এককালে নদীটি ছিল টাঙ্গাইলের অর্থনীতিতে জীবনী সঞ্চালক। নৌপথে যাতায়াত ছাড়াও পণ্য নিয়ে বড় বড় নৌকা ও জাহাজ চলতো এই নদী দিয়ে। বৃটিশ শাসনামলে এই নদী দিয়েই কলকাতা পর্যন্ত চলতো যাত্রী ও পণ্যবোঝাই নৌকা ও জাহাজ।
ভারত বিভাগের পরও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলতো নৌকা, লঞ্চ ও জাহাজ। সারাবছরই ছিল এমন অবস্থা।
বর্তমানে চর পড়ে নদীটির অবস্থা এমন হয়েছে যে, শুস্ক মৌসুমে ধলেশ্বরীর বুকে ধানসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ হয়। পানির অপেক্ষায় নদীর চড়ায় পড়ে থাকে নৌকা। হেঁটে, মোটরসাইকেলে, রিকশা-ভ্যান, ঘোড়ার গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ধলেশ্বরীর বুক পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যায় মানুষ।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গোলচত্বর এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পূর্বপাশে বিশাল এলাকাজুড়ে চর জেগেছে। উত্তর-পশ্চিম পাশেও চর। মূল নদীর অনেক স্থানে ধান আবাদ করা হয়েছে। একটু উঁচু জায়গায় কিছুদিন আগে আবাদ করা হয়েছিল মাসকলাই ও খেসারী কলাই। কোনো কোনো স্থানে আখ লাগানো হয়েছে। মাঝে মাঝে ছোট-বড় গর্তে জমে আছে পানি। অনেক জায়গা শুকিয়ে গেছে।
ধলেশ্বরী পাড়ের আব্দুল আলীম জানান, গোলচত্বর থেকে অনেক পশ্চিমে ছিল যমুনা নদীর একটি শাখা। আর মূল ধলেশ্বরী নদী ছিল গোলচত্বর এলাকা দিয়ে। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার আগে ধলেশ্বরী নদীতে প্রচণ্ড স্রোত ছিল। নদীও ছিল খুব গভীর। ১৯৮৮ সালের বন্যার পর থেকে ধলেশ্বরীতে চরপড়া শুরু হয়। আর সেখানে আস্তে আস্তে গড়ে উঠে বসতি।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরও চর পড়ে ধলেশ্বরীর গতি একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যমুনা নদী থেকে বেরিয়ে আসা ধলেশ্বরীর অংশ থেকে অন্তত দশ কিলোমিটার খনন করা হলে নদী আবারও গতিশীল হবে বলে মনে করেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মানুষ পারাপারের জন্য একটি স্থানে কাঠ দিয়ে সাঁকো বানানো হয়েছে। সেখান দিয়ে যাতায়াতের জন্য টোল আদায় করা হয়। সে সাঁকোর নিচের অংশও শুকনো। দুইপাড়ের মানুষ হেঁটে, মোটরসাইকেল অথবা অটোরিকশা নিয়ে চলাচল করছে।
এই পথ দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন এমন একজন পথচারী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরের মধ্যে অতিরিক্ত চরপড়ে নদীটি আরও সরু হয়ে গেছে।
ধলেশ্বরী নদীর পাশের মাকোরকোল গ্রামের রেজাউল করিম বলেন, আগে দেখেছি নদী অনেক প্রশস্থ এবং প্রবল স্রোত ছিল। স্যালোচালিত নৌকা দিয়েও নদী পার হতে ঝামেলা হতো। দশ বছর আগেও নদীতে খুব স্রোত থাকতো। এখন সে নদীর রূপ আর নেই।
গোলচত্বর এলাকায় ২৫ বছর ধরে নদীতে খেয়া পারাপার ও টোল আদায় করেন আব্দুস ছালাম। তিনি বলেন, দশ বছর আগেও নদীর এপার থেকে ওপারে নৌকা নিয়ে যেতে স্রোতের কারণে অনেক ভাটিতে গিয়ে নৌকা থামাতে হতো। এখন সোজা গিয়ে নদী পাড় হওয়া যায়। বছরের অর্ধেকের বেশি সময় নদীতে পানি থাকে না। ধলেশ্বরীর গোলচত্বর থেকে উভয়পাশের চর বাদে মূল নদীর অংশ ধরে অন্তত দশ কিলোমিটার খনন করা হলে নদী আবার চালু হতে পারে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, যমুনা নদী থেকে ধলেশ্বরী নদীর মুখ দেড় কিলোমিটারের মধ্যে উঠানামা করে। বন্যার সময় উজান থেকে আসা কাদা মাটি জমে মুখে চর পরে মুখ উঁচু হয়ে গেছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে ধলেশ্বরীতে আর পানি থাকে না। নদীটিকে সচল করতে নতুন প্রকল্প প্রণয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন।