জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ২০১৭ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
১৯৭১ সালের এ দিনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব রাজধানীর ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিশাল সমাবেশের সামনে স্বাধীনতার নবযুগ সৃষ্টিকারী ভাষণ দেন।
মুক্তিপ্রেমী লাখো জনতার সামনে ১৯ মিনিট ধরে দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। সেই সাথে তিনি পাকিস্তানের শোষণকারী শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেন।
বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে ধ্বনিত হয়- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ঐতিহাসিক গেটিসবার্গ ভাষণের সাথে তুলনীয় বক্তব্যে শেখ মুজিব বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।...ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলায় প্রস্তুত থাক।’
পাকিস্তানি সামরিক জান্তার স্বৈরাচারী ও দমনমূলক শাসন থেকে মুক্তির সংগ্রামে পুরো বাঙালি জাতিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে যাদুমন্ত্রের মতো কাজ করেছিল বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ।
দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭টায় ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভার আয়োজন করবে। এতে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টিভি ও রেডিও স্টেশনগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। সেই সাথে দৈনিক পত্রিকাগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
এদিকে, ৭ মার্চ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। তারা ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতার যাত্রা বাস্তবে রূপ দেয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন। মহান নেতার সে স্বপ্ন পূরণে আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেয়া ‘রূপকল্প-২০২১’ ও ‘রূপকল্প-৪১’ বাস্তবায়নে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে অমিত শক্তির উৎস ছিল জাতির পিতার এ ঐতিহাসিক ভাষণ...কালজয়ী এ ভাষণ বিশ্বের শোষিত, বঞ্চিত ও মুক্তিকামী মানুষকে সবসময় প্রেরণা যুগিয়ে যাবে।’