবির অর্থনীতি বিভাগে গ্রামীণ ব্যাংকের জন্ম হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।
অনুষ্ঠানে, চবি কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক ইউনূসকে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের জন্য সম্মানসূচক ডক্টরেট অব লিটারেচার (ডি লিট) উপাধিতে ভূষিত করে।
চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার অধ্যাপক ইউনূসের হাতে ডি লিট সনদ তুলে দেন।
সমাবর্তনে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফয়েজসহ অন্যান্যরাও বক্তব্য দেন।
চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. কামাল উদ্দিনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এই সমাবর্তন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়। বিশ্ববিদ্যালয়টির ২২ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারীদের পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয় ৪২ জন পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত এবং ৩৩ জন এমফিল গবেষককে সম্মানিত করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহিয়া আখতার সমাবর্তনকে ‘একটি একাডেমিক উদযাপন ও যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য একটি সর্বোচ্চ মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় এক দশক ধরে এই অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বন্দরকে বিশ্ব মানের সমুদ্রবন্দরে রূপান্তরিত করার আশাবাদ প্রধান উপদেষ্টার
সমার্বতন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ড. ইউনূস মঞ্চে আসলে তাকে স্নাতক ও শিক্ষকরা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। চবির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অনুষদ সদস্য ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের ক্যাম্পাসে আগমন একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে তাকে স্বাগত জানানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক ইউনূস আজ সকালে তার নিজ জেলা চট্টগ্রাম সফর শুরু করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তার প্রথম সফর। প্রায় ১২ ঘণ্টার এই সফরে টানা ব্যস্ততায় শেষ করবেন তিনি।
সমাবর্তনের পর অধ্যাপক ইউনূস হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে তার পৈতৃক বাড়ি পরিদর্শন করেন।
২০৪ দিন আগে
পা দিয়ে লিখে স্বপ্ন ছুঁলো কুড়িগ্রামের শিক্ষার্থী মানিক
হাত নেই, তাই বলে কি স্বপ্ন থেমে যাবে! স্বপ্ন তো হার মানার জন্য নয়। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় যে স্বপ্ন পূরণ করতে পারে তারই নজির তৈরি করেছেন কুড়িগ্রামের এক শিক্ষার্থী। পা দিয়ে লিখে স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এমন অদম্য মনোবল ও মেধার সাক্ষর রেখেছেন কুড়িগ্রামের শিক্ষার্থী মানিক রহমান। পা দিয়ে লিখে হাজী মুহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় ১৯২তম স্থান অধিকার করেছেন তিনি। হাবিপ্রবির বি অনুষদে ভর্তি পরীক্ষায় তিনি এ সাফল্য অর্জন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
এর আগে, মানিক মাধ্যমিক সমাপনী পরীক্ষা (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিক সমাপনী পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।
রবিবার (১১ মার্চ) দুপুরে হাবিপ্রবির বি অনুষদে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর মানিকের এ সাফল্যের তার মা-বাবা, আত্নীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীসহ অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।মানিক রহমান ২০২২ সালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২৪ সালে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
মানিক কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও সহকারী অধ্যাপক মরিয়ম বেগমের বড় সন্তান। শুধু এসএসসি- এইচএসসিতে নয় বাবা-মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় নিজের আত্মবিশ্বাস ও মনোবলকে কাজে লাগিয়ে পিইসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং জেএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে সকলের মুখ উজ্জ্বল করেছিল মানিক রহমান। এছাড়াও পা দিয়ে মোবাইল চালানো এবং কম্পিউটার টাইপিংয়েও যথেষ্ট পারদর্শী সে। এ কারণেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতে একজন দক্ষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের কারনে অবশেষে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের দ্বার উন্মোচিত হলো মানিকের।
আরও পড়ুন: অবৈধ দখল-দূষণের কবলে ফেনীর ২৪৪ নদী ও খাল
