ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই আনন্দের নীল ঢেউ বয়ে যাচ্ছিল ইতিহাদ স্টেডিয়ামে। ম্যাচ শেষ হওয়ার খানিক আগে তা বাঁধ ভেঙে যায়। খেলা বন্ধ করে সমর্থকদের স্ট্যান্ডে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন রেফারি ও খেলোয়াড়রা। তবে তাতে তেমন কেউ গা না করায় অতিরিক্ত যোগ করা সময়ের ৫ মিনিট পূর্ণ হওয়ার আগেই শেষের বাঁশি বাজাতে একপ্রকার বাধ্য হন রেফারি।
এরপর গ্যালারি থেকে মাঠের মধ্যে নেমে আসে নীল আনন্দের স্রোত। কোচ পেপ গার্দিওয়ালা থেকে শুরু করে একে একে সব খেলোয়াড়দের মাথায় করে নাচতে থাকে সেই ঢেউ। আর হবেই বা না কেন? ম্যানচেস্টারে এমন কিছু করে দেখিয়েছে নীল দলটি, যা আগে কেউ কখনও হয়তো ভাবনাতেও আনেনি।
প্রিমিয়ার লিগ তো বটেই ইউরোপীয় ফুটবলের গুরু হিসেবে মানা হয় যাকে, সেই স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, এতটা করা সম্ভব নয় কারও পক্ষে। অথচ তার চেয়েও বেশি করে দেখালেন স্পেন ও জার্মানি জয় করে ইংল্যান্ডে পা রাখা কোচ পেপ গার্দিওলা।
আরও পড়ুন: টটেনহ্যামের বিপক্ষে ম্যাচটি ‘শিরোপা নির্ধারণী’ হিসেবে দেখছেন গার্দিওলা
টানা ৪ বার প্রিমিয়ার লিগ জিতে নতুন করে ইতিহাস রচনা করেছেন তিনি। রবিবার ওয়েস্ট হ্যামের বিপক্ষে ৩-১ গোলের মাধ্যমেই নিশ্চিত হয়ে যায় এই রেকর্ড। এর মাধ্যমে গত ৮ মৌসুমে ৬ বার লিগ শিরোপা জেতে সিটি।
সবশেষ গত ৬ ডিসেম্বর অ্যাস্টন ভিলার মাঠে ১-০ গোলে হেরেছিল গার্দিওলার দল। তারপর থেকে যেন হারতে ভুলেই গেছে সিটি। লিগের ৩৮ ম্যাচে এ মৌসুমে মাত্র ৩ বার হেরেছে তারা, ড্র করেছে ৭ বার, বাকি ২৮ ম্যাচেই জয় পেয়েছেন ডি ব্রুইনে-হালান্ডরা। ফলে ৯১ পয়েন্ট নিয়ে আর্সেনালকে আশাহত করে ফের মাথায় পরেছেন লিগ-সেরার মুকুট।
সিটির এমন দুর্দান্ত অর্জনের মাঝেও আর্সেনালের নামটি উঠে আসে। কারণ পুরো মৌসুমজুড়ে মিকেল আর্তেতার দলটি যা করেছে, তা এক কথায় অভাবনীয়। সিটির এই ইতিহাস গড়ার পথে একমাত্র মাথাব্যথা ছিল আর্সেনাল। প্রতিটি ম্যাচে একের পর এক জয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহে লিগ টেবিলের শীর্ষস্থান দখলে সমানে টেক্কা দিয়ে এসেছে তারা। এমনকি লিগের শেষ রাউন্ডের ম্যাচেও সিটিকে অবশ্য-জয়ের চাপে রাখে আর্সেনাল। এক ম্যাচে পা হড়কালেই তাদের ইতিহাস গড়া থামিয়ে ২০ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর থেকে শিরোপার সন্ধানে থাকা আর্সেনাল।
আরও পড়ুন: প্রিমিয়ার লিগে ‘ভিএআর’ বাদ দেওয়ার প্রস্তাব
তবে তাদের সে আশার গুড়ে বালি দিয়েছে অসাধারণ স্নায়বিক চাপ মোকাবিলার সামর্থ্য রাখা ম্যানচেস্টার সিটির কোচ ও খেলোয়াড়রা। তাই এক মৌসুমে ৮৯ পয়েন্ট অর্জন করেও দ্বিতীয় স্থানে থেকে আক্ষেপে পুড়তে হচ্ছে গানারদের।
ইতিহাস গড়ার হাতছানির ম্যাচে দুর্দান্ত শুরু করে সিটি। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই ফিল ফোডেনের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ১৮ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন গত সপ্তাহে লিগের বর্ষসেরা নির্বাচিত হওয়া এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। এরপর হ্যামারদের হয়ে মোহামেদ কুদুস একটি গোল পরিশোধ করলে সিটির অনিশ্চয়তা কিছুটা বাড়ে, তবে দ্বিতীয়ার্ধে রদ্রি তৃতীয় গোলটি করলে সিটির শিরোপাজয় একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যায়।
অন্যদিকে, শুরুতে পিছিয়ে পড়েও ম্যাচের একেবারে শেষদিকে কাই হাভার্টসের গোলে জয় পায় আর্সেনাল। তবে সিটির জয়ের খবরে মলিন হয়েছে তাদের উদযাপন। তাই ম্যাচ জিতেও ক্লান্তি আর হতাশায় ভেঙে পড়েন ডেকলান রাইস, মার্টিন ওডেগার্ড ও বুকায়ো সাকারা। এত চেষ্টার পরও শিরোপা জয় করতে না পারার কারণ খুঁজে ফেরা তাদের চেহারায় ছিল স্পষ্ট।
তারপরও ভেঙে পড়তে রাজি নন কোচ মিকেল আর্তেতা ও অধিনায়ক ওডেগার্ড। ভক্তদের ধৈর্যে্যর প্রশংসা জানিয়ে আগামীবার নতুন করে আরও উঁচুতে ওঠার প্রত্যয় জানিয়ে শান্তনা দিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: চেলসিতেই যাচ্ছেন মেসিনিয়ো!