সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি তাকে বলেছেন যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
‘যদি কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েও থাকে ব্যাপারটায়, সেটা তাদের বিবেচনায় আছে এবং আমার মনে হয় এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা পাবেন,’ যোগ করেন আনিসুল হক।
১৬ মে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বলা হয়, ‘ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো ইলেকট্রনিক মিডিয়া তাদের চ্যানেলে এবং কোনো কোনো প্রিন্ট মিডিয়া তাদের পত্রিকায় বিচারাধীন মামলা বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন/স্ক্রল করছে, যা একেবারেই অনভিপ্রেত। এমতাবস্থায় বিচারাধীন কোনো বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন/স্ক্রল করা হতে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
দু-একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে বাংলাদেশে অধিকাংশ মামলার বিচার পর্যবেক্ষণ ও সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগ করে আসছে দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন যে ভাষায় নির্দেশনা জারি করেছে তাতে বিচার শেষে রায় হওয়ার আগে সাংবাদিকদের আর কোনো মামলার বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশের সুযোগ থাকে না।
এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানায় আইন-আদালত বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ল রিপোর্টার্স ফোরাম। এছাড়াও এডিটরস গিল্ড ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করে বিষয়টি স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছে।
এ অবস্থায় সোমবার আইনমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রধান বিচারপতির সাথে বৈঠক করেন।
এদিকে, কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে ব্যবস্থা কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘কোনো সমস্যা যদি হয় তাহলে রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদের অধিকারী। তার কাছে কোনো না কোনো নালিশ পাঠানো যেতে পারে এবং তার যথেষ্ট ক্ষমতা আছে। তাছাড়া সংবিধানের মধ্যে থেকেই তিনি বিবেচনা করতে পারেন। সেট তার বিবেচ্য বিষয়। ষোড়শ সংশোধনীর ব্যাপারে যে শূন্যতা, সে শূন্যতার কারণে কোনো কিছুই রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো যাবে না, এটা ঠিক না।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ছিল সংসদের হাতে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সময়ে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে বিচারক অপসারণের বিষয় নিষ্পত্তির ভার দিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেন।
পঞ্চম সংশোধনী আদালত অবৈধ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১৪ সালে সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনী এনে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেয়। ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন হলে ২০১৬ সালে হাইকোর্টের তিন বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। পরে আপিল বিভাগও সেই রায় বহাল রেখে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল আবার ফিরিয়ে আনে। রায়টি পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা রিভিউ আবেদন বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।