মানিকের এমন সাফল্যে বাবা মিজানুর রহমান ও মা মরিয়ম বেগম জানান, আমাদের দুই ছেলের মধ্যে মানিক বড়। মানিক জন্ম থেকেই শারিরীক প্রতিবন্ধী। তার দুটি হাত নেই, একটি পা অন্যটার চেয়ে অনেকাংশে খাটো। কিন্তু প্রতিবন্ধী হলেও আমরা তাকে প্রতিবন্ধী মনে করি নি। হাত না থাকায় ছোট থেকেই আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। পা দিয়ে লিখলেও তার লেখা অনেক সুন্দর এবং পড়াশোনায় সে খুবই মনোযোগী। সকলের দোয়ায় আজ তার কম্পিউটার ইন্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নের দ্বার উন্মোচিত হলো। সকলে দোয়া করবেন সে যেন একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে।
নিজের ব্যাপারে মানিক রহমান বলেন, আমার দুটি হাত না থাকলেও আল্লাহর অশেষ রহমত, বাবা মা ও শিক্ষকদের দোয়া ও অনুপ্রেরণায় আমি পিইসি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত সকল পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি। এবছর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে মেধা তালিকায় ১৯২ তম স্থান অধিকার করেছি। সকলেই দোয়া করবেন আমি যেন একজন দক্ষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারি।
২০৭ দিন আগে
চার দফা দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) বৈষম্যমূলক নীতি, আবাসন ভাতা ও হল নির্মাণসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৭ মে) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ভিসি ভবনের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘প্রহসনের বাজেট মানি না, মানবো না’; ‘বৈষম্যের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; ‘বাজেট নিয়ে বৈষম্য মানি না, মানবো না’; ‘ইউজিসির গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথেসহ’ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সব আন্দোলনেই সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।’
ইউজিসি চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি যে পদে বসে আছেন, সেই পদে বসতে জবি শিক্ষার্থীদের ত্যাগ আছে। সুতরাং বৈষম্য বন্ধ করুন এবং জবির শিক্ষার্থীদের আবাসনসহ চার দাবি দ্রুত মেনে নিন। দাবি মেনে না-নিলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও করা হবে।’
কর্মসূচিতে জবি ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের সেক্রেটারি আশিকুর রহমান বলেন, ‘২০২৪ সালের আন্দোলনে এমন কোনো দিন ছিল না, যেদিন পুরান ঢাকায় আন্দোলন হয়নি। আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আপনারা মন্ত্রণালয় গঠন করেছেন, অথচ আজ আমাদের ওপরই বৈষম্য করছেন।’
‘আবাসন ভাতা ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। আমাদের ৯০-৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টাকার অভাবে সকালের নাশতা খেতে পারেন না। পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি পরিবেশে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি,’ অভিযোগ করেন এই শিক্ষার্থী।
এদিকে, জবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, ‘হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চলবে, নয়তো চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। ঢাকার মধ্যে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাজেটে এত বৈষম্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
আরও পড়ুন: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। শিক্ষার্থীদের আবাসন ভাতা দেওয়ার চেষ্টা করছি এবং তাদের চার দফা দাবি পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে, আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। বাজেট বৃদ্ধির নীতিমালাতেও ত্রুটি আছে, এজন্য আমরা ইউজিসি সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি ‘
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হলো: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বৃদ্ধি এবং অন্তত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ভাতা অন্তর্ভুক্ত করা। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ এবং পুরান ঢাকায় ড. হাবিবুর রহমান হল ও বাণী ভবনের নির্মাণকাজ আগামী ১০ মে’র মধ্যে শুরু করা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি ১৫ দিন অন্তর দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও হল নির্মাণ কার্যক্রমের অগ্রগতি মুক্তমঞ্চে ব্রিফ করার বাধ্যবাধকতা আরোপ। আগামী ১৫ মে’র মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা।
২১১ দিন আগে
মেহেরপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২ শিক্ষার্থী নিহত
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় মাদরাসা ছাত্র মুনতাছির জামান (১২) ও কলেজ ছাত্র তারিক হোসেন (২৬) নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনা দুটিতে আহত হয়েছেন আরও ২ জন।
মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুরের দিকে গাংনী উপজেলার তেরাইল ও কামারখালি নামক স্থানে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মুনতাছির জামান গাংনী উপজেলার সিন্দুরকৌটা গ্রামের ইসমাইল হোসেনে ছেলে ও ছাতিয়ান বাওট হাফিজিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী। এছাড়া নিহত তারিক হোসেন একই উপজেলার কাজিপুর গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে ও কাজিপুর কলেজের শিক্ষার্থী।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বানী ইসরাইল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি জানান, গাংনী উপজেলার কামারখালি গ্রামের ব্রিজের কাছে ইটবোঝিই লাটাহাম্বার ধাক্কায় নিহত হয়েছেন মাদরাসা ছাত্র মুনতাছির জামান। এ সময় তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।
অপরদিকে বেলা আড়াইটার দিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী উপজেলার তেরাইল নামক স্থানে ভয়াবহ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তারিক হোসেন, সোহাগ হোসেন ও আমজাদ হোসেন নামের তিনজন আহত হন।
আরো পড়ুন: লামায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুর মৃত্যু
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে ওসি বানী ইসরাইল জানান, তেরাইল ব্রিজের নিকট বিপরীত দিক থেকে আসা দুটি মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে এই তিনজন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন স্থানীয়রা। পরে তাদের মধ্যে তারিক ও সোহাগের অবস্থার অবনতি হওয়ায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
২১২ দিন আগে
যশোরে এতিম-অনাথ শিক্ষার্থীদের মাঝে লিচু বিতরণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার
মাদরাসায় অধ্যয়নরত মা ও বাবাহারা এতিম-অনাথ ছাত্র-িছাত্রীদের মাঝে লিচু বিতরণ করেছেন যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার। সোমবার (৫ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় অফিসের কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি সদর উপজেলার তিনটি মাদরাসায় লিচু বিতরণ করেন।
শারমিন বলেন, ‘মাদরাসায় অধ্যয়নরত এতিম-অনাথ ছাত্র ও ছাত্রীরা সমাজে নানাভাবে অবহেলিত। তাই পিতা-মাতাহারা এসব ছাত্র-ছাত্রীদের দুঃখ, কষ্টের কথা মনে করে ও তাদের সঙ্গে একসঙ্গে মিলেমিশ খাওয়ার জন্যই আমি তাদের মাঝে আমার বাসভবনে উৎপাদিত লিচু বিতরণ করেছি।’
উপজেলা পরিষদের নিজ বাসভবনে উৎপাদিত লিচু নিজে না খেয়ে এবং অফিসের কর্মচারীদের না দিয়ে মাদরাসার এতিম-অনাথদের দুঃখ, কষ্টের কথা ভেবে তিনি এই লিচু বিতরণ করেন।
বসুন্দিয়া ইউনিয়নের সিঙ্গিয়া এতিমখানা ও বানিয়ারগাতি দাখিল মাদরাসায় প্রথমে তিনি লিচু বিতরণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে মাদরাসার শিক্ষক ও অফিসের কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার ঝুমঝুমপুর ফজলুল উলুম কওমী মাদরাসা ও এতিমখানায় লিচু বিতরণ করেন।
২১৩ দিন আগে
মেধা পাচার: তরুণদের জীবনের লক্ষ্যই যখন দেশত্যাগ
জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেস্কো) সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, উন্নত জীবন ও উচ্চশিক্ষার আশায় গত দেড় দশকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দেশত্যাগের পরিমাণ বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে সিংহভাগ শিক্ষার্থীর জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে দেশত্যাগ।
বিশ্বব্যাংকের জরিপ অনুযায়ী, বিগত এক দশকে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে চাকরির বাজারে প্রবেশে হিমশিম খান স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করা শিক্ষার্থীরা। এতে করে তাদের মধ্যে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা আরও উর্ধ্বমুখী হয়েছে।
রাজধানীর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আয়াজ বিন ফারুক। স্নাতক শেষ করতে আয়াজের বাকি দুই সেমিস্টার। কিন্তু স্নাতক শেষ করে কোন চাকরি করবেন—এ ব্যাপারে এখনও কোনোকিছু ঠিক করতে পারছেন না তিনি।
নিজের হতাশার কথা জানিয়ে আয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশের ছাত্রদের হাতে মূলত তিনটি অপশন। পাস করে হয় বিসিএসের জন্য পড়াশোনা, না হলে ব্যাংক পরীক্ষার জন্য জোরেশোরে প্রস্তুতি নেওয়া; আর এসব কিছু না হলে আইএলটিএস দিয়ে বিদেশ যাওয়া।’
আরও পড়ুন: জাপানের এনইএফ বৃত্তি পেলেন বাকৃবির ১০ মেধাবী শিক্ষার্থী
বাংলাদেশে নবম গ্রেডের প্রথম শ্রেণির চাকরি হিসেবে বিসিএস বিবেচ্য। চাকরির নিশ্চয়তা ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় অনেক শিক্ষার্থী বিসিএসকে রাখেন পছন্দের তালিকার শীর্ষে। কিন্তু পদের হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতিবছর যতজন এই পরীক্ষার জন্য আবেদন করেন, তার তুলনায় মোট পদের সংখ্যা নিতান্ত নগণ্য।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তথ্যানুযায়ী, সর্বশেষ ৪৬তম বিসিএসে মোট ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০৮ জন আবেদন করেছেন, যেখানে শূন্য পদের সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার ১৪০।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সফিউর রহমান বলেন, ‘সকাল থেকে সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে সবাই লাইন ধরে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে যায়। প্রথম বর্ষ থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে, এমনও অনেকে আছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিসিএস সোনার হরিণ, যার পেছনে না দৌড়ে বিদেশে পাড়ি জমানোই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত বড়সংখ্যক শিক্ষার্থীর কাছে।’
শুধু বিসিএস নয়, সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেও অনেক শিক্ষার্থী বেছে নিয়েছেন বিদেশকে। সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডন পাড়ি জমিয়েছেন ফাতেহা জাহান ইকু।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখনও দেশের নারীরা কর্মক্ষেত্রে সমানাধিকার পায় না। দেশের সামাজিক অবস্থাও নারীদের প্রাপ্য মর্যাদা দিতে প্রস্তুত না। এক্ষেত্রে উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত মেয়েদের বেশিরভাগরই পছন্দ বিদেশ পাড়ি জমানো।’
আরও পড়ুন: মেধাভিত্তিক ভর্তির দাবিতে মিরপুর সড়ক অবরোধ
মূলত বিদেশে নারীর নিরাপত্তা এবং সামাজিক স্বাচ্ছন্দ্যই দেশের নারী শিক্ষার্থীদের কাছে মুখ্য বলে জানান ইকু।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) হিসাবে, প্রতিবছর ১০ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক পাস করে। এ বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো চাকরির বাজার কিংবা সুষ্ঠু পরিকল্পনা।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব হিউস্টনের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম। রিভার্স ব্রেইন বিডি এবং মেধা পাচার রোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান চাকরির সঙ্গে প্রতি বছর পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীর অনুপাত বিবেচনা করলেই বোঝা যায়, কেন বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী দেশ ছাড়তে চায়।’
তার মতে, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী দেশের ভেতরে চাকরি পাচ্ছে না। যারা বিদেশে পড়াশোনা করতে গেছেন তারা দেখছেন, ফিরে এলে ভালো চাকরি পাওয়া যাবে—এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। যারা দেশে আছেন, তাদের অবস্থা দেখে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু পরিকল্পনার বড় অভাবের কারণে চাইলেই রিভার্স ব্রেইন বিডি ক্যাম্পেইন বাস্তবায়ন সম্ভব না বলে মনে করেন এ শিক্ষক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট বেকারের ১২ শতাংশ স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর পাস। যাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তাদের মধ্যে বরং বেকারত্বের হার কম। অর্থাৎ যারা উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন তাদের জন্য দেশে সন্তোষজনক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না বলেই স্পষ্ট করছে পরিসংখ্যান।
অন্যদিকে দেশে যারা চাকরি করছেন তারা নিজেদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে খুশি নন। এছাড়া দেশের অফিস সংস্কৃতি নিয়েও মনঃক্ষুণ্ন তরুণরা। এমনই এক করপোরেট প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ফয়সাল রিমন বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশে যখন নতুন নতুন ওয়ার্ক কালচার প্রবর্তন হচ্ছে, সেখানে এখনও মান্ধাতার আমলের নিয়মে চলছে বাংলাদেশ। দেশের বেশিরভাগ অফিসে শ্রম আইনের ধার ধারা হয় না। নিজেদের কাঠামো অনুযায়ী বেতন ও সুযোগ-সুবিধা ঠিক করে কোম্পানিগুলো।’
‘একটা সময় ছিল তরুণরা চাকরিক্ষেত্রে তাদের অধিকার নিয়ে সচেতন ছিল না। বেতন-ভাতার ব্যাপারে ছিল না সম্যক ধারণা। কিন্তু বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে তরুণ চাকরিজীবীরা নিজেদের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ পাচ্ছে, পারছে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে। সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকায় তারা দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে,’ অভিমত রিমনের।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলের ছাত্র শাফায়াত আল রাজি বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন শিক্ষার্থীর চাকরি জীবন শুরু হতে হতে বয়স ২৫ পেরিয়ে যায়। এরপর অনেকের ২-৫ বছর শুধু চাকরির জন্য প্রস্তুতিই নিতে হয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে ১৬-১৮ বছরের মধ্যে একটি ছেলে চাকরিতে প্রবেশ করে এবং আয় করতে শুরু করে।’
নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে শাফায়াত বলেন, ‘বাংলাদেশে থাকতে আমার পড়াশোনার খরচ আমার মা-বাবাকে দিতে হতো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর পড়াশোনার পাশাপাশি আমি পার্ট টাইম চাকরি করতে পারছি। আমার বার্ষিক বেতন গড়ে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ডলার। নিজের খরচ চালিয়ে দেশেও টাকা পাঠাতে পারছি। এটি বাংলাদেশে থাকলে সম্ভব হতো না।’
ইউনেস্কোর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৫২ হাজার ৮০০ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছে। দেড় দশক আগে ২০০৮ সালে এই সংখ্যা ছিল মোটে ১৬ হাজার ৮০৯।
ইন্ট্যারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জের ওপেন ডোর রিপোর্ট-২০২৪ অনুযায়ী, গত বছর শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ১৭ হাজার শিক্ষার্থী পাড়ি জমিয়েছে, যা যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ। গত অর্থবছরের তুলনায় এ সংখ্যা ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বেশি।
আরও পড়ুন: বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার কাজ চলছে: গভর্নর
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের ফেলো গবেষক নুসরাত জাহান চৌধুরী বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে প্রচুর বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে আসছে, যাদের বড় সংখ্যকই আর দেশে ফিরবেন না। অনেকগুলো কারণের মধ্যে জীবনযাত্রার মান বা সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তার বাইরেও একটি বড় কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশে বিদেশের উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান আর দক্ষতার মূল্যায়নের অভাব আছে, পাশাপাশি নেই পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ।’
তিনি বলেন, ‘অনেকের ক্ষেত্রে এমন হয়েছে, উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফেরত গেলেও তাকে প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয় না, যার জন্য তার নতুন দক্ষতা কাজে লাগানোর সুযোগ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। উচ্চশিক্ষা অর্জনের পরে দেশে ফিরে পূর্বের প্রতিষ্ঠানে যোগদান করলে নতুন দক্ষতা অনুযায়ী তাকে উপযুক্ত পারিতোষিক না দেওয়ার নজিরও বহু আছে।’
‘এ ছাড়া বাংলাদেশের ওয়ার্ক কালচার অনুযায়ী, একই প্রতিষ্ঠানে বেশিদিন ধরে কর্মরত ব্যক্তিরা তুলনামুলকভাবে প্রমোশন বা আপগ্রেডেশনে এগিয়ে থাকেন। সেখানে দক্ষতা বা অভিজ্ঞতার থেকেও মুখ্য হয়ে ওঠে কর্মরত ব্যক্তির বয়স। কখনও কখনও প্রতিষ্ঠান বা দলীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে হয় চাকরিজীবীদের, যেটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে হরহামেশা দেখা যায়। এছাড়া স্বাধীনভাবে গবেষণা বা মত প্রকাশ করার ফলে নানারকম হয়রানিতেও পড়তে হয়, যদি তা ক্ষমতাসীন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়।’
এসব বিবেচনায় বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে অনেক শিক্ষার্থী দেশে ফেরা সমীচীন মনে করেন না বলে জানান এই গবেষক।
জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড করপোরেশনের (ডি+সি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বহু বছর ধরে অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিট্যান্সের ওপর ভরসা করে আসছে। এতে করে ১৯৮০ সালের দিক থেকে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোয় বাংলাদেশের সরকারের আগ্রহ ছিল সর্বাগ্রে। কিন্তু বর্তমান অভিবাসন প্রক্রিয়া আলাদা। এখন যারা দেশ ছাড়ছেন তাদের গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং পশ্চিমে। যারা মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে গিয়েছেন তারা একসময় দেশে ফিরে এসেছেন। এখন যারা উন্নত জীবনের আশায় পশ্চিমা দেশগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছেন, তাদের ফিরে আসার মনোভাব নেই।
যারা ফিরে না আসার সংকল্প নিয়েই দেশ ছাড়ছেন তাদের ব্যাপারে ভাবতে হবে, তাদের দেশে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। রেমিট্যান্সকে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড না বানিয়ে মেধার ওপর গুরুত্বারোপ এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে মেধার সর্বোচ্চ উপযোগিতা আদায়ের প্রস্তাব দেওয়া হয় প্রতিবেদনে।
২১৬ দিন আগে