মৌলভীবাজার, সিলেট ও হবিগঞ্জের সীমানা ঘেষা শেরপুর এলাকায় বসে প্রতি বছর মাছের মেলা। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মাছের মেলাটি শুরু হলেও এটি এখন সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া ৩ দিনব্যাপী এই মেলা শেষ হবে বুধবার দুপুরে।
কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করেও মেলাজুড়ে ছিল ক্রেতা বিক্রেতা আর কৌতূহলী মানুষের ঢল। প্রায় দুইশত বছর পূর্ব থেকে চলে আসা মেলায় হাওর ও নদীতে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা দেশীয় প্রজাতির টাটকা মাছ কিনতে ক্রেতা ও পাইকাররা ভিড় জমান।
মেলায় এক সাথে বড় আকারের এত মাছ দেখে নতুন আগন্তুক অনেকেই আশ্চর্য হন। তাই মাছ কিনতে ও দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় ও বাড়তি কৌতূহল নিবারণে তারা পুরো মাছের মেলা ঘুরে দেখেন।
মৌলভীবাজারের শেরপুরের মাছের মেলা ঘুরে দেখা গেল একটি কাতলা মাছের দাম হাঁকা হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, আইড় মাছের দাম ১ লাখ ৩৫ হাজার। বোয়াল মাছের দাম ১ লাখ ১০ হাজার। একটি আইড় মাছ বিক্রি হয়েছে ৭৫ হাজার টাকায়।
মেলায় আগত ক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, হাওর ও নদীতে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা দেশীয় প্রজাতির ফরমালিন মুক্ত টাটকা মাছ কিনতে এসেছি। মাছের মেলা উপলক্ষে মাছ কিনতে অনেকেই নিজ এলাকায় আসেন পরিবার পরিজন নিয়ে ।
মেলা উপলক্ষে অনেক প্রবাসী দেশে আসেন। তাছাড়া মেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের আত্মীয় স্বজনরাও নানা জাতের মাছের স্বাদ নিতে বাড়িতে আসেন। একই মন্তব্য জানালেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুহিবুর রহমান।
মাছ ব্যবসায়ী আমীর আলী ও রমিজ উদ্দিন জানান, ঐতিহ্য ধরে রাখতে বছর জড়ে নানা কষ্টে তারা মাছ সংগ্রহে রাখেন। সাধারণত হাওর ও নদীতে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা মাছ নিয়ে আসেন এই মেলায়। মেলায় স্থানীয় হাওর ও নদীর অনেক বড় বড় জীবিত মাছ ও ফরমালিন মুক্ত মাছ নিয়ে আসেন বলে জানান তারা। পরিপক্ব এ মাছগুলো খেতেও সুস্বাদু। তবে এ বছর মেলা উপলক্ষে মাছের সংগ্রহ বেশি থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি অনেকটা কম বলে জানান তারা।
পার্শ্ববর্তী কুশিয়ারা নদী, হাকালুকি হাওর, কাওয়াদিঘি হাওর, হাইল হাওর ও সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা রুই, কাতলা, বোয়াল, গজার, বাঘাইড় ও আইড় মাছসহ বিশাল আকৃতির মাছ নিয়ে আসেন মেলায়।
মাছের মেলা অয়োজক কমিটির সভাপতি মো. আশরাফ আলী খান জানান, গত ৫ বছর ধরে জুয়াসহ যাত্রা ও পুতুল নাচের নামে অশ্লীলতা বন্ধ হয়ে শুধু মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে। এছাড়াও প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব সরকারকে তারা দিলেও মেলার জন্য এখনও স্থায়ী কোনো স্থান গড়ে উঠেনি। তিনি সরকারের দায়িত্বশীলদের কাছে ঐতিহ্যবাহী এ মাছের মেলা টিকিয়ে রাখতে স্থায়ীভাবে একটি স্থান নির্ধারণের দাবি করেন।
এটি মাছের মেলা নামে পরিচিত হলেও ফার্নিচার, গৃহস্থালি সামগ্রী, খেলনা ইমিটেশন,কাপড়, জুতাসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের অনেক দোকান এখানে স্থান পায়। বর্তমানে এই মাছের মেলা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মিলনমেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ ছাড়াও বাদ যায়নি মুড়ি মুড়কি আর মণ্ডা মিঠাইসহ কত কি মুখরোচক খাবার দাবারের আয়োজন!