তাদের সাথে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন এই দম্পতির ৩ ছেলে ও এক মেয়ে। কিন্তু সকল নিয়ম যথাযথভাবে মেনে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন তারা।
নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের করোনা থেকে মুক্তির গল্প বার্তা সংস্থা ইউএনবির সাথে ভাগাভাগি করেছেন শেখ মহিউদ্দিন রাসেল।
তিনি বলেন, ‘আলহামদুল্লিাহ,পরম করুনাময় রাব্বুল আলামিনের কাছে। যার দয়া ও করুনায় আমি ও আমার চার সন্তানসহ পরিবারের ছয়জন আজ করোনামুক্ত। নিজেদেরকে করোনা যুদ্ধে জয়ী বলবো না, আল্লাহর দয়াতেই কঠিন এ ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়েছি।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শুরুর দিকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলা পরিষদের ত্রাণ বিতরণ কাজে অংশ নিয়েছিলাম। আমার স্ত্রী রোজিনা হাবিবও তার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির তালিকা প্রণয়নে আক্কাছ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েছে। করোনা থেকে রক্ষার সব উপকরণ পরেও সতর্কতার মধ্যে চলেও ভাইরাস যে কখন নিজেদের দেহে বাসা বেধেছে তা জানা ছিল না।
‘শরীর একটু খারাপ লাগায় ছুটি নিয়ে অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দেই। ১৪ মে আমার ও স্ত্রী রোজিনা হাবিবের জ্বর, সর্দি, শরীর ব্যথা দেখা দেয়। ভাবলাম মৌসুমের ভাইরাস জ্বর। বুঝে উঠতে না উঠতেই ছেলে শেখ আরিফ মহিউদ্দিন (১৫), শেখ আসিফ মহিউদ্দিন (১৩), শেখ আবিদ মহিউদ্দিন (৯) ও মেয়ে আমেনা বিনতে মহিউদ্দিন (৩ বছর ৩মাস) সকলেরই জ্বর, সর্দি, বমি ও পেট খারাপ দেখা দেয়। পরে সময়ক্ষেপণ না করেই সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহর সাথে আলাপ করি এবং তিনি হাসপাতালে যেতে বলেন। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে না দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। বাসাতেই সবাইকে দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করতে বলি। সবার ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা করে দেই,’ বলেন মহিউদ্দিন রাসেল।
করোনার পরীক্ষা না করেই এরপর চলতে থাকে এই ভাইরাস থেকে মুক্তির সব কার্যক্রম। লেবু,দারচিনি, এলাচ, লং, আদা, কালজিরা, তেজপাতা মিশিয়ে পানি গরম করে দিনে অন্তত ৪ বার ভাপ নিতে শুরু করি। এরপর ওই পানি পান করতাম। বড় ছেলের গলা ব্যথার কারণে লবণ দিয়ে ওই পানি গড়গড়া করাতাম। নমুনার রেজাল্ট যাই হোক না কেন পজেটিভ ভেবেই যথারীতি চিকিৎসা শুরু করি। পেট খারাপ থাকার কারণে ওদের দু’একজনকে এসএমসির ওরস্যালাইন দেয়া হতো। রং চা, গরুর গরম দুধ পান করাতাম, বলে যান তিনি।
করোনাজয়ী এই যোদ্ধা বলেন, সকলের আলাদা আলাদা বিছানা প্রতিদিন জীবাণু ধ্বংসের জন্য রোদে দিতাম।বাসার মেঝে ব্লিসিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করতাম।
১৭ মে সদর হাসপাতাল থেকে দুইজন স্বাস্থ্য সহকারী বাসায় এসে আমাদের সকলের নমুনা সংগ্রহ করেন। এবার রিপোর্টের অপেক্ষার পালা। প্রহর গুনছি রিপোর্টের জন্য আর ওদের, নিজেদের সেবা ওভাবেই চালাচ্ছি। কোন ঠান্ডা পানি নয় কুসুম গরম করে সবাই পানি পান করি। এরই মধ্যে আমার জ্বর ভালো হয়ে গেছে; মনে হয়েছে সুস্থ বোধ করছি। স্ত্রী চরম অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাচ্চাদের কারো জ্বর কিছুটা কমলেও আবার কারো পেট খারাপ থাকে,আবার বমি করে, বলেন এই কর্মকর্তা।
করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ২০ মে পান জানিয়ে তিনি বলেন, ৬ জনেরই করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। সিভিল সার্জন ও ডা. পলিন জানালেন আমাদের এ সময়টা কিভাবে চলতে হবে। কিছু দিকনির্দেশনা ও ভিটামিন জাতীয় ওষুধের নাম দেন।
এরই মধ্যে শেখ আরিফ ও আমেনার জ্বর ভালো হয়ে যায়। তবে কাশি ও সর্দি লেগেই ছিল। শেখ আসিফ ও শেখ আবিদের হালকা জ্বর ও পেট খারাপ, বমির বেগ ছিল। তাদেরকে দিনের মাঝে রৌদে ছাদে নিয়ে যেতাম কিছুক্ষণের জন্য। প্রতিদিন নাক দিয়ে লম্বা নিশ্বাস নিয়ে তা আটকিয়ে আবার মুখ দিয়ে দম ছেড়েছি অন্তত দশ বার। ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যা পেয়েছি তাই করেছি, বলেন তিনি। ১ জুন দ্বিতীয়বার নমুনা দেয়ার কথা জানান তিনি।
আর এরমধ্যে চলে হালকা কুসুম গরম পানি খাওয়া, নিয়মিত গরম ভাপ নেয়া, লবণ আবার ভিনেগার মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করা, প্রচুর পানি পান করা, রং চা, গ্রিন টি পান করা, শরীর দুর্বলতা কাটানোর জন্য ওরস্যালাইন খাওয়া, ভিটামিন সি ও ডি যুক্ত খাবার, ফল, শাকসবজি খাওয়া, বাচ্চাদের সিভিট ট্যাবলেট খাওয়া, কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করা, জ্বরের কারণে মাথায় ঠান্ডা পানি ও গা মুছিয়ে দেয়া ইত্যাদি রুটিনমাফিক চলছিল। পর্যায়ক্রমে সকলেই সুস্থ হয়ে উঠি। তবে বাচ্চাদের সামান্য কাশি রয়েছে। আশা করি তাও সেরে যাবে, বলেন মহিউদ্দিন রাসেল।
৪ জুন বিকালে দ্বিতীয় পরীক্ষার রিপোর্ট পাই। রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তবে চিকিৎসক আরও এক সপ্তাহ বিশ্রামে থাকার জন্য বলেছেন।
করোনা হলে আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অনেকের কাছে করোনা মানেই মৃত্যু অবধারিত। আমি মনে করি করোনা কিছুই না যদি একে গরম দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, রুটিন মাফিক উল্লেখিত ব্যবস্থাগুলো নেয়া যায়। তবে বয়স্কদের বেলায় অন্যকোনো রোগ থাকলে একটু ঝুঁকিপূর্ণ।
‘আমার মতে আক্রান্তের প্রথম ২৪ /৪৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি এটিকে মোকাবিলা করা যায় তা হলেই বিপদ কেটে যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে নমুনা পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে জ্বর,সর্দি বা উপসর্গ দেখা দিলেই উল্লেখিত ব্যবস্থাগুলো অত্যন্ত দ্রুত গ্রহণ করা উচিত। করোনা মানেই মৃত্যু নয়, করোনা মানেই সচেতনতা ও মনোবল শক্ত রেখে আল্লাহকে ডাকা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা,’ বলেন তিনি।